এলার্জি কি? নাকের এলার্জি কেন হয়?
আপনি ঘন ঘন নাকের এলার্জির তে আক্রান্ত হচ্ছেন এর সঠিক সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না তাহলে আমি বলব আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আপনি যদি নাকের এলার্জির সমস্যায় থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জানা উচিত এলার্জি কি? নাকের এলার্জি কেন হয়?
পাশাপাশি আরো জানতে পারবেন নাকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায়, এলার্জি হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায়? নাকের এলার্জির ওষুধের নাম, নাকের এলার্জির স্প্রের নাম এ বিষয়গুলো সম্পর্কে।
নাকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়।
পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের দেশে এলার্জিতে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । মানুষের শরীরে এলার্জির মাত্রা বেড়ে গেলে তা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।
এলার্জির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ চুলকানি হতে দেখা যায় বা চুলকায়। যেমন- চোখের পাতা, বগলের নিচে, চামড়ার উপরে চাকা চাকা দেখা যায়, নাকের অগ্রভাগ চুলকায়, চোখ লাল হয়ে যায় অর্থাৎ বিভিন্নভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশ এলার্জির উপসর্গ দেখা যায়।
নাকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় জানার পূর্বে আমাদের জানতে হবে এলার্জি কি? নাকের এলার্জি কেন হয়? এলার্জি হলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে।
এলার্জি কি?
এলার্জি একটি ইংরেজি শব্দ এর বাংলা শব্দ হচ্ছে অতি প্রতিক্রিয়া। এলার্জি বলতে পরিবেশে অবস্থিত কতগুলো বস্তুর উপস্থিতিতে কিছু কিছু ব্যক্তির দেহে প্রতিরক্ষাতন্ত্রের অতি সংবেদনশীলতার কারণে সৃষ্ট কতগুলি তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বুঝায়। এই বস্তুগুলি অধিকাংশ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত কোন সমস্যা তৈরি করে না।( তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া)
মানব দেহে যে সকল এলার্জির হয়ে থাকে তার শ্রেণীবিভাগ নিম্নরূপ-
স্কিন, ল্যাটেক্স, ফুড, পোলেন, ঠান্ডা জড়িত, ডাস্ট ও অন্যান্য ধরনের এলার্জি।
স্কিন এলার্জি
মানব শরীরের ত্বকের উপরের অংশে এক ধরনের এলার্জি হয় যাকে চিকিৎসার বিজ্ঞানের ভাষায় স্কিন এলার্জি বলে। স্কিন এলার্জি লক্ষণ গুলো হল ত্বকের উপরের অংশে চুলকায়, ত্বকের চাকা চাকা মাংসপিণ্ড দেখা যায়, শরীরের কোন স্থানে চুলকালে অন্য স্থানে চুলকানির অনুভূত হয় যা খুবই বিরক্ত কর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়।
এ ধরনের চুলকানি সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকেন। বিভিন্ন কারণে স্কিন এলার্জি হতে পারে যেমন বিষাক্ত কোন গাছের ও লতাপাতার সংস্পর্শ, অপরিচিত কোন পশুপাখির সংস্পর্শ এবং অলংকার পরিধানের কারণে এই ধরনের এলার্জি হতে পারে।
ল্যাটেক্স এলার্জি
ল্যাটেক্স শব্দটি আপনার কাছে অপরিচিত মনে হলেও এটি এক ধরনের এলার্জি সৃষ্টি করে। এই শব্দটি এসেছে মূলত ব্রাজিল থেকে যার অর্থ রাবার গাছের রস। গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে প্রাকৃতিকভাবে রাবার তৈরির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ল্যাটেক্স এলার্জি দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।
ল্যাটেক্স হচ্ছে রাবার গাছ থেকে উৎপন্ন এক ধরনের বিশেষ রস, এই রস ব্যবহার করে এর সাথে অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়। যেমন- হাতের গ্লাভস, বেলুন, বিভিন্ন ধরনের রাবার ও কনডম ইত্যাদি। এসব পণ্য ব্যবহারে অনেকের শরীরে এলার্জির সৃষ্টি হয় আর এই ধরনের এলার্জি কে বলা হয় ল্যাটেক্স এলার্জি।
আরো পড়ুনঃনাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয়
ল্যাটেক্স থেকে উৎপন্ন দ্রব্য সামগ্রী যদি ত্বকের কোন স্থানে সংস্পর্শে আসে তাহলে সংস্পর্শে আসা স্থানটি চুলকায় বা ফুলে যায়, নাক দিয়ে পানি পড়বে, চোখ জ্বালাপোড়া করবে, সর্দি লেগে নাক বন্ধ হয়ে যাবে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
ফুড এলার্জি
কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে নাকে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। তবে সব মানুষের সব খাবারের এলার্জি থাকে না। সাধারণত গরুর গোস্ত, হাঁসের গোস্ত, হাঁসের ডিম, মসুর ডাল, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন এই জাতীয় খাবারের এলার্জির পরিমাণ বেশি থাকে।
ফুড এলার্জির কারণে সর্দি জ্বর হতে পারে, নাক দিয়ে পানি ঝরা, অনেক সময় চোখ দিয়ে পানি পড়ে, নাকের অগ্রভাগ চুলকায় বা ফুলে যায় চোখের পাতা চুলকায়।
নাকের এলার্জি কেন হয়?
