খালি পেটে আনারস খাওয়ার কিছু উপকারিতা জানুন

আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন একটি অতি পরিচিত ফলের নাম হচ্ছে আনারস। বর্তমানে প্রায় সারা বছরই বাজারে কম বেশি আনারস পাওয়া যায়। আপনারা অনেকেই আনারস খাওয়া পছন্দ করেন না তবে এর পুষ্টিগুণ এর কথা জানলে আপনি অবাক হবেন। খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনার জানার আগ্রহ থাকে তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কেননা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
খালি পেটে আনারস খাওয়ার কিছু উপকারিতা জানুন
শুধু তাই নয় খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আপনারা আরো জানবেন আনারসের পুষ্টি উপাদান এর নাম, খালি পেটে আনারস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং আনারস খাওয়ার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে।

আনারসের পুষ্টি উপাদান। 

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ফসফরাস। তবে আনারসের সবচেয়ে বেশি যে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা হল কার্বোহাইড্রেট এরমধ্যে উপস্থিত গ্লুকোজ, ফ্রুকটজ,সুক্রোজ ও ভিটামিন সি। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে ৫০ গ্রাম ক্যালরি রয়েছে। আমাদের দেহের শক্তির একটি অন্যতম পুষ্টি উপাদান হচ্ছে ক্যালরি।
প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে রয়েছে,
  • ফ্যাট- ০.১২ গ্রাম
  • কোলেস্টরেল- ০ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম- ১ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট- ১৩ গ্রাম
  • প্রোটিন-০.৫ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম- ১৩ মিলিগ্রাম
  • আয়রন- ০.২৮ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম- ১০৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ- ৩ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন সি-৩৬.২ মাইক্রোগ্রাম

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা।

আনারস এক ধরনের মিষ্টি রসালো মৌসুমী ফল। কোলেস্টেরল এবং চর্বি মুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই ফল খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল বছরের প্রায় সারা বছরে কম বেশি পাওয়া যায় এবং শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।

আল্লাহ প্রদত্ত সব ফল মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার সাধন করে থাকে আনারস ও তার ব্যতিক্রম না। আনারসেরও বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপকারিতা রয়েছে। নিচে আনারসের কিছু পুষ্টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- এ ও ভিটামিন- সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরকে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এই ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, যা শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করেঃ আনারস হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আনারসে ব্রোমিলিন নামক এক ধরনের এনজাইম থাকে যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই বদহজম বা পেটের হজম জনিত যে কোন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস খাওয়া যেতে পারে।

ঠান্ডা কাশি প্রতিরোধ করেঃ ভিটামিন- সি যেহেতু ভাইরাস জনিত ঠান্ডা কাশি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ঠান্ডা, কাশি, সর্দি জনিত সমস্যায় আনারস খাওয়া খুবই উপকারী। জ্বর ও জন্ডিস প্রতিরোধে আনারস বেশ উপকারী। এছাড়াও নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা এবং ব্রঙ্কাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের রস খাওয়া যেতে পারে।

দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়ঃ আনারসে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতের জীবাণুর সংক্রমণ কম হয় ফলে দাঁত ও মাড়ি সুস্থ থাকে। এছাড়াও দাঁতের মাড়ির যে কোন সমস্যা সমাধান করতে আনারস বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

চোখের যত্নে আনারসঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- এ বা বিটা করোটিন যা চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে বা ক্রমান্বয়ে অন্ধত্ব বরণ করা ’’ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন’’ রোগ থেকে চোখকে রক্ষা করে। যার ফলে আমাদের চোখ সুস্থ থাকে।
ওজন কমায়ঃ মৌসুমী ফল আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের ফাইবার এবং তুলনামূলক কম ফ্যাট যা শারীরিক ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা শারীরিক ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তারা নিয়মিত আনারস খেতে পারেন তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ আনারসে থাকা ফাইবার দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে এবং দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ভূমিকা রাখে। তাই যারা দীর্ঘদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যায় ভুগছেন তারা আনারস খেতে পারেন এতে দ্রুত আরোগ্য লাভ হবে।

জ্বর ও গলা ব্যথা দূর করেঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ঠান্ডা জড়িত জ্বর সর্দি কাশি ভালো করে। জরে আক্রান্ত রোগী ওষুধের পাশাপাশি আনারস খেলে খুব দ্রুত জ্বর ভালো হয়ে আসে। জ্বরের সঙ্গে যদি গলা ব্যথা থাকে তাও আনারস খেলে ভালো হয়।

