নিয়মিত বিটরুট খেলে যেসব উপকারিতা মিলবে

স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে বিটরুট একটি অতি পরিচিত সবজি। বিটরুট খেলে মানুষের দেহের বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অনেক উপকারিতা মিলে। নিয়মিত বিটরুট খেলে যেসব উপকারিতা মিলবে তা আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হিসাবে বিটরুট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাচ্ছেন কিন্তু জানেন না বিটরুট খেলে কি কি উপকারিতা মিলবে তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই উপকারী।
নিয়মিত বিটরুট খেলে যেসব উপকারিতা মিলবে
কেননা আজকের এই পোস্টটি পড়ার মধ্য দিয়ে আপনি জানতে পারবেন নিয়মিত বিটরুট খেলে কি কি উপকার মিলবে। পাশাপাশি আরো জানবেন বিটরুট এর দাম কত? এটি কোথায় পাওয়া যায় এই সম্পর্কে।

বিটরুটের পুষ্টি উপাদান।

পুষ্টিগুণে ভরপুর বিটরুট খেলে কি কি উপকারিতা মিলবে তা জানার পূর্বে আপনার জানা দরকার বিটরুট কি, এটি দেখতে কেমন এবং কি কি ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাহলে চলুন আগে বিটরুটের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জেনে নেই।

বিটরুট আকর্ষণীয় গাঢ় গোলাপি রঙের একটি সবজি। এর পুষ্টি গুণের কারণে একে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে। সাধারণত শীতকালে এই সবজিটি বেশি পরিমাণে পাওয়া গেলেও বর্তমান সময়ে সারা বছরই কমবেশি এই সবজির দেখা মেলে। অসাধারণ কালারের পাশাপাশি অসাধারণ পুষ্টিগণ জানলে আপনিও বিটরুট খেতে বাধ্য হবেন।
বিটরুট সবজিটি ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। এতে রয়েছে আয়রন,জিংক,ফলেট, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন- এ, ভিটামিন- সি, ভিটামিন- বি৬ ইত্যাদি। আরোও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

বিটরুট এর উপকারিতা।

বিটরুট কি বিটরুট এর পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানা হলো। এবার মূল আলোচনা শুরু করা যাক। আজকের মূল আলোচনার বিষয়বস্তু হলো নিয়মিত বিটরুট খেলে যেসব উপকারিতা মিলবে। নিয়মিত বিটরুট খেলে কি কি উপকারিতা মিলে তার নিচে আলোচনা করা হলো-

উচ্চ রক্তচাপ ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
গবেষণায় জানা গেছে বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেটস যা রক্তনালী প্রসারিত করে বডির রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা আছে তারা নিয়মিতভাবে বিটরুটের জুস খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
বিটরুট শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
বিটরুটে রয়েছে ফাইবার যা হজম শক্তি উন্নত করে খাদ্য হজমে সাহায্য করে ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এটি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আমাদের শরীরে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি ভালো ব্যাকটেরিয়া ও থাকে। বিটরুট অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ায় যা বিভিন্ন রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ। তাই নিয়মিতভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটরুট খেলে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বিটরুট মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা সচল রাখতে সাহায্য করে।

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
বিটরুটে রয়েছে ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিন যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চোখকে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে। আরও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা লুটেইন যা চোখের চারপাশের স্নায়ু টিস্যু গুলোকে শক্তিশালী করে চোখের বার্ধক্য জনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে
বিটরুটে থাকা আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন তারা নিয়মিত বিটরুটের জুস খেতে পারেন তাহলে রক্তস্বল্পতা দূর হবে।

চর্বি কমায়
বিটের বিটেইন যকৃতের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

ত্বক সুন্দর করে
বিটরুটে থাকা পুষ্টি উপাদান ত্বক সুন্দর করে, চেহারার উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।

বিটরুট যাদের খাওয়া উচিত নয়।

গলব্লাডার, কিডনিতে পাথর থাকলে বিটরুট খাওয়া যাবে না কারণ বিটের অক্সালেট এই সমস্যাকে আরোও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিটরুট এড়িয়ে চলাই উত্তম।

অনেকেরই অনেক খাবারে এলার্জি থাকতে পারে যাদের বিটরুটে এলার্জি রয়েছে খেলে সমস্যা দেখা দেয়, শরীর চুলকায় তাদের ক্ষেত্রে বিটরুট না খাওয়াই ভালো।
যাদের শরীরের রক্তচাপ কম থাকে বা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাদের বিটরুট না খাওয়াই ভালো কারণ বিটরুট রক্তচাপ আর ও কমিয়ে দিতে পারে।

যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের বিটরুট না খাওয়াই ভালো বিটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স শর্করার পরিমান দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিটরুট খাওয়ার নিয়ম।

প্রিয় পাঠক নিয়মিত বিটরুট খেলে যেসব উপকারিতা মিলবে সেই সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারলেন। এবার আপনার যে বিষয়টি জানা দরকার তা হল বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। বিটরুট খাওয়ার সঠিক নিয়ম না জানলে এর থেকে উপকারিতা নাও মিলতে পারে তাই অবশ্যই বিটরুট খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে হবে।
বিটরুট খাওয়ার নিয়ম।
বিটরুট কাঁচা খাওয়া যায়। আবার রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে। তবে কাঁচা খেলে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও বিটরুটের জুস, সালাদ,স্মুদি ও অন্যান্য সবজির সাথে তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।

বিটরুট এর দাম কত?

অনলাইনে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন হচ্ছে বিট রুট এর দাম কত? প্রিয় পাঠক আপনি আগেই জেনেছেন বিটরুট কাঁচা সবজি হিসাবে সবজির বাজারে পাওয়া যায় এবং বিটরুটের পাউডার বড় বড় শপিংমলে পাওয়া যায়। 

সবজি হিসেবে কাঁচা বিটরুটের দাম সঠিকভাবে বলা মুশকিল তারপরও কাঁচা বিটরুটের দাম সাধারণভাবে নির্ণয় করা যেতে পারে। কাঁচাবাজারে ১ কেজি কাঁচা বিটরুটের দাম প্রায় ৩০০ টাকা। বড় বড় শহরগুলোতে যেসব শপিংমল বা সুপার শপ রয়েছে এগুলোতে বিটরুটের এর দাম কিছুটা বেশি।
আপনারা আগেই জেনেছেন অনলাইন ও সুপার শপ ব্যতীত অন্য কোন জায়গায় বিটরুটের পাউডার পাওয়া যায় না। অনলাইনের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম পাউডারের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা প্রায়। বড় বড় শপিংমলে ২৫০ গ্রাম বিটরুটের পাউডারের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

বিটরুট বাংলাদেশের কোথায় পাওয়া যায়।

বিটরুট প্রধানত শীতকালীন একটি সবজি। শীতকালে ছোট বাজারে এই সবজির দেখা মিললেও অন্যান্য সময় বড়বাজার গুলোতে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এর সবজি আপনি দেখতে পাবেন। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে বিটরুট চাষ করা হচ্ছে। সাধারণত কাঁচা বাজারে বিটরুট পাওয়া যায়। 
গ্রামাঞ্চলে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিটরুট চাষ করা হলেও গ্রামের মানুষের মধ্যে এই সবজি খাওয়ার প্রবণতা খুব একটা দেখা যায় না। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো গ্রামের মানুষ এই সবজির পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে এখনো সচেতন নন। তাই গ্রামের হাটবাজারে এই সবজি তেমন একটা দেখা যায় না। 

শহরাঞ্চলের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে বিটরুট খাওয়ার প্রবণতা ব্যাপক রয়েছে। তাই শহর অঞ্চলের বড় বড় সবজির বাজারে অথবা শপিংমলে বিটরুট পাওয়া যায়।

বিটরুট পাউডার কোথায় পাওয়া যায়।

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন বিটরুট বাংলাদেশের কোথায় পাওয়া যায়। এখন আমি আপনাদের জানাব বিটরুট পাউডার কোথায় পাওয়া যায়। বিটরুট যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর তেমনি এর থেকে উৎপাদিত পাউডারে রয়েছে ব্যাপক পুষ্টিগুণ। 

পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই বিটরুট পাউডার আপনি সব ধরনের বাজারে পাবেন না। বাংলাদেশের বড় বড় সুপারসপ গুলোতে বিটরুটের পাউডার পাবেন। এছাড়া বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে এই পাউডার বিক্রয় করছে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক বিক্রয় প্রতিষ্ঠান।

শেষ কথাঃ 

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটি কোন রোগের চিকিৎসা পত্র নয়। শুধুমাত্র বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লেখা হয়েছে। আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি যদি উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত জনের কাছে এটি শেয়ার করবেন যাতে করে তারাও আপনার মত উপকৃত হতে পারে। নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন দেহ ও মনকে সুস্থ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url