আক্কেল দাঁত কি? আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে

মানুষের একটি নির্দিষ্ট বয়সে আক্কেল দাঁত ওঠে এই আক্কেল দাঁত ওঠা কে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে আক্কেল দাঁত ওঠাকে আশীর্বাদ বলে মনে করেন। আক্কেল দাঁত না উঠলে নাকি আক্কেল বুদ্ধি কম হয় এই কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। আক্কেল দাঁত না উঠলে আক্কেল বুদ্ধি কম হয় এই কথার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। তবে আক্কেল দাঁত যে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একবার হলেও আক্কেল হারিয়ে দেয় এ কথা ঠিক। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আক্কেল দাঁত কি? আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে এই বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার একটি ধারণা জানিয়ে দেব।
আক্কেল দাঁত কি? আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে
আশা করি এই পোষ্টটি আপনি ধৈর্য সহকারে পড়বেন তাহলে আরো যেসব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হল। আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়, আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ, আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়, আক্কেল দাঁত তোলার খরচ কত? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করি।

আক্কেল দাঁত কি?

দাঁতের মাড়ির একেবারে শেষের দিকে দুই সাইডের উপর সারি ও নিচের সারি থেকে একটি করে মোট ৪টি দাঁত বের হয় একে আক্কেল দাঁত বলে। এই আক্কেল দাঁত একবারে ৪টা বের হয় না একটি একটি করে বের হতে পারে এবং এটা বের হওয়ার সময় প্রচুর ব্যথা হয়। 
এই ব্যথার ধরনটা এক একজনের ক্ষেত্রে একেক রকমের হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে ব্যথা কিছুটা কম অনুভূত হয় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে প্রচন্ডভাবে ব্যথা হতে পারে।

আক্কেল দাঁত উঠার লক্ষণ।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি যে আমাদের দাঁতের উপরের সারি এবং নিচের সারির শেষের ৪টি দাঁত হচ্ছে আক্কেল দাঁত। এই দাঁত ওঠার সময় বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই লক্ষণগুলো সবার ক্ষেত্রে একই রকমের হয় না। তবে সাধারণভাবে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় সেই লক্ষণ গুলো এখন আপনারা জানতে পারবেন।
  • আক্রান্ত স্থানের ব্যথা অনুভূত হওয়া
  • মাড়ি ফুলে যাওয়া
  • খাবার খেতে অসুবিধা হয়
  • মুখ খোলার সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া
  • মাথাব্যথা শুরু হওয়া
  • মুখের দুর্গন্ধ বের হওয়া
  • গলা ফুলে যাওয়া
  • গায়ে জ্বর আসা

আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে।

দাঁত হচ্ছে মানুষের মুখের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এক পাটি সুন্দর দাঁত মানেই সুন্দর হাসি, সুন্দর চেহারা। আমাদের মুখে উপরের সারি এবং নিচের সারি মিলে ৩২ টি দাঁত থাকে। মাড়ির একদম শেষের দিকে উপরে নিচে মিলে যে চারটি  দাঁত থাকে সেগুলা হচ্ছে আক্কেল দাঁত। 
একজন ছেলে বা মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর (১৭-২৫বছরের মধ্যে) এই আক্কেল দাঁত উঠে থাকে। অনেক সময় বলা হয়ে থাকে আক্কেল দাঁত উঠলেই আক্কেল হবে কিন্তু এই কথাটা ঠিক নয়। আক্কেল দাঁতের সাথে আক্কেল বা জ্ঞান বুদ্ধির কোন যোগসূত্র থাকে না। আক্কেল দাঁত উঠলে আক্কেল বোধ বেড়ে যায় এটা এক ধরনের নিছক কথার কথা। 

আক্কেল দাঁত উঠার অভিজ্ঞতা একেকজনের একেক রকমের কারো ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত উঠার সময় অনেকে বুঝতে পারে আবার অনেকে বুঝতে পারে না। যাদের মাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণের জায়গা থাকে তাদের ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত উঠার সময় তেমন একটা ব্যথা অনুভূত হয় না। 

