পুরান ঢাকার ঐতিহ্য আহসান মঞ্জিল কে নির্মাণ করেন
পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী নবাব ভবন আহসান মঞ্জিল নাম আপনারা অনেকেই শুনেছেন কিন্তু এটি কে নির্মাণ করেছেন এবং এটি কোথায় অবস্থিত এ সম্পর্কে আপনাদের হয়তো জানা নেই। যদি তাই হয় তাহলে চলুন আহসান মঞ্জিল কে নির্মাণ করেন এবং এটি কোথায় অবস্থিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা আরো জানতে পারবেন অনলাইনে কিভাবে আহসান মঞ্জিলের প্রবেশ টিকেট কাটতে হয়? আহসান মঞ্জিলে কিভাবে যাবেন? টিকিটের মূল্য কত? তাহলে আর দেরি নয় চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আহসান মঞ্জিল এর ইতিহাস।
ঢাকা তথা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আহসান মঞ্জিল। প্রতিদিন দেশ ও দেশের বাইরে থেকে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থী আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস ও বর্তমান সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভ্রমণ করে থাকে। বর্তমানে এই ভবনটি একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
বর্তমান আহসান মঞ্জিল এক সময় ঢাকা শহরের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ভুবন ছিল। তৎকালীন সময়ে আহসান মঞ্জিলের ছিল ঢাকা শহরের সবচেয়ে উচু ভবন। আহসান মঞ্জিল এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে কয়েকশো বছরের পুরনো ইতিহাস। আহসান মঞ্জিল নির্মাণ করেছিলেন ঢাকা, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের জমিদার শেখ এনায়েত উল্লাহ।
আরো পড়ুনঃ শায়েস্তা খানের লালবাগ কেল্লা কোথায় অবস্থিত
শেখ এনায়েতুল্লাহর মৃত্যুর পর তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ এই ভবনটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। ফরাসি বণিকরা আহসান মঞ্জিল টিকে বাণিজ্য কুঠির হিসাবে ব্যবহার করত। ১৮৩৫ সালের নবাব আব্দুল গণির পিতা খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসিদের কাছ থেকে এই ভবনটি কিনে নেন।
খাজা আলিমুল্লাহ ভবনের আমূল পরিবর্তন করে পূর্ণনির্মাণ করেন এবং নবাব বাড়ি হিসেবে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। তার মৃত্যুর পর পুত্র নবাব আব্দুল গনি ১৮৭২ সালে প্রাসাদের পূর্ণ নির্মাণ করেন এবং বর্তমান যে স্থাপত্য শৈলী আমরা দেখতে পাই সেই রূপ দেন। নবাব আব্দুল গনির প্রাণপ্রিয় পুত্র আহসানুল্লাহ নামানুসারে তিনি এই প্রাসাদের নাম রাখেন আহসান মঞ্জিল।
আহসান মঞ্জিল এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে লর্ড কার্জন যখন ঢাকায় আসতেন তখন এখানেই অবকাশ যাপন করতেন। আপনি জেনে আরও অবাক হবেন ঢাকায় সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিকবাতি এই আহসান মঞ্জিলেই জ্বলেছিল। ১৯০৬ সালে আহসান মঞ্জিলেই মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আহসান মঞ্জিল এর নির্মাণ শৈলী।
আহসান মঞ্জিলের নির্মাণশৈলী দেখে যে কোন পর্যটক বিমোহিত হবে। আহসান মঞ্জিল এর সামনের মূল ফটোকে সুদীর্ঘ একটি সিঁড়ি রয়েছে যা আহসান মঞ্জিল এর সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ১ মিটার উঁচু বেদির উপর নির্মিত মূল ভবনের আয়তন দৈর্ঘ্য ১২৫.৪ এবং প্রস্থ ২৮.৭৫ মিটার।
আহসান মঞ্জিলের ঘর গুলো আটকনা বিশিষ্ট। রাজবাড়ীর ছাদ কাঠের তৈরি। খাবার ঘর, লাইব্রেরি, জলসাঘর, দরবার হল, খেলার জায়গা, প্রাসাদের দোতালায় আছে অতিথিদের থাকার কক্ষ, বৈঠকখানা, নাচঘর, গ্রন্থাগার ও বসবাসের কক্ষ এই নবাববাড়ির ভেতর অংশে।
আরো পড়ুনঃ ঘুরে আসুন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
তৎকালীন ঢাকায় আহসান মঞ্জিল এর মত সুন্দর জমকালো ভবনা আর কোনোটি ছিল না। আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত পূর্ব দিকের অংশটি দরবার বা রঙ্গমহল এবং পশ্চিম দিকের অংশটি ছিল অন্দরমহল। দুটি অংশের সংযোগ করা হয়েছে দোতালায়। দক্ষিণ পাশে রয়েছে খোলা চত্বর তারপরেই বুড়িগঙ্গা নদী।
আহসান মঞ্জিল এর দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ পাশে একটি বারান্দা রয়েছে এই বারান্দায় বসে নবাব বুড়িগঙ্গার বুকে পাল তুলে বয়ে যাওয়া নৌকার দৃশ্য উপভোগ করতেন। জমিদার ও নবাবদের ব্যবহৃত বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন যেমন হাতির দাঁত, মাথার বিরাট কঙ্কাল, কাঠ ও শ্বেত পাথরের গোলটেবিল, প্রাচীন মুদ্রা, কারুকার্য খচিত কাঠের পাটিসন, নবাবদের ব্যবহার তৈজস্বপত্র ইত্যাদি রাখা হয়েছে। ভ্রমণ পিপাসু দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আহসান মঞ্জিলের ইতিহাসের স্বাদ গ্রহণের জন্য।
আহসান মঞ্জিল এর বাহিরের সৌন্দর্য।
আহসান মঞ্জিলের বাইরের সৌন্দর্য দেখে যে কেউই অভিভূত হয়ে যাবে। রাজবাড়ির ঠিক সামনে আছে বিশাল ফুলের বাগান ও সবুজ মাঠ। আহসান মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলা থেকে একটি সিঁড়ি সবুজ মাঠ বেয়ে নিচে নেমে এসেছে একেবারে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর পর্যন্ত। নবাব ও জমিদাররা আহসান মঞ্জিলের দোতলায় বসে বুড়িগঙ্গার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতো।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের ইতিহাস।
