ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস রোগের নামের সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। শহর থেকে গ্রাম সব জায়গাতেই এখন ডায়াবেটিস রোগী খুঁজে পাওয়া যায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা আমরা নির্মূল করতে পারি না কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
তাই আজকের আলোচনায় আমি ডায়াবেটিস রোগের নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করা যায় এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার কি কি রয়েছে সেটিও জানা যাবে আজকের এই আলোচনা থেকে।

ডায়াবেটিস কি?

মানবদেহে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে বেড়ে গেলে তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে। শরীরে যখন ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায় অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকর ভাবে কাজ করতে পারে না তখন ডায়াবেটিস দেখা দেয়। 

অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয়। আমরা যখন খাবার খাই তখন আমাদের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হল যে খাবার খাচ্ছি সেটার অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়া। 
যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় অথবা উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারেনা তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ পরিমাণ বেড়ে যায়। সেই অবস্থায় খালি পেটে যদি গ্লুকোজের মাত্রা ৭ এর বেশি থাকে আর খাবার খাওয়ার পর যদি ১১ এর বেশি থাকে তখন সেই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে।

ডায়াবেটিস কত প্রকার।

ডায়াবেটিস কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

টাইপ-১ ডায়াবেটিসঃ

টাইপ-১ ডায়াবেটিস যা অনেক সময় বাচ্চাদের ডায়াবেটিস বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াবেটিস। ইংরেজিতে Juvenile ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। এটা এক ধরনের ডায়াবেটিস যেক্ষেত্রে শরীরের অগ্নাশয় থেকে খুবই সামান্য বা কোন ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। 

সাধারণত ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্নাশয় এর ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোগীকে অবশ্যই ইনসুলিন ইঞ্জেকশন বা ইনসুলেন্ট পাম্প নিতেই হয়।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণঃ

আপনাদের যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাহলে টাইপ-১ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ বা নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা দেয়। যেমন- ওজন হ্রাস পাওয়া,, অতিরিক্ত প্রস্তাবের প্রবণতা, ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা, তৃষ্ণা পাওয়া, ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা দেখা, বমি বমি ভাব হওয়া, পেট ব্যথা করা, চুলকানি হওয়া, অপ্রীতিকর গন্ধের অনুভূতি পাওয়া।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসঃ

টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে কিছু ইনসুলিন তৈরি হয় তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বা শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও সেটা কার্যকর ভাবে ব্যবহার হয় না। এ ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স হিসেবে কাজ করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের হয়ে থাকে। 
এ ধরনের রোগীরা সাধারণত স্থূলতায় হন এবং কোন উপসর্গ  বা লক্ষণ নাও প্রকাশ পেতে পারে। এটি বহু বছর ধরে দেহে বিকাশ লাভ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণঃ

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো সাধারণত মানব দেহে ধীরগতিতে প্রকাশ পায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আমাদের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ ধরনের ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলোর সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে। 

যেমন-ক্ষতস্থান সহজে ভাল হতে চায় না, তীব্র তৃষ্ণা পায়, ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা, ওজন দ্রুত কমে যাওয়া, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া বা ঝিন ধরা, চুলকানি, মূত্রনালীতে সংক্রমণ, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা, আচার-আচরণের পরিবর্তন, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বগল এবং ঘাড়ের নিচে কালচে ছাপ। 
টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত ৩৫ বছরের পরে প্রকাশ পায় তবে ইদানিং অল্পবয়স্ক মানুষের মধ্যেও এই ধরনের ডায়াবেটিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ধরনের ডায়াবেটিস স্থুলকায় ব্যাক্তি ও যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে না তাদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসঃ

গর্ভকালীন অবস্থায় অনেক সময় প্রসূতি মায়েদের ডায়াবেটিস দেখা দেয় কিন্তু প্রসবের পর ডায়াবেটিস আর থাকে না। এই ধরনের ডায়াবেটিস কে বলা হয় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস গর্ভবতী নারী এবং সদ্যজাত সন্তানের উভয়ের জন্যই বিপদজনক হতে পারে। 

এই বিপদ এড়ানোর জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় প্রয়োজনীয় ইনসুলিনস দেয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস কে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় মায়ের শরীরের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হয়।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস চিকিৎসা ব্যবস্থা অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ। বাইরে থেকে ইনজেকশন প্রয়োগ করে ইনসুলিন কোষের শর্করা যাতায়াতের রাস্তা হিসাবে কাজ করে। অবশ্য ইনসুলিন নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকিও রয়েছে কতটা ইনসুলিন নিতে হবে তা সঠিকভাবে জানা খুব কঠিন। 

