আপনি কি জানেন! ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

কিডনির কার্যকারিতার দুর্বলতার কারণে রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ বেড়ে যায় এর ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের একটি সাধারণ প্রশ্ন থাকে ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়। ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এই প্রশ্নের উত্তর যারা খুঁজছেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই মূল্যবান। কেননা আজকের এই আর্টিকেলে আমি ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এই বিষয়টি জানার পাশাপাশি আরও জানতে পারবেন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত? ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে? ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া লক্ষণ গুলো কি কি?

ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়।

রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এই বিষয়টি জানতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে একজন মানুষের শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কত এবং এই স্বাভাবিক মাত্রা পরিমাণ কি পরিমাণের বেড়ে গেলে তা ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে বা ক্ষেত্র বিশেষে ডায়ালাইসিস করতে হয়। 

তাহলে চলুন স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের শরীরের রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সম্পর্কে জেনে আসি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়।
রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক মাত্রা।
  • প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে 0.6-1.2 মিলিগ্রাম/প্রতি ডেসিলিটার
  • প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে 0.5-1.1 মিলিগ্রাম/প্রতি ডেসিলিটার
  • শিশুদের ক্ষেত্রে 0.3-0.7 মিলিগ্রাম/প্রতি ডেসিলিটার
  • কিশোরদের ক্ষেত্রে 0.5-1.0 মিলিগ্রাম/প্রতি ডেসিলিটার
  • যাদের শরীরে একটি কিডনি নেই তাদের ক্ষেত্রে 1.8 মিলিগ্রাম/প্রতি ডেসিলিটার
বিভিন্ন বয়সে ও যাদের শরীরে একটি কিডনি নেই তাদের শরীরের রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত থাকে এটি আমরা জানলাম এখন প্রশ্ন হল এই মাত্রা কি পরিমান বেড়ে গেলে তা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে সেটি জানা প্রয়োজন। 
বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৫.০ মিলিগ্রাম বা ডেসিলিটার এর চেয়ে বেশি এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ২ মিলিগ্রাম হলে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

ক্রিয়েটিনিনের উপর পুরোপুরি নির্ভর করে ডায়ালাইসিস হয় না। আপনার কিডনি কতটা রক্ত ফিল্টার করে তা নির্ধারণ করে Glomeralar Filtration Rate( GFR) বা কিডনির ক্রিয়েটিনিন ফিল্টারের কার্যকারিতা। GFR এর স্বাভাবিক হার 100. কিডনির ক্রিয়েটিনিন ফিল্টারের কার্যকারিতা উপর নির্ভর করে ডায়ালাইসিস গ্রহণ করতে করা যেতে পারে। 

ভারতের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার উপাল সেনগুপ্ত বলেন,“ GFR 30 এর নিচে হলে ভবিষ্যতে ডায়ালাইসিস গ্রহণ করতে হবে এটা অনুমান করা যায়। GFR 20 নিচে হলে ডাক্তাররা ডায়ালাইসিস গ্রহণের পরামর্শ দেন। আর যদি GFR 15 নিচে চলে আসে তাহলে অবশ্যই ডায়ালাইসিস গ্রহণ করতে হবে।”

ভারতের আরেক কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রতিম সেনগুপ্ত এর মতানুসারে,
“রক্তে ক্রিয়েটিনিন বাড়লে যে ডায়ালাইসিস করতে হবে এ কথা ঠিক নয়। একজন রোগীর ডায়ালাইসিস করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টর কাজ করে। ডায়ালাইসিস গ্রহণ করার প্রধানতম কারণ হতে পারে কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া। 

কিডনি আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন উপাদান ফিল্টার করে বের করে দেয় তার মধ্যে অন্যতম ক্রিয়েটিনিন। শুধুমাত্র ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা দিয়ে বোঝার উপায় নেই যে আমাদের কিডনি ভালো না নষ্ট হয়ে গেছে। কিডনি আমাদের শরীর থেকে ক্রিয়েটিনিন বের করে করা ছাড়াও প্রায় ১২০ ধরনের কাজ করে থাকে। 
কোন রোগীর ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পরও কিডনি ড্যামেজ হওয়ার অন্যান্য উপাদান ভালো থাকলে ডায়ালাইসিস এর প্রয়োজন হয় না। শরীরের হরমোন, এসিডিটি, নার্ভাসনেস, ঘুম ভালো হওয়া বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডায়ালাইসিস করা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বেড়ে গেলেই যে ডালাইসিস গ্রহণ করতে হবে এই ধারণা একেবারে গৌণ। 

রোগীর শারীরিক অন্যান্য দিক বিবেচনা করে একজন নেফ্রলজিস্ট ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে রোগীর ডায়ালাইসিস গ্রহণের প্রয়োজনেতা আছে কিনা।” আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে রক্তের ক্রিয়েটিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ডায়ালাইসিসের একমাত্র কারণ নয় এর সাথে অন্যান্য কারণে রয়েছে।

ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে।

উপরের অংশটি পড়ে আপনার নিশ্চয়ই ধারণা হয়েছে যে, কিডনি আমাদের শরীরের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আর এই কিডনিতে যদি সমস্যা থাকে তাহলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেবে। আলোচনার এ পর্যায়ে আমি ক্রিয়েটিনিন বাড়ার কারণ সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।
ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে
ক্রিয়েটিনিন বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- কিডনির রক্ত ফিল্টারিং করার কার্যকারিতা কমে যাওয়া। যখন কিডনির ফিল্টারিং করার কার্যকারিতা কমে যায় তখন রক্ত কিডনি দিয়ে অতিবাহিত হওয়ার সময় ক্রিয়েটিনিন রক্ত সঙ্গে থেকে যায় ফলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে গেলে বুঝতে হবে কিডনি ঠিকমত কাজ করছে না।
ক্রিয়েটিনিন বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ কিডনির রক্ত ফিল্টারিং করার কার্যকারিতা কমে যাওয়াকে মনে করা হলেও এর আরও বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন-
  • কিডনি সংক্রমণ,
  • অধিক পরিমাণের প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া,
  • পানি শূন্যতা,
  • ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া,
  • কিডনিতে পাথর হওয়া,
  • প্রস্রাবের থলিতে পাথর হওয়া,
  • দীর্ঘ মেয়াদে প্রস্রাবের ইনফেকশন,

ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ।

মানব শরীরের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার যে প্রবণতা রয়েছে তা একটি প্রাকৃতিক বিষয়। চাইলেও আমরা সহজে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকতে পারিনা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। আমাদের শরীর রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রাকৃতিক বিষয় বলে অসচেতনভাবে থাকা যাবে না একটু সচেতন থাকলে বিভিন্ন রোগ থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো।
রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরিমাণ বেড়ে গেলে আমাদের শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। এসব লক্ষণ গুলো দেখলে আপনি সহজে নির্ণয় করতে পারবেন যে আপনার শরীরে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। তাহলে চলুন আমরা জেনে আসি ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়।
  • শরীর ফুলে যাওয়া,
  • পায়ে পানি আসা,
  • ওজন কমে যাওয়া,
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া,
  • ঘন ঘন প্রসাব হওয়া,
  • শারীরিক দুর্বলতা,
  • চোখ ও চোখের পাতা ফুলে যাওয়া,
  • রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়া,
  • বমি বমি ভাব হওয়া,
  • মাথা ঘোরা,
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া,
  • বুকে ব্যথা হওয়া,
  • অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ,
  • প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া,
  • খাবারের স্বাদ না পাওয়া,
  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া,
  • ক্ষুধা মন্দা দেখা দেওয়া,
  • হাত ও পায়ের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়া,
  • জ্বর জ্বর ভাব অনুভব হওয়া,
  • কোমরের পিছনে ডানে বামে ব্যথা হতে পারে,
  • প্রসাব আটকে রয়েছে অনুভব করা,
  • শরীরের ঘাম বেশি বের হওয়া,
আশা করছি ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন এসব লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

কি কি খাবার খেলে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে।

খাবার আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয় এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটায়। দৈনন্দিন খাবার নিয়ম করে না খেলে তা আবার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতির কারণ হতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণে ডাক্তাররা কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেন।
কি কি খাবার খেলে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে
এবার আমি আপনাদের সাথে কি কি খাবার খেলে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করব। প্রিয় পাঠক, আপনার রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে নিচের উল্লেখিত খাবার গুলো এড়িয়ে চলুন তাহলে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হবে।


শাকসবজিঃ মিষ্টি আলু, ঢেঁড়স, সাজনা, ধনেপাতা, পুই শাক, লাল শাক, পালং শাক, সিমের বিচি, বরবটি, ছোলা এসব খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

ফলমূলঃ পাকা আম, জলপাই, ডাবের পানি, কলা, খেজুর, কমলা, তেতুল এসব ফল ও এসব ফলের জুস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

এছাড়া গরুর মাংস, খাসির মাংস, কলিজা, শুটকি মাছ, সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবেনা। তেলে ভাজা জিনিস ও কমল পানীয় কোলড্রিংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

প্রিয় পাঠক, একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে যাতে শরীরের পুষ্টির যোগান কমে না যায় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কিডনির কার্যকারিতার মাত্রার উপর নির্ভর করে খাবারের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়। 

আপনার কিডনির GFR যদি 60 নিচে হয় তাহলে ডাক্তাররা যেসব খাবার খেতে নিষেধ করে GFR 30,20,15 এর নিচে হলে তখন খাবার নিষেধের তালিকা আলাদা আলাদা হয়। কাজেই এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে কি কি খাবার খেলে ক্রিয়েটিনি বৃদ্ধি পায় তা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ কমে আপনার জেনে নেওয়া উচিত এবং সেই অনুযায়ী লাইফ স্টাইল পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই আপনার রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

লেখক এর মন্তব্যঃ

আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ক্রিয়েটিনিন সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লেখা কোন ডাক্তারের চিকিৎসা পত্র নয়। যেকোনো ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য আপনার উচিত হবে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। 

স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও লাইফস্টাইলে মানার মধ্য দিয়ে আপনি বড় রকমের রোগ আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। তাই আসুন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকি অর্থ ও সময় অপচয় রোধ করি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url