ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার মেয়াদ শেষ হলে করণীয় কি

বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির দরুন প্রতিবছর বাংলাদেশী নাগরিক এর একটা বিরাট অংশ ভারতে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য গমন করে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার মেয়াদ শেষ হলে করণীয় কি এবং ভারতের প্রবেশের পর মেডিকেল ভিসা ধারকদের আর আর এফ ও নিবন্ধন কিভাবে করতে হয় আজকে আপনারা এই বিষয়ে জানতে পারবেন।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার মেয়াদ শেষ হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক আজকে আপনারা আরো যেসব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন তা হল ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার ফরম পূরণের নিয়ম, ইন্ডিয়ান ডাক্তারদের এপয়েন্টমেন্ট কিভাবে নিতে হয় এবং মেডিকেল এটেনডেন্ট ভিসা কি এই সম্পর্কে।

ইন্ডিয়ান ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার নিয়ম।

প্রিয় পাঠক, আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন ইন্ডিয়ান ডাক্তারদের এপয়েন্টমেন্ট কিভাবে পাওয়া যায় এই বিষয়টি। ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা জন্য আবেদন করার আগে সর্বপ্রথম আপনাকে যা করতে হবে তা হলো আপনি ইন্ডিয়ার যে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে চান অনলাইনে সেই হাসপাতালের ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।

সেজন্য আপনাকে যা করতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ওয়েবসাইটে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল পেশেন্ট সেকশনে ( International Patient section) যান। তারপর যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন( Contract Form) বা ইমেইলে আপনার তথ্য দিন, রোগের বর্ণনা, আনুমানিক ভ্রমণের তারিখ, এসব লিখে মেইল করুন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফিরতি মেলে তারা রোগীর প্রেসক্রিপশন রিপোর্ট আর পাসপোর্ট এর তথ্য চাইবে।

এরপর আপনার কাছে তারা এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ভিসা ইনভাইটেশন লেটার পাঠিয়ে দেবে। যদি এই কাজগুলো ঝামেলা মনে হয় তাহলে আপনি কোন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে তাদের দ্বারা কাজগুলো করে নিতে পারবেন। এছাড়া কিছু হাসপাতাল রয়েছে তারা সরাসরি অ্যাপোয়েন্টমেন্ট গ্রহণ করেন। এখানে তাদের অনলাইন পোর্টালে গেলে ডাক্তার, তারিখ ও সময় নির্বাচন করে পেমেন্ট করলেই এপয়েন্টমেন্ট সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন।

মেডিকেল এটেনডেন্ট ভিসা।

বাংলাদেশী কোনো নাগরিক ভারতে চিকিৎসা করার উদ্দেশ্যে গমন করলে রোগী একা যান না। সাধারণত রোগী যাবেন ও তার সাথে এক বা একাধিক ব্যক্তি যাবেন, যাদেরকে মেডিকেল এটেনডেন্ট বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সবারই ভিসা লাগবে। রোগীর ভিসা হবে মেডিকেল ভিসা আর এটেনডেন্টদের ভিসা হবে মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট ভিসা। 

এই ধরনের ভিসাকে বলে মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট ভিসা। একটি সাধারণ ভিসা করতে গেলে যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট ভিসা করার জন্য একই ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে। অতিরিক্ত একটি কাগজ লাগবে তা হলো ইন্ডিয়ান হাইকমিশনারকে অ্যাড্রেস একটি ভিসা লেটার। এখানে বিষয় হবে, আপনি আপনার রোগীর অ্যাটেনডেন্ট হিসাবে ভিসা চাচ্ছেন। 

এই লেটারে রোগীর পাসপোর্ট নাম্বার উল্লেখ থাকবে। রোগীর ইনভাইটেশন নেওয়ার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে চাইবে তার পাসপোর্ট দেয়ার জন্য। সেগুলো দিলে রোগীর ভিসা ইনভাইটেশন লেটারে এটেনডেন্ট নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার উল্লেখ থাকবে আর এটা দিয়ে আবেদন করতে পারবে।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ২০২৩ ।

