বাংলাদেশে সিঙ্গাপুর ভিসা এজেন্টদের লিস্ট
আপনারা যারা স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় বা অন্যান্য ভিসায় যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি হতে চলেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আজকের এই পোস্টটিতে আমি আলোচনা করেছি বাংলাদেশে সিঙ্গাপুর ভিসা এজেন্টের লিস্ট ও সিঙ্গাপুরে কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে।
এর পাশাপাশি আপনারা আরো জানতে পারবেন সিঙ্গাপুরে যেতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ হয়। সিঙ্গাপুরে যেতে কত সময় লাগে এইসব বিষয় নিয়ে। আশা করি পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়বেন।
সিঙ্গাপুরে কোন কাজের চাহিদা বেশি।
এশিয়া মহাদেশের যে কয়টি রাষ্ট্র অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর অন্যতম। শুধুমাত্র এশিয়া মহাদেশ নয় ইউরোপের কিছু কিছু রাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি। একসময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশের বাণিজ্যিক স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে দেশটি অর্থনীতি বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
তাই এই দেশটিকে এশিয়ার অর্থনীতির বাঘ বলা হয়। ধনী এই দেশটির অর্থনীতি বিদেশী শ্রমিকদের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির বিদেশী বাসিন্দার সংখ্যা তাদের মূল জনগোষ্ঠীর শতকরা ৫০ শতাংশ হবে এমনটি ধারণা করছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান এইসব উন্নয়নশীল দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার শ্রমিক সিঙ্গাপুরে কাজের উদ্দেশ্যে যায়।
সিঙ্গাপুর বিনির্মাণে এইসব দেশের শ্রমিকদের রয়েছে ব্যাপক অবদান। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের কাজ করে বিদেশী শ্রমিকরা তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। আজকে আমার আলোচ্য বিষয় সিঙ্গাপুরে কোন কাজের চাহিদা বেশি। এর পাশাপাশি আপনারা আরো জানতে পারবেন সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে? বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর যেতে কত সময় লাগে।
সিঙ্গাপুর এশিয়ার দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের একটি উন্নত দেশ। এই দেশে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষ বসবাস করে। সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি প্রধান চালিকাশক্তি পর্যটন শিল্প ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এছাড়া বর্তমানে সিঙ্গাপুরের আইটি সেক্টর ক্রমবর্ধমান শিল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করে।
এই পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির মূল কাঠামো গড়ে উঠেছে। সিঙ্গাপুরের আরো একটি খাতের কথা না বললে নয় এটি হলো চিকিৎসা খাত। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই উন্নত, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিবছর বহু সংখ্যক রুগী এই দেশে চিকিৎসা নিতে আসে।
এছাড়া এদেশের কঠোর আইনি শাসন দেশটিকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালকের ভূমিকা পালন করেছে। তাহলে, চলুন আর দেরি না করে সিঙ্গাপুরে কোন কাজের চাহিদা বেশি এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক-
সিঙ্গাপুরে কোন কাজের চাহিদা বেশি তার একটি তালিকা দেয়া হলোঃ
- হোটেল বয় Hotel Boy
- ওয়েল্ডিং Welding
- ড্রাইভিং Driving
- কনস্ট্রাকশন Construction
- গার্ডেনিং Gardening
- নার্স Nurse
- আইটি সেক্টর IT Sector
- ইঞ্জিনিয়ার Engineer
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ Cleaner
উপরের তালিকায় দেওয়া বিষয়গুলো সম্পর্কে পাঠকদের বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার জন্য নিচে ব্যাখা করা হলো-
হোটেল বয় Hotel Boy
সিঙ্গাপুর একটি পর্যটন শিল্প নির্ভর অর্থনীতির দেশ। সিঙ্গাপুর একটি দ্বীপ রাষ্ট্র ছোট্ট এই রাষ্ট্রটি শিল্পীর নিপুন তুলিতে অঙ্কন করেছে এমনটাই মনে হবে চারিদিকে এত সুন্দর গাছ-গাছালি উঁচু উঁচু অট্টালিকা। উচু অট্টালিকার মাঝে গাছ-গাছালির এমন প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য অন্যান্য দেশে খুব কমই চোখে পড়বে।
সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবছর অনেক ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক দেশটির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ভ্রমণ করে থাকে। এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতম কেন্দ্রস্থল হয় প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু সংখ্যক ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে আসে। এজন্য সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, মোটেল, রেস্তোরা, কফি- শপ গড়ে উঠেছে।
