একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণকে কাদের নামে বিন্যস্ত করা হয়

একুশে গ্রন্থ মেলার ইতিহাস খুব বেশি দিনের না হলেও এটি বাঙালি জাতির সংস্কৃতির সাথে গভীর ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে এই মেলা শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলে। এটি শুধু বইমেলা বললে ভুল হবে এই মেলা লেখকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণকে কাদের নামে বিন্যস্ত করা হয় এই বিষয়টি সম্পর্কে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে।
একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণকে কাদের নামে বিন্যস্ত করা হয় এ বিষয়টি যদি জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণকে কাদের নামে বিন্যস্ত করা হয়
আজকের এই আর্টিকেল পড়লে একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণকে কাদের নামে বিনস্ত করা হয় এই বিষয়টি জানার পাশাপাশি আপনারা আরও জানতে পারবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার ইতিহাস, অমর একুশে গ্রন্থমেলা কোথায় অনুষ্ঠিত হয় এই বিষয়গুলো।

অমর একুশে বইমেলা

অমর একুশে বইমেলা বা গ্রন্থমেলা বাঙালি জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বইমেলা ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৮৪ সালে এসে পরিপূর্ণতা পায়। একুশে বইমেলার পথ চলা খুব বেশিদিন না হলেও এটি বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। বইমেলা ছাড়া আমাদের সংস্কৃতি অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা শুরু হয়।

বই প্রেমিকের মন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ফেব্রুয়ারি আসবে বইমেলায় যাব। কোটি বাঙ্গালীর প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠেছে অমর একুশে বইমেলা বা গ্রন্থমেলা লেখক প্রকাশক পাঠকের একটি মিলন মেলায় পরিণত হয় অমর একুশে বইমেলা।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই মেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগ কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়াদি উদ্যানে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

একুশে বইমেলার ইতিহাস।

একুশে বইমেলার ইতিহাস জানার জন্য আমাদের একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে। অমর একুশে বইমেলা বা গ্রন্থ মেলার ইতিহাস জানতে গিয়ে আমরা যে উত্তরটি পেয়েছি তা সংক্ষিপ্ত আকারে নিচে দেয়া হল-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্তমান হাউস প্রাঙ্গনে মাত্র ৩২ টি বই নিয়ে তৎকালীন একটি বইমেলা শুরু হয় ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে। এই ৩২ টি বই ছিল চিত্ররঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। তাহলে একথা বলা যায় যে চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বই মেলার সূচনা হয়।

চিত্তরঞ্জন সাহার একক প্রচেষ্টায় ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে এসে তৎকালীন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকীর অক্লান্ত পরিশ্রমে বইমেলা সরাসরি সম্পৃক্ত হয় বাংলা একাডেমি সাথে। এরপর ১৯৭৯ সালে একে একে বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি বইমেলার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে যার প্রতিষ্ঠাতা অবশ্য সেই চিত্তরঞ্জন সাহা।
বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থ মেলার আয়োজন পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় ১৯৮৩ সালে তৎকালীন বাংলা একাডেমীর পরিচালক কাজী মনজুরে মওলা এর তত্ত্বাবধানে। কলকাতা থেকে আনা ৩২ টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া সেই অতি ক্ষুদ্র মেলাটি কালের বিবর্তনে এখন অমর একুশে বই মেলা বা গ্রন্থমালা রূপ ধারণ করেছে। ২০১৪ সালের এসে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গন ছাড়িয়ে বইমেলা ছড়িয়ে পড়ে সোহরাওয়াদি উদ্যান পর্যন্ত।

একুশে বইমেলা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবছর পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে অমর একুশে বইমেলা বা গ্রন্থ মেলা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্বে অবস্থিত বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে। (বাংলা একাডেমীর পূর্ব নাম বর্ধমান হাউস) ২০১৪ সাল থেকে স্থান সংকল্যান না হওয়ার দরুন অমর একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে সোহরাওয়াদি উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়।

একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণকে কাদের নামে বিন্যস্ত করা হয়।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা বেশ কয়েক বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো। এরপর ক্রেতা দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি শেষ দিন পর্যন্ত এই মেলা চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর থেকেই ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মেলার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে। প্রকাশনী সমূহের স্টলগুলো প্রকাশক এলাকায়, প্রকাশক- বিক্রেতা এলাকা, শিশু কর্নার, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নিটোল ম্যাগাজিন ইত্যাদি এলাকায় বিভাজন করে স্থান দেয়া হয়।

এছাড়া মেলা চত্বরকে ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ভাষাবিদ ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমূখ ব্যক্তিদের নামে বিন্যস্ত করা হয় করা হয়।

অমর একুশে গ্রন্থ মেলার প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য।

বর্তমানে অমর একুশে বইমেলা বা গ্রন্থ মেলায় দেশীয় বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এর পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন ভারত, রাশিয়া, জাপান থেকেও নানান প্রকাশনা সংস্থা তাদের বই ও প্রকাশনা নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এই মেলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেরও অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও শিল্প কর্পোরেশন ইত্যাদি মেলায় অংশগ্রহণ করে।

এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় মেলাতে ইদানিং বিভিন্ন ডিজিটাল প্রকাশনা যেমন সিডি, ডিভিডি ইত্যাদিও স্থান করে নিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি তাদের সেবা সম্পর্কের গ্রাহক সেবা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্টল নিয়ে থাকে। মেলায় রয়েছে ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা। মেলার কর্নারে থাকে তথ্য কেন্দ্র।

মেলা প্রাঙ্গনে ধূমপান নিষিদ্ধ। মেলায় বই বিক্রয়ের সুবিধার্থে ২০-২৫% পর্যন্ত ছাড় দেয়া থাকে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে আরও অতিরিক্ত ৫% ছাড় অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীরা ৩০% ছাড়ে অমর একুশে বইমেলা থেকে বই কিনার সুযোগ পাবেন। এছাড়া মেলার পরিবেশ ও নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
মেলায় প্রবেশের জন্য ছুটির দিন এবং ছুটির দিন ব্যতীত প্রবেশের সময় আলাদা আলাদা নির্ধারণ করা থাকে। মেলায় প্রবেশের জন্য কোন প্রকার প্রবেশ ফি ধার্য করা হয় না।
বইমেলার অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি।

বইমেলায় বই কেনাবেচার পাশাপাশি প্রতিদিনই বিভিন্ন আলোচনা সভা কবিতা পাঠের আসর বসে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মেলাতে লেখক কুঞ্জ রয়েছে, সেখানে লেখকরা উপস্থিত থাকেন এবং তাদের বইয়ের ব্যাপারে পাঠক দর্শকদের সাথে বিনিময় করেন। প্রতিদিন বই মেলা তথ্য কেন্দ্র থেকে নতুন বইয়ের মোরক উন্মোচন, বইগুলোর নাম, লেখক প্রকাশকের নাম ঘোষণা করা হয়।

২০১০ সাল থেকে বইমেলার প্রবর্তক চিত্তরঞ্জন সাহা নামে একটি পদক প্রবর্তন করা হয়। পূর্ববর্তী বছরে প্রকাশিত বইগুলোর গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশক কে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারটির আনুষ্ঠানিক নাম চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার।সর্বাধিক গ্রন্থ ক্রয়ের জন্য সেরা ক্রেতাকে দেয়া হয় পলান সরকার পুরস্কার।

পূর্ববর্তী বছরে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুনির চৌধুরী স্মৃতি পুরুস্কার ১ম, ২য়, ৩য় প্রদান করা হয়। পূর্ববর্তী বছরে প্রকাশিত শিশু গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক বইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

বইমেলায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা।

ইতিপূর্বে বইমেলায় কখনো অংশগ্রহণ করেনি এমন পুরানো পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের যদি সর্বমোট ১০০টি অথবা বিগত এক বছরের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ টি মানসম্মত এবং সম্পূর্ণ নতুন প্রকাশকদের ক্ষেত্রে বিগত তিন বছরের ৩০ টি মানসম্মত সৃজনশীল সাহিত্য বিজ্ঞান ও গবেষণা ধর্মী বই প্রকাশ করে থাকে তাহলে তাদের স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রকাশিত বই অবশ্যই পরিচালনা কমিটির বিবেচনায় মানসম্মত হতে হবে।
  • ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সময়কাল তিন বছর হতে হবে।
  • যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসম্মত বই রয়েছে তাদের স্টল বরাদ্দের বিষয়টি পরিচালনা কমিটির বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন।
  • আবেদনপত্রের সাথে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, লেখকের সহিত সম্পাদিত চুক্তিপত্রের কপি এবং প্রকাশিত বই জাতীয় আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের জমা দেওয়ার প্রত্যয়ন পত্র, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লেখককে রয়ালিটি প্রদানের প্রমাণপত্র ও অগ্নি সাইক্লোন বীমার সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।
  • বইমেলায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে চিরায়ত গ্রন্থ বিবেচিত হবে না।

লেখকের মন্তব্যঃ

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমাদের মাঝে বই পড়া কিছুটা ভাটা পড়েছে। বই আমাদের জ্ঞান ভান্ডারকে যে সমৃদ্ধ করে এই কথা অনেকটা ভুলে যেতে বসেছি। পশ্চিমা অপসংস্কৃতি অবাধ বিচরণের ফলে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের যুব সমাজকে পশ্চিমা অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় বই পড়ার বিকল্প কিছু নেই। তাই আমি বলব আপনারা নিয়মিত বই পড়বেন। প্রতিবছর বইমেলায় অন্তত দুটি করে বই কিনুন। আসুন বই কিনি, বই পড়ি, দেশ ও জাতির সম্পদ হয়ে উঠি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url