মালয়েশিয়া কলিং ভিসা কি ও মালয়েশিয়া কলিং ভিসা চেক
মালয়েশিয়া দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার স্বল্প উন্নত আয়ের একটি দেশ। বাংলাদেশের কাছাকাছি সময়ে দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি উন্নত। মালয়েশিয়ার নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই দেশে বাংলাদেশী শ্রমবাজারের কথা। বাংলাদেশের এমন কোন গ্রাম নেই যে কেউ মালয়েশিয়ায় কর্মরত নেই।
মূলত মালয়েশিয়ার আবহাওয়া, খাদ্যাভাস, তুলনামূলক কম দূরত্বে অবস্থানের কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশীদের কাছে অনেক প্রিয়। আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব মালেশিয়ার কলিং ভিসা নিয়ে। মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা কি? কলিং ভিসার সুবিধা অসুবিধা সমূহ এবং ভিসার আবেদন কিভাবে করতে হয় এবং মালয়েশিয়া যাওয়ার অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে।
মালয়েশিয়া কলিং ভিসা কি?
বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম গুলো মোটামুটি একই রকমের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমনের অনুমতি পত্রকে সাধারণভাবে ভিসা বলা হয়। এ ভিসা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমন- কাজের ভিসা, টুরিস্ট ভিসা, চিকিৎসা ভিসা, ব্যবসায়িক ভিসা ও স্টুডেন্ট ভিসা।
আরো পড়ুনঃ সৌদি আরব ই-ভিসা ও ভিসা প্রসেসিং ফি ২০২৪
মালয়েশিয়া সরকার সেই দেশে ভিনদেশী কর্মীদের কাজ করার জন্য যে অনুমতি পত্র বা ভিসা দিয়ে থাকে সেই ভিসাকে কলিং ভিসা বলে। এই ভিসার মাধ্যমে ভিনদেশী একজন কর্মী মালয়েশিয়াতে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত থাকার অনুমতি পায়। মালয়েশিয়ান সরকার কয়েকটি কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে-
- কৃষি ভিসা
- কনস্ট্রাকশন ভিসা
- ফ্যাক্টরি ভিসা
- প্লান্টেশন ভিসা
- সার্ভিস ভিসা ( সার্ভিস ভিসার মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্টের কাজ, ওয়েল্ডিং এর কাজ ও বিভিন্ন দোকানের কাজ ইত্যাদি।)
মালয়েশিয়া কলিং ভিসা আবার তিন প্রকারের। যেমন-
- এজেন্ট ভিসা
- কোম্পানি ভিসা
- এবং ফ্রি ভিসা
আজকের আলোচনায় আমি এই তিন ধরনের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি আমার এই পোস্টটি আপনারা ধৈর্য সহকারে পড়বেন তাহলে মালয়েশিয়া কলিং ভিসা সম্পর্কে আপনাদের আর কোন প্রতারণা শিকার হতে হবে না।
এজেন্ট ভিসাঃ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে একমাত্র বৈধ মাধ্যম হচ্ছে এজেন্টের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ। বাংলাদেশ সরকার এবং মালয়েশিয়া সরকার অর্থাৎ দুই দেশের সরকারের মধ্যে জি টু জি পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ হয়ে থাকে খুব সীমিত সংখ্যক বেশিরভাগ কর্মী বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যায় এজেন্ট এর মাধ্যমে।
এজেন্ট ভিসার বৈশিষ্ট্য।
- পাসপোর্ট এজেন্টের কাছে থাকবে আপনাকে একটি ফটোকপি দেবে সেটি দিয়ে আপনি কাজ করতে পারবেন।
- প্রতিবছর এজেন্ট আপনাকে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দেবে আপনাকে শুধু মেয়াদ বাড়ানোর টাকা টাকা দিতে হবে।
কোম্পানি ভিসাঃ মালয়েশিয়ান কোন কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা বাংলাদেশের কোন একটি এজেন্সির মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ করার জন্য যে ভিসা প্রদান করে তাকে কোম্পানি ভিসা বলে।
কোম্পানি ভিসার বৈশিষ্ট্য।
- মালয়েশিয়া কোম্পানি ভিসার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল পাসপোর্ট কোম্পানির নিকট থাকবে বাহিরে চলাচলের জন্য আপনাকে একটি ওয়ার্ক পারমিট কার্ড দেবে।
