১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। তাদের এই আগ্রহ থেকেই আমার আজকের পোস্টটি লেখার অনুপ্রেরণা। যে জাতির জ্ঞান ভাণ্ডারে ইতিহাস যত বেশি সমৃদ্ধ সেই জাতির ততো বেশি উন্নত। ইতিহাস আমাদের সামনে অগ্রসরের পথ সূচনা করে।
একজন সু-নাগরিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ইতিহাসের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা। আশা করি আমার এই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার ফলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে আপনার কিছুটা জ্ঞান লাভ হবে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
পাকিস্তানের জাতির জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ ই আগস্ট ভারতীয় উপমহাদেশে দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের দুটি অংশে বিভক্ত ছিল পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান ( বাংলাদেশ)।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সাথে বিমাতা সুলভ আচরণ শুরু করে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে দাবিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এরই অংশ হিসাবে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের ভাষার উপরে আঘাত আনে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই। ঢাকায় ছাত্ররা তমুদ্দিন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাশেমের নেতৃত্বে র্যালি বের করে। বৈঠকে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা এবং পূর্ব বাংলার শিক্ষার মাধ্যম করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মুদ্রার নোট এবং স্টাম্প থেকে বাংলা মুছে ফেলা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এতে বাঙালি জনগণ বিক্ষুব্ধ হয় এবং ছাত্রদের একটি অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাকে সরকারি ভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিছিল ও সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানায়।
ভাষার উপর আঘাতঃ
পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। পাকিস্তানের জাতির জনক বলে খ্যাত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রথমে ভাষার উপরে আঘাত হানে। বাঙালিরা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ সংখ্যাগরিষ্ঠের বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে সংখ্যালঘিষ্ঠের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার একটি ঘৃণ চক্রান্ত শুরু করে।
বাঙ্গালীদের ভাষাগত স্বাধীনতা হরণের প্রথম প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় মোহাম্মদ আলী জিন্নার ঘোষণাতে। তিনি প্রকাশ্যে এক জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। ১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ ঢাকায় জিন্নাহ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, তার এই সিদ্ধান্ত বাঙালি জনগণ মেনে নিতে পারেনি।
আরো পড়ুনঃ কোন কোন ফল খেলে দ্রুত লম্বা হওয়া যায়
বাঙালি জনগণ তখন দাবি জানাল যে, উর্দু ও বাংলা উভয়েই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে। কারণ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক পূর্ব বাংলায় বসবাস করে এবং তাদের মুখের ভাষা যেহেতু বাংলা। কিন্তু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী জনগণের এই দাবি মেনে নেয়নি।
আন্দোলনের সূচনাঃ
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি উত্থাপন করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবের উপর সংসদের তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয় ।মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণা কে কেন্দ্র করে ১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
বাঙ্গালীরা জিন্নার ঘোষণাকে অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচার মুলক বলে ঘোষণা করে। জিন্না বুঝতে পারেন যে মনের অজান্তে ওইদিন তিনি পাকিস্তানে উভয় অঞ্চলের মধ্যে বিচ্ছিন্নতারবীজ বপন করলেন এবং এটা পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পতন কে ত্বরান্বিত করল। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের শুরু হয় ভাষাকে কেন্দ্র করে তীব্র আন্দোলন।
খাজা নাজিম উদ্দিন এর ঘোষণাঃ
১৯৫১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান আততায়ীর হাতে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন খাজা নাজিম উদ্দিন। খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্র পরিচালনা ক্ষেত্রে খুব একটা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। খাজা নাজিম উদ্দিন ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় এক জনসভায় ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তার এই ঘোষণায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এর মাঝে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে।
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনঃ
খাজা নাজিম উদ্দিন এর ঘোষণা কে কেন্দ্র করে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। এরপর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। জনাব আবুল হাসিম, জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব কামরুদ্দিন আহমেদ ও জনাব তোহা ছিলেন এই রাষ্ট্রভাষার সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য।
ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণঃ
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হওয়ার পর ভাষা আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে ওঠে। তৎকালীন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ছাত্ররা ২১ শে ফেব্রুয়ারি উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় মিছিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ছাত্রদের কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের ১৪৪ ধারা জারি করেন।
ভাষা আন্দোলনকারীরা সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ঐদিন সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেয়া হয় হরতালের সমর্থনে ১০ জন ১০ জন করে মিছিল বের করে। ভাষা আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান সরকার পুলিশ বাহিনী কে মাঠে নামিয়ে দেয়। পুলিশ ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষন করে।
