গাজীপুর জেলার ৭ টি দর্শনীয় স্থান সমূহ

গাজীপুর জেলা হল বিনোদনপ্রেমীদের কাছে খুবই পছন্দনীয় একটি জেলা। এই জেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বহু বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান। আপনারা যারা গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি হতে চলেছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয়।
গাজীপুর জেলার ৭ টি দর্শনীয় স্থান সমূহ
কেননা আজকের এই আর্টিকেলে আমি গাজীপুর জেলার বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করব সমগ্র আর্টিকেলটি অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পড়বেন, তাহলে গাজীপুর জেলার বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ভাওয়াল রাজবাড়ী।

গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ৫ একর জায়গার উপর নির্মিত ভাওয়াল রাজবাড়ী। জমিদার লোকনারায়ণ রায় এই রাজবাড়ীর নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন কিন্তু তিনি এর কাজ শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে রাজা কালী নারায়ন রায় এই রাজবাড়ীর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। 

রাজকুমার রমেন্দ্র নারায়ণ ও তার দুই ভাই বাড়িটি দেখাশোনা করতেন। বাংলার জমিদারী স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় এই রাজবাড়ীর বাহ্যিক সৌন্দর্যে। কারুকার্য খচিত সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই রাজবাড়ীর প্রবেশপথে প্রথমে আপনার নজর আসবে চোখ ধাঁধানো অচেনা ফুলের গাছ। একটু সামনে এগুলোই দেখতে পাবেন প্রশস্ত বারান্দা ও হলঘর। 

অপরূপ সৌন্দর্যের এই রাজবাড়ী ঘুরতে ঘুরতে আপনার চোখে পড়বে বড় দালান, রাজ বিলাস, পুরান বাড়ি, নাট মন্দির, হাওয়া মহল, বিভিন্ন নামের ভবনগুলো। ভাওয়াল রাজবাড়ীর একটি বিশেষত্ব হলো এ রাজবাড়ীতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৬৫ টি কক্ষ রয়েছে। রাজবাড়ীর পশ্চিমে রয়েছে বিশাল দিঘী এবং সামনে রয়েছে সমতল মাঠ।
গাজীপুর ভাওয়াল রাজবাড়ীর সাথে জড়িয়ে আছে করুন এক ইতিহাস। রাজা রমেন্দ্র নারায়ণের মৃত্যুর ১২ বছর পর পুনরায় ফিরে আসার ইতিহাস যাকে কেন্দ্র করে বিখ্যাত ভাওয়ালের সন্ন্যাসী মামলার সূচনা হয়। সবাই ভেবেছিল রাজা মারা গিয়েছে কিন্তু আদতে তিনি সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। এছাড়া ভাওয়াল রাজবাড়ীকে ঘিরে উত্তম কুমার নির্মিত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সন্ন্যাসী রাজা নির্মাণ করা হয়।

প্রিয় পাঠক, ভাওয়াল রাজবাড়ীর সম্পর্কে তো জানা হলো এবার আমি আপনাকে নিয়ে যাব গাজীপুরের আরেকটি দর্শনীয় স্থান বেলাই বিলে।

বেলায় বিল।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব এক নীলাভূমি হচ্ছে গাজীপুরের জেলায় চেলাই নদী সংলগ্ন প্রায় আট বর্গমাইল এলাকা এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বেলায় বিল। শুষ্ক মৌসুমে অন্যান্য বিলে পানি না থাকলেও বেলায় বিলে পানি থাকে এটি এই বিলের একটি উন্নতম বৈশিষ্ট্য। বর্ষায় বিস্তৃত জলরাশির মাঝে ডিঙ্গি নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর মজা নিতে চাইলে আপনাকে আসতে হবে গাজীপুরের বেলায় বিলে। 
শুধু ডিঙ্গি নৌকায় নয় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবেন এই বিলে। বর্ষায় এই বিলের সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। বর্ষায় কালো মেঘ যখন বেলায় বিলের আকাশ ঢেকে যায় এর মাঝে জেলে ভাইদের জাল ফেলে মাছ ধরার দৃশ্য স্বপ্নের মত মনে হবে। ঢাকার খুব নিকটবর্তী হওয়ায় বর্ষার সময় হাজার হাজার দর্শনার্থীর বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য যায়। 