- কোম্পানি ভিসার আওতায় মালয়েশিয়া গেলে কাজের বেতন ছাড়াও আবাসন, খাবার, চিকিৎসা, কর্মস্থলের যাতায়াত ভাড়া, নিয়োগ কারী কোম্পানি বহন করে।
- জরুরি প্রয়োজনে যদি কোন কর্মীকে দেশে পাঠানো লাগে তাহলে তার সম্পূর্ণ খরচ প্রতিষ্ঠান বহন করে।
- কোম্পানি ভিসার মেয়াদ ২ থেকে ৩ বছর থাকে।
- কোম্পানি ভিসায় গেলে আপনি কোম্পানির বাহিরে অন্য কোন জায়গায় কাজ করতে পারবেন না।
- মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখে আপনি অবশ্যই বেতন পাবেন।
- আপনার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কোম্পানি আপনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সকল দায়-দায়িত্ব পালন করবে।
- ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আপনাকে কোন টাকা দিতে হবে না।
ফ্রি ভিসাঃ ফ্রি ভিসা সম্পর্কে আমাদের দেশের অনেকের একটি ভুল ধারণা রয়েছে। আসলে ফ্রী ভিসা বলতে মালয়েশিয়াতে কোন ভিসা নেই। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে কাজের ভিসায় যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কোন না কোন এজেন্সির মাধ্যমে যেতে হবে। মালয়েশিয়াতে ফ্রি ভিসায় কিভাবে যাওয়া যায় এই বিষয়টি একটি উদাহরণ না দিলে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন না।
আপনার কোন নিকট আত্মীয় মালয়েশিয়ার কোন এজেন্সিতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কন্টাক করবে যে বাংলাদেশ থেকে আমি একজনকে আপনার মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে আনতে চাই। তার কাজের সম্পন্ন দায় দায়িত্ব আমি নেব আপনি শুধু বাংলাদেশ থেকে তাকে মালয়েশিয়াতে নিয়ে এসে দেবেন।
এ অবস্থায় ঐ এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে কর্মী মালয়েশিয়াতে নিয়ে তার আত্মীয়কে দিয়ে দেবে। এইবার ঐ কর্মী মালয়েশিয়াতে নিজ দায়িত্বে কাজ খুঁজে নিয়ে কাজ করবেন এটাই মূলত ফ্রি ভিসা। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
মালয়েশিয়াতে ফ্রি ভিসার বৈশিষ্ট্য।
- বাংলাদেশ থেকে কোন কর্মী মালয়েশিয়াতে গিয়ে ফ্রি হয়ে গেলে পাসপোর্ট সেই কর্মীর কাছে থাকে।
- কাজের সকল দায়-দায়িত্ব সেই কর্মী নিজে বহন করে।
- কর্মীর থাকা খাওয়া সকল ব্যবস্থাপনা নিজেকেই করতে হয়।
- তিনি যখন ইচ্ছে তখন দেশে ফিরে আসতে পারবেন আবার মালয়েশিয়াতে যেতে পারবেন।
- প্রতি বছর তাকে নিজ দায়িত্বে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে হবে। ক্ষেত্রে তিনি যে এজেন্সির মাধ্যমে গিয়েছেন সেই এজেন্সি তাকে সহযোগিতা করবে।
আর্থিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে বর্তমান মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো নতুন করে সরকারের কাছ থেকে কর্মী নিয়োগের এপ্রুভাল নিতে পারছে না। তাই মালয়েশিয়াতে কর্মী নিয়োগের এক ধরনের শিথিলতা নেমে এসেছে। তবে অর্থনীতির অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে ২০২৪ সাল থেকে সেই দেশে সরকার পুনরায় অ্যাপ্রুভাল দেওয়া শুরু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মালয়েশিয়া কলিং ভিসার খরচ।
মালয়েশিয়া সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে ভিসার মূল্য বাবদ কোন অর্থ প্রদান করতে হবে না। মালয়েশিয়া নিয়োগ কারী কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান ভিসার মূল্য পরিশোধ করবেন। মালয়েশিয়ান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কলিং ভিসার মূল্য ২০০০ রিংগিত বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৬০০০ টাকা।