এখন ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগবে সেই বিষয়গুলো নিচে দেয়া হল।
  • পাসপোর্ট এর মেয়াদ ভিসা আবেদনের পূর্বে সর্বনিম্ন ছয় মাস হতে হবে। পাসপোর্টে অন্তত দুইটি সাদা পাতা থাকতে হবে।
  • আপনার আবেদন পত্রের সাথে পুরনো যত পাসপোর্ট আছে তা জমা দিতে হবে।
  • সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। রঙিন ছবি যেন পুরো মুখমন্ডল দেখা যায় এবং ছবির পিছের অংশ সাদা হতে হবে। উল্লেখ্য ছবি তিন মাসের বেশি পুরনো যেন না হয়।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ইউটিলিটি বিলের অনুলিপি।
  • প্রার্থী চাকুরিজীবী হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সনদ(NOC), শিক্ষার্থী হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড এর অনুলিপি অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত কাগজপত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী হলে বাণিজ্যিক সনদপত্র (ট্রেড লাইসেন্স) কৃষিজীবী হলে জমির পর্চা প্রয়োজন।
  • আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণপত্র যেমন আবেদনকারীর জনপ্রতি ১৫০ মার্কিন ডলার সমান মানের বৈদেশিক মুদ্রার এসডোর্সমেন্ট অথবা সর্বশেষ তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে একাউন্টে ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক ব্যালেন্স দেখাতে হবে
  • অনলাইন ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম যেটাতে BGD নিবন্ধন নম্বর থাকতে হবে।
  • আবেদনকারীকে অনলাইন এপ্লিকেশন ফরমেট দেওয়া নির্ধারিত স্থানে তাদের ছবি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
  • আবেদনকারীকে অবশ্যই এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে হবে যেন বর্তমান পাসপোর্ট এর জন্ম তারিখ জন্মস্থানের সাথে পুরনো পাসপোর্ট এর জন্ম তারিখ জন্মস্থান জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন তথ্যের সনদ মিল থাকে।
  • সাক্ষাতের দিন আবেদনপত্রের সাথে অবশ্যই পুরনো পাসপোর্ট গুলো আপনাকে জমা দিতে হবে পুরনো পাসপোর্ট জমা ছাড়া আবেদন পত্র অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
  • অনলাইনে আবেদনের ১০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
  • সুনির্দিষ্ট তারিখ সহ ইন্ডিয়ান ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট লেটার।
  • সাম্প্রতিককালের সকল প্রেসক্রিপশন ও রিপোর্ট এর ফটোকপি ও মেন কপি।

ইন্ডিয়ান ভিসা প্রসেসিং ফি।

অন্যান্য ভিসার ন্যায় মেডিকেল ভিসার প্রসেসিং ফি ৯০০ টাকা। এই ফ্রি আপনি চাইলে ব্যাংক একাউন্ট, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও বিকাশ দিয়ে সহজে পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়া আপনি সরাসরি ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার এর আশেপাশের দোকান থেকেও এ ফি জমা দিতে পারবেন।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা ফরম নিয়ম।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার ফরম পূরণ করার নিয়ম একটি সাধারন ভিসা ফরম পূরণ করার নিয়মের মতোই। তবে এখানে বাড়তি কিছু নিয়ম রয়েছে যা অত্যন্ত সতর্কতার সহিত আপনাকে পূরণ করতে হবে। চলুন সে সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক-

এখানে শুধু আবেদনের শুরুতে মেডিকেল ভিসার জন্য মানে রোগীর ভিসার আবেদনের জন্য ভিসার ধরন (Visa Type) মেডিকেল ভিসা(Medical Visa) সিলেক্ট করতে হবে এরপর পারপজ (Purpose) হবে ফর পেসেন্ট (For patients) । 

