বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিছু ঔষধি গাছের নাম
আমাদের বাড়ির আশেপাশের বনবাগানে পতিত জায়গায় রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন ধরনের চেনা অচেনা গাছ দেখা যায়। এসব গাছগুলোর বেশিরভাগই কোন না কোন ওষুধি গুণসম্পন্ন যা হয়ত বা আমরা জানিনা। আজকের এই আলোচনায় জানাবো বাংলাদেশের দশটি ওষুধি গাছের নাম এবং এই গাছগুলোর উপকারিতা সম্পর্কে।
প্রিয় পাঠক আজকের এই আলোচনার পর আপনি জানতে পারবেন আপনার বাড়ির আশেপাশেই বন বাগানে, রাস্তার দুই ধারে জন্মানো অচেনা কিছু ঔষধি গাছের গুনাগুন সম্পর্কে যা আপনার প্রাত্যহিক জীবনে কোন না কোন ভাবে কাজে আসবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে যেসব উদ্ভিদের ভেষজ গুনাগুন উপাদান রয়েছে এবং রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয় অথবা উদ্ভিদগুলো থেকে আহরিত উপাদান গুলো বিভিন্ন ধরনের ঔষধ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় তাদেরকে ওষুধি উদ্ভিদ বা গাছ বলা হয়।
লজ্জাবতী গাছ ও এর উপকারিতা।
আমাদের দেশে সাধারণত উচু রাস্তার দুই পাশে লজ্জাবতী গাছ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে শুষ্ক জায়গায় এই গাছ বেশি জন্মে। লজ্জাবতী গাছের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা হল এই গাছের পাতা স্পর্শ করা মাত্রই পাতাগুলো একদম নুয়ে পড়ে। মূলত এই কারণে এই গাছকে লজ্জাবতী গাছ বলা হয়। লজ্জাবতী গাছের রয়েছে বিশেষ ঔষধি গুণ।
উপকারিতাঃ
- ঠান্ডা জর্নিত কারণে কারো বুকে অতিরিক্ত কফ জমে গেলে লজ্জাবতী গাছের পাতা রস খেলে খুব দ্রুত সেরে যায়।
- নাক ও কান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে।
- ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে এই গাছের পাতার রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ।
- বুক জ্বালাপোড়া আলসার কুষ্ঠ রোগ থেকে মুক্তি পেতে এই গাছ ব্যবহার করা হয়।
- এছাড়া আমরা যারা শ্বাসকষ্টে ভুগি অথবা আলসার, অশ্ব বা পাইলস পেট ফাঁপা, বদহজম অন্যান্য ক্ষত সারাতে এই গাছের রস ভীষণ কাজ করে।
- আমাদের মধ্যে যাদের দাঁতের মাড়িতে মারিতে ক্ষত রয়েছে তারা লজ্জাবতী গাছের মূল পরিস্কার করে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করলে এটি দ্রুত সেরে যায়।
স্বর্ণলতা গাছ ও এর উপকারিতা।
স্বর্ণলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ। এই গাছের কোন পাতা নেই মূলা নেই লতায় এদের দেহ মূল কাণ্ড বা পাতা সবকিছু। লতা হতেই এটি বংশবিস্তার করে স্বর্ণলতা অন্য গাছের উপর নির্ভর করে বিস্তার লাভ করে। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে এই স্বর্ণলতা বেশি দেখা যায়। বর্তমানে আমাদের দেশ থেকে স্বর্ণলতা প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে। হলদে ও সোনালী রঙের পরজীবী উদ্ভিদ হয় আমরা মূলত এটাকে স্বর্ণলতা হিসাবে চিনি।
উপকারিতাঃ
- স্বর্ণলতার গাছের রয়েছে নানান ঔষধি গুণ। এটি বায়ু নাশক ও পেট ফাঁপা রোগের একটি কার্যকরী ঔষধ।
- জন্মনিরোধক ও কৃমিনাশক হিসেবেও স্বর্ণলতা কাজ করে।
- পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা ক্ষেত্রে স্বর্ণলতার ঔষধি গুণ রয়েছে।
- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হাড়ের চিকিৎসা, জন্ডিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, যকৃতের রোগ, চুলকানি শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সার ইত্যাদি কঠিন রোগ নিরাময়ের স্বর্ণলতার ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়।
- খাবারের অরুচি ভাব দেখা দিলে স্বর্ণলতা সিদ্ধ করে সেই পানি খেলে খাবারের প্রতি রুচি বাড়ে।