ঢাকার কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক কোলাহলের ব্যস্ততার জীবন থেকে একটু সময় বের করে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন গাজীপুর জেলার এই দর্শনীয় স্থান।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান।

গাজীপুর জেলায় যে কয়টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে এবং গাজীপুর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের একদম পাশেই ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। গাজীপুর সদর উপজেলা ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছেন এই উদ্যানের বনাঞ্চল। 

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে প্রবেশপথে প্রধান ফটকের আপনি দেখতে পাবেন বনের সর্ববৃহৎ পশু হাতির ভাস্কর্য যা দেখে আপনার মন জুড়িয়ে যাবে। প্রথম দর্শনে আপনি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্যতা আঁচ করতে পারবেন। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি ঘেড়া সবুজের নয়নাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
উদ্যানের সবুজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পাখির কিচিমিচি ডাক শুনতে শুনতে বনের মেঠো পথ ধরে যেতে যেতে মনের অজান্তে কখন বনের গভীরে চলে গেছেন তা বোঝার উপায় নেই। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রাম নিতে পারেন রাস্তার পাশে থাকা বেঞ্চ কিংবা ছাউনিতে। বনের মধ্যে কোথাও কোথাও ধানক্ষেত চোখে পড়বে। রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় পুকুর।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের সবুজের মাঝে আপনি যখন হারিয়ে যাবেন তখন মনে হবে আধুনিক যান্ত্রিকতায় আর না ফিরতে। এখানকার সবুজে ঘেরা নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশের কটেজ ও বিশ্রামাগারে থেকে যেতে ইচ্ছে করবে।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে আপনি যদি রাত্রি যাপনের সুযোগ পেয়ে যান এটি হবে আপনার জন্য অন্য রকমের এক অভিজ্ঞতা। গভীর রাত্রে জোনাকি পোকার আলো, ঝিঝিঁ পোকার ডাক, শিয়াল হাক, বানরের চিৎকার আপনাকে নিয়ে যাবে আফ্রিকার কোন গভীর বনে বা দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন বনের গভীরে।
রাজধানী ঢাকা শহরের অতি সন্নিকটে হয় প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এই উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভ্রমণ করেন। শুষ্ক মৌসুমে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে এই উদ্যানটি বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে ব্যাপক দর্শনার্থীর লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই উদ্যানে প্রতি বছর পিকনিকের আয়োজন করে থাকে।

ভ্রমণ প্রত্যাশীদের কাঙ্ক্ষিত চাহিদার কথা বিবেচনা রেখে এই উদ্যানের বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট। যেমন- আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর ও বিনোদন। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে তো কিছু জানা হলো চলুন এবার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সম্পর্কে বলি।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে কয়টি সাফারি পার্ক রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এটি ভ্রমণ পিপাসুদের বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম। বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ করে ঈদ উৎসব, পহেলা বৈশাখের উৎসব, সরকারি ছুটির দিনগুলো তে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আগন্তুক দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় এর লক্ষ্য করা যায়।

আপনিও পরিবার পরিজনসহ ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সাফারি পার্ক বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাজীপুর।বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা জেলার উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলা গাজীপুর। গাজীপুর জেলা শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ সাফারি পার্ক বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। 
রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ৪০ কিলোমিটার এগোলেই বাঘের বাজার নামক স্থান রয়েছে। এখানে নেমে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে আপনি দেখতে পাবেন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের আয়তন প্রায় ৩৬৯০ একর। সুবিশাল এই জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সাফারি পার্কের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। দর্শনার্থীদের ভ্রমণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে। যেমন- সাফারি পার্কের উন্নতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। 

