পুষ্টিগুণে ভরপুর ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

ড্রাগন একটি বিদেশি ফল হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষ হচ্ছে। একটা সময় এই ফল সবার কাছে অপরিচিত হলেও এখন অনেকেই নিয়মিত এই ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। মূলত ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণের কারণে সবার কাছে অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তাই জেনে নিন পুষ্টিগুণে ভরপুর ড্রাগন ফলের উপকারিতা
পুষ্টিগুণে ভরপুর ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
আপনি যদি আজকের আর্টিকেলের সমগ্র অংশ পড়েন তাহলে আরো জানতে পারবেন ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান, ড্রাগন ফলের উপকারিতা, ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম, ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক, চলুন কথা আর না বাড়িয়ে ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানি।

ড্রাগন ফল।

ড্রাগন গাছ দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার স্থানীয় উদ্ভিদ। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ফরাসিরা এটিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিয়ে আসে। বর্তমানে এটি সারা বিশ্বে উৎপাদিত হচ্ছে এবং এর ফল খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মজার ব্যাপার হলো অন্যান্য ফল বা সবজির ফুল দিনে ফুটলেও ড্রাগনের ফুল শুধুমাত্র রাতেই ফোটে। 
ড্রাগন ফলের বিভিন্ন জাত থাকলেও দুই ধরনের ড্রাগন ফল বেশি দেখা যায় একটি হচ্ছে লাল খোসার ভিতরে লাল রসালো মাংসালো অংশের সাথে কালো ছোট ছোট বীজ আরেকটি হচ্ছে লাল খোসার ভিতরে সাদা রসালো মাংসালো অংশের সাথে কালো ছোট ছোট বীজ। হলুদ আরেক প্রকারের ড্রাগন রয়েছে যা আমাদের দেশে পাওয়া যায় না।

ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান।

যে কোন ফল খাওয়ার আগে তার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। আপনারা যারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে ভালোবাসেন তাদের অবশ্যই জানা উচিত ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাদান  সম্পর্কে। ড্রাগন কম ক্যালরি সম্পন্ন এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত একটি ফল। এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবারের একটি শক্তিশালী উৎস। এছাড়াও ড্রাগনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

USDA তথ্যমতে প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে রয়েছে,
  • কার্বোহাইডেট ১২০-২০০ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম ৩০-৪৫ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম ২০-৪৫ মিলিগ্রাম
  • প্রোটিন ২০ - ৩৫ মিলিগ্রাম
  • ফাইবার ০.৭০-১.৫ মিলিগ্রাম
  • জিংক ০.২০ - ০.৪০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন- সি ৬ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন- ই ১৫০ মাইক্রোগ্রাম
  • প্যানটোথিন্ক অ্যাসিড ৫০ মাইক্রোগ্রাম
  • এবং ভিটামিন- কে১ ২৫ মাইক্রোগ্রাম

ড্রাগন ফলের উপকারিতা।

ড্রাগন অতি আকর্ষণীয় গাঢ় লাল বা গোলাপি বর্ণের সুস্বাদু গ্রীষ্মমন্ডলীয় একটি ফল। এর অনন্য চেহারা ও অতুলনীয় স্বাদের জন্য দিনদিন এই ফলটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

অনেকে এই ফলের স্বাদকে নাশপাতি ও কিউই ফলের মতো মনে করেন। ড্রাগন ফলে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপকারিতা এবং প্রিবায়োটিক ফাইবার যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে মেটাবলিক (বিপাকীয়) স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণায় দেখা গেছে ড্রাগনের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন-

ড্রাগন ফলে থাকা ফাইবার খাবার দ্রুত হজম করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হৃদপিণ্ড ভালো রাখে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই এসব থেকে আপনার দেহকে সুস্থ ও ভালো রাখতে চাইলে পরিমিত পরিমাণের ড্রাগন ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ড্রাগন ফলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, স্নায়ুতন্ত্র ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে।

আমরা সবাই জানি ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হাড় ও দাঁত ভালো রাখে। ড্রাগন ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের ক্যালসিয়াম যেটি খেলে হাড় ও দাঁত মজবুত করে।

ড্রাগন ফলে রয়েছে ক্যারোটিন যা আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখবে। তাই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

ড্রাগনে যেহেতু ভিটামিন সি রয়েছে তাই নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল খেলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে,ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে আনে।

কিশোরি, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতিদের দেহে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায় এই ঘাটতি পূরণে ড্রাগন ফল হতে পারে খুবই উপকারী। ড্রাগন ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের আয়রন যা কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতিদের জন্য খুবই উপকারী।
ড্রাগন ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন। প্রোটিনের প্রধান কাজ হল দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও দেহের ক্ষয় পূরণ করা। তাই কিশোর বয়সে যখন দেহের বৃদ্ধি প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে সেই সময় পরিমিত পরিমাণের ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।