প্রিয় পাঠক, আপনারা অনেকেই নাকের এলার্জির সমস্যায় ভোগেন। শরীরে এলার্জির মাত্রা বেড়ে গেলে তা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এর মাধ্যমে আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়। নাকের এলার্জির সমস্যা কোন মারাত্মক রোগ নয়। এটি কোন মারাত্মক রোগ নয় বলে অবহেলা করা উচিত নয়।
বিভিন্ন কারণে নাকে এলার্জি হতে পারে। নাকে এলার্জি হওয়ার যেসব কারণ গবেষণার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো।
- রাস্তার ধুলাবালি, পুরনো বইপত্র ও পত্রিকা, ওয়ারড্রপে জমানো পুরনো কাপড়-চোপড়, ধুলাবালিতে জমে থাকা কসমেটিক্স, বিভিন্ন পশু পাখির লোম, বাগানে ফুটন্ত ফুলের রেনু থেকে নাকে এলার্জি হতে পারে।
- শিল্প-কারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া নাকের এলার্জির অন্যতম কারণ।
- কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে নাকে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। তবে সব মানুষের সব খাবারের এলার্জি থাকে না। সাধারণত গরুর গোস্ত, হাঁসের গোস্ত, হাঁসের ডিম, মসুর ডাল, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন এই জাতীয় খাবারের এলার্জির পরিমাণ বেশি থাকে।
নাকে এলার্জি হলে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়।
নাকে অ্যালার্জি হলে নাকের অগ্রভাগ সব সময় চুলকায়, নাক দিয়ে পানি পরে, একনাগারা বেশ কয়েকবার হইচ হয়, সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়, অনেক সময় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, চোখ দিয়ে পানি পরে, সর্বোপরি নাকের অগ্রভাগ ফুলে যায়। এখন প্রশ্ন আসে এসব সমস্যা হলে কিভাবে এর থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।
যারা নাকের এলার্জি সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য পরামর্শ হলো যেসব খাবারে এলার্জি রয়েছে সেসব খাবার এড়িয়ে চলুন। বাহিরে বের হলে মুখে মাক্স ব্যবহার করুন যাতে আপনার শরীরে ধুলাবালি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এর পাশাপাশি এলার্জি চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে আন্টি হিসামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করতে পারেন।
নাকের স্প্রে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। মনে রাখবেন যে কোন প্রকারের ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
নাকের এলার্জি ঔষধ এর নাম।
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন নাকের এলার্জি দূর করার জন্য কি ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো প্রথমেই আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কেননা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা মোটেও উচিত নয়।
তবে আপনাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার অনুসরণ হিসেবে এ কথা বলা যায় যে নাকের এলার্জির ওষুধ এর জন্য নিম্নলিখিত মেডিসিন গুলো স্বল্প পরিসরে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন-
- সিটিজেন
- অ্যালাকট্রল
- লোরাটিন
- হিসটাসিন
নাকের এলার্জির স্প্রের নাম।
Nasocan 0.1%Nasal Spray নাকের এলার্জি জনিত কারণে ঠান্ডা লেগে নাসিকা সংকুচিত হয়ে আসলে এটি নাকের ভেতরের স্প্রে করা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই ঔষধ ব্যবহার করা উচিত।
Nasocan 0.1%Nasal Spray ৩ দিনের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয় এর অতিরিক্ত ব্যবহার করতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। এছাড়া গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শক্রমে এই ওষুধ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
শেষ কথাঃ
আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মধ্য দিয়ে আপনারা জানতে পারলেন নাকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে ও অন্যান্য বিষয়ে। শরীরের এলার্জি মূলত আক্রমণ করে বিভিন্ন ধরনের ধুলাবালি ময়লা আবর্জনা উদ্ভট গন্ধ পুরাতন জামা কাপড় ব্যবহার সহ অন্যান্য কারণে তাই এসব ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
বেশিরভাগ এলার্জির বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে এবং ধুলাবালি মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেক মানুষের কোন না কোন খাবারের এলার্জি রয়েছে তাই কোন খাবার খেলে আপনার এলার্জির সমস্যা বেড়ে যায় তা চিহ্নিত করুন এবং সেই সব খাবার এড়িয়ে চলুন। সর্বোপরি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url