শরীরের আঁচিল কিভাবে দূর করা যায়
মানব দেহের সৌন্দর্য হানিকর , অসস্তিদায়ক এবং বিড়ম্বনাময় একটি রোগ হচ্ছে আঁচিল।শরীরের বিভিন্ন অংশেই আঁচিল হয়ে থাকে তবে সবচেয়ে বেশি বিরম্বনায় পড়তে হয় যদি আমাদের মুখে বা মুখমন্ডলে আঁচিল হয় । শরীরের আঁচিল কিভাবে দূর করা যায়। আঁচিল কেন হয়? আজকে আমি এই নিয়ে আলোচনা করব ।
প্রিয় পাঠক আজকের এই নিবন্ধন পড়ার পর আপনারা জানতে পারবেন আঁচিল কি কেন হয় এবং তা কিভাবে দূর করা যায় সেই সম্পর্কে । তাই আমি বলব এ নিবন্ধনটি আপনারা যত্ন সহকারে পড়বেন ।
আঁচিল কি ?
আঁচিল হচ্ছে ছোট্ট রুক্ষ প্রবৃদ্ধি যা চামড়ার উপরের অংশে দেখা যায় | এটা দেখতে অনেকটা ফুলকপির মত । এটা সাধারণত মানুষের হাতে পায়ে অথবা শরীরের অন্যান্য স্থান যেমন মুখ , হাতের তালু এইগুলোতে দেখা যায় । মানুষের দেহে দশ রকমের আঁচিল বা ফুসকুড়ি হতে পারে এর বেশিরভাগ গুলোই নিরহ বলে মনে করা হয় । মানুষের তেমন একটা ক্ষতির কারণ হয় না ।
আঁচিল কত প্রকার ?
আঁচিলের গঠন ও আকৃতি অনুযায়ী কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা : প্লান্টার ওয়ার্ক - এ ধরনের আঁচিল মূলত পায়ের পাতায় হয় । সাধারণ আঁচিলের মতই শক্ত ধরনের গোটা আকৃতির হয়ে থাকে এটি ।
ফিলিফর্ম আঁচিল -আমরা অনেকের গলায় বা মুখে এই ধরনের আঁচিল দেখতে পাই এর গঠন অনেকটা পাতলা সুতোর মতো ।
চ্যাপ্টা আকৃতি আঁচিল- বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্রাকৃতির চ্যাপ্টা গোটা একসাথে দেখা যায় | এই ধরনের আঁচিল শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হয় যেমন গলা , বুকে, মুখে , হাঁটুতে, হাতে কোমরে বা বাহুতে |
আঁচিল কেন হয় ?
নারী পুরুষ উভয়ের মাঝেই আমরা আঁচিল দেখতে পাই আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বৃদ্ধি ঘটে । সাধারণত বারবার ঘষা লাগে এমন শরীরের অংশ যেমন - চোখের উপরে, গলা, বাহু মূল কুঁচকি ও কোমরে আঁচিল দেখা দেয়। বংশগত কারণে ত্বকে আঁচিল দেখা দেয় | এছাড়াও ওজন এর কারণে
আঁচিল হয়ে থাকে ।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঁচিলের আধিক্য বেড়ে যায় । যাদের বংশের ডায়াবেটিস , বাড়তি ওজন , বহুমূত্র রোগ আছে তাদের ত্বকে আঁচল ওঠার সম্ভাবনা বেশি থাকে । অনেক কম বয়সেও আঁচিল দেখা দিতে পারে এই রোগীদের মধ্যে ইনসুলিন প্রতিরোধের অন্যান্য লক্ষণ যেমন হাইপার পিকমেন্টেশন ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে ।
আঁচিল কি ছোঁয়াচে ?
আঁচিল কি এবং কেন হয় সেই সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি । আসুন আমরা এখন আঁচিল কি ধরনের রোগ এই সম্পর্কে একটু আলোচনা করি । আঁচিল একটি ভাইরাসজনিত রোগ যে কোন বয়সের ছেলে মেয়ে অথবা পুরুষ মহিলা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে । মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঁচিল হতে পারে ।
যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সারা শরীরে প্রচুর আঁচিল হতে পারে । যাদের যৌনাঙ্গে আঁচিল আছে তাদের সাথে মিলনে এই রোগ গুপ্তাঙ্গ ছরাতে পারে । গর্ভাবস্থায় গুপ্তাঙ্গে এই রোগ হরমোনের প্রভাবে বড় আকার ধারণ করে যা অনেক সময় নরমাল ডেলিভারিতেও বাধা সৃষ্টি করে ।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা এই কথা সহজেই বুঝতে পারলাম যে আঁচিল একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই এই রোগ থেকে থেকে বাঁচার জন্য আমাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে ।
শরীরে আঁচিল কিভাবে দূর করা যায় ?
