রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে যেসব উপকারিতা মিলবে তা জানুন
আপনারা অনেকেই রয়েছেন নিয়ম না মেনে যেকোনো সময় যেনতেন ভাবে কিসমিস খেয়ে থাকেন যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। আপনারা যারা নিয়ম না মেনে কিসমিস খেয়ে থাকেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি হতে চলেছে অত্যন্ত উপকারী একটি আর্টিকেল। কেননা আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়।
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় এই বিষয়টি জানার পাশাপাশি আপনারা আরো জানতে পারবেন সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম। কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি। প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত এই বিষয়গুলো সম্পর্কে।
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়।
আপনি হয়তো বিভিন্ন মিষ্টান্ন যেমন লাচ্চা, সেমাই, হালুয়া, পোলাও সহ অন্যান্য খাবারের সাথে কিসমিস খেয়ে থাকেন। আবার অনেকেই আছেন যারা সকালবেলা খালি পেটে কিসমিস খায়। কিসমিস অত্যান্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি শুকনো আঙ্গুর ফল।
কিসমিস খাওয়ার আরো একটি উপায় আছে সেটা হল প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিছু কিসমিস পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিয়ে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে এটির গুনাগুন আরো অনেক বেড়ে যায়। প্রতিদিন রাতে কিসমিস খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া চোখের অন্যান্য রোগ যেমন- চোখ ওঠা, চোখ ব্যথা করা এগুলো থেকেও উপকার পাওয়া যায়।
আপনি নিয়মিত রাতের বেলা কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন তাহলে আপনার হাঁটুর ব্যথা সহ অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা দূর হয়ে যাবে। কেননা কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। সবচেয়ে ভালো হয় কিসমিস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে। এতে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের যোগান দ্বিগুণ হবে।
কিসমিস যেহেতু আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে রাতে খাবারের পর এক গ্লাস দুধ এবং সাথে কিসমিস খেলে আপনার পাকস্থলীর কার্যকারিতা সক্রিয় হয়। এতে করে আপনার খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায় যা মেদ ভুরি কমাতে সাহায্য করে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা রাত্রে সঠিক পরিমাণের ঘুমাতে পারেন না নিয়মিত কিসমিস খেলে আপনার অনিদ্রা ভাব কেটে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চার থেকে পাঁচটি কিসমিস ও সঙ্গে দুধ খেলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাই নিয়মিত প্রতিদিন রাত্রে দুধ ও কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম।
কিসমিস একটি মিষ্টি জাতীয় শুকনো ফল যা আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি করা হয়। এই কিসমিস সাধারণত বিভিন্ন মিষ্টান্ন যেমন- পায়েশ, সেমাই, হালুয়া ও পোলাও এর সঙ্গে খাওয়া হয়। কিসমিস এমন একটি ফল যা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি এটি কাচাও খাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে খুব উপকারী হয়।
আরো পড়ুনঃ অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে কার্যকরী ২০টি উপায়
সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস এবং কিসমিস ভেজানো পানি খেলে শরীরের অনেক উপকারে আসে। একইভাবে অন্তত ৭ দিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে এবং কিসমিস ভেজানো পানি খেলে আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে, রক্ত পরিষ্কার করবে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করবে। তাই আর দেরি না করে এখনই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত।
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত এই সম্পর্কে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ টি কিসমিস আপনি খেতে পারেন। আপনি এটি কাঁচাও খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ রাতে ঘুম ভালো হওয়ার সাধারণ ১০টি টিপস
এছাড়া সারারাত পানিতে ভিজে পরের দিন সকালবেলা পানিসহ কিসমিস খেলে আরো বেশি উপকারে আসে। তবে এর বেশি খাওয়া ঠিক হবে না। বেশি কিসমিস খেলে শরীরে গ্যাসটিকসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার কারণে আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া লাগতে পারে। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা।
আমাদের শরীরের উপকারে আসে এরকম অনেক শুকনো ফল আমরা খেয়ে থাকি। যেমন- খেজুর, বাদাম, কিসমিস ইত্যাদি। এসব শুকনো ফলের মধ্যে কিসমিসে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ।কিসমিসের পুষ্টিগুণ আরো ভালো পাওয়া যায় যদি পানিতে ভিজে রেখে নির্দিষ্ট সময় পর খাওয়া যায়।
রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কিসমিসের সাথে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পানির সঙ্গে মিশে যায়। কিসমিস ভেজানো পানি পান করলে আমাদের শরীর আরো সতেজ হয়। এখন আমি আপনাদের সামনে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব-
- পুষ্টি বিজ্ঞানীগণ কিসমিসের মধ্যে যেসব পুষ্টি উপাদান পেয়েছে তা হলঃ আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, সেলেনিয়াম, জিংক, ভিটামিন- সি, ক্যালসিয়াম ও বোরন।
