ইতালি কৃষি ভিসা বেতন কত ও কৃষি ভিসা পাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ থেকে যে সকল কর্মী ইতালিতে কৃষি ভিসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি হতে চলেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইটালি কৃষি ভিসা বেতন কত ও কৃষি ভিসা পাওয়ার উপায়
কেননা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন ইতালিতে কৃষি ভিসার গেলে কত টাকা বেতন পাবেন, ইতালি কৃষির ভিসার খরচ কত? এবং কৃষি ভিসা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে।

ইতালির কৃষি ভিসা পাওয়ার উপায়।

ইতালি কৃষি কাজের জন্য প্রতিবছর বিশ্বের ৩১ টি দেশ থেকে নির্দিষ্ট কোটার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি চাইলেই সরাসরি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। ইতালির কৃষি ভিসা পাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আপনাকে যেতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে সিজিনাল ও নন-সিজিনাল ভিসায় যে সকল লোক নিয়োগ করা হয়। 
তাদেরকে মূলত বিভিন্ন বেসরকারি ফার্মের মালিক বা নিয়োগকর্তার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। এখন আসুন কিভাবে একজন ফার্মের মালিক আপনাকে তার ফার্মে বা কোম্পানিতে নিয়োগ করে এই বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক। যদিও এই বিষয়টি জানা আপনার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ নয় তারপরেও জেনে থাকা ভালো। 

এই বিষয়টি আপনার জানা থাকলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ কম থাকবে। ইতালির কোন ফার্মের মালিক বা নিয়োগ কর্তা যদি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ থেকে কোন কর্মী নিয়োগ করতে চান তাহলে তাদেরকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। যেমন-

প্রথম ধাপঃ বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মালিক বা নিয়োগকর্তাকে প্রথমে ইতালিয়ান সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের Anpal থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপঃ অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর ঐ মালিক বা নিয়োগকর্তাকে স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থা প্রফেতুরা তে আবেদন দিতে হবে যে, বাংলাদেশ থেকে বা অন্য কোন দেশ থেকে সে কর্মী নিয়োগ করতে চায়। এখানে আপনার একটি কাজ আছে। আপনাকে পাসপোর্ট এর ফটোকপি পাঠাতে হবে। পাসপোর্ট এর মেয়াদ আপনার ভিসার মেয়াদের চেয়ে ৩ মাস বেশি থাকতে হবে। কৃষি ভিসার মেয়াদ যেহেতু ৯ মাস সে ক্ষেত্রে আপনার ভিসার মেয়াদ থাকতে হবে ১২ মাস।
তৃতীয় ধাপঃ প্রিফেতুরাতে আবেদনের পর সেখান থেকে আপনাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য একটি অনুমতি পত্র দেয়া হবে। এই অনুমতি পত্রকে ইটালিয়ান ভাষায় বলা হয় নুলিস্তা। অর্থাৎ আপনাকে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে ঐ মালিক বা প্রতিষ্ঠানের আর কোন আইনগত বাধা থাকল না।

চতুর্থ ধাপঃ কোম্পানির মালিক বা নিয়োগ কর্তা আপনার নামে যে নুলিস্তা পেল তা আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠাবে। এখন আপনার কাজ হচ্ছে নুলিস্তা ও ভিসার আবেদন ফরম পূরণ করে এর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থিত ইতালি এম্বাসিতে জমা দিতে হবে ভিসার আবেদনের জন্য।

পঞ্চম ধাপঃ এই ধাপে আপনাকে ভিসার ফি জমা দিতে হবে। বাংলাদেশে অবস্থিত ইটালিয়ান দূতাবাসে ভিসার ফি জমা দিতে হবে ১১৬ ইউরো বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩,৯২০ টাকা। এরপর আপনার কাজ হল অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর নির্দিষ্ট তারিখে আপনাকে ভাইবা দেওয়ার জন্য ইটালিয়ান এম্বাসিতে সকল কাগজপত্রের মূল কপি নিয়ে যেতে হবে।

