সিঙ্গাপুরে যেতে কত বছর বয়স লাগে

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫ বছর পূর্বে বৃটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ছোট্ট একটি দেশ সিঙ্গাপুর। কিন্তু আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি যোজন যোজন দূর এগিয়ে। কঠোর আইনের শাসন, নাগরিকদের সচেতনতা, সঠিক পরিকল্পনা ইত্যাদির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর কে তারা আজ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় সিঙ্গাপুরের সাথে অন্য কোন দেশের তুলনামূলক পার্থক্য নয়। প্রাসঙ্গিকভাবে বিষয়টি চলে এসেছে।
সিঙ্গাপুর যেতে কত বছর বয়স লাগে
আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় সিঙ্গাপুরে যেতে কত বছর বয়স লাগে, সিঙ্গাপুরের ভিসা করতে কি কি কাগজপত্র লাগে আনুষঙ্গিক এইগুলো বিষয় নিয়ে। তাহলে চলুন স্টেপ বাই স্টেপ এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক-

সিঙ্গাপুর ভিসা কিভাবে পাবেন।

প্রিয় পাঠক, আপনারা অনেকেই রয়েছেন হড় হামেশাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কাজের উদ্দেশ্যে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বা সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে বেড়ান। আমার এই আলোচনাটি সম্পূর্ণ নতুনদের জন্য। অনেকেই জানতে চান সিঙ্গাপুর ভিসা কিভাবে পাব এই বিষয় সম্পর্কে। রাজধানী ঢাকার সিঙ্গাপুর কোনসুলেন্ট হতে সিঙ্গাপুরের ভিসা ইস্যু করা হয়। 

তবে আপনি সরাসরি ভিসার জন্য সেখানে আবেদন করতে পারবেন না। সিঙ্গাপুর ভিসার জন্য আপনাকে অবশ্যই অনুমোদিত ভিসা সেন্টারে যেতে হবে। সেই সাথে সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী আপনার কাছের কোন মানুষের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পত্র পেতে হবে। তবে ডিপ্লোম্যাটিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্ট এর জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে কোন ভিসা লাগে না।

