জার্মানির ই, ইউ ব্লু কার্ড ভিসা কি ও ভিসা পাওয়ার উপায়

জার্মানি পশ্চিম ইউরোপের একটি শিল্প উন্নত অর্থনীতির দেশ। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মানির অর্থনীতি অনেক বেশি শক্তিশালী। শিল্পসমৃদ্ধ দেশ হওয়ায় জার্মানিতে প্রচুর বিদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ইউরোপ ও ইউরোপের বাহিরের দেশ থেকে হাজার হাজার কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে জার্মানিতে যায়। কাজের উদ্দেশ্যে জার্মানিতে যাওয়ার জন্য একজন বিদেশী কর্মীকে জার্মানির ভিসা করতে হয়। আজকের এই আর্টিকেলে জার্মানির ই,ইউ ব্লু কার্ড ভিসা সম্পর্কে আলোচনা করব।
জার্মানির ই, ইউ ব্লু কার্ড ভিসা কি ও ভিসা পাওয়ার উপায়
এর পাশাপাশি আপনারা আরো জানতে পারবেন জার্মানির সর্বনিম্ন বেতন কত, জার্মানিতে কোন কোন দেশ এর নাগরিক ভিসা মুক্ত প্রবেশ করতে পারে এই সম্পর্কে।

বাংলাদেশ থেকে জার্মানি যাওয়ার উপায়।

জার্মানির ই,ইউ ব্লু কার্ড ভিসা সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে বাংলাদেশ থেকে জার্মানি যাওয়ার উপায় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু আলোচনা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে জার্মানি যাওয়ার উপায় সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলো।

১। জব অফার
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের যে কোন দেশে যেতে গেলে আপনাকে প্রথমে একটি জব অফার পেতে হবে। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে জব অফার কিভাবে পাব। মোটামুটি তিনটি মাধ্যম থেকে আপনি জব অফার পেতে পারেন। যেমন-

নিকট আত্মীয়-স্বজন মাধ্যমে
আপনার কোন নিকটাত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধব জার্মানিতে থাকলে তিনি আপনার হয়ে জার্মানির কোন নিয়োগ কর্তা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জব অফার পেতে সহযোগিতা করতে পারেন।

বিভিন্ন জব সাইটের মাধ্যমে
জার্মানির বিভিন্ন জব সাইট রয়েছে সেগুলোতে আপনি আবেদন করলে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কর্তা যদি আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনাকে জব অফার করতে পারে।


দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে
বাংলাদেশী কোন দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে আপনি জব অফার সংগ্রহ করতে পারেন।

জার্মানির একটি জব অফার পেতে আপনি আপনার নিকটাত্মীয় দালালের সাথে কত টাকার এগ্রিমেন্ট করবেন তা নিত্যান্তই একটি ব্যক্তিগত বিষয়। সাধারণত ইউরোপের যে কোন দেশে যেতে নামমাত্র মূল্যে টাকা খরচ হয় কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নেয় দালাল ও এজেন্সি চক্র।

২। ওয়ার্ক পারমিট
জার্মানিতে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য আপনি জব অফার পাওয়ার পর এবার আপনাকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি সরাসরি ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন না আপনাকে যে কোম্পানি বা নিয়োগ কর্তা নিয়োগ করবেন তিনি জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে ওয়ার্ড পারমিটের জন্য আবেদন করবেন। 
ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদন হয়ে গেলে ইমেইলের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিটটি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবে।

৩। জার্মান দূতাবাসের এপয়েন্টমেন্ট
জার্মান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করার পূর্বে দূতাবাস থেকে আপনাকে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে এপয়েন্টমেন্ট এর নির্দিষ্ট তারিখে গিয়ে ভিসার আবেদন ফরম জমা দিতে হবে।

৪। ভিসার জন্য আবেদন
ওয়ার্ক পারমিট হাতে পাওয়ার পর আপনার কাজ হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে আপনার দেশে অবস্থানরত জার্মান এম্বাসিতে ভিসার জন্য আবেদন করা।