রোগীর সাথে যারা যাবেন অর্থাৎ মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট এর জন্য ভিসা টাইপ (Visa Type) হবে মেডিকেল ভিসা (Medical Visa) পারপোজ (Purpose) হবে ফর ফরেন ন্যাশনাল কামিং অ্যাজ মেডিকেল অ্যাটেনডেন্স ( For Foreign Nationals Coming As Medical Attendants) সিলেক্ট করবেন।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা পেতে কতদিন লাগে ।

মেডিকেল ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার ৭২ ঘন্টার মধ্যে হাতে পাওয়া যায়। তবে জরুরী অবস্থার ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন করার দিনেই ভিসা পাওয়া যেতে পারে। ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলোতে এক ধরনের টোকেনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই টোকেনের মাধ্যমে ভিসা ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করা যায়।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার মেয়াদ কতদিন ।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ এক (১) বছর হয়ে থাকে এই মেডিকেল ভিসায় ভারতে তিন (৩) বার প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় রোগীদের ক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করতে হয় সেক্ষেত্রে ভারত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হাসপাতাল থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়ার পর রাজ্য সরকারের বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিস এর অনুমতি ক্রমে মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা সংক্রান্ত কিছু সতর্কতা।

আপনি যখন ভারতীয় দূতাবাসের ভেতরে প্রবেশ করবেন তখন কোন ধরনের ব্যাগ অনুমিত নয় তাই ভিসার আবেদন জমা দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো একটি স্বচ্ছ ফাইলের ভিতর নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। ভারতে প্রবেশের ভ্রমন কর বাবদ সোনালী ব্যাংক বরাবর ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে । সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়ে রশিদ সঙ্গে রাখবেন যেন ভারতে প্রবেশের সময় কোন বিড়ম্বনা করতে না হয়।

ইন্ডিয়ান ভিসার মেয়াদ শেষ হলে করণীয় ।

ভারতে গিয়ে যদি আপনাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তাহলে আপনার করণীয় কি আসুন এই বিষয়ে এখন বিস্তারিত আলোচনা করি। আসলে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার ভিসার মেয়াদ কত তারিখে শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

অনিচ্ছাকৃত ভুলবশত আপনি না বুঝতে পারেন যে ভিসার মেয়াদ পার হয়ে গেছে সেই ক্ষেত্রে আপনি কি করবেন চলুন এখনই এটা নিয়ে বলি। 

এক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে কোন কোন ভিসার মেয়াদ ভারত থেকে বৃদ্ধি করা যায় আর কোন কোন ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় না। যেসব ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় না সেগুলো নিম্নরূপ টুরিস্ট ভিসা, মেডিকেল ভিসা ও বাণিজ্যিক ভিসা। যেসব ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্কিং ভিসা। 

ভুলবশত যদি আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি? সবচেয়ে সহজ বিষয় যেটা সেটা হল ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা নেওয়া। ভারতে বাংলাদেশের তিনটি দূতাবাস রয়েছে কলকাতা, দিল্লী এবং আগরতলা। এই তিনটি দূতাবাসের থেকে আমরা আমাদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করে নিতে পারি। 

তবে সকল প্রকার আইনি ঝামেলা এড়ানোর জন্য আপনাকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরে আসা উচিত। এই বিষয়ে আপনাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।

মেডিকেল ভিসা ধারকদের (FRRO) এফ আর আর ও নিবন্ধন।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার যাদের ক্ষেত্রে এক বছরে একাধিক এন্ট্রি জারি করা হয়েছে এমন ভিসা আবেদনকারীরা ভারতে গমনের ১৪ দিনের মধ্যে নিজেদের নিকটতম( বিদেশী আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিস) এ নিবন্ধন করার পরামর্শ দেয়া হল। যে সকল ভিসাধারী এ নিবন্ধন করাতে ব্যর্থ হবে তাদেরকে জরিমানা করা হবে। অনলাইনেও (FRRO) নিবন্ধন করা যাবে।


লেখকের মন্তব্যঃ

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির দরুন বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে ভারতে গমন করে থাকে। দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে গেলে আমাদের মধ্যে হাজারো সঙ্কা কাজ করে। তাই ভিসা আবেদনের প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে সময় ও অর্থ অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url