ষষ্ঠ ধাপঃ এই ধাপটি হল সর্বশেষ ধাপ। এখন আপনার কাজ হল বিমানের সিডিউল অনুযায়ী টিকিট ক্রয় করে ইতালির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করা।
এখানে একটি কথা না বললেই নয় অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে ইতালির নিয়োগকর্তা বা মালিকের সন্ধান আপনি কিভাবে পাবেন। ইতালির নিয়োগ কর্তা বা মালিকের সন্ধান কয়েকটি মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন। যেমন- আপনার নিকট আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধব, বাংলাদেশে অবস্থিত ইতালিতে লোক পাঠানোর বিভিন্ন এজেন্সি ও ব্যাক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা দালাল।

ইতালিতে যাওয়ার পর আপনার করণীয়।

অনেক বাংলাদেশী আছেন যারা মনে করেন ইতালিতে প্রবেশ করেই তিনি ইনকাম শুরু করে দেবেন এটি মোটেও ঠিক নয়। ইতালিতে প্রবেশের পর আপনার নির্দিষ্ট কিছু অফিশিয়াল কাজ রয়েছে যা অতি দ্রুত আপনাকে সেরে ফেলতে হবেঅ নয়তোবা আপনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন। এবার চলুন ইতালিতে যাওয়ার পর আপনার করণীয় কি এই সম্পর্কে আলোচনা করি।

প্রথম কাজঃ ইতালিতে যাওয়ার পর আপনাকে যে কোম্পানি নিয়োগ দিয়েছে তার প্রতিনিধি আপনাকে রিসিভ করবে। যদি প্রতিনিধি রিসিভ না করে তাহলে ঐ কোম্পানির ঠিকানা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে।

দ্বিতীয় কাজঃ কোম্পানি খুঁজে পাওয়ার পর এর প্রতিনিধি সাথে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অফিস প্রিফেতুরাতে গিয়ে আপনার কন্টাক ফরমে স্বাক্ষর করতে হবে এবং ওয়ার্ক পারমিট বা রেসিডেন্সিয়াল কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। এই রেসিডেন্সিয়াল কার্ড এর মেয়াদ ৬ মাস, ৯ মাস, ১ বছর হয়ে থাকে। 

এখানে আপনার কিছু খরচ রয়েছে। যেমন- রেসিডেন্সিয়াল ফি সর্বোচ্চ ১০০ ইউরো, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফি ৩০ ইউরো, ট্যাক্স ফ্রি ১৬ ইউরো, সর্বমোট ১৭৬ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় 21000 টাকা।

ইতালি কৃষি ভিসা বেতন কত?

ইতালি কৃষি ভিসার বেতন কত এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। আপনাদের জানার আগ্রহ থেকে এই বিষয়টি নিয়ে আমি এখন আলোচনা করব। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে কৃষি ভিসায় গিয়ে কৃষি কাজ করলে মাসিক পদ্ধতিতে আপনাকে বেতন দেয়া হবে। অর্থাৎ আপনাকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেতন দেয়া হবে। 
এরকম ভাবেই কন্টাক্ট ফর্মে স্বাক্ষর করা থাকবে। কন্টাক্ট ফর্মে আপনার বেতন কত হবে এর বিস্তারিত তথ্য আপনি জেনে যাবেন। ইতালির কৃষি ভিসার বেতন প্রতিমাসে ৮০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় বর্তমানে প্রায় ৯৬০০০ টাকা।

এইবার যারা ইতালিতে পূর্বে থেকে অবস্থান করছে এরকম কর্মী যদি কৃষিকাজ করে তাহলে, তাদের বেতন দেওয়ার পদ্ধতি আলাদা। এক্ষেত্রে ঐ সকল কৃষি কর্মীদের ঘন্টা চুক্তিতে বেতন নির্ধারিত হয়। এখন প্রতি ঘন্টায় আপনাকে কত ইউরো বেতন দেয়া হবে তা নির্ভর করে কোম্পানির উপর। একেক কোম্পানি একেক ধরনের ঘন্টা চুক্তি বেতন দিয়ে থাকে। 