৫। বায়োমেট্রিক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রদান
ভিসার জন্য আবেদন করার পর জার্মান দূতাবাস থেকে নির্দিষ্ট একটি তারিখে আপনাকে বায়োমেট্রিক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রদান করার জন্য ডাকা হবে এবং ঐ একই দিনে আপনার ইন্টারভিউ নেওয়া হতে পারে।

৬। পাসপোর্ট ফেরত
জার্মানি যাওয়ার জন্য ভিসার অনুমোদন হয়ে গেলে তারা আপনাকে ইমেইলে অথবা মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে পাসপোর্ট ফেরত নেওয়ার নির্ধারিত তারিখ। নির্ধারিত তারিখে এম্বাসিতে উপস্থিত হয়ে পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে আসতে হবে। এরপর আপনার কাজ হবে জার্মানির উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

জার্মানির ই, ইউ ব্লু কার্ড কি?

জার্মান সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অথবা ইউরোপীয় ইকোনমিক এরিয়ার বাহিরের দেশের নাগরিকদের জার্মান প্রবেশের জন্য যে কয়েক ধরনের ভিসা দিয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো জার্মান ই, ইউ ব্লু কার্ড ভিসা। জার্মানির ই, ইউ ব্লু কার্ড লাভ করতে পারলে কোন ব্যক্তি ইউরোপের অন্যান্য দেশে গিয়ে কাজ করার সুযোগ লাভ করতে পারবেন। 

এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন- আপনি যদি জার্মানির ব্লু কার্ড পেয়ে থাকেন জার্মানিতে প্রবেশের পর আপনাকে কমপক্ষে সেই দেশে ১৮ মাস অবস্থান করতে হবে। এরপর আপনি চাইলেই ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশে যেতে পারবেন এবং কাজ করার সুযোগ পাবেন। 
কোন ব্যক্তি জার্মান ই, ইউ ব্লু কার্ড পাওয়ার অন্তত ২১ মাস পরে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে জার্মানি ভাষার উপরে B1 লেভেলের জ্ঞান থাকতে হবে। অন্যথায় আপনাকে ৩৩ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এরপর আপনি ভাষা দক্ষতা ছাড়াই স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন অথবা ইউরোপীয় ইকোনমিক এরিয়ার অন্তর্ভুক্ত নয় এমন দেশের নাগরিকদের জার্মানিতে বসবাস এবং কাজের অনুমতি প্রদান করে জার্মানি ই, ইউ ব্লু কার্ড। এই কার্ডের অন্যতম একটি সুবিধা হল আপনি যদি এই কার্ড পেয়ে যান তাহলে ইউরোপের অন্যান্য দেশে কাজ এবং বসবাসের সুযোগ পাবেন। শুধুমাত্র ডেনমার্ক এবং আয়ারল্যান্ড বাদে। 

ব্লু কার্ড এর মেয়াদ সাধারণত ৪ বছর হয়ে থাকে। তবে এই ব্লু কার্ডের মেয়াদ আপনার জার্মানিতে কাজের কন্টাক্ট এর মেয়াদের উপর নির্ভর করে। যেমন- আপনি যদি জার্মানিতে ২ বছরের কাজের কন্ট্রাক্ট পেয়ে থাকেন সেই ক্ষেত্রে আপনার ব্লু কার্ডের মেয়াদ ২ বছর প্লাস এর সঙ্গে আরো ৩ মাস যুক্ত থাকবে। 

এই ৩ মাসের মধ্যে আপনাকে অন্য কোন কাজ খুঁজে নিয়ে ব্লু কার্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি যদি ৩ মাসের মধ্যে কোন কাজ খুঁজে না পান সেক্ষেত্রে আপনাকে নিজ দেশে ফেরত আসতে হবে।
জার্মানিতে বিদেশি কোন কর্মী (ই,ইউ ব্লু কার্ড ধারি) চাইলেই তার ব্লু কার্ডের মেয়াদ বা ভিসার মেয়াদ থাকাকালীন সময়ের মধ্যে তার নির্ধারিত কাজ পরিবর্তন করে অন্য কাজ করার সুযোগ পাবেন। কাজে যোগদানের প্রথম বছরে আপনি আপনার কাজ পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন তবে এই জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার স্থানীয় ফরেনার অথরিটি কে জানাতে হবে নতুন চাকুরীর জন্য। 

