মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৪

দক্ষিণ এশিয়ার অপার সৌন্দর্যের নীলাভূমি হচ্ছে মালদ্বীপ। হাজারো দ্বীপ নিয়ে এই দেশটি গঠিত।দেশটির রাজধানীর নাম হচ্ছে মালে। দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশীদের জন্য অদক্ষ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালদ্বীপ সরকার এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। তাই আজকে আমি আপনাদের সাথে মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে আলোচনা করব।
মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৪
এর পাশাপাশি আপনারা আরো জানতে পারবেন মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসা, মালদ্বীপ ডিপেন্ডেন্ট ভিসা সম্পর্কে আশা করব পোস্টটি আপনারা অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়বেন।

মালদ্বীপে ভিসার ধরন।

  • ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
  • টুরিস্ট ভিসা
  • মিটিং ভিসা
  • ডিপেন্ডেন্ট ভিসা
  • ম্যারেজ ভিসা
  • ব্যবসায়িক ভিসা
মালদ্বীপ তার বন্ধু প্রতিম বিভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিকদের সেই দেশ ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা ইস্যু করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হল বিদেশি নাগরিকদের মালদ্বীপে কাজের উদ্দেশ্যে অবস্থান বা থাকার জন্য দেওয়া একটি অনুমোদন পত্র। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ পর্যটনের উদ্দেশ্যে মালদ্বীপ ভ্রমণ করে। এর পাশাপাশি মালদ্বীপে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপ যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
মাঝের চার বছর মালদ্বীপ বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। বর্তমানে পুনরায় বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশের সরকারের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে মালদ্বীপে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশিরা প্রথমে বৈধতার মাধ্যমে এই কার্যক্রমের শুরু হবে।

মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র।

  • A Machine Readable Zone MRZ পাসপোর্ট। পাসপোর্টে কমপক্ষে ১ বছর মেয়াদ থাকতে হবে।
  • একটি বৈধ প্রবেশ অনুমোদন পত্র থাকতে হবে যার মেয়াদ হবে ৯০ দিন পর্যন্ত।
  • ওয়ার্ক পারমিটে উল্লেখিত পাসপোর্ট ভ্রমণকারীকে দেখাতে হবে।
  • মালদ্বীপ ভ্রমণের ৯৬ ঘন্টা পূর্বে ট্রাভেলার ডিক্লারেশন অনলাইনে জমা দিতে হবে।
  • নিয়োগ কর্তাকে অথবা নিয়োগ কর্তার প্রতিনিধি অনলাইনের মাধ্যমে কাজের ভিসার আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন পত্র জমা দিতে হবে।
  • সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী।
  • মেডিকেল সার্টিফিকেট সরকার অনুমোদিত কোন হসপিটাল এবং ক্লিনিক থেকে।
  • ভিসার আবেদন পত্র জুমাদানের রশিদ।
মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের ১৭ই নভেম্বর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কর্মীর আবেদন পত্র অথবা রিক্রুটিং এজেন্সির আবেদন পত্র এক্সপার্ট অনলাইন সিস্টেম Xpat Online System এর মাধ্যমে জমা নিয়ে থাকে। মালদ্বীপের কাজের ভিসার আবেদন পত্র জমা দেওয়ার তারিখ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদিত হয়। 
মালদ্বীপ কাজের ভিসার অনুমোদন হয়ে গেলে আপনাকে অনলাইনে পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। ভিসা প্রসেসিং করতে ৩ কর্ম দিবস সময় লাগবে এরপর আবেদনকারী কে জানিয়ে দেয়া হবে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার নির্ধারিত তারিখ সম্পর্কে।

মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ।

বাংলাদেশ থেকে যে সকল কর্মী ভাইয়েরা অদক্ষ কর্মী হিসেবে মালদ্বীপে যাওয়ার জন্য চিন্তা ভাবনা করছেন তাদের সুবিধার্থে আলোচনার এই অংশে আমি আপনাদের জানাবো মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ সম্পর্কে।

মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ নিয়ে অনেকের মধ্যে এক ধরনের দুশ্চিন্তা কাজ করে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রতে যেতে একজন বাংলাদেশীকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে না। বাংলাদেশ থেকে একজন কর্মী মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যেতে খরচ হবে ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৮০ টাকা।

মালদ্বীপ টুরিস্ট ভিসা।

বাংলাদেশী নাগরিকদের মালদ্বীপ ভ্রমণের সে দেশের সরকার দারুন একটি সুযোগ করে দিয়েছে। মালদ্বীপ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ যে দেশে বাংলাদেশী কোনো নাগরিক ভিসা ছাড়া ৩০ দিন পর্যন্ত এবং ভারতের নাগরিক ভিসা ছাড়া ৯০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। এর বেশি অবস্থান করতে চাইলে আপনাকে ভিসা করতে হবে। 

মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ প্রথমে আপনাকে On Arrival Visa দেবে। একজন বিদেশি নাগরিক যখন মালদ্বীপ ভ্রমণ করতে চাইবে তখন প্রি অ্যাপ্রুবাল ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে না। ট্যুরিজমকে কেন্দ্র করে সেই দেশের বিলাসবহুল হোটেল রেস্তোরাঁ কফি শপ গড়ে উঠেছে। ট্যুরিজমের একটি নিরাপদ দেশ হিসাবে মালদ্বীপের সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। 
মালদ্বীপের অর্থনীতি গড়ে উঠেছে টুরিস্টের উপর। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ টুরিস্ট ভিসা নিয়ে মালদ্বীপে ভ্রমণ করে থাকে। দেশটি ট্যুরিজম কে সহজতম করার জন্য বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। 

