কুয়েত টুরিস্ট ও ভিজিট ভিসার আবেদনের নিয়ম
প্রিয় পাঠক কুয়েত ভিসার ধারাবাহিক আলোচনার আজকের এই পর্যায়ে আমি কুয়েত টুরিস্ট ই- ভিসা এবং কুয়েত ভিজিট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনারা যারা বিভিন্ন দেশ থেকে কুয়েত টুরিস্ট ই- ভিসা এবং কুয়েত ভিজিট ভিসা নিয়ে সেই দেশে যেতে চান তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি হতে চলেছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনারা ধৈর্য সহকারে পড়বেন তাহলে কুয়েত টুরিস্ট ই- ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কুয়েত ই- ভিসা কি
কুয়েত ই- ভিসা হচ্ছে এক ধরনের ইলেকট্রনিক ভিসা যা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিদেশীন নাগরিকদের কুয়েত সরকার এর ভিসা প্রদান করে থাকে। ২০১৬ সাল থেকে কুয়েত ই- ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। কুয়েত ই- ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত। কুয়েত ই- ভিসার আবেদনের জন্য আপনাকে কুয়েত এম্বাসি বা কনসুলেট অফিসে যেতে হবে না।
অনলাইনে ঘরে বসে আপনি ই- ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া। বাহারাইন, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব এই দেশগুলোর নাগরিকদের কুয়েত ভ্রমণের কোন ভিসা করতে হয় না তবে উপরে উল্লেখিত দেশগুলোতে বসবাসকারী অন্য দেশের নাগরিকদের কাতার ভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ই ভিসা করতে হবে।
গত কয়েক বছরে কুয়েত ভিসার আবেদনের বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। কুয়েত ই- ভিসার দ্রুত প্রসেসিং করতে কুয়েত সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। ই ভিসার আবেদন করার জন্য বেশ কয়েক ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। কুয়েত ই- ভিসার আবেদন করতে শুধুমাত্র আপনার পাসপোর্ট থাকতে হবে এবং পাসপোর্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভিসার জন্য আলাদা আলাদা ডকুমেন্টের প্রয়োজন পড়ে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কুয়েতের সকল ধরনের ভিসা আপাতত বন্ধ আছে। একটি বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বাংলাদেশ থেকে কুয়েত ভিসা পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কুয়েত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ভিসা করতে হয় যা একটি জটিল প্রক্রিয়া।
কুয়েত টুরিস্ট ই- ভিসা।
কুয়েত টুরিস্ট ভিসা হচ্ছে এমন এক ধরনের ভিসা যে, ভিসার মাধ্যমে একজন ভ্রমণকারী কুয়েত ভ্রমণের পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলো ভ্রমণ করতে পারবে। এখানে উপসাগরীয় দেশ বলতে সৌদি আরব, কাতার, বাহারাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কুয়েত এই দেশগুলোকে বুঝানো হয়েছে।
এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া।
কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর এবং সাধারণ কিছু ইনফরমেশন যেমন- পাসপোর্ট নাম্বার, যোগাযোগের বিস্তারিত মাধ্যম এগুলো দিয়ে খুব সহজেই কুয়েত টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। টুরিস্ট ভিসার আবেদন করতে কুয়েত এম্বাসিতে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে না। আপনি চাইলেই অফিস অথবা বাসা বাড়ি থেকে খুব সহজেই কুয়েত টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মাত্র ১ থেকে ৩ দিন কর্ম দিবসে আপনার ভিসা অনুমোদন হয়ে গেলে তারা আপনার ইমেইল ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে।
কারা কুয়েত টুরিস্ট ই- ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন?
আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং সকল ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের নাগরিকরা কুয়েতের টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করার যোগ্য। এই সকল দেশের নাগরিকরা অনলাইনে এপ্লিকেশন করতে খুব দ্রুত এবং সহজভাবে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করার যোগ্য কিনা নিজেকে যাচাই করতে পারেন।
ঘরে বসে অনলাইনে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কুয়েত ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। দুই থেকে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে আপনার ভিসা অনুমোদন হয়ে গেলে ইমেইলের মাধ্যমে ভিসার একটি কপি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আপনি যখন কুয়েতে প্রবেশ করবেন সেই সময় ভিসার কপিটি অন্যান্য ডকুমেন্টের সাথে আপনাকে একটি দেখাতে হবে।
কুয়েত টুরিস্ট ই- ভিসার মেয়াদ।
কুয়েতে প্রবেশের পর ৯০ দিন পর্যন্ত এই টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ থাকে যদি আপনি ৯০ দিনের বেশি কুয়েতে অবস্থান করতে চান তাহলে আপনাকে জরিমানা গুনতে হবে। তবে সবচাইতে খুশির খবর হল আপনি যদি কুয়েতে অবস্থান ৯০ দিনের বেশি করতে চান তাহলে এটি কোন অপরাধ নয় এজন্য আপনাকে কোন অপরাধী হিসেবে গণ্য করে আইনের আওতায় আনা হবে না।
আপনি ৯০ দিনের বেশি থাকতে চাইলে আপনাকে প্রতিদিন হিসাব অনুযায়ী জরিমানা টাকা দিতে হবে। জরিমানা না দেয়া পর্যন্ত আপনি কুয়েত ত্যাগ করতে পারবেন না। কুয়েতে একজন ভ্রমণকারী ৯০ দিনের অতিরিক্ত সময় থাকার জন্য প্রতিদিন ১০ কুয়েতি দিনার জরিমানা দিতে হবে।
আসল কুয়েত ই- ভিসার বৈশিষ্ট্য।
- শুরুতেই একটি হেডিং থাকবে সেখানে লেখা থাকবে Welcome to State of Kuwait প্রথমে ইংলিশে এবং তার নিচেই আরবীতে এটি লেখা থাকবে।
- এই লেখাটির নিচে সাব হেডিং হিসাবে থাকবে Tourist VISA-Application ইংলিশ এবং আরবি উভয় অক্ষরে।
- হেডিং এবং সাব হেডিং এর বামপাশে কুয়েত পুলিশের ব্যাজ থাকবে।
- হেডিং এবং সাব হেডিং এর ডানপাশে কুয়েতের জাতীয় প্রতীক চিহ্ন থাকবে।
- কুয়েত ই- ভিসা টেক্সটের অংশ দুটি অক্ষরে লেখা থাকবে ইংরেজি ও আরবি হরফে। ইংরেজি লেখা থাকবে বাম পাশে আর আরবি হরফের লেখা থাকবে ডান পাশে। এই অংশে ভিসার বিস্তারিত সবকিছু উল্লেখ থাকবে।
- আপনার কুয়েতি ই- ভিসার প্রথম অংশে লেখা থাকবে প্রিয়, কুয়েতের ই- ভিসার এপ্লিকেশন আপনার জন্য অনুমোদিত হয়েছে। এটি প্রিন্ট করে আপনার কাছে সংরক্ষণ করুন এবং কুয়েত ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এর কর্মচারীদের নিকট এটি পেশ করুন যখন আপনি কুয়েতে প্রবেশ করবেন। এখানে ১২ ডিজিটের একটি অ্যাপ্লিকেশন নাম্বার দেয়া থাকবে।
- ঠিক এর নিচেই ৯ ডিজিটের একটি ভিসা নাম্বার থাকবে এবং এখানে ভিসা প্রদানের তারিখ এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ উল্লেখ থাকবে।
- এরপর যে অংশটি লেখা থাকবে সেটি হচ্ছে এই অংশ দ্বারা আপনাকে বুঝাবে যে কুয়েত ই- ভিসা পাওয়ার পরে যে আপনি কুয়েতে প্রবেশ করতে পারবেন এর নিশ্চয়তা বহন করে না। কুয়েতে প্রবেশের অন্যান্য শর্তাবলী আপনাকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
- তারপর আপনাকে কুয়েতে প্রবেশের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা দেয়া থাকবে কুয়েত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে।
- কুয়েত ই ভিসার একদম নিচের অংশে লেখা থাকবে “@ALL Rights Reserved, Ministry Of Interior Kuwait 2016” প্রথমে ইংলিশ দিয়ে পড়ে আরবি অক্ষরে।
কুয়েত টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে অবশ্যই কুয়েতে প্রবেশ করতে হবে। কুয়েতে টুরিস্ট ভিসা হলো একটি সিঙ্গেল এন্টি ভিসা। আপনি কুয়েতে প্রবেশের পর সেই দেশ থেকে ফিরে আবার যদি আপনি কুয়েতে যেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই নতুন করে ভিসা করে তারপর কুয়েতে যেতে হবে।
কুয়েত ভিজিট ভিসা।
কুয়েত সরকার বিদেশী নাগরিকদের যে কয়েকটি ভিসা ইস্যু করে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো কুয়েত ভিজিট ভিসা। ভিজিট ভিসা পাওয়ার জন্য কুয়েতে অবস্থানকারী বা বসবাসকারী আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বা কোন কোম্পানির কাছ থেকে স্পন্সর পেতে হবে। কুয়েত ভ্রমণের পূর্বে আপনাকে আপনার নিকটস্থ কুয়েত এম্বাসিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে এবং ভিসা অনুমোদন সাপেক্ষে আপনি ভ্রমণ করতে পারবেন।