সিঙ্গাপুর যেতে কি কি  কাগজপত্র লাগে।

বিশ্বের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ভিসা করতে হবে। তবে পৃথিবীতে এমনও অনেক দেশ রয়েছে সেই দেশগুলোতে যেতে কোন ভিসা করতে হয় না। মোটামুটি সব দেশের ভিসা করতে গেলে প্রায় একই ধরনের ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। একই দেশে ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন পড়ে। 
যেমন- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা, মেডিকেল ভিসা, ব্যবসায়িক ভিসা এগুলো প্রত্যেকটি ভিসার আলাদা আলাদা ডকুমেন্টস দিতে হয়। এখন সিঙ্গাপুরে ভিসা করতে কি কি ডকুমেন্টস/কাগজপত্র লাগে সেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সিঙ্গাপুরের সকল ধরনের ভিসা করার ক্ষেত্রে যে সব কমন ডকুমেন্টস/কাগজপত্র লাগে সেগুলো হল-
  • একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টে কমপক্ষে দুইটি খালি পাতা থাকতে হবে, যাতে সেখানে ভিসার সিল দেওয়া যায়।
  • সিঙ্গাপুরে প্রবেশের পর থেকে ভিসার মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
  • সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি রঙিন ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড সহ দিতে হবে, ছবি তোলার সময় মাথায় ক্যাপ, চোখে চশমা, কানে দুল এগুলো থাকা যাবে না।
  • নির্দিষ্ট ভিসার ফি প্রদান।
  • সিঙ্গাপুর থেকে আপনার আমন্ত্রণপত্র থাকতে হবে, সিঙ্গাপুরে আপনাকে কে রিসিভ করবে সেই তথ্য দিতে হবে।
  • করোনা ভ্যাকসিন এর সার্টিফিকেট লাগবে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর সার্টিফিকেট।
  • চারিত্রিক সনদপত্র।
উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টস গুলো প্রায় সব ধরনের ভিসার আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনাকে জমা দিতে হবে। এখন আমি আপনাদের জানাবো ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী আরো অতিরিক্ত যেসব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস লাগবে সেই সম্পর্কে।
টুরিস্ট ভিসা জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টঃ বিশ্বের যে সকল দেশ টুরিস্ট স্পট হিসেবে অধিক পরিচিত সেগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর অন্যতম। আমি আগের একটি পোস্টে বলেছি সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি নির্ভর করে টুরিস্ট শিল্পের উপরে। সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন। টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সমূহ নিম্নরূপ-
  • টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে নির্দিষ্ট কোন বয়স লাগে না। তবে বয়স প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম সনদ জমা দিতে হয় এবং স্কুলের আইডি কার্ড এর কপি।
  • হোটেল বুকিং এর তথ্য।
  • বিমানের ফিরতি টিকেট এর কপি।
  • বিবাহিত হলে ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর কপি।
  • ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট এর মূল কপি। ব্যাংকে ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা থাকতে হবে।
  • চাকুরীজীবী হলে অফিস কর্তৃক ছুটির অনুমতি পত্র।
ব্যবসায়ী ভিসার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা কেন্দ্রিক একটি দেশ হল সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে। বাংলাদেশ থেকেও অনেক ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে যায় ব্যবসা করার জন্য। এখন আমি ব্যবসায়ী ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস কি কি লাগে এই বিষয়টি তুলে ধরলাম-
  • আপনার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে বয়স প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম সনদ এর কপি দিতে হবে।
  • ব্যবসায়ী ভ্রমণকারীদের ভিসা পেতে সিঙ্গাপুরে রেজিস্টারকৃত কোম্পানির স্থানীয় যোগাযোগের ঠিকানা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির স্বাক্ষর করা আমন্ত্রণপত্র থাকতে হবে
  • বাংলাদেশে আপনার ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি
  • হোটেল বুকিং এর তথ্য
  • ফিরতি বিমান টিকেট
সিঙ্গাপুর স্টুডেন্ট ভিসার কাগজপত্রঃ সিঙ্গাপুর একটি এশিয়া মহাদেশের উন্নত রাষ্ট্র। সিঙ্গাপুরের শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেক উন্নত বিশ্বের বহু দেশের শিক্ষার্থী সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন ডিগ্রী অর্জনের জন্য স্টাডি করছে। এশিয়ার এই দেশটিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পড়াশোনার অনেক সুযোগ। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহ নিম্নরূপ-
  • সকল একাডেমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট স্ক্যান কপি।
  • মটিভেশন লেটার।
  • আই ই এল টি এস সার্টিফিকেট।
  • রিকোমেনডেশন লেটার। ( যদি চায় )
  • বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া অফার লেটার।
  • টিউশন ফিসের পেমেন্ট কপি।
  • Study permited পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম।
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা ভিসার ডকুমেন্টসঃ সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে কতটা উন্নত তা এই অল্প পরিসরে বলে বোঝানো যাবে না। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ইউরোপের অন্যান্য দেশ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথেও তুলনা করা চলে। 
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ থেকে প্রতিবছর বহু সংখ্যক রোগী সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যায়।
  • ফিরতি বিমান টিকেট
  • সফরের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে একটি চিঠি অর্থাৎ আপনি কেন সিঙ্গাপুর যেতে চান
  • হোটেল বুকিং এর তথ্য
  • হাসপাতাল অথবা ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট লেটার
  • বাংলাদেশের যে হাসপাতালে চিকিৎসা করেছেন সেই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র
  • ন্যূনতম ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং সেখানে চিকিৎসা খরচ বাবদ পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে

সিঙ্গাপুরে যেতে কত বছর বয়স লাগে।

সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স লাগে। ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়স অবধি সিঙ্গাপুরের ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। তবে আপনি যদি সিঙ্গাপুরের ট্রাভেল ভিসায় যেতে চান তাহলে বয়সের কোন লিমিটেশন নেই। 

আপনার বয়স যদি ১৮ বছর না হয় তাহলে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে সিঙ্গাপুরে যেতে পারবেন না। আপনাকে অবশ্যই সিঙ্গাপুরে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে হলে আপনার বয়স ১৮ বছর হতে হবে এবং সর্বোচ্চ বয়স ৫০ বছরের বেশি হবে না।