এই সংস্থা আপনার আবেদন যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আপনাকে অনুমতি প্রদান করলে তবে আপনি আপনার চাকুরী চেঞ্জ করতে পারবেন।

জার্মান ই,ইউ ব্লু কার্ড ভিসার ফি।

যেকোনো দেশের ভিসা করতে গেলে ভিসার একটি ন্যূনতম ফি প্রদান করতে হয় এ ভিসার ফি দুই পদ্ধতিতে প্রদান করা যায় সরাসরি এম্বাসিতে গিয়ে অথবা অনলাইনে। জার্মানির ই ইউ ব্লু গার্ড ভিসার ফি আপনি অনলাইনে এবং অফলাইনে দুইভাবেই দিতে পারবেন। জার্মান ই,ইউ ব্লু কার্ড ভিসার ফি ৭৫ ইউরো যা লোকাল কারেন্সিতে আপনারা পে করতে পারবেন।

জার্মানিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভিসা মুক্ত দেশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশের নাগরিকদের জার্মানিতে প্রবেশের জন্য কোন প্রকার ভিসার প্রয়োজন হয় না অর্থাৎ জার্মানিতে প্রবেশের জন্য এসব দেশের নাগরিকদের কোন ধরনের ভিসা প্রয়োজন হয় না। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ এবং ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের দেশগুলোর নাগরিকরা যদি জার্মানিতে চাকরি বা কাজ করার উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে কোন ধরনের রেসিডেন্ট পারমিট এবং ভিসা প্রয়োজন হয় না। এছাড়া আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড এই দেশগুলোর নাগরিক গণ জার্মানিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভিসা মুক্ত প্রবেশাধিকার লাভ করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাহিরের দেশ এবং ইউরোপীয় ইকোনোমিক এরিয়ার বাহিরের যে সকল দেশ রয়েছে। যেমন- অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইল, জাপান, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের নাগরিকরা জার্মানিতে ভিসা মুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। যাইহোক এ সকল দেশের নাগরিকরা কাজের উদ্দেশ্যে জার্মানিতে যেতে চাইলে তাদের অবশ্যই রেসিডেন্ট পারমিট এর প্রয়োজন হবে।

বাংলাদেশী কোনো নাগরিক যদি ইউরোপের দেশ জার্মানিতে যেতে চান তাহলে অবশ্যই তাকে ভিসা করে যেতে হবে তবে বাংলাদেশের কোন নাগরিক ইউরোপের অন্য কোন দেশের নাগরিক বা অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের নাগরিকত্ব লাভ করলে তারা ভিসা মুক্ত জার্মানিতে প্রবেশের অনুমতি পাবে।

জার্মানির ই, ইউ ব্লু কার্ড পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত।