আপনাকে কি পরিমানের ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে তা নির্ভর করে আপনার ডায়াবেটিসের মাত্রার উপর। আপনি যদি খাদ্যাভাস, মানসিক চাপ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেন। তাহলে ইনসুলিন কম পরিমাণে নিলেও চলবে। যদি কেউ শরীরে ইনসুলিন বেশি গ্রহণ করে তাহলে তার শরীরের শর্করার মাত্রা ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে এতে তার জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়। 
একইভাবে যদি আপনি প্রয়োজনের থেকে কম ইনসুলিন গ্রহণ করেন তাহলে রক্তের শর্করা মাত্রা আবারও বেড়ে যায় এতেও জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই সঠিক পরামর্শ হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের  পরামর্শে চিকিৎসা গ্রহণ করা।

টাইপ-২ ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরাসরি আপনাকে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন গ্রহণ করতে হয় না। প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শ হচ্ছে খাদ্যাভাস, ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিতে হবে এরপরেও যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকে তাহলে ইনসুলিন গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকে। 

কাজেই এক্ষেত্রে আমরা সহজেই বুঝতে পারলাম টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীরা যদি তাদের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন নিয়ম করতে পারে, নিয়মিত ব্যায়াম করে এবং শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তাহলে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে রূপান্তর হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা। 

ডায়াবেটিস রোগ পুরোপুরি বা সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবন যাপন করা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার অনেক উপায় রয়েছে। যেমন ওষুধ, খাদ্যাভাস পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়ামসহ নানান ভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে যদি আপনি খাবার নিয়ন্ত্রণ না করেন। 

তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা কি হওয়া উচিত আজকে সেই সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি আমার এই আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের খাদ্য তালিকা ট্রাইপ-১ ডাইবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকা থেকে কিছুটা আলাদা। 
এর পাশাপাশি রয়েছে বয়স, ওজন ও উচ্চতা, কাজের ধরন, শারীরিক পরিশ্রম, জীবনযাত্রা পদ্ধতি, আর্থিক ব্যবস্থা সবকিছু বিবেচনায় এনে ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের তালিকা করতে হয়। ডায়াবেটিস হলেই যে সব ধরনের খাবার নিষিদ্ধ এটি বলা যায় না। তবে খাদ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। বারবার একই রকমের খাবার না খেয়ে খাবারের মধ্যে বৈচিত্র আনতে হবে। 

অন্যান্য সাধারন মানুষের মতো একজন ডায়াবেটিস রোগী খাদ্যের যে সকল উপাদান রয়েছে সেগুলো গ্রহণ করতে হবে। যেমন- শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে তবে তা পরিমিত পরিমাণের।
আরো পড়ুনঃ 
একজন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য তালিকায় যেসব খাবার রাখা যেতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

ফল জাতীয় খাবারঃ

কালোজাম, লেবু, আমড়া, বাতাবি লেবু, বাঙ্গি, জামরুল, আমলকি, কচি ডাবের পানি, আপেল, পেঁপে, বেড়ি জাতীয় ফল, কামরাঙ্গা, নাশপাতি ও কমলা এসব ফল খাওয়া যেতে পারে পরিমিত পরিমাণের।

শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়াঃ

ধীরে ধীরে শুষিত হয় এমন শর্করা জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, ভুট্টার খই, খেজুর আঁশযুক্ত শাকসবজি ও ফল ইত্যাদি।

আমিষ যুক্ত খাবার খাওয়াঃ

ডায়াবেটিস রোগীদের আমিষ যুক্ত খাবারের কোন বাধা নেই। বড়দের ক্ষেত্রে দৈনিক ১ - ০.৮ গ্রাম আমিষ প্রয়োজন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য। শিশু, কম ওজন, অপুষ্টি, গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মাতার উচ্চ আমিষ বা হাই প্রোটিন প্রয়োজন। 
আমিষ রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে কাজ করে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন-চর্বিহীন মাংস, মাছ, ডিম, দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার, ডাল, সিমের বিচি, টক দই ইত্যাদি।

আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়াঃ

আশ জাতীয় খাদ্য দেরিতে হজম হয় বলে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এ জন্য একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ গ্রাম আশ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। আশ জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে খোসাসহ ফল, আটা, ভুষিযুক্ত আটা, লাল চালের ভাত।

শাকসবজি জাতীয় খাবারঃ

শাক সবজির মধ্যে রয়েছে মটরশুঁটি,পালং শাক, লাল শাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, ডাটা শাক, কচু শাক, লাউ শাক, পাট শাক, হেলেঞ্চা শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ওলকপি, টমেটো, কাঁচা পেঁপে, শশা, খিরা, করলা, ঝিঙা, বেগুন, কলার মোচা।