সাফারি পার্কের ৩৮ একর জায়গা নিয়ে এই স্কয়ার তৈরি করা হয়েছে। এই স্কয়ারের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন স্থাপনা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পার্কিং এলাকা, প্রশাসনিক ভবন, আকর্ষণীয় বঙ্গবন্ধু মুরাল, সুসজ্জিত প্রধান ফটক, পানির ফোয়ারা ও লেক, ডিসপ্লে ম্যাপ, তথ্য কেন্দ্র, বিশ্রামাগার, ডমিটরি, মিউজিয়াম ও ইকো রিসোর্ট ইত্যাদি। 

একজন দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রবেশের শুরুতেই এই দর্শনীয় স্থানসমূহ বা স্থাপনা গুলো দেখতে পাবেন। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, রোমাঞ্চকর ও লোমহর্ষকর এরিয়া হচ্ছে কোর সাফারি। এই অংশটি ১২১৭ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত হয়েছে। এই অংশে দর্শনার্থীরা পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে পারে না। বিভিন্ন হিংস্র জীবজন্তুদের অবাধ বিচরণের অংশ। 

কোর সাফারি পার্কে ঘুরে বেড়ানোর জন্য দুটি জিপ ও দুটি মিনি বাস রাখা হয়েছে, নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে এই গাড়িতে করেই এই অংশটি আপনাকে ঘুরে বেড়াতে হবে। এককভাবে কোন প্রকার নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের এই অংশে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সম্পুর্নরূপে নিষিদ্ধ। কেননা এই অংশের রয়েছে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, হরিণ, গরাল, হাতি সহ অন্যান্য হিংস্র জীবজন্তু। 

কোর সাফারি পার্কে বিভিন্ন ওয়াজ টাওয়ার এবং কাচের দেওয়ালের বেষ্টনীর মধ্যে একটি রেস্তোরা তৈরি করা হয়েছে যে রেস্তোরায় খাবার টেবিলে বসে খুব সহজে হিংস্র জীবজন্তু বিশেষ করে সিংহ, বাঘ, ভাল্লুক এগুলো দেখা যায়। এটি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের অন্যতম একটি আকর্ষণ। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের এই অংশটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। 

সাফারি কিংডম অংশে বিভিন্ন জীবজন্তু ছোটখাটো খাঁচায় আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীরা পায়ে হেঁটে নিজেদের সুবিধামতো এই এলাকাটি ঘুরে দেখতে পারবেন। সাফারি কিংডম এই অংশটি ৫৫৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। সাফারি কিংডম অংশের রয়েছে দেশ-বিদেশ থেকে আনা বিভিন্ন প্রজাতির হরেক রকমের পাখি, ময়ূর, মাছ সহ অন্যান্য জীবজন্তু। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা এই অংশটি প্রাণ ভরে উপভোগ করে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি জীবজন্তু পশুপাখি ছাড়াও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গাছ-গাছালি রয়েছে যা সাফারি পার্কের সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সম্পর্কে তো জানা হলো এবার আমি আপনাদের জানাবো বাংলা সাহিত্যের কিংবদন তিনি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি বিজড়িত নুহাশ পল্লী সম্পর্কে।

নুহাশ পল্লী।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি বিজড়িত দর্শনীয় একটি স্থান হচ্ছে নুহাশ পল্লী। এটি গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একদিনে ঘুরে আসতে পারেন নুহাশ পল্লী থেকে। গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ নিয়ে আলোচনার এই অংশে আমি আপনাদের সামনে নুহাশ পল্লীর কিছু সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও সৌন্দর্য লেখনির মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব।