পুলিশের গুলিতে নিহত হন বরকত, সালাম, জব্বার ও রফিকসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ভাষা আন্দোলন সমর্থন করা জন্য মাওলানা ভাসানী, জনাব আবুল হাসিম, অধ্যাপক মুজাফফর সহ অনেককেই গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের গুলিতে নিরীহ ছাত্র জনতা শহীদ হওয়ার প্রতিবাদে সমগ্র পূর্ব বাংলা বিদ্রোহের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে।
২২ ও ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা শোভাযাত্রা সহ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান, একজন রিকশা চালক এবং অলিউল্লাহ নামক কিশোর। ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়।
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে পদত্যাগ করেন। ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে রাতারাতি ছাত্ররা তৈরি করে শহীদ মিনার। ২৪ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ শে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য ।
বাঙালি জাতীয় জীবনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত সদুর প্রসারী। ভাষা আন্দোলন কে কেন্দ্র করে বাঙ্গালীদের মধ্যে যে জাতীয়তাবাদের অন্বেষ চেতনা বোধ সৃষ্টি হয় তা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
বাঙ্গালীদের অধিকার সচেতনতা সৃষ্টিঃ
১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজদৌলার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। এরপরে সুদীর্ঘ ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনামলের ইতিহাস লক্ষ্য করলে আমরা আরও দেখতে পাই বাঙালিরা কখনোই তাদের অধিকার আদায় এর ব্যাপারে মরিয়া ছিল না। ব্রিটিশ শাসনামলে বাঙালিরা সবসময় ব্রিটিশদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত হয়েছে।
বাংলা ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলার জনগণ তথা বাঙ্গালীদের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয় এর মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীদের মধ্যে নিজেদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। কিভাবে শাসকদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হয় এই সচেতনতাবোধ ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে।
তাই সর্বপ্রথম বাঙালি জাতির ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়েছিল। অতএব বলা যায় ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙ্গালীদের মধ্যে নিজেদের অধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির হয়।
বাঙ্গালীদের রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টিঃ
ব্রিটিশ ভারতের রাজনীতির দিকে লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায় যে বাঙালি জাতি ব্রিটিশ আমলের রাজনৈতিকভাবে তেমন সচেতন ছিলেন না। বিক্ষিপ্তভাবে পূর্ব বাংলার কিছু কিছু এলাকায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠলেও তা সুসংগঠিত ছিল না। এর ফলে বাঙালি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক আন্দোলনকে জোরদার করতে পারেনি।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতি সর্বপ্রথম একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেই ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই মূলত বাঙ্গালীদের রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
স্বাধীনতার স্বপ্নঃ
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতি সর্বপ্রথম স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয় এবং বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করে। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় যে ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে সেই আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে ১৯৭১ সালের পূর্ব বাংলার জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
সাংস্কৃতিক আন্দোলনঃ
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে আমরা সাংস্কৃতিক আন্দোলন বলতে পারি। ভাষা যেহেতু সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাই ভাষা আন্দোলন একটি সংস্কৃতি আন্দোলনে বটে। এই আন্দোলন বাঙালি জাতির মধ্যে সাংস্কৃতিক সচেতনতা সৃষ্টি করে। ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে দেশাত্ববোধক গান, মিছিল সমাবেশ, শহীদ মিনার তৈরি সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন এগুলোর মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সচেতনতা গড়ে ওঠে।
রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতাঃ
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন সময় পূর্ব বাংলায় বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে ওঠে যেমন ছাত্রদের ১১ দফা, শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ একাত্তরের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
অধিকার আদায়ের আন্দোলনঃ
১৯৪৭ সালের ভাষা আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৫৬ সালের গণপরিষদ কর্তৃক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই আন্দোলনের সফলতা মধ্য দিয়ে বাঙালিরা একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে যে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা অর্থাৎ একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব।
বাঙালি জাতি কিভাবে অধিকার আদায় করে নিজের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি হয় ১৯৫৬ সালের ভাষা আন্দোলন সফলতার মধ্য দিয়ে।
লেখকের মন্তব্যঃ
পরিশেষে বলা যায় যে, ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির মুখের ভাষাকে রক্ষা করার জন্য একটি নিরস্ত্র জাতির সশস্ত্র পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রত্যক্ষ আন্দোলন। পৃথিবীতে বাঙালি জাতি একমাত্র জাতি যে জাতি ভাষার জন্য নিজেদের বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। এর স্বীকৃতি স্বরূপ এখন সারা বিশ্বের প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। যা বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গৌরবের একটি বিষয়।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url