সরকারিভাবে বিদেশ যেতে কত টাকা লাগে তা জেনে নিন
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়া নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। এখানে দালালদের দৌরাত্ম ও বেসরকারি এজেন্সির স্বেচ্ছাচারিতা অনিয়ম এগুলোর স্থান নেই। সরকারিভাবে বিদেশ যেতে কত টাকা লাগে এই বিষয়টি আজকে আমার আলোচ্য বিষয়।আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা আরো জানতে পারবেন সরকারিভাবে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়। কাজের জন্য বিদেশ যাওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গুলো কি কি এই সম্পর্কে।
সরকারিভাবে কিভাবে বিদেশ যাওয়া যায়।
বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হল বেকারত্ব। দেশে পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক যুবক প্রতিবছর বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয়ই পদ্ধতির মাধ্যমে বিদেশে দক্ষ, অদক্ষ কর্মী প্রেরণ করা হয়ে থাকে। সরকারিভাবে বিদেশে কর্মী প্রেরণের একমাত্র বৈধ সংস্থা হচ্ছে বোয়েসেল।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ মানুষ কাজের ভিসা নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন এর বেশিরভাগই বেসরকারি ভাবে। খুব কম সংখ্যক মানুষকে সরকারিভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বিদেশ পাঠানো হয়ে থাকে। সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার খরচ তুলনামূলক কম এবং নিরাপদ। সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়া বলতে বুঝায় সম্পূর্ণ সরকারি তত্ত্বাবধানে অর্থাৎ বোয়েসেলের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ।
আরো পড়ুনঃ সিঙ্গাপুর যেতে কত বছর বয়স লাগে
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মী প্রেরণের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি কেমন হবে তা নির্ভর করে যে দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে সে নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর। তারা যদি চায় বেসরকারি কোন এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করবে তাহলে সেটা তারা করতে পারবেন আবার যদি মনে করেন যে না তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলের মাধ্যমে নেবেন সেটা ও করতে পারেন।
বোয়েসেল এর মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ থেকে বোয়েসেলের মাধ্যমে বিদেশে কর্মী পাঠানো কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। যেমন-
নিয়োগ কারী দেশ থেকে চাহিদা পত্র পাঠানো।
সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার জন্য প্রথমে যে দেশ কর্মী নিতে চাই সেই দেশের নিয়োগ কারী প্রতিষ্ঠান বা নিয়োগকারী মালিক প্রথমে সেই দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি চাহিদা পত্র প্রেরণ করবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে যে, বোয়েসেলে এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ অথবা অদক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী।
উক্ত চাহিদা পত্রে কাজের ধরন, নিয়োগকৃত কর্মীর সংখ্যা, বেতন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা এবং কাজের অন্যান্য শর্তাবলী সবকিছু উল্লেখ করা থাকবে। নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ কারী প্রতিষ্ঠান ঐ দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বোয়েসেল এর নিকট ইমেল এর মাধ্যমে চাহিদা পত্র পাঠিয়ে দেবে।
বোয়েসেল এবং নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদন।
বোয়েসেল এবং নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষ হতে নিয়োগ করার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার একটি দায় দায়িত্ব বোয়েসেল কে দেয়া হবে।
বিদেশি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা নিয়োগকর্তা যদি মনে করেন তিনি কোন এজেন্সি মাধ্যমে বোয়েসেল থেকে কর্মী নিয়োগ করবেন তাহলে সেটি করতে পারবেন।
ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের চুক্তিপত্র প্রদান।
বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পত্র ভিসা বা কাজের অনুমতি পত্র ওয়ার্ক পারমিট সংশ্লিষ্ট দেশ বোয়েসেলকে প্রদান করবে। এর সাথে জব কন্টাক্ট ফর্ম পাঠিয়ে দেবে জব কন্টাক ফরমে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকবে তা হল - বেতন, কাজের সময়, ওভারটাইম, যাতায়াত, মেডিকেল, খাবার, বাসস্থান, সাপ্তাহিক ছুটি, বাৎসরিক ছুটি এবং কাজের অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ থাকবে।
বাংলাদেশী এজেন্সির সাথে চুক্তি।
কর্মী নিয়োগের এ পর্যায়ে বোয়েসেল সরকার কর্তৃক অনুমোদিত যেসব এজেন্সি রয়েছে এই এজেন্সিগুলোর সঙ্গে বিদেশে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলো বোয়েসেলকে সকল ধরনের সহযোগিতা করবে।
বিদেশের লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে এজেন্সি গুলো তাদের দায়-দায়িত্ব ও কাজের জবাবদিহিতা ও শর্তাবলী জন্য বোয়েসেল এবং নিয়োগকারীর নিকট দায়বদ্ধ থাকবে এবং তারা সম্পন্ন বৈধ পন্থায় কর্মী প্রেরণের কার্যাবলী সম্পাদন করবেন।
বোয়েসেল কর্তৃক কর্মী নির্বাচনের প্রক্রিয়া।
বোয়েসেল বিদেশে কর্মী প্রেরণের জন্য কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে থাকে। যেমন-
নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া
বোয়েসেল বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের চাহিদা পত্র পাওয়ার পর কর্মী নিয়োগের প্রথম ধাপ হিসাবে বিভিন্ন পত্রিকা, ওয়েবসাইট, নোটিশ বোর্ড, ফেসবুক পেজ এবং বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।
সিভি জমা নেওয়া
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশী নাগরিকদের কাছ থেকে সিভি জমা নেবে বোয়েসেল এবং নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে কর্মী বাছাই সম্পন্ন করবেন।
প্রার্থী বাছাই করা