এছাড়া চিনি ছাড়া চা ও কফি খেতে পারেন প্রয়োজনে গ্রীন টি খেতে পারেন। মসলা জাতীয় খাবার যেমন ধনে, জিরা, হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ খাওয়া যাবে।

ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দেখে খাবার খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। যেসব খাবার দ্রুত পরিপাক ও শোষণ হয়ে  রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় সেই খাবারগুলো উচ্চ জিআই সম্পন্ন খাবার। 

উচ্চ জিআই সম্পন্ন খাবারের মধ্যে রয়েছে সাদা চালের ভাত, সাদা আটার রুটি, চিনি, মধু, ফলের রস, আতপ চাল ইত্যাদি। অন্যদিকে নিম্ন জিআই সম্পন্ন খাবারের মধ্যে রয়েছে মোটা চালের ভাত, লাল আটার রুটি, সবজি, ডাল, কাঁচা ফলমূল ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা।

ফাস্টফুড জাতীয় খাবারঃ

যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বা মুখরোচক জাতীয় খাবার অত্যান্ত জনপ্রিয় হলেও এই খাবারগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি কর। এতে সুগারের মাত্রা বাড়ানোর মত যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। যেমন- বার্গার, স্যান্ডউইচ, মিল্ক কেক, প্যানকেক, টমেটো সস, মিশ্র কফি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পেস্ট্রি ও বিভিন্ন ধরনের চাইনিজ খাবার। 
আরো পড়ুনঃ 
এই খাবারগুলো মোটেও একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাওয়া উচিত নয়। এটি খেলে একজন ডায়াবেটিস রোগীর ডায়াবেটিসের মাত্রা যথেষ্ট পরিমাণের বেড়ে যাবে যা অনেক সময় আপনাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলবে।

শর্করা জাতীয় খাবারঃ

বাঙ্গালীদের প্রধান খাবার হচ্ছে ভাত। আমাদের দেশের শতকরা ৯০% লোক ৩ বেলায় সাদা ভাত খেয়ে থাকে। সাদা ভাতে শর্করার পরিমাণ অত্যাধিক বেশি তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যত সাদা চালের ভাত খাবেন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকির পরিমাণ ততো বাড়তে থাকবে। 

২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে সাদা চালের ভাত খেলে ঝুঁকির পরিমাণ ১১ শতাংশ বেড়ে যায়। কারণ এই চাল প্রক্রিয়াজাত করে সাদা করা হয় যা ডায়াবেটিস রোগীর সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। মিষ্টি আলু ,সাদা ভাত, সাদা রুটি, সাদা আটার তৈরি বিস্কুট এবং সসেস গ্রেভি পরিহার করায়   উত্তম।

ফল জাতীয় খাবারঃ

সব ধরনের তরতাজা ফলে ভিটামিন এবং ফাইবার রয়েছে, ফলে সুগারও থাকে। তাই এসব ফলের প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকা শর্তেও ডায়াবেটিস রোগীর এসব ফল পরিহার করে চলা প্রয়োজন। যেমন- কিসমিস, আঙ্গুর, পাকা আম, পাকা পেঁপে, পাকা কলা, তরমুজ ও আনারস ইত্যাদি।

অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবারঃ

আমরা জানি বেশিরভাগ প্যাকেট জাতীয় খাবার প্রস্তুত করা হয় পরিশোধিত চিনি, পরিশোধিত আটা, অস্বাস্থ্যকর চর্বি দিয়ে এগুলাতে বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ, রং এবং স্বাদ যুক্ত এজেন্ট সহ বেশ কিছু রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। যা ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়াতে পারে। সিরাপ, সুগার, ব্লেন্ডেড কফি, চিপস, চকলেট, কেক, কান্ডি, বিস্কুট, টোস্ট, ডোনাট এসব অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার পরিহার করায় উত্তম।

চর্বিযুক্ত খাবারঃ

দুধের সর, ডিমের কুসুম, বাটার, ঘি, মাখন জাতীয় খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এসব খাবার স্বাভাবিকভাবেই বেশি ক্যালরি প্রদান করে যা স্থূলতার ঝুড়ি বাড়াতে এবং সুগারের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এ কারণে চর্বিযুক্ত দুগ্ধ জাত পণ্য ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় মাংস যেমন- গরুর মাংস, খাসির মাংস, ডায়াবেটিস রোগীদের পরিহার করে চলা উচিত কেননা এই মাংসতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে।