- স্বর্ণলতার বীজ গুড়ো করে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়।
- যারা দীর্ঘদিন কৃমি রোগে আক্রান্ত তারা স্বর্ণলতার বীজ গুঁড়ো করে খেলে কৃমির ভালো হয়।
- ক্ষতস্থানে স্বর্ণলতা পিষে লাগিয়ে দিলে ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যায়।
- যারা জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হন তারা স্বর্ণলতার বীজ গুড়ো করে খেলে জন্ডিস ভালো হয়ে যায়।
সুতরাং আপনারা বুঝতেই পারছেন এই গাছের কদর কতটা বেশি।
অর্জুন গাছ ও এর উপকারিতা।
ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অর্জুন গাছের ব্যবহার অনেক প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। অর্জুন গাছ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বলা হয় বাড়িতে যদি একটি অর্জুন গাছ থাকে তার মানে বুঝতে হবে বাড়িতে একটি চিকিৎসক রয়েছে। অর্জুন গাছের পাতা, ছাল ও ফল বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক, হোমিও ও ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রে অর্জুনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়।
উপকারিতাঃ
- অর্জুনের বাকলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের কো এনজাইম ১০ যা হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে। অর্জুন গাছের ছাল বেটে খেলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হয়। হৃদপিন্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- আমাদের মধ্যে যাদের বুক ধরফর করে কিন্তু কোন ধরনের রক্তচাপ নেই তারা চাইলেই অর্জুন গাছের ছাল গুড়ো করে দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে বুক ধরফরানি কমে যাবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পেটে গ্যাস্টিকের সমস্যা না থাকে।
- যাদের মুখে ব্রনের আধিক্য থাকে তারা অর্জুন গাছের বাকল গুঁড়ো করে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে লাগালে ব্রণ দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অর্জুন গাছ ভালো কাজ করে।
- অর্জুন গাছের ছাল দাঁতের ব্যথা ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে।
- এছাড়া হজম শক্তি বৃদ্ধি, ক্যান্সার প্রতিরোধ, শ্বাসকষ্ট, পেটের সমস্যা, হাড়ভাঙ্গা ইত্যাদি রোগে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করা হয়।
হাতিশুর গাছ ও এর উপকারিতা।
হাতিশুর গাছ আমরা হয়তো অনেকেই দেখেছি কিন্তু নাম জানিনা এরকম অনেকেই রয়েছেন। সাধারণত এই গাছটি ভেজা স্যাঁতে স্যাঁতে জায়গায় জন্মায় বা দেখা যায় আবার পুরনো দালান ঘেঁষে কিংবা রাস্তার ধারে এই গাছটি বেশি দেখা যায়। এই গাছে সাদা ফুল দেখা যায় ফুলের অগ্রভাগ হাতির সুরের মতো বাঁকানো তাই এই গাছটিকে হাতিশুর গাছ বলা হয়।
হাতিশুর গাছের ছোট ছোট লোম রয়েছে। এই গাছটি ১৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এই গাছের পাতা দেখতে ডিমাকৃতি ও উপরিভাগ খসখসে। পাতার রং গারো সবুজ। হাতিশুর গাছের বিভিন্ন ধরনের জৈব উপাদান রয়েছে যেমন ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন অ্যালকালয়েডস, হেলিওট্রিন ।
উপকারিতাঃ
- মানব দেহের ছত্রাক জনিত সংক্রমনের কারণে লাল চাকা চাকা দাগ দেখা যায় এই পাতার রস ব্যবহারের ফলে ছত্রাক জনিত রোগ ভালো হয়।
- হাত-পা ফুলে গেলে হাতিশুর গাছের পাতা পেটে ফোলা জায়গায় শেক দিলে নিরাময় হয়।
- জ্বর ও কাশিতে এই গাছের মূল পানি সঙ্গে ফুটিয়ে ফুটানো পানি পান করলে জ্বর কাশি ভালো হয়ে যায়।
- বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ালে এই গাছের পাতার রস লাগালে জ্বালা ও ফোলা কমে যায়।
দূর্বা ঘাস ও এর উপকারিতা।