এইসব হোটেল, মোটেল, রেস্তোরা, কফি- শপ এ প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এই দেশে প্রচুর হোটেল বয় পদে কাজের সুযোগ রয়েছে।
বেতনঃ ১০০০ থেকে ১৮০০ সিঙ্গাপুর ডলার।
ওয়েল্ডিং Welding
সিঙ্গাপুর তার দেশীয় সম্পদ ও বিদেশী বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়ে সেই দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরই অংশ হিসাবে সেই দেশ আকাশচুম্বী ভবন তৈরি করছে যার জন্য ওয়েল্ডিং এর কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনেক চাকুরী প্রত্যাশী ওয়েল্ডিং কাজ করার জন্য সিঙ্গাপুরে যায়। এই কাজে বেতনও ভালো। সুতরাং আপনি ওয়েল্ডিং কাজ শিখে সিঙ্গাপুরে যেতে পারেন, এতে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
বেতনঃ ১০০০ থেকে ১৮০০ সিঙ্গাপুর ডলার।
কনস্ট্রাকশন Construction
অর্থনৈতিকভাবে সিঙ্গাপুর উন্নত দেশ হওয়ার কারণে সেই দেশে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে বড় বড় বিল্ডিং গড়ে উঠছে। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে সিঙ্গাপুরে ফ্লাইওভার, ব্রিজ সহ অন্যান্য অবকাঠামোও গড়ে উঠছে। আর এই কাজ করতে প্রয়োজন প্রচুর দক্ষ জনশক্তি যা সিঙ্গাপুর তার নিজেদের জনগণ দিয়ে মেটাতে পারেনা। তাই প্রতি বছর বিদেশ থেকে কনস্ট্রাকশন কাজে শ্রমিক নিতে হচ্ছে।
বেতনঃ ১৫০০ থেকে ১৮০০ সিঙ্গাপুর ডলার।
ড্রাইভিং Driving
সিঙ্গাপুরে ড্রাইভিং কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ। সিঙ্গাপুর একটি পর্যটন শিল্প দেশ। বহির বিশ্ব থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ বিদেশি নাগরিক সেই দেশে ভ্রমণ করে এজন্য সে দেশে টুরিস্ট গাইড ধরনের বিভিন্ন কোম্পানি গড়ে উঠেছে।
এসব কোম্পানিতে ড্রাইভিং খাতে শ্রমিক নিয়োগ ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সিঙ্গাপুর ভৌগোলিকভাবে এমন এক জায়গায় অবস্থান করছে যে সারা বিশ্বের বাণিজ্যিক জাহাজ গুলো সিঙ্গাপুর কে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করে। সিঙ্গাপুর এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর বাণিজ্যিক ট্রানজিট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
এ কারণে প্রতিবছর সারা বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়ী কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীরা সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করে। মূলত এ কারণেই এই দেশে ড্রাইভিং কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এই জন্য আপনাকে একজন দক্ষ ড্রাইভার হতে হবে। বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি, ট্রাক, ট্রাক্টর এবং বাস চালানো ও বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিকদের আনা নেওয়া করার জন্য সিঙ্গাপুরে গাড়ি চালকদের অনেক চাহিদা রয়েছে।
সুতরাং আপনি যদি একজন ড্রাইভার হন তাহলে সিঙ্গাপুরে ভালো একটি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। সব থেকে ভালো হয় যদি সিঙ্গাপুরে আপনার নিজের একটি গাড়ি থাকে তাহলে, আপনি সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে রাইট শেয়ারিং করতে পারেন।
বেতনঃ ১৮০০ থেকে ২৫০০ সিঙ্গাপুর ডলার।
গার্ডেনিং Gardening
সিঙ্গাপুরের গার্ডেনিং এর কাজ একটি লোভনীয় কাজ হিসাবে সবার কাছে অতি পরিচিত। অনেকেই চায় যে সিঙ্গাপুরে গিয়ে গার্ডেনিং এর কাজ করতে কিন্তু এ কাজে পর্যাপ্ত সুযোগ অনেক সময় পাওয়া যায় না। তুলনামূলক আরামদায়ক এবং সেই তুলনায় বেশি বেতন হওয়ায় এই কাজের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। সিঙ্গাপুরের জনগণ সৌন্দর্য বর্ধনকে খুবই পছন্দ করে।
সেই দেশের জনগণ তাদের ছোট্ট দেশকে মনের মাধুর্য মিশিয়ে পরিপাটি করে যেন একটি বাগান তৈরি করেছেন। যারা সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন তারা দেখবেন রাস্তার দুই ধারে, বিভিন্ন অফিস আদালতে এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন গাছ-গাছালি ও হরেক রকমের ফুল দিয়ে সুশোভিত করেছে।
আর এগুলোর দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেই দেশে ব্যাপক শ্রমিকের প্রয়োজন। তাই আমি বলব সিঙ্গাপুরে গার্ডেনিং কাজে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বেতনঃ ১৫০০থেকে ২০০০ সিঙ্গাপুর ডলার।
নার্স Nurse
সিঙ্গাপুর একটি উন্নত দেশ হওয়ায় এই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও অনেক উন্নত। সারা বিশ্ব থেকে বিশেষ করে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভারত এসব উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে প্রতিবছর অনেক নাগরিক সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে যান। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতাল রয়েছে যার নাম মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল।