- রক্তশূন্যতা কমাতে কিসমিস যথেষ্ট উপকারী। নিয়মিত কিসমিস খেলে কিসমিসে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং রক্তের লাল কনিকা পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- শুকনো কিসমিস খাওয়ার চেয়ে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কিসমিস ভেজানো পানি শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে।
- আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি দূর হবে নিয়মিত কিসমিস খেলে। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কিসমিস খাওয়া খুবই উপকারী।
- কিসমিস ভেজানো পানি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিসমিসের পানি লিভার পরিষ্কার করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কিসমিস ভেজানো পানি শরীরের প্রবেশের সাথে সাথে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার ফলে রক্ত পরিশোধিত হতে শুরু করে পাশাপাশি কিডনিও ভালো থাকে।
- নিয়মিত কিসমিস খেলে আমাদের চুল ও ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে।
- কিসমিসে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং হাড়কে শক্তিশালী করে।
- হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিসমিস ভেজা পানি খাওয়া খুবই উপকারী।
- আপনি যদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান তাহলে নিয়মিত কিসমিস ও তার পানি খান। কেননা এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে।
- কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পলিফেনলস এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিইনফেমেটরি উপাদান যা কাটা ছেঁড়া ও ক্ষতস্থান হতে ইনফেকশন হওয়ার ঝুকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
- কিসমিসের প্রচুর পরিমাণের ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে। তাই এটি ওজন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিমাণের ওজন বাড়াতে চান তাহলে নিয়মিত কিসমিস খান।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম।
প্রতিটি খাবার খাওয়ার আলাদা আলাদা কিছু নিয়ম রয়েছে। কিসমিস এমন একটি খাবার যা আপনি শুকনো অথবা ভিজিয়ে খেতে পারেন। কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন রাত্রেবেলা কিছু কিসমিস এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে ভেজা কিসমিস ও কিসমিস ভেজানো পানি খেয়ে নিন।
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে কিসমিস শুকনো এবং ভিজিয়ে দুই পদ্ধতিতে খাওয়া যায় এখানে যেহেতু জানতে চাওয়া হয়েছে শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে তাই আমি এই বিষয়টি নিয়ে এখন সংক্ষিপ্ত আকারে বলবো।
- রক্তের স্বল্পতা দূর হয়;
- ব্রেন ভালো রাখে ;
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে;
- হৃদ যন্ত্র সুস্থ রাখে;
- ক্যান্সারের কোষ দমন করে;
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে;
- হার ও দাঁতের সুরক্ষা করে;
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে;
অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কি হয়।
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার এবং ভিটামিন- বি৬ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে এটি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে তা খেতে হবে পরিমাণ মতো।
পুষ্টিবিদদের মধ্যে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া যায় তাহলে এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এর বেশি পরিমাণে খেলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। আসুন জেনে নেয় কিসমিস বেশি খেলে কি কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে সেই সম্পর্কে।
পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাঃ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে। এটি পরিপাকতন্ত্র সচল রাখতে খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত কিসমিস খেলে বদ হজমের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া পেট ফাঁপা মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত পরিমাণের কিসমিস খেতে হবে।
ত্বকে এলার্জির সমস্যাঃ এক এক মানুষের এক এক খাবারের এলার্জি থাকতে পারে। আপনারা অনেকেই রয়েছেন যাদের কিসমিস খেলে এলার্জির সমস্যা বা লক্ষণ দেখা দেয়। এরকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওজন বৃদ্ধি পাওয়াঃ কিসমিসএকটি উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার। যাদের ওজন কম তারা অনেক সময় কিসমিস খেয়ে থাকেন তবে অতিরিক্ত পরিমাণের কিসমিস খাওয়ার ফলে আপনার ওজন দ্রুত বেড়ে যাবে।
রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধিঃ কিসমিসে চিনি ও ক্যালোর পরিমাণ অনেক বেশি তাই এটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। আর রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অনেক সময় উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণের কিসমিস খেতে হবে।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক আশা করি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়া কিসমিস খাওয়ার নিয়ম। প্রতিদিন সকালে কিসমিস খেলে কি হয় সহ অন্যান্য বিষয়ে নিয়েও আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমার এই পোস্টটি করে যদি আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আসুন নিয়মিত কিসমিস সহ অন্যান্য উপকারী ফল খান, আপনার শরীর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখুন।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url