আমাদের দেশের মাঠে-ঘাটে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা একটি ঘাসের নাম দূর্বা ঘাস। সাধারণত আমরা জানি যে শরীরের কোথাও কেটে গেলে কাটা স্থান থেকে রক্ত বন্ধ করতে দূর্বার ঘাসের শেখর ব্যবহার করা হয়। হিন্দু ধর্মালম্বীদের পূজা-অর্চনায় দূর্বার ঘাস ব্যবহার করা হয় দূর্বা ঘাস দেখতে অনেকটা ছোট আকৃতির এর পাতাগুলো গারো সবুজ নিচের মূল চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে।
উপকারিতাঃ
- দূর্বা ঘাসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, পটাশ ,সোডিয়াম, প্রোটিন, শর্করা, ম্যাঙ্গানিজ ,এনজাইম ও আঁস।
- দুর্বা ঘাসের রস স্নায়ুতন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। যারা মৃগীরোগে আক্রান্ত ও মানসিক বিকার জনিত শারীরিক ব্যাধিতে আক্রান্ত দুর্বাঘাস তাদের ক্ষেত্রে কার্যকরী।
- চোখের সংক্রমণ যেমন চোখ ওঠা, চোখ জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্বা ঘাস উপকারী। এক্ষেত্রে দূর্বা ঘাস জাল দিয়ে পানি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
- দূর্বা ঘাসে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য তাই এই ঘাস চর্ম রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। দাউদ, একজিমা, চুলকানি, কুষ্ঠ, পাচরা ও ত্বকের বিবর্ণতা ইত্যাদি ভালো করতে দুর্বা ঘাস ব্যবহৃত হয়।
- শরীরের কোন স্থানে কেটে গেলে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য দূর্বা ঘাস বেটে বা পেস্ট করে লাগালে দ্রুত ভালো হয়। এছাড়া নাক দিয়ে রক্ত পড়া মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করতে দূর্বা ঘাস বড় উপকারী।
- আয়ুর্বেদী চিকিৎসকরা দূর্বা ঘাসের রস ও মধু মিশিয়ে একসঙ্গে দিনে তিনবার পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন এতে করে মেনোরেজিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
- প্রসূতিদের বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এর ক্ষেত্রেও দুর্বা ঘাস উপকারী বলে জানা গেছে। মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য ঘাটলে যেসব শারীরিক উপসর্গ দেখা যায় সেই সকল উপসর্গকে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বলা হয়।
আকন্দ গাছ ও এর উপকারিতা।
আকন্দ গাছ এক প্রকার ওষুধি বৃক্ষ। এটি গুল্ণ জাতীয় উদ্ভিদ। আকন্দ গাছ সাধারণত তিন থেকে চার মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। আমাদের দেশে রাস্তার দুই অংশ রেললাইনের দুই পাশে এই গাছ বেশি দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে এই গাছটি প্রায় দুর্লভ হয়ে গেছে তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই গাছ দেখতে পাওয়া যায় বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, ভারত, চীন,পাকিস্তান ও নেপালে। আকন্দ গাছ দুই ধরনের হয়ে থাকে সাদা আকন্দ ও লাল আকন্দ।
সাদা আকন্দের ফুলের রং সাদা ও লাল আকন্দের ফুলের রং বেগুণী হয়ে থাকে। এই গাছের পাতা বা ডাল ছিড়লে সাদা দুধের মত আঠা বের হয় এই গাছের ফল সবুজ, ফলের সামনের অংশ পাখির ঠোটের মতো। আকন্দ গাছের বীজ লোমযুক্ত, বীজের রং ধূসর কিম্বা কালচে রঙের হয়ে থাকে।
উপকারিতাঃ
- আকন্দ গাছের পাতা ফুল ফল কাণ্ড শিকড় ঔষধি গুনে ভরপুর।
- অনেকের শরীরেই বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা যায় চর্মরোগ সারাতে আকন্দর গাছের আঠা বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এই কাজটি করতে আপনাকে যা করতে হবে তাহলে আকন্দ গাছের আঠার সাথে চার গুণ সরিষার তেল নিয়ে গরম করে নিতে হবে। গরম তেলের সাথে কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খোশ পাঁচড়ায় ভালোভাবে মেখে নিলে এটা দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
