অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে কার্যকরী ২০ টি উপায়

মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের অন্যতম একটি প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে মাথার চুল। আমরা কত না! ভাবে মাথার চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে থাকি। তারপরও মানুষের চুল পেকে যাবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু যদি অল্প বয়সে চুল পেকে যায় তাহলে এটা দুশ্চিন্তা ও বিরম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০ বছরের আগেই আপনার মাথার চুল দু একটি করে পাকতে শুরু করেছে তাহলে শুরুতেই এটাকে থামানো উচিত কারণ একবার চুল পাকা শুরু হলে এর হার দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুরুতেই সচেতন হলে অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব। কোন কোন বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকলে অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব আজকে আর্টিকেলে আমি এই বিষয়টি নিয়েই বিস্তর আলোচনা করব।
অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে কার্যকরী ২০ টি  উপায়
আসুন অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জেনে নেয় এবং যথাযথভাবে এগুলো পালনের মধ্য দিয়ে অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করার চেষ্টা করি। অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে কার্যকরী ২০ টি  উপায় জানার পাশাপাশি আপনি আরো জানতে পারবেন অল্প বয়সে চুল পাকার কারণগুলো এবং হাদিসে অল্প বয়সে চুল পাকা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।

অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে কার্যকরী ২০ টি উপায়।

১। সুষম খাদ্য গ্রহণঃ সুষম খাদ্য গ্রহণ অল্প বয়সে চুল পাকারোধের যে কয়েকটি কার্যকরী উপায় রয়েছে তার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। সুষম খাদ্য বলতে কি বুঝায় এটি আমরা সবাই বুঝি সাধারণত যে খাদ্যে খাদ্যের ছয়টি উপাদান উপস্থিত বজায় থাকে তাকেই মূলত সুষম খাদ্য বলে। 

অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে নিয়মিত আমাদের সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। নিজের শরীর সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যদি আপনি ভালো রাখতে চান তাহলে নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।

২। পর্যাপ্ত ঘুমঃ ঘুম আপনার আমার সকলের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার অন্যতম একটি নিয়ামত। পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুমাতে না পারলে আমাদের শরীরের নিয়ন্ত্রণ হীন হয়ে পড়ে। শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আপনি জানেন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন নূন্যতম ৬ ছয় থেকে ৮ ঘন্টা একটানা ঘুমানো প্রয়োজন। 
আপনার বয়স যদি ২০ বছরের নিচে হয় তাহলে এখনই আপনার লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে ফেলুন অর্থাৎ নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুমান তা না হলে অল্প বয়সে চুলপাকা সহ অন্যান্য সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন।

৩। মধ্যপান না করাঃ মধ্যপান শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এটি আমরা সবাই জানি তারপরেও আমরা অনেকেই ধূমপানে অভ্যস্ত। বেশি বেশি মধ্যপান করার ফলে আপনার চুল অল্প বয়সেই পেকে যেতে পারে। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে অল্প বয়সে চুল পাকার বিড়ম্বনা থেকে যদি আপনি মুক্তি পেতে চান তাহলে মদ পান অভ্যাস পুরোপুরি করুন করুন।


৪। ধূমপান থেকে বিরত থাকাঃ সাধারণত বিড়ি সিগারেট বা তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি সেবন করাকে ধূমপান বলে। আমাদের সমাজে ধূমপান করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। জরিপ করলে দেখা যাবে শতকরা ৯৫% বা তারও বেশি মানুষ ধূমপানের সাথে জড়িত রয়েছে।

৫। মৌসুমী ফল খাওয়াঃ অল্প বয়সে চুল পাকা রোদ করতে ছোটবেলা থেকেই মৌসুমী ফল বেশি বেশি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মৌসুমী ফলগুলো আমাদের দেহে পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশে পূরন করে।

৬। নিয়মিত শাকসবজি খাওয়াঃ দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী শাকসবজি খেতে পারলে আমাদের শরীরে দুর্ভাগ্য রোগ সহজে আসতে পারবে না। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি এই জাতীয় রোগ থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারে। আর এসব রোগের ফলে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে তাই নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

৭।মানসিক দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকাঃ মানসিক দুশ্চিন্তা সবসময় আমাদের বাতিব্যস্ত করে রেখেছেন। বর্তমানে মানসিক দুশ্চিন্তা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে থেকে মুক্তি পাওয়া কোনভাবেই সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। মানসিক দুশ্চিন্তা অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ তাই মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারলে অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব।

৮ ।পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাঃ দৈনন্দিন খাবারের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক গড়ে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত এতে করে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করবে।
৯। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জিং পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ার শারীরিক পরিশ্রম অনেকাংশেই কমে যাওয়ার ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে অল্প বয়সী আপনার চুল সাদা হয়ে যেতে পারে।