হুমায়ূন আহমেদের নুহাশ পল্লী গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার পিরুজ আলী গ্রামে অবস্থিত। একেবারে নিভৃত, শান্ত ও নিস্তব্ধ জঙ্গলের ভিতরে গড়ে তোলা হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য চর্চার এক নৈসর্গিক আবাসস্থল। এখানেই হুমায়ূন আহমেদ বসে বসে তার সাহিত্যচর্চা করতেন। হুমায়ূন আহমেদের লেখা নাটকের চিত্রায়ন হতো এই মহাস পল্লীতে।

হুমায়ূন আহমেদের ছোট ছেলে নুহাশ এর নামে এই পল্লীর নামকরণ করা হয়েছে নুহাশ পল্লী। গাজীপুর জেলা সদর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নুহাশ পল্লী। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার সাহিত্যকর্মে প্রাণ প্রকৃতির যে জীবন্ত চিত্র লেখনির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন তারই প্রতিচ্ছবি আপনি দেখতে পাবেন নুহাশ পল্লীতে। 

কি নেই! নুহাশ পল্লীতে, এখানে রয়েছে প্রায় ২৫০ প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালি, বিশাল সবুজ মাঠ, লীলাবতী দীঘি দিঘী মাঝখানে রয়েছে একটি চন্দ্র দ্বীপ দ্বীপে বেশ কয়েকটি নারিকেল গাছ লাগানো রয়েছে,কৃতিকভাবে তৈরি করা হয়েছে সুইমিংপুল কথিত আছে এখানেই ভারতের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং হুমায়ূন আহমেদ একসঙ্গে সাঁতার কাটতেন।

বৃষ্টির দিনের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বৃষ্টিবিলাস নামে অত্যাধুনিক বাংলো, বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ভাস্কর্য আপনার চোখে পড়বে যা সত্যিই আপনার মনকে পুলকিত করে তুলবে। হুমায়ূন আহমেদের পছন্দনীয় অনেক বিষয়কে তিনি তার নুহাশ পল্লীতে চিত্রায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। এখানে ভূত-বিলাস নামে একটি বাংলো রয়েছে যেটি আগেকার দিনের ভূতের ভয়ংকর কথা আপনাকে মনে করিয়ে দিবে।

প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে গড়া নুহাশ পল্লীর পাশেই রয়েছে তার সমাধি স্থল নুহাশ পল্লীতে প্রবেশের পূর্বেই আপনি তার কবর জিয়ারত করতে পারেন এবং তার বিদেহী আত্মার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে পারেন।

শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি।

গাজীপুর জেলার অন্যতম একটি ঐতিহাসিক প্রাচীনতম নিদর্শন হচ্ছে শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি। কালের সাক্ষী হয়ে আজও ঠাই দাঁড়িয়ে রয়েছে যদিও এর কিছু কিছু অংশ অযত্নে অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। এই জমিদার বাড়ি দুটি অংশে বিভক্ত এক অংশকে বলা হয় বড় তরফ অন্যটি হচ্ছে ছোট তরফ। 

ইতিহাস থেকে জানা যায় বিখ্যাত তালিবাবাদ পরগনার নয় আনা অংশের মালিকানা নিয়ে গঠিত হয় শ্রীফলতলী জমিদারী এই জমিদারির প্রধান কর্ণধার খোদা নেওয়াজ খানের কনিষ্ঠপুত্র রহিম নেওয়াজ খান চৌধুরীর হাত ধরে এই শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন ঘটে। রহিম নেওয়াজ খান চৌধুরী জমিদারির পরিসীমা ছিল ময়মনসিংহ নরসিংদী ও সাটুরিয়া পর্যন্ত। 

জমিদারি পরিচালনায় তিনি তার নিজের কাচারি বাড়ির পাশাপাশি আঁধারিয়া বাড়ির বাগানবাড়িকে অফিস হিসাবে ব্যবহার করতেন। রহিম নেওয়াজ খান চৌধুরী অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর পূর্বে তালিবাবাদ পরগনা সাভার হতে পৃথক হয়ে কালিয়াকৈর নামে নতুন থানার হিসেবে পরিচিত পায়।