এই টাকা সম্পন্ন বহন করবেন নিয়োগকারী কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান। তবে আপনি যদি কোন এজেন্সির মাধ্যমে এজেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়াতে যেতে চান তাহলে, আপনাকে ভিসার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। আপনার ভিসার ফি বাবদ, প্লেন ভাড়া, ভিসা প্রসেসিং ফি, সরকারি অন্যান্য ফি মিলে মালয়েশিয়াতে যেতে আপনার খরচ হবে ২ থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা ।
আরো পড়ুনঃ সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার বেতন ২০২৪
তবে বাস্তবতা সম্পন্ন ভিন্ন বিভিন্ন এজেন্সি গুলোর মাধ্যমে যে কোম্পানি লোক নিয়ে থাকে সেই এজেন্সি গুলো সাধারণ কর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় যেতে প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা দিতে হচ্ছে।
কলিং ভিসা করতে কি কি কাগজ লাগে।
- ভিসার আবেদন পত্র।
- ভিসার ফি জমাদানের রশিদ বা সার্টিফিকেট।
- মূল পাসপোর্ট এবং পাসপোর্ট এর ফটোকপি।
- পাসপোর্টে অন্তত ২টি সাদা পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
- সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
- পাসপোর্ট এর মেয়াদ মিনিমাম ২ বছর হতে হবে।
- মালোশিয়ার নিয়োগকারী কোম্পানির আমন্ত্রণপত্র।
- বিএমইটি কর্তৃক প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের সার্টিফিকেট।
- মেডিকেল সার্টিফিকেট।
মালয়েশিয়া কলিং ভিসা আবেদন।
মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে বিএমইটির ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। আপনি কোন কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় যেতে চান বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি নিবন্ধন করতে হবে।
মালয়েশিয়াতে কলিং ভিসায় যেতে চাইলে আবেদনকারীকে অনলাইনে এর মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনকারী যদি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে চান তাহলে এজেন্সি কর্তৃক আবেদন পূরণ করতে হবে।
মালয়েশিয়া কলিং ভিসা আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে https://www.visasmalaysia.com এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে সাবমিট করতে হবে।
অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদন পত্রটি অবশ্যই প্রিন্ট দিয়ে আপনার কাছে রাখবেন। কেননা কলিং ভিসার জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর ভিসার প্রসেসিং এর সময় এই ফর্ম প্রয়োজন হয়।
মালয়েশিয়া কলিং ভিসা চেক।
মালয়েশিয়া কলিং ভিসা চেক করার জন্য কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন -
- কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার।
- ভিসা এপ্লিকেশন অথবা রেফারেন্স নাম্বার।
- পাসপোর্ট নাম্বার।
আমি এখানে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে কিভাবে মালয়েশিয়া কলিং ভিসা চেক করা যায় সেই বিষয়টি জানাবো।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা চেক করার জন্য প্রথমে আপনাকে গুগল প্লে স্টোর থেকে Malaysia foreigner worker অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে হবে।
আপনি যদি বাংলায় দেখতে চান তাহলে বাংলা অপশনে ক্লিক করবেন যদি ইংরেজিতে দেখতে চান ইংরেজি অপশনে ক্লিক করবেন।
এরপর আপনার সামনে একটি নতুন পপআপ বক্স আসবে এই বক্সের Visa Check With Passport Number এ ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনার পাসপোর্ট নাম্বার ও কান্ট্রি টাইপ করে Check Your Visa Status বাটনে ক্লিক করুন।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক আশা করি আজকের এই আলোচনা আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে আপনাদের ভালোলাগা আমাদের অনুপ্রেরণা মালয়েশিয়া কলিং ভিসা সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন আমরা অতি দ্রুত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url