এ হাসপাতালের নাম শুনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল বিশেষ করে উচ্চবিত্ত মানুষের মধ্যে। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এই দেশের চিকিৎসার প্রতি অন্যান্য দেশের মানুষের আগ্রহ সবসময়ই বেশি থাকে। বাংলাদেশের এলিট শ্রেণীর লোকজন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল সহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান।
এই দেশে বিপুল পরিমাণের সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। আর এই খাতে বিপুল পরিমাণের নার্সের প্রয়োজন পড়ে। তাই প্রতি বছর বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশ থেকে সরকারী ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশটি নার্স নিয়ে থাকে।
বেতনঃ ৩০০০ থেকে ৪০০০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার।
আইটি সেক্টর IT Sector
সিঙ্গাপুর আইটি সেক্টরে বেশ উন্নত। ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি এবং আইটি সেক্টর প্রতিটি শিল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুরে খুব দ্রুতগতিতে আইটি সেক্টর বিকশিত হয়েছে। সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরীর কারখানা সহ আইটি রিলেটেড যে সকল পণ্য রয়েছে সেগুলো উৎপাদিত হয় এবং অন্যান্য দেশে সেগুলো রপ্তানি ও করা হয়।
বিশ্বের অন্যতম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এর আঞ্চলিক কার্যালয় সিঙ্গাপুরে অবস্থিত। সুতরাং এই একটি কথা থেকেই বোঝা যায় যে সেই দেশের আইটি সেক্টর কত দূর পর্যন্ত বিকশিত হয়েছে। আইটি সেক্টরে যাদের ভাল দক্ষতা রয়েছে তারা যদি সিঙ্গাপুরের কোন একটি আইটি কোম্পানিতে চাকুরী পান তাহলে বেশ ভালো মানের বেতন পাবেন।
বেতনঃ ৫০০০ থেকে ৬০০০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার।
ইঞ্জিনিয়ার Engineer
সিঙ্গাপুরে অর্থনীতির দ্বিতীয় চালিকাশক্তি হলো জাহাজ নির্মাণ শিল্প। সমুদ্রের তীরবর্তী দেশ হওয়ায় এই দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প একটা শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রতিবছর সিঙ্গাপুরে দক্ষ শ্রমিকের দরকার পড়ে। বিশেষ করে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, যথেষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকলেই কেবল এই কাজ পাওয়া সম্ভব।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পের পাশাপাশি জাহাজ মেরামত, জাহাজের বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল কাজ, ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যান্য কাজ কাজের জন্য সিঙ্গাপুরে অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হয়। আপনারা কেউ যদি সিঙ্গাপুরের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং পদে কোন কাজ পান তাহলে আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এই কাজে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।
বেতনঃ ৪০০০ থেকে ৫০০০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ Cleaner
সিঙ্গাপুর নামক দেশটি অত্যন্ত ছোট তাই সেই দেশের সরকার সিঙ্গাপুর কে মনের মাধুর্য মিশিয়ে অত্যন্ত পরিপাটি করে গড়ে তুলেছে। সেই দেশের তৈরি করা হয়েছে পাহাড় সমান অট্টালিকা, রাস্তার দুই ধারের সৌন্দর্য, আলোকসজ্জা, পানির ঝর্ণা, পার্ক সহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র।
এসব স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা করার জন্য দেশটির সরকার বিদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করে। সিঙ্গাপুরে এই কাজের অনেক চাহিদা রয়েছে।
বেতনঃ ১৫০০ থেকে ১৮০০ সিঙ্গাপুর ডলার।
উপরের আলোচনায় আমি সিঙ্গাপুর কোন কাজের চাহিদা বেশি তার একটি সাধারণ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। উপরে যেসব কাজের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেসব কাজের চাহিদা রয়েছে সেগুলো হলঃ ওয়েল্ডিং, পাইব ফিটিংস, টাইলস লাগানো, গ্লাস ফিটিং, কনস্ট্রাকশন, এয়ারকন, ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রাইভিং ও মার্কেটিং ম্যানেজার।
বাংলাদেশে সিঙ্গাপুর ভিসা এজেন্টদের লিস্ট।
যে সকল বাংলাদেশী ভাইয়েরা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে সিঙ্গাপুরে যেতে চান তারা যেন কোন ভুয়া এজেন্সি ও দালালের খপ্পরে না পড়েন এই জন্য সেসব ভাইদের সুবিধার্থে নিচে বাংলাদেশে ঢাকায় অবস্থিত সিঙ্গাপুর ভিসা এজেন্টদের একটি লিস্ট দেয়া হলো-
তথ্যের উৎসঃ মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স সিঙ্গাপুর Ministry of Foreign Affairs, Singapore
