হাতিশুর গাছের পাতা ও মূলের উপকারিতা

বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে আয়ুর্বেদী ও কবিরাজি চিকিৎসা ব্যবস্থায় হাতিশুর গাছের পাতা ও মূলে রয়েছে বিশেষ কদর। ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যবস্থা আমরা কম-বেশি হাতিশুর গাছের পাতা ও মূলের ব্যবহার করে থাকি। হাতিশুর গাছের পাতা ও মূলের সঠিক উপকারিতার কথা জেনে এর ব্যবহার বৃদ্ধি কিভাবে করা যায় সেই সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলের আপনাদের জানাবো।
হাতিশুর গাছের পাতা ও মূলের উপকারিতা
হাতিশুর গাছের পাতা ও মূলের উপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আপনারা আরও জানতে পারবেন যৌন সক্ষমতা বাড়াতে হাতিশুর গাছের মূল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আশা করি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে যদি আপনার বিস্তারিত জানার আগ্রহ থাকে তাহলে ধৈর্য সহকারে সমগ্র আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

হাতিশুড় গাছ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

হাতিশুড় গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে ঝোপে ঝাড়ে বেড়ে ওঠা অতি পরিচিত একটি ঔষধি গাছ। এটি এক বর্ষজীবী আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Helio Tropium indicum এর ইংরেজি নাম হচ্ছে Indian heliotropium. ভেষজ এই উদ্ভিদটি পুরনো দালান কোঠার আশেপাশে, পরিত্যক্ত জায়গায়, রাস্তার ধারে, পরিত্যাক্ত জমিতে আগাছার সাথে জন্মায়। 

এর উচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুট হয়ে থাকে। এর খসখসে সবুজ পাতা এবং হাতির সুরের মতো বাঁকানো ছোট ছোট দুই শাড়িতে সাদা সাদা ফুল দেখা যায়। হাতির সুরের মতো বাঁকানো ফুলের জন্য এই উদ্ভিদের নাম হয়েছে হাতিশুড়। এই উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল সবই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এর ব্যবহার অপরিসীম।
এতক্ষণ আমরা হাতের শুর গাছ সম্পর্কে জানলাম এখন জানবো এই গাছের পাতা আমাদের শরীরের কি কি উপকারে আসে সে সম্পর্কে

হাতিশুর গাছের পাতার উপকারিতা।

শরীরের বিভিন্ন সময় ছত্রাক আক্রমণ করতে দেখা যায়। যার ফলে শরীরে লাল লাল চাকা চাকা হয়ে যায়। এই ছত্রাক আক্রমণ রোধে হাতিশুড় গাছের পাতার রস আক্রান্ত স্থানে লাগালে ছত্রাক আক্রমণ ভালো হয়ে যায়।

শরীরে যে কোন ধরনের ফোলায় এই পাতা বেটে সামান্য গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ফোলা কমে যাবে।
যেকোনো ধরনের আঘাত জনিত ফোলায় এই গাছের পাতা ছেচে হালকা গরম করে লাগালে ফোলা ও ব্যথা কমে যাবে।

শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিভিন্ন সময় বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিতে পারে। যার কারণে কামড়ানো স্থান ফুলে যায় ও জ্বালাপোড়া হয়। হাতিশুড় গাছের পাতার রস লাগালে জ্বালা পোড়া ও ফোলা ভাব কমে যাবে।

সর্দি লাগলে এই পাতার রস ২ চা চামচ পরিমাণ খেলে যদি ভালো হয়ে যাবে।
টাইফয়েড রোগীর জন্য এই পাতার রস হতে পারে কার্যকরী একটি ওষুধ। পাতার রস করে পানির সাথে 

মিশিয়ে হালকা গরম করে কয়েকদিন খেলে টাইফয়েড ভালো হয়ে যায়।
চর্মরোগ বা একজিমা থেকে মুক্তির জন্য পাতা থেতলে আক্রান্ত স্থানে কয়েক দিন ব্যবহার করলে চর্মরোগ বা একজিমা ভালো হয়ে যায়।
কাটা ছেঁড়া স্থানে এই পাতার রস ব্যবহার করলে কাঁটা ছেড়া দ্রুত শুকিয়ে যায়।
বাত ব্যথা / রিউমেটিক বাত ব্যথাই রেড়ির তেলের সাথে পাতার রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগাতে হবে তাহলে ব্যথা অনেকটা নিরাময় হবে।

