প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেস্ট ক্যান্সার চিহ্নিত করার সহজ উপায়

ক্যান্সার হল একটি প্রাণঘাতী রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার চিকিৎসা মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। অনেক সময় আমাদের অসচেতনতার অভাবে এই ক্যান্সার মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। আজকের এই আলোচনায় বেস্ট ক্যান্সার চিহ্নিত করা সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেস্ট ক্যান্সার চিহ্নিত করার সহজ উপায়
এর পাশাপাশি আপনারা বেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে আরো যেসব বিষয় জানতে পারবেন তাহলো- ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয় কি, ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়, ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার কারণ ও ব্রেস্ট ক্যান্সার লক্ষণ গুলো কি কি?

ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয়।

ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রেস্ট ক্যান্সার পৃথিবীতে যে সকল মরণব্যাধি রোগ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছে। আমাদের দেশে এখনো এই ক্যান্সারের বিষয়ে তেমন কোন সচেতনতা তৈরি হয়নি। 
শহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে যদিও ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে গ্রামাঞ্চলে এই রোগ সম্পর্কে তেমন একটা সচেতনতা তৈরি হয়নি।  বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। 

তবে মাথায় রাখতে হবে ব্রেস্ট ক্যান্সার লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই এই রোগটি যদি ধরা পড়ে তাহলে তার চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই ক্যান্সারের বিষয়ে কোনো খবরই রাখেন না, প্রথমে ক্যান্সার ধরা না পড়লে তার হাতের নিচের বগলের অংশে পৌঁছে যায়, এবার এই অংশে ক্যান্সার হলে তা দ্রুত শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। 

আপনার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। এখন অত্যাধুনিক কিছু টেস্ট চলে এসেছে যেমন- এমআরআই, পেটসিটি, আল্ট্রাসাউন্ড, এমআরআই গাইডেড ব্রেস্ট বায়োপসি, মামোগ্রাম ও বোন স্ক্যান। রোগীর শরীরের কোন কোন জায়গায় ব্রেস্ট ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে তার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা ব্যবস্থা। 
এই রোগে চিকিৎসায় সার্জারি থেকে শুরু করে কেমোথেরাপি, বায়োলজিক্যাল হরমোন থেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। তবে একথা মনে রাখতে হবে যে ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে না পড়ে তখন সেটা সহজেই চিকিৎসা করা সম্ভব তবে এই রোগ যদি শরীরের অন্যান্য জায়গায় পৌঁছে যায় তখন কিছুটা সমস্যা হয়ে যেতে পারে। এমনকি তখন এর চিকিৎসা ও কঠিন হয়ে পড়ে কোন কোন ক্ষেত্রে রোগী অকাল মৃত্যু ঘটে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ।

ব্রেস্ট ক্যান্সার একটি ভয়ংকর রোগ। কিন্তু শুরুতেই যদি এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসা শুরু করা যায় তাহলে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। এবার আসুন ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে আমরা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
  • দীর্ঘ সময় ধরে একটানা জন্মনিরোধক পিল না খাওয়া, সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ পান করানো।
  • টাটকা শাকসবজি ও ফল খাওয়া।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা।
  • ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে হলে অতিরিক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • বেশি বেশি পরিশ্রম করতে হবে বেশি সময় অলস থাকা যাবে না।
  • দ্রুত বিয়ে করা, সন্তান নেওয়া, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো সেই সঙ্গে স্ক্রিনিংয়ে আসতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা ও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করা।
  • হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়ার সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা ও নিয়মিত বিরতিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
  • সন্দেহ হলে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সার্জনের পরামর্শ নেয়া।
  • সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা।

বিশ্বজুড়ে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশেও নারীদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেক গুণ বেড়ে গেছে এর পাশাপাশি পুরুষদের মাঝেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য কিছু জীবন আচার ও খাদ্যাভাস মেনে চললে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কি কি খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে তা নিম্নরূপ-
  • প্রচুর পরিমাণের আঁশযুক্ত খাবার খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে আঁশ জাতীয় খাবার পরিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে বজ্র নিঃসরণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য পরিষ্কারের ভূমিকা রাখে।
  • তাজা ফলমূল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় বেরি জাতীয় ফল যেমন- স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি বিশেষ একটি উপকারী ফল।
  • রঙিন শাকসবজি যেমন- গাজর, মিষ্টি কুমড়া, আলু, পালং শাক, ব্রকলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
  • এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি এর অভাবে স্তন ক্যান্সার একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। সূর্যের আলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এছাড়াও ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ, কমলার রস, টকদই এ ভিটামিন ডি থাকে। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এসব খাবার রাখলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
  • মিষ্টি ও চিনি যুক্ত খাবার, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, অ্যালকোহল, ফাস্টফুড ও লাল মাংস যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।

ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার কারণ।

বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর পাশাপাশি মানুষের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেতনতা বাড়ার কারণে এই রোগে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসকের কাছে আগের তুলনায় বেশি যায়। সেজন্য আমরা এ রোগ বিষয়ে অনেক বেশি জানতে পারছি এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠিক কি কারণে স্তন ক্যান্সার হয় এর সঠিক করে বলা মুশকিল।
  • আমাদের জীবন আচরণে এবং খাদ্যাভাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে এটির কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে।
  • পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
  • কারো যদি ১২ বছরের আগে ঋতুস্রাব হয় এবং দেরিতে ঋতু বন্ধ হয় তারাও এই ঝুঁকিতে থাকে।
  • তেজস্ক্রিয় স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • দেরিতে সন্তান গ্রহণ বা যাদের সন্তান নেই বা সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো অভ্যাস।
  • খাদ্যাভাসের শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি বা প্রাণীজ বেশি থাকলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি খেলে।
  • অতিরিক্ত ওজন থাকলে তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
  • যারা দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাচ্ছেন বা হরমনের ইঞ্জেকশন নিয়েছেন তাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
একই সঙ্গে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সার হয়ে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছরের পর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তখন আর কিছু করার থাকে না। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে ১০০ ভাগ নিরাময় করা সম্ভব।

প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেস্ট ক্যান্সার চিহ্নিত করার সহজ উপায়।

নারীরা ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে হবে। যেভাবে নিজে নিজে স্তন পরিক্ষা করবেন। যেমন- আয়নার সামনে কাঁধ সোজা করে দাঁড়ান- কোমরে হাত রাখুন- ও আপনার স্তনের আকার আকৃতি ও রং লক্ষ্য করুন। স্তনের কোথাও ক্ষত বা লাল স্থান অথবা কমলার খোসার মত আছে কিনা সেটা দেখুন। 
আপনার হাত দিয়ে বাম স্তনে চাপ দিন এক্ষেত্রে আপনার হাতের আঙ্গুলগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করুন। ধীরে ধীরে চাকতির মতো করে হাত ঘুরান ও অনুভব করুন। এভাবে উভয় বেস্ট পরীক্ষা করুন।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ।

আরো পড়ুনঃ 
পূর্বের তুলনায় বর্তমানে ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এর ফলে প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথেই অনেকেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
  • ব্রেস্ট ফুলে যাওয়া।
  • বগলের নিচে চাকা চাকা ভাব দেখা দেওয়া।
  • ব্রেস্টের যেকোনো অংশে মাংসপিণ্ড দেখা দেওয়া।
  • ব্রেস্টের নিপলে ব্যথা হওয়া।
  • ব্রেস্টের চামড়া রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হওয়া।
  • ব্রেস্টের নিপল (বোটা) ভেতরে ডেবে দেওয়া।
  • ব্রেস্টের নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া।
  • ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তার উপসর্গগুলো হয় নিম্নরূপ- লিভার বা যকৃতে ছড়ালে পেট ব্যথা বা জন্ডিস দেখা দেয় ও ফুসফুসে ছড়ালে কাশি হওয়া এমনকি কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্যঃ

যদিও ৫০ বছর এর বেশি বয়স্ক মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি কিন্তু যে কোন বয়সেই এই রোগ হতে পারে। তাই নিয়মিত ঘরোয়া পদ্ধতি এর সাহায্যে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করে লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। কোন একটি উপসর্গ দীর্ঘদিনের জন্য দেখা দিলে অতিসত্বর ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। 

সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির করা গেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক র‍্যালি, সেমিনার, নাটক ও সিনেমা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রদান করা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url