যেমন ভিসা ছাড়া ৩০ দিন পর্যন্ত শুধুমাত্র পাসপোর্ট দেখিয়ে সেই দেশ ভ্রমণ করা যায়। মালদ্বীপ এয়ারপোর্ট এ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে যে সকল কাগজপত্র দেখিয়ে মালদ্বীপের প্রবেশের অনুমোদন নিতে হবে সেইগুলো নিচে তুলে ধরা হলো
  • পাসপোর্ট এবং ট্রাভেল ডকুমেন্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ১ মাস থাকতে হবে।
  • সাম্প্রতিক তোলা ২ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ( মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন স্ট্যান্ডার্ড )
  • ফিরতি বিমান টিকেট।
  • হোটেল বুকিং এর তথ্য।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের নগদ অর্থ বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড।
  • অন্য দেশ ভ্রমণ করা থাকলে তার তথ্য। ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে )
  • আপনার মালদ্বীপ ভ্রমণের নির্ধারিত তারিখ থেকে ৯৬ ঘন্টা পূর্বে আপনাকে অবশ্যই ট্রাভেলার ডিক্লারেশন ( Traveller Declaration ) পূরণ করতে হবে এবং IMUGA এটি মাধ্যমে।
  • শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দের অবশ্যই নিজ নিজ পাসপোর্ট করতে হবে।
  • ইয়োলো ফিভার ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ) এক বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। আফ্রিকার ২৯ টি দেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার ১৩ টি দেশ এর নাগরিকদের অবশ্যই ইয়োলো ফিভার ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট দিতে হবে।

মালদ্বীপ ডিপেন্ডেন্ট ভিসা।

মালদ্বীপ সেই দেশে বসবাসকারী কর্মরত দক্ষ বিদেশী নাগরিকদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এক প্রকারের ভিসা প্রদান করে যা ডিপেন্ডেন্ট ভিসা নামে পরিচিত। মালদ্বীপ ডিপেন্ডেন্ট ভিসার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়।
  • আবেদনকারীর পাসপোর্টের জীবন বৃত্তান্তের পৃষ্ঠার রঙিন ফটোকপি।
  • সাম্প্রতিক তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।( মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন স্ট্যান্ডার্ড )
  • স্বামী বা স্ত্রীর বৈবাহিক সার্টিফিকেট।
  • ওয়ার্ক পারমিট এর কপি।
  • জন্ম সনদপত্র । ( সন্তানের ক্ষেত্রে )
  • মেডিকেল রিপোর্ট।
  • হেলথ ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট।
  • ভিসার সর্বশেষ পৃষ্ঠার ফটোকপি। ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে )

মালদ্বীপ মিটিং ভিসা।

মালদ্বীপ সেই দেশের পর্যটন খাতকে বিকশিত করার জন্য বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বহির্বিশ্বের ভ্রমণপিপাসু মানুষের মাঝে যাতে মালদ্বীপ সম্পর্কে তাদের আগ্রহ দৃষ্টিভঙ্গি প্রবল হয় এই জন্য ২০২৩ সালের ১৪ই মে থেকে মিটিং ভিসা নামের এক ধরনের ভিসা চালু করেছে। এই ভিসার মেয়াদ ১৪ দিন। 

১৪ দিন মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই ভিসার মেয়াদ আর বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। মিটিং ভিসা নিয়ে বিদেশি নাগরিকগণ মালদ্বীপে বিভিন্ন ধরনের মিটিং কনফারেন্স অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবে ১৪ দিনের জন্য। মিটিং ভিসার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মালদ্বীপকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করে তোলার এবং মালদ্বীপের ট্যুরিজম কে বিকশিত কিভাবে করা যায়।
মালদ্বীপ সরকারের অনুমোদন নিয়ে বিদেশের বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি, সরকারি বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন অফিসিয়াল মিটিং, কনফারেন্স ইত্যাদির আয়োজন করার সুযোগ পাবেন।
আপনার মালদ্বীপ ভ্রমণের নির্ধারিত তারিখ থেকে ৯৬ ঘন্টা পূর্বে আপনাকে অবশ্যই ট্রাভেলার ডিক্লারেশন ( Traveller Declaration ) পূরণ করতে হবে এবং IMUGA এটি মাধ্যমে।

মিটিং ভিসার আবেদনের জন্য আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ অবশ্যই ১ মাস থাকতে হবে। কোন যাত্রী যদি তার পাসপোর্টের মেয়াদ বৃদ্ধি করে থাকে তাহলে তিনি মালদ্বীপ ভ্রমণ করতে পারবেন না।
মিটিং ভিসায় মালদ্বীপে এসে কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন না এবং এই ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় না।

পাসপোর্ট এবং ট্রাভেল ডকুমেন্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ১ মাস থাকতে হবে। সাম্প্রতিক তোলা ২ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ( মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন স্ট্যান্ডার্ড ) মিটিং কনফারেন্স ইত্যাদিতে অংশগ্রহণকারী সংস্থা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে ফিরে আসার বিমান টিকেট, হোটেল বুকিং এর তথ্য এবং পর্যাপ্ত পরিমাণের আর্থিক সংস্থান।

শেষ কথাঃ 

বাংলাদেশের কিছু অসাধু এজেন্সি ও কর্মকর্তার অনিয়ম এর কারণে দীর্ঘ চার বছর মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশীদের অদক্ষ কর্মী ভিসা এবং টুরিস্ট ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল। দুই দেশের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে পুনরায় বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ কর্মী ও টুরিস্ট ভিসা দেওয়া শুরু করেছে খুবই ইতিবাচক একটি বিষয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url