- যদি ঠান্ডা লেগে কারো বুকে কফ জমে যায় সে ক্ষেত্রে প্রথমে বুকে পুরনো ঘি ঢেলে নিতে হবে এরপর আকন্দর পাতা গরম করে শেখা দিলে ব্যথা কমে যায়।
- বিষাক্ত কোন কিছু কামড়ালে আকন্দর পাতার রস লাগালে সহজে ভালো হয়ে যায়।
- শরীরের কোন স্থানে ক্ষত হলে সেই ক্ষত থেকে অনেক সময় পুজ বের হয় সেজন্য আকন্দর পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে তাহলে বের হবে না।
- আকন্দর পাতার সাথে সরিষার তেল মেখে পেটের উপর ছ্যাকা দিলে পেট কামড়ানো সেরে যায়।
ঘৃতকুমারী গাছ ও এর উপকারিতা।
আমরা অনেকেই ঘৃতকুমারী বললে এই গাছকে সহজে চিনতে পারিনা, ইংরেজিতে অ্যালোভেরা বললে আমরা সহজেই এই গাছ চিনতে পারি। আমাদের দেশে বর্তমানে কিছু কিছু জায়গায় এই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার চাষ বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়ে আসছে। এছাড়া বসতবাড়ির আশেপাশে বা বাড়ির ছাদে ঘৃতকুমারী শখের বসে চাষ করা হয়।
ঘৃতকুমারী গাছ দেখতে অনেকটা কাটা ওয়ালা ফনিমনসা বা ক্যাকটাসের মতো কিন্তু আসলে এটি ক্যাকটাস জাতীয় কোন গাছ নয়। ঘৃতকুমারী আজ থেকে ৬০০০ বছর আগে মিশরের উৎপত্তি লাভ করে। ভেষজ চিকিৎসাশাস্ত্রে ঘৃতকুমারী ঔষধি গুণ বলে শেষ করা যাবে না।
উপকারিতাঃ
- ঘৃতকুমারীতে রয়েছে ২০ রকমের মানব দেহের জন্য উপকারী খনিজ পদার্থ। মানব দেহের জন্য যে ধরনের অ্যামিনো এসিড প্রয়োজন হয় এর সবগুলোই বিদ্যমান রয়েছে ঘৃতকুমারীর মধ্যে। এছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন- সি, এবং ভিটামিন- ই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
- আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ঘৃতকুমারীর জুস।
- আমাদের শরীরের মাংসপেশি এবং হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধে ঘৃতকুমারীর কার্যকারিতা ব্যাপক।
- দাঁতের মাড়ির ব্যথা, দাঁতের ইনফেকশন দূর করা, দাঁতের ক্ষয় রোধ করে অ্যালোভেরার জুস।
- শরীরের ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে অ্যালোভেরার জুস খেলে শরীরের ওজন কমে যায়।
- শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা উপকারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ।
- অ্যালোভেরা জুস রক্তের সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহের রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে তাই যারা নিয়মিত আলো ভেড়ার জুস পান করবে তারা সহজে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হবে না।
- চুল সুন্দর করতে অ্যালোভেরা বা ধৃতকুমারীর গুনাগুন বলে শেষ করা যায় না। মাথার খুশকি দূর করতে এর তুলনা নেই এমনকি ঝলমলে চুলের জন্য অ্যালোভেরা অনেক উপকারী।
- ঘৃতকুমারীর জুস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায় এবং পেটের সমস্যা হয় না।
তেলাকুচা গাছ ও এর উপকারিতা।
তেলাকুচা একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ। তেলাকুচার গাছের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের ও নরম কাণ্ড বিশিষ্ট। এই গাছ একটি পরজীবী উদ্ভিদ অন্য গাছের উপর নির্ভর করে এটি বংশবিস্তার করে। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের পতিত জায়গায় বা বনাঞ্চলে এই তেলাকুচার গাছ দেখা যায়।
বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য যেসব দেশে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায় তা হল ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকাতে। কোন কোন জায়গায় তেলাকুচা শাক হিসাবে খাওয়া হয় এর ফল ও কচি ডগা তরকাকি হিসাবে খাওয়া যায়।
উপকারিতাঃ