শরীরের আঁচিল দূর করার জন্য আমরা তিনটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পারি | নিচে এই তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আজ আপনাদের জানাবো -
আঁচিল দূর করার হোমিও ঔষধ ।
আঁচিলের চিকিৎসার জন্য আমরা অধিকাংশ মানুষ যে চিকিৎসা পদ্ধতি কে প্রায়োরিটি দিয়ে থাকি তা হল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কারণ হোমিওপ্যাথিতে আঁচিলের জন্য বেশ কিছু কার্যকরী ঔষধ রয়েছে যা খাওয়ার মাধ্যমে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সহজেই আঁচিল দূর করতে পারি | নিচে আপনাদের সুবিধার্থে কয়েকটি ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলো -
- Thuja Occidenttalis
- Nitricum acidum
- Natrum mur
- Cauticum
- Graphites
- Silicea terra
আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় ?
আপনি যদি মনে করেন যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আপনি গ্রহণ করবেন না আবার আঁচিল থাকুক সেটাও আপনি চাইবেন না সে ক্ষেত্রে আপনি সহজে এবং কার্যকরী কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন । কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতিতে আঁচিল দূর করার উপায় আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব । তাহলে চলুন ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে আঁচিল দূর করা যায় তা জেনে নেওয়া যাক -
ক্যাস্টর অয়েল ও ব্রেকিং
এক চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল এবং এক চা চামচ ব্রেকিং সোডা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন এরপর এই পেস্ট আঁচিলের উপর লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন সম্পূর্ণ সুখে যাওয়ার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । প্রতিদিন একবার করে এই পেস্ট ব্যবহার করতে থাকুন ।
পেঁয়াজ এবং লেবুর রস
তিন চা চামচ পেঁয়াজের রস এবং এক টেবিল চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। তুলা দিয়ে মিশ্রণটি রাতে ঘুমানোর আগে আঁচিলে লাগান সকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । প্রতিদিন মিশ্রণটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ।
অ্যালোভেরা এবং মধু
এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং এক টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে তৈরি করুন এই ভেষজ ঔষধ । তারপর তুলার সাহায্যে মিশ্রণটি আঁচিল এ লাগান ভালো ফলাফলের জন্য দিনে অন্তত তিনবার মিশ্রণটি ব্যবহার করেন ।
রসুন
ভেষজ ওষুধ গুণসম্পন্ন রসুন আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় । আঁচিল দূর করার জন্য আমরা এই ভেষজ রসুন ব্লেন্ডার করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে আমরা অচিল থেকে রক্ষা পেতে পারি ।
ভিটামিন সি ব্যবহার
ভিটামিন সি ব্যবহার করলে আঁচিল দূর হয় । এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো লেবু, মালটা আস ব্লেন্ডার করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে আঁচিল দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ।
আঁচিল দূর করার ক্রিম
এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে আঁচিল দূর করার ক্রিম রয়েছে যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ফার্মেসি থেকে কিনে এটা ব্যবহার করতে পারি । সবচেয়ে কমন এবং কার্যকরী কয়েকটি ক্রিমের নাম নিচে দেয়া হলো -
- keranil Cream
- Kerasol Cream
- Salicid Cream
- Salidex Cream
ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম:
ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম হলো সামান্য পরিমাণের ক্রিম নিয়ে আঁচিলের উপর লাগিয়ে 24 ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । ২৪ ঘন্টা পর পুনরায় লাগাতে হবে , তবে আঁচিল দূর হয়ে গেলে আর লাগানোর প্রয়োজন নেই । খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন অবস্থাতেই ক্রিম চোখে না লাগে । অনেক ক্ষেত্রে চোখের পাতায় কিংবা কিনারায় আঁচিল হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে এই ক্রিম লাগানো নিরাপদ নয় ।
আঁচিল অপারেশন
আধুনিক চিকিৎসার বদৌলতে আমরা খুব সহজেই অপারেশন করে আঁচিলের অপসারণ করতে পারি । আঁচিল অপারেশন এর পদ্ধতি হলো লেজার পদ্ধতি, এই ট্রিটমেন্টের নাম সিওটু লেজার আঁচিল হোক বা তিল হোক এটি সরানোর পর কোন দাগ থাকে না ।
মাত্র ১০ মিনিটে লেজার পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা আঁচিল অপারেশন করতে পারি । এটি যে খুব একটা ব্যয়বহুল তাও নয় অল্প খরচে এই অপারেশন সম্পন্ন করা যায় ।
লেখকের মন্তব্যঃ
প্রিয় পাঠক আশা করি আমাদের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন এই ধরনের আরো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url