শারীরিক ওজন কমানোর জন্য প্রোটিন ফাইবার ও জলীয় অংশ খুবই কার্যকরী ভাবে কাজ করে আর এই উপাদান গুলো ড্রাগন ফলে পাওয়া যায় তাই ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।

নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণ হয়। জিংক এর প্রধান কাজ হল শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা ও ত্বক সুস্থ রাখা। শরীরের কোথাও ক্ষত হলে দ্রুত শুকিয়ে যায় শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে জিঙ্ক উপস্থিত থাকলে।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা।

উপরের আলোচনা থেকে আপনারা জানতে পারলেন ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা। যেকোনো ফল খেলে যেমন বেশ কিছু উপকারিতা মিলে তেমনি কিছু অপকারিতার কথা ও শোনা যায়। ড্রাগন ফল খাওয়ার অপকারিতা তেমন একটা নেই এই ফলের উপকারিতা বেশি। 

তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল খাওয়ার অপকারিতা আমরা জানতে পারি। এবার আসুন ড্রাগন ফলের অপকারিতা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা জেনে আসি।
ড্রাগন ফল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং সার্বিকভাবে নিরাপদ এক ধরনের ফল। কিন্তু যাদের শরীরে অ্যালার্জির পরিমাণ বেশি এই ফল খাওয়ার ফলে তাদের এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সেইসব ব্যক্তিদের ড্রাগন ফল না খাওয়াই উত্তম। 

এছাড়া ড্রাগন ফলের ভিতরে যে কালো ছোট ছোট দানা রয়েছে এগুলো ডায়াবেটিস বৃদ্ধির কারণ হতে পারে তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদেরকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ড্রাগন ফল খেতে হবে।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম।

ড্রাগন ফল দেখতে কিছুটা জটিল রকমের মনে হলেও এটা খাওয়া খুব সহজ। প্রথমে ড্রাগন ফলকে একটি ছুরি দিয়ে মাঝ বরাবর কেটে দুই ভাগে ভাগ করে নিন। এরপর লাল খোসা থেকে রসালো মাংসালো অংশ আলাদা করে নিন। এরপর ইচ্ছেমতো স্লাইস করে পরিবেশন করুন। 

ড্রাগন এমনি খাওয়া যায় আবার দইয়ের সাথে মিশিয়ে, অন্যান্য খাবারের সাথে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। ড্রাগন ফল ছোট ছোট টুকরো করে ব্লেন্ডারে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। 
আকর্ষণীয় লুকের জন্য এই ফলটি বিভিন্ন খাবার বা ফল ডেকোরেশনকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ড্রাগনের গুড়া বিভিন্ন ধরনের পানিয়, ডেজার্ট,খাবারকে আকর্ষণীয় করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি।

ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি তার সঠিক তথ্য যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে বাজারে গিয়ে এই ফল কেনার সময় আপনি ঠকতে পারেন। এই জন্য ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তার সঠিক ধারণা থাকা জরুরী।
ড্রাগন ফলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাজারে ড্রাগন ফলের দাম কিছুটা বেশি। বাংলাদেশে এখনো ব্যাপকভাবে এই ফলের চাষ শুরু হয়নি তাই দেশীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ফলটি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভর এই ফলটির বাজার মূল্য অন্যান্য ফলের তুলনায় কিছুটা বেশি।  

ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি তা নির্ভর করে ফলের কোয়ালিটি এবং চাহিদা ও যোগানের উপর। যেমন-চাহিদা বেশি দোকান কম হলে বাজার মূল্য বেশি হয় আবার চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হলে বাজার মূল্য কম হয়। অন্যদিকে বাজারের অবস্থান ভেদে ড্রাগন ফলের মূল্য কম বেশি হয়। 

বিভাগীয় শহর গুলোতে দাম কিছুটা বেশি হলেও জেলা শহরে দাম তুলনামূলক কম। তাই সঠিকভাবে ড্রাগন ফল কত টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে তা বলা মুশকিল। তবে সাধারণ একটি ধারণা দেয়া যেতে পারে।

সাধারণত মধ্যমানের এক কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন এক কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। প্রিয় পাঠক আশা করি আপনার মনের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

শেষ কথাঃ

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। মনে রাখবেন আজকের এই আর্টিকেলে ড্রাগন ফল খাওয়ার যেসব উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে পারলেন তা কোন চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র নয়, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই লেখা হয়েছে। 

তাই যারা জটিল কঠিন রোগে ভুগছেন তাদেরকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত। তবে সাধারণভাবে বলা যায় একজন সুস্থ ব্যক্তি নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না। নিয়মিত মৌসুমী ফলসহ অন্যান্য ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন দেহ মনকে সুস্থ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url