হাতিশুর গাছের মূলের উপকারিতা।

হাতিশুর গাছের পাতার মতোই এর মূল ও বেশ উপকারী। এসব ভেষজ ঔষধ গুন সম্পন্ন গাছের গুণাবলী না জানা থাকার কারণে আমরা সঠিকভাবে এই উদ্ভিদগুলোব্যবহার করতে পারি না। হাতিশুর গাছের মূল থেকে উপকার পেতে হলে একটি পরিপক্কার নির্বাচন করতে হবে। 

গাছ নিলে এর মূলের থেকে তেমন কোন উপকারিতা পাওয়া যাবে না এর জন্য অবশ্যই আমাদের ফুল হয়েছে এমন একটা পরিপক্ক গাছ নির্বাচন করতে হবে। এরপর নিচের কান্ড থেকে হলুদ শেকর পর্যন্ত নিতে হবে। মূলটি ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিয়ে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
হাতিশুড় গাছের মূল ছেচে নিয়ে পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি খেলে জ্বর ও কাশি ভালো হয়। দাঁতের মাড়িফুলা রোগে আক্রান্ত রোগী হাতিশুড় গাছের মূল চিবালে মাড়ির ফোলা ভাব দূর হয়ে যায়

দাঁত ব্যথায় মূল ছেচে রস বের করে পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁত ব্যথা অনেকটা কমে যায়। হাতিশুড় গাছের শেকর বেটে ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
এছাড়াও যৌন সক্ষমতা বাড়াতে হাতিশুড় মূলের রয়েছে জাদুকরী ক্ষমতা ।

যৌন সক্ষমতা বাড়াতে হাতিশুড় গাছের মূল খাওয়ার নিয়ম।

যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তাদের জন্য হাতিশুড় গাছের মূল হতে পারে দারুন একটা প্রাকৃতিক ঔষধ। হাতিশুড় গাছের ১ ইঞ্চি পরিমাণ মূল, সাথে একটা বড় পান পাতা, সামান্য কালোজিরা ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে যৌন সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। 

প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে এভাবে খেলে সাত দিন পর নিজেই এর ফলাফল উপলব্ধি করতে পারবেন। যৌন দুর্বলতা কাটানোর জন্য সকালে খালি পেটে এই উদ্ভিদের মূল খাওয়া যেতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে ২৫০ এম এল পরিমাণে পানি খেয়ে নিতে হবে। 
তারপর বড় একটা পান পাতার সাথে দুই ইঞ্চি পরিমাণ হাতিশুড় গাছের মূল চিবিয়ে রস খেয়ে ছোবড়া ফেলে দিতে হবে।মূল খাওয়ার পর আধা ঘন্টা পর্যন্ত কোন কিছু খাওয়া যাবেনা আধা ঘন্টা পর খাবার খেতে পারবেন। এতে করে ভালো উপকার পাবেন।

হাতিশুড় গাছের অপকারিতা।

প্রিয় পাঠক উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন হাতিশুর গাছের পাতা ও মূলের উপকারিতা সহ যৌন সক্ষমতা বাড়াতে হাতিশুর গাছের মূল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এবার আমি হাতিশুর গাছের পাতা ও মূল খাওয়ার সামান্য কিছুই অপকারিতা নিয়ে আপনাদের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।

যে কোন ঔষধ যেমন নির্দিষ্ট কোন রোগের জন্য খেলে রোগটা ভালো হয়ে যায় তেমনি ওই ওষুধটা যদি একটু বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় তাহলে রোগটি সারার বদলে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হাতিশুড় গাছের ক্ষেত্রেও তাই নিয়ম মেনে পরিমান মত রোগ সারা পর্যন্ত খেতে হবে বেশি পরিমাণে খেলে বা দীর্ঘদিন ধরে খেতেই থাকলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শেষ কথাঃ

আমাদের বাড়ির আশেপাশে পতিত জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এই গাছ গুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারলে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইয়ের হাত থেকে আমরা রেহাই পেতে পারি। তবে একটি বিষয় প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে হাতিশুর গাছের পাতা ও মূলের উপকারিতা সম্পর্কে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে সঠিক ধারণা নিয়ে তারপর এটি ব্যবহার করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url