খাবারের রুচি বাড়ায়ঃ শারীরিক অসুস্থতার কারণে যদি খাবারের প্রতি অরুচি ভাব আসে তাহলে নিঃসন্দেহে আনারস খেতে পারেন কেননা আনারস খেলে খাবারের প্রতি রুচি আসে। তাই ডাক্তাররা রুচি বাড়ানোর জন্য আনারস খাওয়ার পরামর্শ দেন। খাবারের প্রতি রুচি বৃদ্ধি করার এটি একটি দারুন ঘরোয়া পদ্ধতি।

রক্ত পরিষ্কার করেঃ নিয়মিত আনারস খেলে দেহের রক্ত পরিষ্কার হয়। দেহের রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয়। ফলে শিরা ও ধমনীর মধ্য দিয়ে সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ সচল থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের রক্তের কোষগুলোকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে শরীরে দুরারোগ্য রোগ যেমন ক্যান্সারের মতো ব্যাধি সহজে আক্রমণ করতে পারে না।

ত্বক ভালো রাখেঃ আনারসের ভিটামিন সি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, চুল পড়া বন্ধ করে, ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, শরীরের তৈলাক্ত ত্বক হতে বাধা দেয়, শরীরে ব্রণ বের হতে পারে না।

হাড় মজবুত করেঃ আনারস ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। নিয়মিত আনারস খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়। আর আমরা সবাই জানি ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হার ও পেশি মজবুত করে। হাড় ও পেশির সংকোচন প্রসারণে ক্যালসিয়াম অন্যতম ভূমিকা পালন করে।

কৃমি দূর করেঃ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবন যাপন ও অন্যান্য খাত্যাভাসের কারণে আমাদের পেটে কৃমি হয়। এটি বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। পেটে কৃমি হলে আনারস খেলে তা থেকে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে আনারস খেলে পেটের কৃমি দূর হয়।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমি খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম আশা করি উপরের আলোচনা থেকে আপনি খুব সহজেই জানতে পারলেন খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারি দিকগুলো সম্পর্কে।

খালি পেটে আনারস খাওয়ার অপকারিতা।

খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা আলোচনার শুরুতেই বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। খালি পেটে আনারস খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই এবার এই সম্পর্কে কিছু ধারণা আপনাদের দেব। আশা করি এই অংশটি আপনাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে।

খালি পেটে আনারস খাওয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হচ্ছে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হওয়া।  তাই যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি খালি পেটে কোন কিছু খেলে সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে  বিশেষ করে ফল তাদের ক্ষেত্রে খালি পেটে আনারস না খাওয়াই ভালো।
খালি পেটে আনারস খাওয়ার সবচেয়ে বেশি যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শরীরে দেখা যায় তা হল গ্যাস্টিকের সমস্যা তৈরি হওয়া। এর পাশাপাশি আনারস খাওয়ার আরও বেশ কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন-

যাদের শরীরে এলার্জির পরিমাণ বেশি আনারস খেলে তাদের শরীরে এলার্জির পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই বেশি পরিমাণে আনারস না খাওয়া সবচেয়ে ভালো। আনারস কেটে নিয়ে লবণ দিয়ে ধোয়ার পর তা খেলে শরীরে এলার্জির পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

আনারসের রস গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনল নালীর কাছে পৌঁছার পর এটি অ্যালকোহলে পরিণত হয়। এর ফলশ্রুতিতে বাতের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। তাই যাদের শরীরে বাতের ব্যথার সমস্যা রয়েছে তাদের আনারস না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারা সীমিত পরিমাণের আনারস খেতে পারেন বা এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আনারস খেতে পারেন।

আনারসে রয়েছে ব্রমিলেইন নামক এক ধরনের উপাদান যা দিয়ে ঔষধ তৈরি করা হয়ে থাকে। আপনি যদি কোন কারণে এন্টিবায়োটিক ও আন্টিকোনভালসেন্ট ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আনারস খেতে ডাক্তাররা নিষেধ করে থাকেন কারণ এতে পার্শ্ববর্তী ক্রিয়া দেখা যায়।

গর্ভধারণ অবস্থায় আনারস খেলে অনিয়মিত গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে তাই গর্ভাবস্থায় আনারস না খাওয়াই উত্তম। 

আনারস খাওয়ার সঠিক সময়।

আনারস একটি রসালো সুমিষ্ট ফল। আনারস এমন একটি ফল যা আপনি জুস বানিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আনারস খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে আনারস কেটে অথবা ব্লেন্ডারে জুস বানিয়ে খেতে পারেন।
সকালবেলা এই ফলটি খেলে আপনার সারাদিনের এনার্জি তৈরি করতে সাহায্য করে। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং কম ফ্যাট তাই ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত প্রতিদিন সকালবেলা পরিমিত পরিমাণের আনারস খাওয়া যেতে পারে।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। শারীরিক সুস্থতার জন্য নিয়মিত অন্যান্য ফলের পাশাপাশি মৌসুমী এই ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন তাহলে আপনার শরীরের অনেক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url