বর্তমানে জমিদার বাড়ির দুই তরফের এক তরফে প্রবেশ করতে চাইলে আপনি সহজেই প্রবেশ করতে পারবেন কেননা সেখানে কেউ বসবাস করে না। কিন্তু অন্যতরফে এখনো জমিদারের উত্তরসূরীরা বসবাস করে এই অংশে প্রবেশ করতে চাইলে পরিবারের অনুমতি নিয়ে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে। শুটিং স্পট হিসাবে এই জমিদার বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে।

একডালা দুর্গ।

গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্থান হিসেবে অতি সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত হয়েছে একডালা দুর্গ। যদিও একডালা দুর্গের অবস্থান নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে এক ধরনের বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয়রা এই দুর্গাকে রানীর ভিটা নামে চেনে। কথিত আছে একজন হিন্দু রাজা আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টাব্দে দিকে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। 

একডালা দুর্গটি ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ২ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট অর্ধ গোলাকার। দিল্লির সুলতান ফিরোজ তুঘলকের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার স্বাধীন সুলতান ইলিয়াস শাহ এই দুর্গটি সংস্কার করেন।

১৩৫৩ সালে দিল্লির সুলতান ফিরোজ তুুঘলক বাংলা আক্রমণ করলে ইলিয়াস শাহ এই দুর্গে আশ্রয় নেয়। এই যুদ্ধে দিল্লির সুলতান বাংলার রাজধানী গৌড় জয় করতে পারলেও একডালা দুর্গ জয় করতে পারেনি। বেশ কয়েক মাস অবরুদ্ধ থাকার পর দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় কিন্তু একডালা দুর্গ দখল করতে পারেনি। অবশেষে হতাশ হয়ে ফিরোজ শাহ দিল্লি ফিরে যান।

১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে ইলিয়াস শাহ মৃত্যুবরণ করলে বাংলার সিংহাসনে বসেন সিকান্দার শাহ। ইলিয়াস শাহ এর মৃত্যুর পরেও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন কিন্তু দুঃখের বিষয় এবারও তিনি একডালা দুর্গাকে পরাস্ত করতে পারেনি। এই যুদ্ধের পর তিনি বাংলার স্বাধীনতা মেনে নেন।

পরবর্তীতে আলাউদ্দিন হোসেন সাহেব পুত্র নাসির উদ্দিন শাহ ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই দুর্গটি পুনরায় সংস্কার করেন। মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে একডালা দুর্গের এই অঞ্চলটি ভাওয়াল পরগনার অন্তর্ভুক্ত করলে একডালার দুর্গটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। রায়েদ ইউনিয়নের কালি বানার নদীর তীরে অবস্থিত দরদরিয়া দুর্গটি একডালা দুর্গের শাখা দুর্ভোগ হিসাবে ব্যবহৃত হত।

পরিবার পরিজন অথবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় অবস্থিত অপ্রতিরোধ্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা একডালা দুর্গ। এটি এমন একটি দুর্গ যে দুর্গ দিল্লির সুলতানরা কোন যুদ্ধে জয় করতে পারে না এক কথায় অজয় একটি দুর্গ হচ্ছে একডালা দুর্গ। আপনি একা অথবা বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে একডালা দুর্গ দেখতে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন মনের মধ্যে প্রশ্ন আসছে কিভাবে যাবেন তাহলে নিচের অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

লেখক এর মন্তব্যঃ

গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো আপনাদের মাঝে জানানোর আগ্রহ থেকেই আজকের এই পোস্টটি লেখা আমার মূল উদ্দেশ্য। গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো এই অল্প সময়ের সম্পর্ক নয় সংক্ষিপ্ত আকারে শুধুমাত্র স্থানগুলোর পরিচয়মূলক কিছু আলোচনা আপনাদের মাঝে করলাম আজকের এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। এরপর বাংলাদেশের অন্য কোন জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে হাজির হব সেই পর্যন্ত আল্লাহ হাফেজ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url