১০। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করার কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যারা ডায়াবেটিস রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তাদের চুল তাড়াতাড়ি পেকে যাচ্ছে।

১১। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাঃ উচ্চ রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার হচ্ছে একটি নীরব ঘাতক রোগ। উচ্চ রক্তচাপের ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। যারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের চুল পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরী।

১২। রক্তে কোলেস্টরেল মাত্রা কমানোঃ নির্দিষ্ট একটি বয়সের পর সবারই দুশ্চিন্তার কারণ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় পাশাপাশি এটি স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। অল্প বয়সে চুল পাকা রোদ করার জন্য অবশ্যই রক্তে কোলেস্টেরলের মাপটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

১৩। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কম খাওয়াঃ বর্তমান সময়ে ফাস্টফুড খাবারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফাস্টফুড খাবারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার এগুলো রোগ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বেশি বেশি ফাস্টফুট জাতীয় খাবার খাওয়া।

১৪। চুলের যত্নে অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করাঃ হেয়ার স্টাইল করতে গিয়ে চুলে অতিরিক্ত প্রসাধনের ব্যবহার চুল পেকে যাওয়ার অন্যতম একটি প্রধান কারণ হতে পারে। বিউটি পার্লারে গিয়ে অনেকেই চুলের বিভিন্ন স্টাইল করাতে গিয়ে দামি দামি বেশি-বিদেশি প্রসাধনী ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে।

১৫। অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ করার থেকে বিরত থাকাঃ ওষুধ গ্রহণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে তাই কারণে-অকারণে পাশের ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যেকোনো ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে খাওয়া উচিত।

১৬। রাসায়নিক পদার্থ বা কলপ না করাঃ সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর ১/২ করে চুলপাকা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনেকেই আছেন ১/২ করে চুল পাকা শুরু করলে চুলে রাসায়নিক পদার্থ বা কেমিক্যাল যুক্ত বিভিন্ন ধরনের কলপ ব্যবহার করে থাকেন যা মোটেও ঠিক নয়। এগুলো ব্যবহারের ফলে চুল আরো দ্রুত সাদা হয়ে যায়।

১৭। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণঃ ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেলে অল্প বয়সে চুল পাকার সম্ভাবনা কম থাকে। আলোচনা শুরুতেই আমি উল্লেখ করেছি ভিটামিন ডি এর অভাবে সাধারণত চুল পেকে যায়। তাই শরীরে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি সরবরাহ নিশ্চিত হয় সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।

১৮।নিয়মিত চুলের যত্ন নেওয়াঃ নিয়মিত চুলের যত্ন নেওয়ার অংশ হিসেবে নির্দিষ্ট দিন পরপর গোসলের সময় চুলের শ্যাম্পু করা। এরপর মাথায় তেল দেওয়া বিশেষ করে নারিকেল তেল। চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো যাতে চুলে ময়লা না থাকে।

১৯। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করাঃ আধুনিক যুগে এসে শারীরিক ব্যায়াম করা একটি স্বাভাবিক বিষয় পরিণত হয়েছে কি গ্রাম কি শহর সব জায়গাযর মানুষ এখন শারীরিকভাবে আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগে একটা সময় শুধু শহরের লোকেরা শারীরিক ব্যায়াম করতো বর্তমানে গ্রামের লোকজনও শারীরিক ব্যায়াম প্রতি নজর দিয়েছেন। 

আধুনিক যুগে এসে মানুষ শারীরিক পরিশ্রম মূলক কাজ করা ছেড়ে দিয়েছে তাই শারীরিক ব্যায়াম করার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিশোর বয়স থেকে নিয়মিত শরীর চর্চা করলে অল্প বয়সে চুলপাকা সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।

২০। অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল না করাঃ অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল আপাত দৃষ্টিতে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে হলেও এর প্রভাব রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী। চুলে অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল করতে গিয়ে চুলের প্রাকৃতিক গুণাবলী নষ্ট করে ফেলছেন। 

অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল করলে অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বলবো যদি ৩০ এর আগে চুল পেকে যাওয়ার বিড়ম্বনায় না পড়তে চান তাহলে অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল থেকে দূরে থাকুন। 

প্রিয় পাঠক, আশা করবো উপরের নিয়ম গুলো যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করবেন এবং এর মাধ্যমে অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করতে পারবেন বলে আশা করি।

অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ।

বিশেষ কিছু কারণে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে। কি কি কারণে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে এই বিষয় সম্পর্কে আপনার যদি ধারণা থাকে তাহলে চুল পাকা রোধ করা আপনার জন্য সহজ হবে। তাই আলোচনার এই অংশে চুল পাকার কারণগুলো কি কি তা জেনে নিন-
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ
বংশগত কারণঃ আমাদের শরীরে কিছু কিছু রোগ হয় যেগুলো একমাত্র প্রধান কারণ হলো বংশগত। এই কারণকে ডাক্তারি ভাষায় জেনেটিক কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়। এই ধরনের কয়েকটি রোগ হল থ্যালাসেমিয়া, ডায়াবেটিস, অল্প বয়সে চুল পাকা, হাঁপানি। 

আপনার বংশে অল্প বয়সে চুল পাকার কোন অতিথি ইতিহাস যদি থেকে থাকে তাহলে আপনার অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে তবে এটি চুল পাকার একমাত্র কারণ নয়।

রোগ জর্নিতঃ নির্দিষ্ট কয়েকটি রোগ রয়েছে যেগুলো রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে থাকলে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে। যেমন- থাইরয়েড, থ্যালাসেমিয়া, রক্তশূন্যতা, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, শ্বেত রোগ, পরিপাকতন্ত্রের রোগ। 

তাই দীর্ঘদিন এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগ সেরে যেতে পারে এবং চুল পাকার সম্ভাবনা কমে আসে।

ভিটামিনের অভাবঃ দৈনন্দিন আপনি যেসব খাবার খেয়ে থাকেন এসব খাবারের মধ্যে কোনো না কোনো ভিটামিন রয়েছে। শরীরে ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই দেখা দেয়। নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অভাবে নির্দিষ্ট ধরনের রোগ হয়ে থাকে। 

যেমন- ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা ভিটামিন ডি এর অভাবে রিকেস্ট, ভিটামিন বি এর অভাবে মুখে ঘা, ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে চুল পেকে যায় কোন ভিটামিনের অভাবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন ডি এর অভাবে মানুষের চুল পাকতে শুরু করে।

অনিয়ন্ত্রিত ঔষধ গ্রহণঃ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ওষুধ গ্রহণ সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। সামান্যতম অসুস্থ হলে হরহামেশায় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করে কোন রকমের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই। এমন কিছু ঔষধ রয়েছে যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার চুল অল্প বয়সেই সাদা হয়ে যেতে পারে। 

এছাড়া কিছু নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসায় আমাদের ঔষধ সেবন করতে হয়। যেমন- ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এই রোগ গুলো চিকিৎসায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় এগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে চুল পেকে যেতে পারে।

দুশ্চিন্তাঃ বিশেষজ্ঞ মহলের বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, অল্প বয়সে চুল পাকার একটি উন্নতম প্রধান কারণ হলো দুশ্চিন্তা। আপনি যদি কারণে-অকারণে সব সময় দুশ্চিন্তা গ্রস্ত থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকেন অল্প বয়সেই আপনার চুল পেকে যাবে।

অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধুম পান করাঃ যারা অল্পবয়সে অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান করে থাকেন তাদের চুল তাড়াতাড়ি পেকে যাওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে।

চুলের প্রসাধনের ব্যবহারঃ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত চুলে প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে অল্প বয়সে চুল পেকে যায় এটি চুল পাকার একটি অন্যতম প্রধান কারণ বলে ধরা হয়। বাজারে দেশি-বিদেশি নামিদামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী সামগ্রী পাশাপাশি এসব নামিদামি ব্রান্ডের নকল চুলের প্রসাধনী বাজারে পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহারের ফলে চুলের ব্যাপক ক্ষতি হয় ফলেও চুল অল্প বয়সে সাদা হয়ে যেতে পারে।

ভেজাল খাদ্য খাওয়াঃ খাদ্যে ভেজাল আমাদের দেশের একটি উন্নতম প্রধান সমস্যা। আমরা বাজার থেকে যেসব ফল ও শাক-সবজি কিনে নিয়ে খেয়ে থাকি এগুলো বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই সৃষ্টির অন্যতম সহায়ক বলে প্রমাণিত। 

ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে আমাদের দেশের অল্প বয়সের মানুষের মধ্যে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে পূর্বের তুলনায় বেশ কয়েক গুণ।

ধুলাবালিঃ বায়ু দূষণের ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। যেমন- শ্বাসকষ্ট, এলার্জি এমনকি অতিরিক্ত ধুলাবালিতে থাকার ফলে অল্প বয়সেই আপনার চুল পেকে যেতে পারে। আমাদের সমাজে দেখা যায় যারা কঠোর পরিশ্রম করে তাদের চুল অন্যান্যদের তুলনায় খুব দ্রুত সাদা হয়ে যায় বা পেকে যায়। এর একমাত্র প্রধান কারণ হলো বাহিরের রোদ্দুরতে এবং ধুলাবালিতে বেশি কাজ করা।

ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গ্রহণঃ আজ থেকে ৩০-৪০ বছর পূর্বেও আমাদের দেশে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গ্রহণ করার প্রবণতা তেমন একটা দেখা যায়নি কিন্তু আধুনিক যুগের এসে আমরা সবাই ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছি যার ফলশ্রুতিতে অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবঃ ঘুম আমাদের শরীর নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিন নিয়মিত যদি আপনি ঘুমাতে পারেন তাহলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এতে কোন সন্দেহ নেই। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুমাতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান সময়ে অনেককে বলতে শুনি দিনেও রাতে ঘুমাতে পারেন না।

অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াঃ মিষ্টি পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। মিষ্টি দেখলেই আমাদের জিভে জল এসে যায় লোক সামলাতে পারি না। আপনি শুনলে অবাক হবেন যাদের অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদের চুল অল্প বয়সেই পেকে যেতে পারে।

অতিরিক্ত তৈলাক্ত জাতীয় খাবার খাওয়াঃ অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সর্বশেষ যে কারণটি নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করব অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার গ্রহণের ফলে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে। তৈলাক্ত জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে বাহিরের ভাজাপোড়া। এছাড়া বাড়িতে আমরা যে খাবার খাই এই খাবারের সাথে অতিরিক্ত তেল খাওয়া।

অল্প বয়সে চুল পাকার হাদিস।

মানুষের শরীরের বাহ্যিক সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অনুসঙ্গ হল মাথার চুল। বয়সের কারণে বা অন্য কোন কারণে মাথার চুল পেকে সাদা রং ধারণ করে অনেকে এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলেও অনেকেই আছেন এটাকে রোগ মনে করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় পাকা চুল কালো করার অনেক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে যেটা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষের চুল পাকার বিষয়টি সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের হাদিসে বিশেষ কিছু ব্যাখ্যা রয়েছে।

আলোচনার এ পর্যায়ে আমি মানুষের চুল পাকার বিষয় সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের পবিত্র হাদীসে কি বলা হয়েছে এই বিষয়টি আলোকপাত করবো যা জেনে আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন। চলুন তাহলে চুল পাকার বিষয়ে ইসলাম ধর্মের হাদিসে কি বলা হয়েছে এটি জেনে আসি।

সারা বিশ্বের মুক্তির অগ্রদূত সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের চুল পাকা কে অনেক মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। পাকা চুল মানুষের জন্য আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় নেয়ামত।

বয়সের কারণে যাদের মাথার চুল পেকে যায় তাদের পাকা চুলের বিনিময়ে আল্লাহতালা বান্দার গুনাহ মাফ করবেন। সাদা চুল প্রতিটি মুসলমানের জন্য নিয়ামত। এজন্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম সাদা চুল তুলতে নিষেধ করেছেন।

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“ তোমরা সাদা চুল উঠিয়ে ফেলো না কেননা সেগুলো কেয়ামতের দিন নূরের ন্যায় প্রজ্বলিত হবে। আর যে মুসলিম ব্যাক্তির চুল বার্ধক্য জনিত কারণে সাদা হয় তার প্রতিটি সাদা চুলের বিনিময়ে একটি করে ছোয়াব লেখা হয়, একটি করে গুনাহ মাফ করা হয় এবং একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়”। (ইবনু হিব্বান)

পাকা চুল তুলে ফেলার সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে যেগুলো আপনি হাদিস গ্রন্থ পড়লে জানতে পারবেন এখানে শুধুমাত্র একটি ব্যাখ্যা তুলে ধরলাম। আশা করি এই বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক একটি ধারণা পেয়ে গেছেন।

লেখকের মন্তব্যঃ 

মানুষের বয়স ৩০ বছর পার হলে ধীরে ধীরে চুল পেকে সাদা রং ধারণ করবে এটাই স্বাভাবিক এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পেকে যাওয়ার হার বৃদ্ধি পাবে। তবে ৩০ বছরের পূর্বে যদি চুল আংশিক বা পুরোপুরি পেকে যায় এটা কোন না কোন রোগের কারণে হতে পারে যেগুলো আমি আজকের আর্টিকেলের অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ অংশে আলোচনা করেছি। 

এ পর্যায়ে এসে যে কথা বলব সেটি হল অল্প বয়সে চুল পাকার বিরম্বনায় যদি না পড়তে চান তাহলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায করা থেকে বিরত থাকুন। মোটামুটি ৩টি কারণে অল্প বয়সে চুল পাকার প্রবণতা বেশি দেখা যায় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ঘুম না হওয়া, ভিটামিনের অভাব। 

তবে যদি কোন রোগের কারণে চুল পেকে যায় এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়। অল্প বয়সে চুল পাকার রোধে এখানে যে কয়টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো যথাযথ পালনের মাধ্যমে অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url