তবে ওভারঅল আমি এ কথা বলতে পারি প্রতি ঘন্টায় ৮ থেকে ১০ ইউরো আপনাকে দেবে এবং আপনার কাজ হবে ৮ ঘন্টা সেই ক্ষেত্রে হিসেব করলে দেখা যায় প্রতিদিন ৬৪ থেকে ৮০ ইউরো পর্যন্ত আপনি বেতন পাবেন। যা বাংলাদেশী টাকায় ২ থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা।

ইতালি কৃষি ভিসা খরচ ২০২৪

প্রিয় পাঠক এবার আপনাদের জানাবো ইতালির কৃষি ভিসার খরচ কত? বাংলাদেশ থেকে কোন দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে ইতালির কৃষি ভিসা পেতে আপনাকে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা গুনতে হবে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিন্তু অফিসিয়ালি এত টাকা খরচ হয় না। 

অফিসিয়ালি ইতালির কৃষি ভিসা পেতে আপনার কত টাকা খরচ হবে এটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ থেকে যারা ইতালিতে কৃষি ভিসায় যেতে চাচ্ছেন তাদের ইতালি কৃষি ভিসার প্রকৃত খরচ জানতে এখানে ক্লিক করুন।

ইতালি কৃষি ভিসার মেয়াদ।

ইতালির কৃষি ভিসার মেয়াদ সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেকেই প্রকাশ করেছেন। ইতালির কৃষি ভিসা মূলত সিজিনাল ভিসার মধ্যে পড়ে। ইতালির সিজিনাল ভিসার মেয়াদ বা কৃষি ভিসার মেয়াদ ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত। এরপর আপনি আর সেই দেশে থাকতে পারবেন না অবৈধ হয়ে যাবেন। 
তবে অনেকেই দেশে আর ফেরত আসে না অবৈধভাবে কাজ করতে থাকে এবং একটি সময় বৈধ করার সুযোগ পেলে ইতালিতে থাকার বৈধতা তৈরি করে নেয়। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

ইতালি কৃষি ভিসার সুবিধা।

  • ইতালি কৃষি ভিসার সুবিধা হচ্ছে স্পন্সর হিসাবে তুলনায় কৃষি ভিসার দাম কম।
  • ইতালির কৃষি ভিসার দ্বিতীয় সুবিধা হচ্ছে এই ভিসার কোটা বেশি থাকে তাই সহজে ভিসা পাওয়া যায়।

ইতালি কৃষি ভিসার অসুবিধা।

  • ইতালির কৃষি ভিসার মেয়াদ ৬ মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত হয়।
  • রেসিডেন্সিয়াল অথবা গ্রীন কার্ড এর মেয়াদ ৬ মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ভিসার মেয়াদের সাথে সম্পৃক্ত। এটা পরবর্তীতে আর বৃদ্ধি করা যায় না নির্দিষ্ট সময় পর আপনি অবৈধ হয়ে যাবেন।
  • কৃষি কাজের বাহিরে অন্য কোন কাজ করতে পারবেন না।
  • দ্রুত ফ্যামিলির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে যেতে পারবেন না।
  • কৃষি ভিসার একটি অন্যতম সমস্যা হল ইতালিতে যাওয়ার পর সহজে কাজ পাওয়া যায় না বা মালিক খুঁজে পাওয়া যায় না।
  • মালিক খুঁজে পাওয়া না গেলে আপনার রেসিডেন্সিয়াল কার্ড বা গ্রীন কার্ড করতে পারবেন না। এটি একটি উন্নতম অসুবিধা।

শেষ কথাঃ 

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মধ্য দিয়ে আপনারা ইতালির কৃষি ভিসা বেতন কত? আবেদন করার নিয়ম ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে অনেক উপকৃত হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে ইতালির ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা কথা বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। তাই অবশ্যই সকল বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তারপর ইতালির ভিসার জন্য আবেদন করবেন।

প্রশ্নঃ ইটালির কৃষি ভিসা ২০২৪ এর ক্লিক ডে কবে?

উত্তরঃ ইতালির কৃষি ভিসার ২০২৪ এর ক্লিগ ডে ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url