তবে যাদের মাড়িতে কোন জায়গা থাকে না বা জায়গা কম থাকে তাদের ক্ষেত্রে দাঁত আক্কেল দাঁত ওঠার সময় প্রচন্ড ব্যথা হয়। আক্কেল দাঁত ওঠার সময় মাড়ি ফুলে যায়, দাঁতের মাড়ি ব্যথা করে, কোন কিছু খেতে গেলে ব্যথা করে, ঢোক গিলতে গেলে ব্যথা করে, কোন কিছুর দ্বারা আঘাত লাগলে ব্যথা করে। 

ব্যথার পরিমাণ এতটাই বেশি হয় যে অনেকের ক্ষেত্রে ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া লাগে এবং অপারেশন করে দাঁত বেরিয়ে আসার জায়গা করে দিতে হয়। আক্কেল দাঁত ওঠার সময় কতদিন ব্যথা থাকে এটি নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। 

তবে এটি বলা যায় যে আক্কেল দাঁত পুরোপুরি ওঠা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যথা থাকতে পারে। তবে অনেকের এই ব্যথা তীব্র হয় আবার অনেকের এই ব্যথা কম অনুভূত হয় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যথা বোঝা যায় না।

এই ব্যথার কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে দাঁতগুলো যেহেতু মাড়ির একেবারে শেষের দিকে বের হয় সেহেতু সেখানে দাঁত বের হওয়ার মত যথেষ্ট জায়গার অভাব থাকে। আক্কেল দাঁত বের হওয়ার সময় যদি ঠিক পরিমাণ মতো জায়গা না পায় তাহলে সেটা উঠার জন্য অনেক চাপাচাপি করে যার কারণে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে থাকে। 

যাদের ক্ষেত্রে মাড়ির শেষাংশে আক্কেল দাঁত ওঠার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা থাকে তাদের আক্কেল দাঁত সহজেই বের হয়ে যেতে পারে তখন ব্যথা কম অনুভূত হয়।

আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়।

আক্কেল দাঁত ওঠার সময় যাদের প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয় তারা ব্যথা নাশক ঔষধ খেতে পারেন। তবে বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে এগুলো মেনে চললে ব্যথা কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। যেমন-

আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর প্রথম ঘরোয়া উপায় হচ্ছে লবণ পানি কুলকুচি করা এতে দাঁত ব্যথা কমিয়ে কিছুটা আরাম দেয়। হালকা গরম পানির সঙ্গে সামান্য পরিমাণের লবণ মিশিয়ে দিনে অন্তত ৪ বার কুলকুচি করুন তাহলে ব্যথা কিছুটা কম হবে।
সামান্য পরিমাণের গরম পানির সঙ্গে সোডিয়াম ক্লোরাইড মিশিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। গরম পানি ও সোডিয়াম ক্লোরাইড মুখের ভিতর থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলো মেরে ফেলে এবং মাড়িকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখে।

আক্কেল দাঁত ওঠার সময় দাঁতের মাড়ি ব্যথার সাথে সাথে গলা ব্যথা অনেকের হয়ে থাকে এক্ষেত্রে চায়ের সঙ্গে আদা মিশিয়ে খেলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায় এটি ব্যথা কমানোর একটি অন্যতম ঘরোয়া উপায়।

দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য অ্যালোভেরার ব্যবহার হয়ে থাকে দাঁতের গোড়ায় অ্যালোভেরা জেল লাগালে সেই অংশটি শীতল রাখে এবং ব্যথা কম অনুভূত হয়।

আক্কেল দাঁত ওঠার ব্যথা কমানোর জন্য আদা রসুন চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে এতে মুখের ভিতর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেড়ে যাবে। মুখের ভিতরে থাকা জীবাণু মরে যাবে আপনার মুখে সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে।

আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়।

এবার আমি যেই বিষয়টি নিয়ে আপনাদের বলবো সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন আক্কেল দাঁত তুললে কি কোন সমস্যা হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে একথা বলা যায় যে আক্কেল দাঁত আমাদের সবার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর নয়। 
আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়।
আপনি আগেই জেনেছেন আক্কেল দাঁত ওঠার সময় অনেকে বুঝতে পারে না তার দাঁত উঠে গেছে। এক্ষেত্রে দাঁত তোলার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে যাদের ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত উঠলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয় এবং অপ্রয়োজনীয় বা আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শক্রমে আক্কেল দাঁত তোলা যেতে পারে। 
যদি আক্কেল দাঁত আপনার জন্য সমস্যার কারণ না হয় সে ক্ষেত্রে দাঁত না তোলায় উত্তম। কেননা দাঁত তোলার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে আশা করি বিষয়টি সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছেন।

আক্কেল দাঁত তোলার খরচ কত।

আমাদের দেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দাঁতের চিকিৎসা করানো হয়। তবে সব সরকারি হাসপাতালে দাঁতের চিকিৎসা এখনো শুরু হয়নি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে দাঁতের চিকিৎসা তুলনামূলক খরচ কম অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে দাঁতের চিকিৎসার খরচ একটু বেশি। 

দাঁতের চিকিৎসার খরচ আমাদের দেশে অন্যান্য চিকিৎসা চেয়ে একটু বেশি এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো দাঁতের চিকিৎসার জন্য যে সকল ইকুপমেন্ট বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় এগুলো অত্যন্ত মূল্যবান। 

এগুলো ইউরোপ এবং আমেরিকা অথবা জাপান থেকে আমদানি করতে হয় তাই দাঁতের চিকিৎসা অন্যান্য চিকিৎসার চেয়ে ব্যয় বেশি। আক্কেল দাঁত তোলার খরচ কত নির্দিষ্ট করে এটি বলা মুশকিল কেননা হাসপাতাল ভেদে এবং দাঁতের অবস্থার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসার খরচ নির্ধারণ হয়ে থাকে। 
দাঁতের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ফিলিং, স্কেলিং, দাঁত তোলা, দাঁত লাগানো। সরকারি হাসপাতালে প্রতিটি দাঁতের জন্য ট্রিটমেন্ট ফিলিং ২৫০ টাকা, পার্মানেন্ট ফিলিং ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুট ক্যানেল ১০০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, কাস্ট রিস্টোরেশন ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা, পাল্প ক্যাপিং ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

অ্যান্ডোডনটিক সার্জারি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ইমপ্লান্ট ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা, এসথেটিক ট্রিটমেন্ট ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা, ব্রিজ ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, গ্রাইন্ডিং ৫০০ টাকা, মাউথ প্রিপারেশন ৮০০ টাকা, ফাংশনাল স্পিন্ট ৩৫০০ টাকা। এটি সরকারি হাসপাতালের হিসাব বেসরকারি হাসপাতালে এসব চিকিৎসার খরচ তুলনামূলক আরো বেশি।

প্রিয় পাঠক, আপনি এখানে দাঁতের চিকিৎসার জন্য খরচের যে একটি চিত্র দেখতে পেলেন এটি শুধুমাত্র একটি ধারণা মাত্র এটি কম বেশি হতে পারে।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন আক্কেল দাঁত কি? আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে সহ অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে। দাঁত ব্যথা যেহেতু খুবই মারাত্মক ব্যথা এটি অন্যান্য সমস্যারও সৃষ্টি করে তাই আক্কেল দাঁত সহ অন্যান্য দাঁত ব্যথা শুরু হলে অবশ্যই ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চলার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। 

একটি কথা অবশ্যই মনে রাখবেন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা মোটেও উচিত নয়। সর্বোপরি দাঁত ভালো রাখার জন্য নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার খাওয়ার পর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে দাঁতের গোড়ায় যেন খাবারের কনা লেগে না থাকে। কেননা খাবারের কোনাগুলো পচে দাঁতের গোড়ায় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url