  • প্রথমত আপনাকে ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর বাহিরের যে কোন দেশের নাগরিক হতে হবে।
  • জার্মানির ইউনিভার্সিটি ডিগ্রীর সাথে সমমূল্যের জার্মানি অথবা জার্মানির বাহিরের অন্য কোন রাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি থেকে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী হতে হবে।
  • জার্মানির কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জব অফার অথবা কাজের চুক্তিপত্র পেতে হবে, কাজের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস হতে হবে।
  • জার্মানিতে আপনার বাৎসরিক গ্রস সেলারি সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার ৩০০ ইউরো হতে হবে।
  • যদি আপনি একজন বটোলেনিক প্রফেশন এর কর্মী হয়ে থাকেন তাহলে ই ইউ ব্লু কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার বাৎসরিক গ্রস সেলারি হতে হবে ৪১ হাজার ইউরোর মত।
  • বটলেনিক প্রফেশন বলতে বুঝায় নিচের পেশাগুলোকে। যেমন-
  • ম্যানুফ্যাকচারিং, কনস্ট্রাকশন, ডিস্ট্রিবিউশন, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, প্রফেশনাল সার্ভিস ম্যানেজার চাইল্ড কেয়ার সার্ভিস, হেলথ সার্ভিস, এডুকেশন সার্ভিস,মেডিকেল ডক্টর, ভেটেনারিজ, ডেন্টিস্ট, ফার্মাসিস্ট, নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি।
  • আপনার চাকরির ধরন অবশ্যই শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে বা ডিগ্রির সঙ্গে মিল থাকতে হবে। যেমন- আপনি মেডিকেল সেক্টরে পড়াশোনা করেছেন কিন্তু জার্মানিতে ব্যাংকিং সেক্টরে কাজের সুযোগ পেয়েছেন সে ক্ষেত্রে আপনি ই ইউ ব্লু কার্ড পাবেন না।
  • ডাক্তার, নার্স এই ধরনের পেশার ক্ষেত্রে অবশ্যই পেশাগত প্র্যাকটিসের সার্টিফিকেট ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন আইটি প্রফেশনাল আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই আপনি জার্মান ই,ইউ ব্লু কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কিছু শর্ত প্রযোজ্য
  • আপনি যদি জার্মানিতে ইনফরমেশনাল টেকনোলজি পেশায় সাধারণ যোগ্যতা ছাড়াই কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ পূর্বক আবেদনের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। যেমন
  • আপনাকে নির্দিষ্ট কাজের চাকুরীর অফার পেতে হবে এবং চাকুরীর মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস হতে হবে।
  • আপনার বাৎসরিক স্যালারি হতে হবে ৪১ হাজার ইউরো।
  • গত ৭ বছরের মধ্যে মিনিমাম ৩ বছরের ইনফরমেশন টেকনোলজি পেশায় দক্ষতা থাকতে হবে আপনার পেশাগত অভিজ্ঞতা অবশ্যই ইউনিভার্সিটি লেভেলের হতে হবে।
আপনার যদি উপরের রিকোয়ারমেন্ট গুলো থাকে তারপর আপনি জার্মান ই, ইউ ব্লু কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ভিসার জন্য এপ্লিকেশনের ধাপসমূহ।

জার্মানিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। যেমন-

স্টেপ-১ঃ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ
  • একটি বৈধ পাসপোর্ট পাসপোর্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
  • সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ন্যূনতম ডিগ্রী পাস।
  • ন্যূনতম দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট।
  • পুলিশ  ক্লিয়ারেন্স এন্ড সার্টিফিকেট।
  • চাকুরীর অফার লেটার বা কন্টাক ফর্ম।
  • ওয়ার্ক পারমিট এর ফটোকপি।
  • বিএমইটির প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট।
  • বি এম ইটির স্মার্ট কার্ড।
  • জার্মানি ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট।(প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
স্টেপ-২ঃ জীবনযাত্রার ব্যয়
ভিসা প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে আপনাকে দেখাতে হবে যে জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য আপনার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণের অর্থ রয়েছে। এটি আপনি বিভিন্ন উপায়ে দেখাতে পারেন। আপনি আপনার ভবিষ্যৎ স্যালারি কত হবে এটি দেখাতে পারেন অথবা পুরনো কোন ব্যাংক স্টেটমেন্ট। জার্মানিতে প্রবেশের পর আপনি সেই দেশ ও জনগণের জন্য হুমকি স্বরূপ নয় এটি আপনাকে প্রমাণ করতে হবে।

স্টেপ-৩ঃ জার্মান দূতাবাস অথবা কনসুলেট অফিস থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া
আপনার ভিসার আবেদনের জন্য সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করে আপনাকে ভিসার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে প্রয়োজনীয় কি কি কাগজপত্র লাগবে এগুলো সাধারণত জার্মান এম্বাসি এবং কনসুলেট অফিস ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।