১৯৫০ সালের জমিদারি প্রথা বাতিল আইনের ফলে এই উপমহাদেশের জমিদারদের অবস্থা ধীরে ধীরে শোচনীয় হতে থাকে। অর্থবিত্ত, প্রভাব, প্রতিপত্তি ও ঐশ্বর্য কি ছিল না! জমিদারদের। শুধুমাত্র এই আইনের ফলে জমিদাররা সাধারণ প্রজায় পরিণত হয়ে যায়। অনেক জমিদাররা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে।
আরো পড়ুনঃবঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অযত্ন ও অপব্যবহারের কারণে আহসান মঞ্জিল ধ্বংস ও মৃত প্রায় অবস্থায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। ১৯৭৪ সালের আহসান মঞ্জিলের উত্তরশুরিরা এটিকে নিলামে বিক্রির পরিকল্পনা করেন কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্য সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালে এটি নিলামে বিক্রির প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে মার্চ মাসের দিকে আহসান মঞ্জিল এর সংস্কার সৌন্দর্য বর্ধন ও জাদুঘরের রূপান্তরের কাজ শুরু হয়। এরপর ১৯৯২ সালের আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
আহসান মঞ্জিল কোথায় অবস্থিত।
আহসান মঞ্জিল নামটি বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরে কুমারটুলি এলাকার বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। এটি ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আহসান মঞ্জিল কে নির্মাণ করেন।
আহসান মঞ্জিল প্রথম নির্মাণ করেছিলেন শেখ এনায়েত উল্লাহ নামের এক জমিদার। শেখ এনায়েতুল্লাহর মৃত্যুর পর তার ছেলে মতিউল্লাহ এটি ফরাসি দের কাছে বিক্রি করে দেন। পরবর্তীতে ১৮৩৫ সালে খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসি বণিকদের কাছ থেকে এটি কিনে নেন এবং ভবনের আমূল পরিবর্তন করেন।
আরো পড়ুনঃ ফ্যান্টাসি কিংডম টিকেটের মূল্য ২০২৪
নবাব খাজা আলিমুল্লাহ মৃত্যুর পর তার পুত্র নবাব আব্দুল গনি ১৮৭২ সালে এই ভবনটি পূর্ণ নির্মাণ করেন এবং তার পুত্র আহসানুল্লার নামানুসারে এই ভবনের নাম রাখেন আহসান মঞ্জিল।
আহসান মঞ্জিল কবে বন্ধ থাকে।
প্রাচীন আহসান মঞ্জিল বর্তমানে একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। সপ্তাহের ৬ দিন সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত থাকে। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে আহসান মঞ্জিল সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকে। ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে আহসান মঞ্জিলের খোলা ও বন্ধের সময়সূচী নিচে তুলে ধরা হলো।
শুক্রবার বিকেল ৩.০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.০০ টা পর্যন্ত। এবং
শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০ঃ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত এটি সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
আহসান মঞ্জিল এর টিকিট কত টাকা।
আপনি যদি আহসান মঞ্জিল এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে অনলাইনে টিকিট ক্রয় করতে হবে। আপনি সরাসরি আহসান মঞ্জিলে গিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন না। আহসান মঞ্জিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি অনলাইনে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। অনলাইনে টিকিট ক্রয় করার জন্য প্রথমে আপনাকে ওয়েব সাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পূর্ব থেকে যোগাযোগ বা আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে প্রবেশের সুবিধা রয়েছে।
আহসান মঞ্জিলে কিভাবে যাবেন?
আপনি বাংলাদেশের যেকোনো জেলা থেকে বাস, ট্রেন অথবা বিমানযোগে প্রথমে ঢাকায় আসতে হবে।
বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা।
আপনি যদি রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের উত্তরাংশের জেলাগুলো থেকে আহসান মঞ্জিলে আসতে চান তাহলে গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড হয়ে আপনাকে গুলিস্তান আসতে হবে। তারপর সেখান থেকে রিকশাযোগে আহসান মঞ্জিলে আসতে পারবেন।
সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের দক্ষিণাঞ্চের জেলাগুলো থেকে আপনি যদি বাসযোগে আহসান মঞ্জিল ভ্রমণ করতে চান তাহলে আপনাকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে নেমে গুলিস্তান হয়ে আহসান মঞ্জিলে আসতে হবে।
ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা।
প্রিয় পাঠক আপনি যদি ট্রেন যোগে আহসান মঞ্জিল ভ্রমনে আসতে চান তাহলে বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে ট্রেনে করে প্রথমে আপনাকে কমলাপুর স্টেশনে আসতে হবে। এরপর সেখান থেকে বাসযোগে গুলিস্থানে আসতে হবে। তারপর গুলিস্তান থেকে রিকশাযোগে আহসান মঞ্জিলে আসতে পারবেন।
শেষ কথাঃ
আপনি যদি একজন ভ্রমণপিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে আজই ঘুরে আসুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিল।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url