কুয়েত ভিজিট ভিসার মেয়াদ থাকে ভিসা ইস্যু হওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত। আপনি কুয়েতে প্রবেশের পর সেখানে একটানা ৩০ দিন পর্যন্ত আপনি থাকতে পারবেন। এর পরে আপনি যদি কুয়েতে থাকতে চান তাহলে প্রতিদিন ১০ কুয়েতি দিনহার আপনাকে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত আপনি কুয়েত ত্যাগ করার অনুমতি পাবেন না।
কুয়েতের ভিসা যিনি স্পন্সর করবেন তিনি ভ্রমণকারীর পাসপোর্ট এর ফ্যাক্স কপি ব্যবহার করতে পারবেন অর্থাৎ ভিসার জন্য আবেদন করতে ভিসার আবেদনকারীর পাসপোর্ট ফ্যাক্স কপি প্রয়োজন হবে। ভিসার আবেদনকারী সরাসরি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। যিনি ভিসা স্পন্সর করবেন তিনি আবেদনকারীর হয়ে সরকারের নিকট ভিসার জন্য আবেদন করবেন।
ভিসার অনুমোদন পাওয়ার পর আবেদনকারী কে ফ্যাক্সের মাধ্যমে ভিসার একটি কপি পাঠিয়ে দেয়া হবে। কুয়েতে প্রবেশের সময় বিমানবন্দরে সকল কাগজপত্র দায়িত্বরত ব্যক্তিদের কাছে দাখিল করতে হবে। কুয়েত ভিজিট ভিসা দুইটি উদ্দেশ্যে দেয়া হয়। যেমন-
ব্যবসার জন্য এবং নিকট আত্মীয়র সাথে সাক্ষাতের জন্য। উভয় ভিসার জন্য আপনাকে কুয়েত থেকে স্পন্সর পেতে হবে।
ব্যবসায়ী ভিজিট ভিসা।
অন্য কোন দেশের নাগরিক কুয়েতের কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করার জন্য যদি কুয়েতে যেতে হয় তাহলে তাকে ব্যবসায়ী ভিজিট ভিসা করতে হবে। ব্যবসায়ী ভিজিট ভিসার জন্য কুয়েতের ব্যবসার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আপনাকে অবশ্যই স্পন্সর পেতে হবে এবং আপনি যে ব্যবসা করেন তার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেখাতে হবে।
ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা।
কুয়েতে বসবাসকারী অন্য দেশের নাগরিকরা তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজন অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের ভিজিট ভিসার মাধ্যমে কুয়েত ভ্রমণ করাইতে পারবেন। রিলেটিভ ভিজিট ভিসার জন্য আত্মীয়তার প্রমাণস্বরূপ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে এর পাশাপাশি যিনি ভিজিট করবেন তার পাসপোর্ট, কুয়েতে বসবাসকারী ব্যক্তির রেসিডেন্ট পারমিট এবং স্যালারি সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
ভিজিট ভিসায় কোন নাগরিক কুয়েতে প্রবেশ করলে তিনি কাজ করার অনুমতি পাবেন না। কাজ করতে চাইলে অবশ্যই ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার নিকটবর্তী কুয়েত এম্বাসিতে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সহ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে এবং সেখানে ৩ কুয়েতি দিনার ভিসার ফি প্রদান করতে হবে।
ভিজিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
ভিজিট ভিসার জন্য আপনাকে যে সব কাগজপত্র এম্বাসিতে পেশ করতে হবে সেগুলো হল।
- একটি বৈধ পাসপোর্ট পাসপোর্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হবে।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- হোটেল বুকিং এর তথ্য।
- রিটার্ন বিমান টিকেট।
- কুয়েতে বসবাসকারী ব্যক্তির রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট। ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে )
- কুয়েত ভ্রমণের আমন্ত্রণপত্র।
- আত্মীয়তা প্রমাণের সার্টিফিকেট। ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে )
- ট্রেড লাইসেন্স এর সার্টিফিকেট। ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে )
- কমপক্ষে ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট। ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে )
- ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কিত আবেদন পত্র।
- মেডিকেল সার্টিফিকেট।
শেষ কথা
আপনারা যারা আজকের এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়লেন তাদের কে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার পরবর্তী পোষ্টের আলোচ্য বিষয় থাকবে কুয়েতের কাজের ভিসা সম্পর্কে। আজকের এই পোস্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে জানাবেন। বাংলাদেশ থেকে কুয়েত সকল ভিসা শর্তসাপেক্ষে প্রদান করা হচ্ছে তাই কুয়েত ভিসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাংলাদেশের অনেক অসাধু ব্যক্তি রয়েছে যারা আপনাকে কুয়েত ওয়ার্ক ভিসা দেওয়ার নাম করে টুরিস্ট ভিসা অথবা ভিজিট ভিসা দিয়ে আপনাকে প্রতারিত করতে পারে।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url