স্টেপ-৪ঃ ভিসার জন্য আবেদন করা
আপনি যে দেশে বসবাস করছেন সেই দেশে জার্মান এম্বাসিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। জার্মানিতে আপনার প্রবেশের উদ্দেশ্য কি এটি উল্লেখ থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি জার্মানিতে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে আপনি ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করবেন।

স্টেপ-৫ঃ জার্মানিতে প্রবেশ
আপনার ভিসা অনুমোদিত হওয়ার পর জার্মানিতে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। জার্মানিতে আপনার দীর্ঘ সময় অবস্থান করার পরিকল্পনা থাকলে আপনার পার্সোনাল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- বার্থ সার্টিফিকেট, প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ড্রাইভিং লাইসেন্স, ম্যারেজ সার্টিফিকেট, হেলথ ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট এগুলো সঙ্গে রাখতে হবে।

স্টেপ-৬ঃ রেসিডেন্টস পারমিট এর জন্য আবেদন
কাজের ভিসায় জার্মানিতে প্রবেশের পর আপনার কাজ হবে  রেসিডেন্টস পারমিটের জন্য আবেদন করা। কেননা আপনার ভিসার মেয়াদ মাত্র ১ বছর এই সময়ের মধ্যে আপনাকে অবশ্যই রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে যদি আপনি জার্মানিতে লং টাইম থাকতে চান।

জার্মানিতে সর্বনিম্ন বেতন কত?

জার্মানি ইউরোপের একটি উন্নত অর্থনীতির দেশ প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে জার্মানি যায়। ইউরোপের কোন একটি দেশের ওয়ার্ক পারমিট পেলে আপনি সেই ওয়ার্ক পারমিট বা ভিসা দিয়ে ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশে যাওয়া এবং কাজ করার সুযোগ লাভ করবেন। এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। 

উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বেশ কিছু সংখ্যক দক্ষ কর্মী ইউরোপের দেশ জার্মানিতে পাড়ি জমায়। আলোচনার এই অংশে আমি জার্মানিতে ই,ইউ ব্লু কার্ড ভিসার বেতন কত এই সম্পর্কে আপনাদের জানাবো-
জার্মানিতে একজন বিদেশী শ্রমিকের কাজের মজুরি কত হবে তা শ্রম আইন দ্বারা নির্ধারণ করা রয়েছে। জার্মানির শ্রম আইন বলছে একজন শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করতে পারবেন তবে এই সময় সর্বোচ্চ ১০ ঘন্টা পর্যন্ত বাড়ানো যায়। তবে কোনোভাবেই ৬ মাসের মধ্যে গড়ে ৮ ঘণ্টার বেশি শ্রমিকদের কাজ করানো যাবে না। 

সাধারণত সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ ঘন্টা কাজ করতে পারবেন। সরকারি ছুটির দিন কাজ সীমিত থাকবে তবে এর ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। ২০২২ সালের ১ অক্টোবর আইন অনুযায়ী কোন বিদেশি শ্রমিক প্রতি ঘন্টায় মজুরি পাবেন ১২ ইউরো। তবে এটি কাজের ভিন্নতার ভিত্তিতে আলাদা আলাদা হতে পারে। 

আপনার জব কনট্রাক্ট ফর্মে দৈনিক কত ঘন্টা কাজ করবেন ঘন্টায় কত ইউরো মজুরি পাবেন এর বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। তবে আপনাকে জার্মানির ব্লু কার্ড পেতে হলে বাৎসরিক ৪১ হাজার ইউরো থেকে ৫০ হাজার ৩০০ ইউরো পর্যন্ত বেতন পেতে হবে।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক, আজকের আলোচনায় আমি জার্মানির ই, ইউ ব্লু কার্ড ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। জার্মানি সহ ইউরোপের যে দেশেই আপনি যেতে চান না কেন আপনার অবশ্যই ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা থাকতে হবে এবং যে কাজের উপর আপনি যাবেন সেই কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। মনে রাখবেন ইউরোপের দেশ জার্মানিতে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিজের যোগ্যতার সর্বোচ্চ পরীক্ষা দিয়েই তারপর জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url