প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অথবা তাদের প্রতিনিধি মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচনের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। এখানে বোয়েসেল প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। যেমন- ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা, ইন্টারভিউ অথবা লিখিত পরীক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা এবং প্রাকটিক্যাল পরীক্ষাও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো।
কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এখানে বোয়েসেল শুধুমাত্র কারিগরি অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। মূল কাজটি করে নিয়োগ কারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অথবা তাদের প্রতিনিধি।
মেডিকেল পরীক্ষা
চূড়ান্তভাবে বাছাই করা প্রার্থীদের মেডিকেল পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল এবং মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সাধারণত প্রার্থীদের মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এম্বাসির মাধ্যমে নির্ধারিত মেডিকেল সেন্টারে।
সরকারিভাবে বিদেশ যেতে কত টাকা লাগে।
বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয়ভাবেই বিদেশে যাওয়া যায়। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বিদেশে যেতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে সর্বনিম্ন ৫০,০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত তবে বেসরকারিভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বিদেশ যেতে চাইলে সর্বনিম্ন ৪,০০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আপনার খরচ হতে পারে।আসলে বিদেশ যেতে কত টাকা খরচ হয় এটি সঠিকভাবে বলা মুশকিল। সরকারিভাবে বিদেশ কর্মী প্রেরণের জন্য যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় সেই বিজ্ঞপ্তিতেই বোয়েসেলের কত টাকা খরচ হতে পারে সেই বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। আপনি চাইলে সেখান থেকে খুব সহজেই জেনে নিতে পারবেন সরকারিভাবে বিদেশ যেতে কত টাকা লাগে।
অনেক সময় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি আপনার যাবতীয় খরচ বহন করবে সে ক্ষেত্রে আপনি সম্পূর্ণ বিনা খরচে বিদেশ যেতে পারবেন। আপনাকে শুধু ভিসা প্রসেসিং ফি দিতে হবে। কাজেই বুঝতে পারছেন সরকারি বা বেসরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক কত টাকা আপনার খরচ হতে পারে এটা সঠিকভাবে বলা মুশকিল।
সরকারিভাবে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়।
সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে কোন কোন দেশে যাওয়া যায় এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। কেননা দুই দেশের সরকারের মধ্যে যখন কোন চুক্তির মাধ্যমে কর্মী নেয়া হয়ে থাকে তখন সেটাকে সরকারি মাধ্যমে কর্মী নেওয়া বুঝায়। বর্তমানে সরকারিভাবে অর্থাৎ বোয়েসেল এর মাধ্যমে যেসব দেশ কর্মী নিয়ে থাকে সেগুলো হলো সৌদি আরব, ওমান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, জর্ডান, কাতার, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ সরকার যখন যে দেশের সরকারের সঙ্গে জি২জি পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর জন্য চুক্তি সম্পাদন করবেন তখন সেই দেশে সরকারিভাবে কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। তখন সরকারিভাবে কর্মী পাঠানো দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে আবার এটি কমেও যেতে পারে চুক্তি বাতিল হওয়ার কারণে তাই বলা হয়েছে এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়।
বিদেশ যাওয়ার জন্য BMET তে নিবন্ধন করা।
বাংলাদেশের কোন নাগরিক সরকারি বা বেসরকারিভাবে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যেতে চাইলে প্রথমে তাকে BMET তে ডাটাবেজে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এরপর আপনি BMET তে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে নিজেকে একজন দক্ষ শ্রমিক হিসাবে গড়ে তোলার সুযোগ পাবেন। BMET তে প্রশিক্ষণ শেষে আপনাকে সেখান থেকে একটি BMET স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে।
BMET র আমি প্রবাসী Ami Probashi অ্যাপস এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য আপনি অ্যাপ্লিকেশন করতে পারবেন। Ami Probashi অ্যাপসটি গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন্য।
এরপর আপনি এই অ্যাপসের মাধ্যমে আপনার চাকরির ধরন, বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আবেদন করতে পারবেন এবং আপনার নিয়োগকর্তা যদি আপনার সমস্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আপনাকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করেন তাহলে পরবর্তীতে নির্ধারিত স্থানে ইন্টারভিউয়ের অংশগ্রহণ করে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।
কাজের জন্য বিদেশ যাওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সমূহ।
- বৈধভাবে ও নিরাপদে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন।
- প্রথমে লাভ ক্ষতি হিসাব করুন তারপর বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন।
- সংশ্লিষ্ট DEMO তে ডাটাবেজ নাম নিবন্ধন করুন।
- গন্তব্য দেশের ভাষা জেনে নিন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।
- সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ যান।
- নিজের পাসপোর্ট নিজের কাছে রাখুন এবং ভিসা সংগ্রহ ও যাচাই করুন।
- ভালোভাবে বুঝে উপরে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করুন।
- অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার হতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
- সংশ্লিষ্ট DEMO অফিসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আঙ্গুলের ছাপ দিন।
- বিদেশ যাওয়ার ৩ দিন পূর্বে প্রাক বহির্গমন প্রশিক্ষণে অংশ নিন।
- বিদেশ যাওয়ার পূর্বে ৩ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলুন।
- BMET স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করুন।
- বিদেশ যাওয়ার পূর্বে সমস্ত কাগজপত্র ৩ সেট ফটোকপি করে সংরক্ষণ করুন।
শেষ কথাঃ
সরকারি নিয়ম মেনে সরকার নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণ করব নিরাপদ এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হব।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url