ফলের রসঃ

ডায়াবেটিস রোগীদের সব ধরনের ফলের রস বা ফলের জুস খাওয়া যাবে না কারণ কিছু কিছু ফলের রসে অতিরিক্ত চিনি এবং ক্যালোরি থাকে। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের ফলের রস বা জুস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় ফলের জুস। যেমন-আমের জুস, তরমুজের জুস, পেঁপের জুস, আনারসের জুস বিশেষ করে চিনির পরিমাণ বেশি আছে এমন ফলের জুস খাওয়া যাবেনা।

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়।

ডায়াবেটিস এমন এক ধরনের রোগ যেটি কোন মানুষের শরীরে দেখা দিলে অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়। ডায়াবেটিস মানব শরীরের এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, খাবারের অরুচি আসে অর্থাৎ আপনার প্রাত্যহিক চলাফেরায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। 

তাই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে থাকি এর পাশাপাশি ঔষধ খেয়ে থাকি এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। আলোচনার এ পর্যায়ে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনার উপায় সম্পর্কে বলবো।
  • তেতো করলা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনে ।
  • নিম ও তুলসী পাতা সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনি নিয়মিত কালোজাম খেতে পারেন। কেননা কালোজাম রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে ।
  • ঢেঁড়স ভেজাপানি পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিদিন একটি ঢেঁড়স কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালবেলা ঢেড়সটি পানিতে ধুয়ে ঢেড়স ভেজা পানি খেতে পারেন এতে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মিষ্টি কুমড়া রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • আপনারা অনেকেই নয়ন তারা ফুলের নাম শুনছেন এই নয়নতারা ফুলের গাছের সব অংশই তেতো । নয়নতারা গাছের পাতা প্রতিদিন সকালে চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। আপনি যদি কঠোর ব্যায়াম না করতে পারেন তাহলে হালকা ব্যায়াম করলেও উপকার পাবেন। যেমন- হাঁটাচলা করতে পারেন, হালকা দৌড়াতে পারেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আপনাকে হালকা ব্যায়াম করতে হবে ।এছাড়া আপনি যদি ভারী ব্যায়াম করতে পারেন সেটা আরো ভালো হয়।

শেষ কথাঃ 

রক্তের সুগারের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পয়েন্ট অতিক্রম করলে আপনার ডায়াবেটিস রোগ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। তাই রক্তের সুগারের পরিমাণ যাতে আমাদের বৃদ্ধি না পায় সেজন্য আমাদের খাদ্যাভাস নিয়মিত ব্যয় করা ইত্যাদির উপর জোর দিতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম এর কোন বিকল্প নেই আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম করতে না পারেন তাহলে আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে তাহলে ডায়াবেটিসের মতো রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

প্রশ্নঃসুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস?

উত্তরঃ খালি পেটে রক্তে সুগারের মাত্রা ৭ পয়েন্ট এর উপরে গেলে এবং ভর পেটে অর্থাৎ খাবারের ২ ঘন্টা পরে রক্তের সুগারের মাত্রা ১১ পয়েন্টের উপরে গেলে আমরা এটাকে ডায়াবেটিস বলি। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন।

প্রশ্নঃব্লাড সুগার নরমাল রেঞ্জ কত?
উত্তরঃ
৬ বছরের নিচে শিশুদের ফাস্টিং সুগার হওয়া উচিত ৮০ থেকে ১৮০ মিলিগ্রাম অথবা ডি এল এর মধ্যে
৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ফাস্টিং সুগার হওয়া উচিত ৮০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম অথবা ডি এল এর মধ্যে
১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ফাস্টিং সুগার হওয়া উচিত ৭০ থেকে ১৫০ মিলিগ্রাম অথবা ডি এল এর মধ্যে
২০ বছরের উপরে যাদের বয়স তাদের ফাস্টিং সুগার হওয়া উচিত ১০০ মিলিগ্রাম অথবা ডিএল এর নিচে থাকা উচিত।

প্রশ্নঃ ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম।

উত্তরঃ সকালে খালি পেটে প্রথমবার পরীক্ষা করতে হবে প্রথমবার পরীক্ষা করার আগে অন্তত ১০ ঘন্টা আগে খাবার খেয়ে নিতে হবে। এরপর সকালে ব্রেকফাস্ট করার ২ ঘন্টা পরে আবার পরীক্ষা করুন। দুপুরে খাবারের ৩০ মিনিট আগে আবার রক্তের শর্করা পরীক্ষা করে নিন।

প্রশ্নঃভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?

উত্তরঃভর পেটে ডায়াবেটিস ১১ পয়েন্টের নিচে থাকলেই নরমাল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url