সিঙ্গাপুর যেতে কত টাকা লাগে।
আলোচনার এ পর্যায়ে আমি সিঙ্গাপুরে যেতে কত টাকা খরচ লাগে এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যেতে কত টাকা খরচ লাগে তা নির্ভর করে আপনি সিঙ্গাপুরে কোন ভিসার উপর ভিত্তি করে যাবেন। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে দুই ভাবে যাওয়া যায়। স্কেল করার মাধ্যমে এবং আন স্কেল এর মাধ্যমে।
স্কেল করার মাধ্যমে আপনি যদি সিঙ্গাপুরে যেতে চান তাহলে আপনার বাংলাদেশি টাকায় খরচ হবে ৯ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে আপনি সিঙ্গাপুরে ১৮ বছর থাকতে পারবেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে স্কেল করতে আবার কত টাকা খরচ হবে। নতুন স্কেল করতে সাধারণত ৬ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা লাগে। আর আইপি করতে লাগে ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।
সব মিলিয়ে স্কেল করার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে যেতে আপনার লাগবে ৯ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে আপনি যদি আন স্কেল এর মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে যান তাহলে ৫ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি সেই দেশে ২ বছরের মত থাকতে পারবেন।
সিঙ্গাপুর সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। তাই যারা বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যেতে চান তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে ১০ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে তারপরে সিঙ্গাপুরে পৌঁছে।
বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর যেতে কত সময় লাগে।
বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যেতে কত সময় লাগে সেটা নির্ভর করে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের দূরত্ব এবং আপনি যে বিমানে সিঙ্গাপুরে গমন করবেন সেটার গতির উপর। বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে সিঙ্গাপুরের দূরত্ব প্রায় ২৮৯২ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য অনেক ধরনের ফ্লাইট রয়েছে একেক ফ্লাইটের গতি একেক রকমের তাই বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যেতে কত সময় লাগে সেটা নির্ভর করে আপনি যে বিমানে যাবেন সে বিমানের গতির উপরে।
তবে সাধারণভাবে বলা যায় বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যেতে ৪ ঘন্টা ৫ মিনিট সময় লাগতে পারে। বাই রোডে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের দূরত্ব প্রায় ৪১১৯ কিলোমিটার এবং আপনার যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ দিন ২৩ ঘন্টা।
সিঙ্গাপুরে সর্বনিম্ন বেতন কত।
আপনি যদি সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসাবে যান তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় আপনাকে প্রতিমাসে প্রায় ৫০০ সিঙ্গাপুর ডলার বেতন দেয়া হবে। আর আপনি যদি একজন দক্ষ শ্রমিক হিসাবে সিঙ্গাপুরে যান তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় আপনাকে ১০০০ সিঙ্গাপুর ডলার বেতন দেয়া হবে। তবে বেতন মূলত নির্ভর করে কোম্পানির উপরে।
একেক কোম্পানি একেক রকম বেতন প্রদান করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য কাজ যেমন- নার্স, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি সেক্টরের বেতন ৩০০০ থেকে ৬০০০ সিঙ্গাপুর ডলার হবে। নির্দিষ্ট কাজ ও নির্দিষ্ট কোম্পানির উপর বেতন কমবেশি হয়ে থাকে।আবার দক্ষ শ্রমিকের বেতন বেশি অদক্ষ শ্রমিকের বেতন তুলনামূলক কম এটা আমরা সবাই জানি যেটা আমাদের দেশে হয়ে থাকে।
অদক্ষ শ্রমিক প্রথম অবস্থায় সিঙ্গাপুরে গেলে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা বেতন পাবে দিনে দিনে তার কাজের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি হলে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তার বেতন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শেষ কথাঃ
পরিশেষে আপনাদের যা বলতে চাই তা হল আপনি বাংলাদেশ থেকে অন্য যে দেশেই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যান না কেন আপনার যদি সংশ্লিষ্ট কাজের দক্ষতা না থাকে তাহলে আপনি ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন না। তাই অবশ্যই আপনাকে সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে তারপর বিদেশে যেতে হবে। আরেকটি বিষয় তা হল বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারক দালালদের খপ্পর থেকে দূরে থাকবেন। আপনি যে দেশেই যান না কেন সেই দেশ সম্পর্কে, আপনার কাজের ধরন, বেতন ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে শুনে তারপর যাবেন।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url