বঙ্গবন্ধু রেল সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প হচ্ছে যমুনা নদীর উপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। দেশি-বিদেশি প্রায় ৭ হাজার নির্মাণ কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমে যমুনা নদীর বুক চিরে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে সেতু বঙ্গবন্ধু রেল সেতু।
বঙ্গবন্ধু রেল সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
আজকের আর্টিকেলে আমি এই সেতুর বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আপনাদের জানাবো। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন এতে করে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ভূমিকাঃ

যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী মাধ্যম হিসেবে ‘ট্রেন’ যাত্রীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। পরিবহন ক্ষেত্রে ট্রেন বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি মাধ্যম হিসেবে সবার কাছে অতি পরিচিত হলেও দুর্ভাগ্যের বিষয় বিভিন্ন সময় সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ট্রেন অনেক পিছিয়ে পড়ে। 

কিন্তু আশার খবর হচ্ছে গত প্রায় এক দশকে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের মানুষের সরাসরি ট্রেন যোগাযোগের সূচনা হয় বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধনের পর।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর পাশ দিয়ে আলাদা রেলসংযোগ দেয়া হয় এই সেতুর উপরে ট্রেন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে পাড়ি দিতে পারেন। আবার ট্রেনে বেশি বগি সংযুক্ত করারও সুযোগ নেই আছে এক লাইনের সীমাবদ্ধতা। এর ফলে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় সহ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর সেতু দিয়ে দিনে ৪৪ টি ট্রেন চলাচল করে।

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর পরিচিতি।

বঙ্গবন্ধুর রেল সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে সেতুর। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার। সেতুটি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে নির্মিত। সম্পূর্ণ সেতুটি কংক্রিটের পিলারের উপর ইস্পাত দ্বারা নির্মিত। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু বা যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে বঙ্গবন্ধু নির্মিত হচ্ছে। এই সেতুর পূর্ব পাশে রয়েছে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলা এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা।

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে অর্থায়ন।

রাজধানী ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে বিশেষ করে বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতু ৩০০ মিটার উত্তরে ট্রেন চলাচলের জন্য আলাদা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর সেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক।
বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে অর্থায়ন করছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। এই প্রকল্পের প্রায় ৭২ শতাংশ নির্মাণ ব্যয় জাইকা ঋণ সহায়তা দেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতুটির ভিত্তি স্থাপন করা হয়। ২০২৩ সালের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হলেও সংশোধনীতে প্রকল্পের সময়সীমা ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে ট্রেন চলাচল।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণের আরেকটি অধ্যায় প্রায় শেষের পথে আর এটি হচ্ছে যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। সেতুটি কাজ পুরোপুরি শেষ হলে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রেন ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। এতে করে মানুষের চলাচলের সুবিধা হবে এবং ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় দূর হবে। 
আত্মঃদেশীয় ট্রেনগুলো যাত্রী সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৪ টি ট্রেন চলাচল করতে পারে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রেলওয়ে সেতু দিয়ে প্রতিদিন পায় ৮৮ টি টেন চলাচল করবে।

বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এই পরিকল্পনার আওতাধীন রয়েছে উত্তরের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগের সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ চালু করা। 
এছাড়া জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের বেশ কিছু কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সরকারের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব সূচিত হবে।

বঙ্গবন্ধু রেল সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগের দার উন্মোচিত হবে যদিও বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ট্রেন চলাচল করছে।

বঙ্গবন্ধু রেল সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর উদ্বোধন করেন কে ও কত তারিখে?
উত্তরঃবঙ্গবন্ধু রেল সেতু উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের ২৯ শে নভেম্বর এই সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু কোনটি?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু (নির্মাণাধীন)

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য কত?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু কোন দুই জেলাকে যুক্ত করেছে?
উত্তরঃ সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু কোন নদীর উপরে তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরঃ যমুনা নদী।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ ব্যয় কত?
উত্তরঃ ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করছে কোন সংস্থা?
উত্তরঃ জাপানি দাতা সংস্থার জাইকা।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কে?
উত্তরঃ বাংলাদেশ রেলওয়ে।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ করছে কোন প্রতিষ্ঠান?
উত্তরঃ জাপানি প্রতিষ্ঠান।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু সেতু কি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে?
উত্তরঃইস্পাত ও কনক্রিট

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুতে কয়টি রেলপথ রয়েছে?
উত্তরঃ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক রেলপথ।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুতে কত কিলো গতিতে ট্রেন চলতে পারবে?
উত্তরঃ ব্রডগেস্ট ট্রেন ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেস্ট ট্রেন ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়।

লেখকের মন্তব্যঃ

বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নিয়ে আর্টিকেল লিখতে গিয়ে আমি যে সকল তথ্য ব্যবহার করেছি সেগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া হয়েছে। আজকের এই পোস্টে উদ্ধৃত তথ্য সম্পর্কে কোন প্রকার দ্বিমত থাকলে তা কমেন্ট বক্সে জানাবেন। 

আশা করি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা খুবই উপকৃত হয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর সম্পর্কিত যে সকল প্রশ্ন করা হয় এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলোর এখানে সমাধান দেয়া হয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url