- তেলাকুচার পাতা ও ফল অনেকের কাছে একটি সুস্বাদু ফল হিসেবে বিবেচিত তবে অনেকেই আছেন এটি পছন্দ করেন না। তেলাকুচার পাতায় রয়েছে ভিটামিন এবং মিনারেল।
- তেলাকুচার পাতা খেলে খাবারের রুচি বাড়ে এবং পেটের সমস্যা দূর হয়।
- তেলাকুচার পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- নিয়মিত তেলাকুচার পাতা খেলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এটি প্রোটিন ও চর্বি কমাতে সহযোগিতা করে।
- আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তেলাকুচার পাতা ও ফল ভালো কাজ করে।
- এটি খেলে শরীরের অবসন্নতা কাটে, স্নায়ুতন্ত্র ভালো থাকে, পরিপাক ক্রিয়া সহজ হয় এবং কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে না।
- এছাড়া কবিরাজি চিকিৎসায় তেলাকুচার ফল এবং পাতার রস বেশ কিছু রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন কুষ্ঠ, জ্বর, হাঁপানি ও জন্ডিস।
পাথরকুচি গাছ ও এর উপকারিতা।
আমাদের দেশে অতি প্রাচীনকাল থেকে যেসব ঔষধি গাছ কবিরাজি চিকিৎসা অন্যতম হয়ত ভূমিকা রাখছে সেগুলোর মধ্যে পাথরকুচির কাজ অন্যতম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে পাথরকুচির পাতা কিডনির রোগের সবচেয়ে বেশি উপকারী।
উপকারিতাঃ
- অনেকের কিডনি এবং ব্লাডারে পাথর হয় এই পাথর অপসারণে পাথরকুচির পাতা ব্যবহৃত হয়।
- পেট ফুলে গেছে অথবা প্রসাব আটকে আছে সেক্ষেত্রে চিনি এবং ২ চা চামচ পাথরকুচির পাতার রস গরম করে পানির সাথে মিশে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- পাথরকুচির পাতার রস ২ থেকে ১০ ফোঁটা করে মুখে দিলে মৃগী রোগী ভালো হয়।
- অনেক সময় শিশুদের পেট ব্যথা করে এক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৬০ ফোঁটা পাথরকুচির পাতার রস পেটে মালিশ করে দিলে ব্যথা কমে যায়।
- পাথরকুচির পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- পাথরকুচির পাতা রসের সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস ও অশ্ব রোগ ভালো হয়ে যায়।
- এছাড়া জন্ডিস, শরীর, জ্বালাপোড়া করা এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য পাথরকুচির রয়েছে ঔষুধি গুন।
তুলসী গাছ ও এর উপকারিতা।
ভারতীয় উপমহাদেশে অতি প্রাচীনকাল থেকে ঔষধি গাছ হিসেবে তুলসীর গাছ বা তুলসির পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। তুলসী গাছের পাতার ঔষধি গুণের কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি কিন্তু তুলসী পাতা খেলে কি কি উপকার হয় সেই সম্পর্কে আমরা জানিনা এই পাতায় রয়েছে আন্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো জটিল সব রোগ সারাতে ভূমিকা রাখে যেমন- ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ ইত্যাদি।
উপকারিতাঃ
- সর্দি কাশি ভালো হয়
- গলা ব্যথা দূর করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- ওজন কমাতে সহায়তা করে
- ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখে
- শ্বাসকষ্ট দূর করে
তুলসী গাছের পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তুলসী গাছের পাতা শুকনো করে শুকিয়ে গুড়ো করে চা হিসেবে খাওয়া যায়। এ ছাড়া কাঁচা পাতা চিবিয়ে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার করে।
লেখকের মন্তব্যঃ
পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয় ওষুধি গাছের সঠিক ব্যবহার না জানলে তা আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এসব গাছের গুনাগুন এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে তারপর এগুলো ব্যবহার করবেন। আসুন আমাদের বাড়ির আশেপাশে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণের ঔষধি গাছ লাগাই নিরাপদ এবং সুস্থ থাকি। আমার এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url