সিঙ্গাপুর ভিসার আবেদন করার নিয়ম।

সিঙ্গাপুরের ভিসার আবেদন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু রুলস ফলো করতে হবে। আপনি সিঙ্গাপুরে কোন ভিসার জন্য আবেদন করবেন তার উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো নিয়ে কোন দালাল ভাই বা এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। সিঙ্গাপুরের ভিসার আবেদন করার জন্য আপনাকে যেতে হবে রাজধানী ঢাকা শহর বিভিন্ন সিঙ্গাপুর ভিসা এজেন্ট অফিসে। 

আপনি যদি এই কাজে কোন দালাল ধরেন তাহলে কাজটি খুব সহজে ও দ্রুত হয়ে যাবে। যদিও এক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত কিছু টাকা খরচ হবে। আপনি যদি নিজে কাজটি করতে চান তাহলে পদে পদে বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হবেন এবং অনেক সময় এটা দীর্ঘসুত্রিতা মধ্যে পড়ে যাবে। যা আপনার জন্য সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। 
তবে আপনি যদি নিজে নিজে কাজটি করতে পারেন তাহলে সেটা আপনার আর্থিকভাবে সাশ্রয় হবে। সিঙ্গাপুরের ভিসা আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই প্রতারক দালালদের কাছ থেকে সাবধান থাকবেন। কেননা ছোট্ট একটি ভুল অনেক সময় আপনার দীর্ঘ কান্নার কারণ হতে পারে তাই আপনি যে কাজই করবেন না কেন সাবধানে করবেন।

সিঙ্গাপুর ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ফি?

আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন সিঙ্গাপুর ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ফি কত এই সম্পর্কে। সিঙ্গাপুর ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ফি ৩০০ সিঙ্গাপুর ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় ৩৫০০ টাকার মতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রায় ৫০০০ মত লাগে। আপনি যে এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার আবেদন জমা দিবেন তারা অনেক সময় বেশি টাকা নিয়ে থাকে। 

এর জন্য তারা আপনাকে বেশ কিছু সাপোর্ট দেবে। যেমন- এয়ার টিকেটের বুকিং এর পেপার, হোটেল রিজার্ভেশন এর কপি এই সকল ডকুমেন্টগুলো প্রোভাইড করার জন্য এজেন্সি গুলো মূলত ৫০০০ টাকার কাছাকাছি নিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের বিমান ভাড়া।

আপনারা অনেকেই জানার আগ্রহ দেখিয়েছেন যে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের বিমান ভাড়া কত বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের বিমান ভাড়া কত এই বিষয়টি জানার পূর্বে একটি বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এয়ারলাইন্স এর উপর ভিত্তি করে ভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে। আপনার ভ্রমণের নির্দিষ্ট তারিখ থেকে কাছাকাছি সময়ে টিকিট করলে টিকিটের মূল্য বেশি হবে। 

আবার আপনার ভ্রমণের নির্দিষ্ট তারিখ থেকে বেশ কিছুদিন পূর্বে টিকিট করলে টিকিটের মূল্য তুলনামূলক কম হবে। নির্দিষ্ট কিছু দিন রয়েছে ওই দিনগুলোতে আপনি টিকিট করলে টিকিটের মূল্য আরো বেশি হবে। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। আমি আজকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের ভাড়ার বিষয়টি বলবো।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে ননস্টপ সিঙ্গাপুর এর বিমান ভাড়া ৩৫৫০০/=






শেষ কথাঃ 

সিঙ্গাপুর একটি স্বপ্নের দেশ। অনেক বাংলাদেশি বেকার যুবক ভাইদের কাছে স্বপ্ন থাকে যে তিনি সিঙ্গাপুরে যাবেন। একবার সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে পারলেই তার জীবন চেঞ্জ হয়ে যাবে এমনটা ধারণা করে থাকেন। জীবনে লক্ষ্য থাকা ভালো তবে এর পিছনে ছুটতে গিয়ে যাতে হোঁচট খেতে না হয়। তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে জীবন এবং অর্থ দুটোই যেন নষ্ট না হয় সেদিকে আপনাকে আমাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url