রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের অধ্যায়

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের যত রকমের অবকাঠামগত উন্নয়ন হয়েছে তার মধ্যে বিস্ময়কর একটি উন্নয়ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পাবনা। আপনারা যারা রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আদ্যপ্রান্ত জানতে চান তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি হতে পারে অত্যন্ত তথ্য নির্ভর।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের অধ্যায় | সাধারণ জ্ঞান
আপনার যদি রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কেননা আজকের এই আর্টিকেলে আমি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার।

পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর পূর্বে পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রায় বিশ্বের ৩০ টির ও বেশি দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। 

শুধু তাই নয় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন করছে। আরো বেশ কয়েকটি দেশ এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভারত, জাপান, চীন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এই দেশগুলো পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুতের উৎপাদন করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক প্রযুক্তির আর্থিক, কারিগরি ও পরিবেশগত সুবিধাদির বিষয়টি বিবেচনায় এ প্রযুক্তি ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা আজ সর্বজন বিদিত। 
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এই বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে যে তাদের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।

বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংক্ষিপ্ত চিত্র।

বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৩০ টি দেশের ৪৪৯ টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ মোট উৎপাদনকৃত বিদ্যুতের প্রায় ১২% । সারা বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাকে গতিশীল করেছে এর ফলে আরও ১৪ টি দেশে ৬৫টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ২৭ টি দেশে ১৭৩ টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বর্তমানে ২১ টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি চালু রয়েছে। আরও ৬ টি নির্মাণাধীন রয়েছে এবং ২৪ টি পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী দেশ চীনে বর্তমানে ৩০ টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ চালু রয়েছে এছাড়া আরও ২৪ টি নির্মাণাধীন রয়েছে। 
দক্ষিণ কোরিয়া পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্ব ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে। এই দেশে ২৫ টি পারমাণবিক চুল্লি চালু রয়েছে এবং আরো ৩ টি নির্মাণাধীন রয়েছে। পরিবেশগত ঝুঁকি তুলনামূলক কোন থাকার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। 

এর মধ্যে অন্যতম দেশ হলো ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরার, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ বিশেষ করে তুরস্ক, পোল্যান্ড, বেলারুশ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ যেমন নাইজেরিয়া ও কেনিয়া এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা জানান দিচ্ছে।

বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ইতিহাস।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১৯৬১ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাবনা জেলার রূপপুরে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের অনেকগুলো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর তৎকালীন সরকার কর্তৃক ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ সালের প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়া সত্বেও অনিবার্য কারণবশত এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত আরেক দফা সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় এবং একনেক কর্তৃক ১২৫ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন এবং যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য জার্মানি থেকে প্রস্তাব করা হয়। 
১৯৮৭-৮৮ সালে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড এর উদ্যোগে আরেক দফা সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করা হয়। বেশ কয়েক দফা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের শেষের দিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রাক প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এর কাজ আর বেশি দূর আগায়নি। 

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার সভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।যাহোক আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ এর সুপারিশ মোতাবেক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। 

২০০৯ সালের বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়ান সরকারের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১১ সালে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি পারমাণবিক ইউনিট স্থাপন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে নির্মাণকার্যদি সম্পাদনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন কাজে অগ্রাধিকার ভিত্তিক যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে তার মধ্যে অন্যতম হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ। দেশের ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক চাহিদা পূরণের জন্য এই প্রকল্পটি সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করছে। বিদেশি অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। 

২০১৩ সালের ২ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর নামক স্থানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং ২০২৪ সাল নাগাদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হয় এবং ঐ একই বছর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারবে এমনটাই নির্ধারণ করা হয়।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার তৎকালীন মহাপরিচালক ২০১৭ সালের ৩ জুলাই রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এই সময় তিনি এ কেন্দ্র স্থাপনে সকল কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে সম্পন্ন করার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পেন্ট ফুয়েল রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও রাশিয়া সরকারের সাথে ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক নম্বর ইউনিটের কংক্রিটের ঢালাই এর কাজের উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয় এবং আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে বলে আশা করা হয়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ কত বছর।

সম্পূর্ণ রাশিয়ার কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের জেলা পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা রূপপুর গ্রামে পদ্মা নদীর তীরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা চুল্লি নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে সকল বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প। 
সরকারের মতে এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব এবং আর্থিকভাবে খুবই লাভজনক। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প নির্মাণ করছে রাশিয়ার রসাটমের এটোমস্টো্রয় একপোট নামক সংস্থা। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পর এর স্থায়িত্ব হবে ১০০ বছর। দেশের প্রায় ১৮ লাখ পরিবার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা লাভ করবে এবং আড়াই হাজার দক্ষ জনবলের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কত মেগাওয়াট।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হিসাবে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও তেলের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা মজুদ রয়েছে সীমিত পরিমাণে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্য একটি কাঁচামাল তেল পুরোপুরি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন তুলনামূলক কম ও খরচ বেশি হয়। 

প্রাকৃতিক গ্যাসের বিরাট অংশ শিল্প কলকারখানা বাসা বাড়ি ও অন্যান্য কাজের ব্যবহার করতে হচ্ছে এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয় ফলে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুতের চাহিদা কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশে প্রথম পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা বিবেচনা করতে হয় তারই ধারাবাহিকতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। 

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি কি?

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি তেল, গ্যাস, কয়লার মত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কিছুটা আলাদা। এটি মূলত ইউরেনিয়ার-২৩৫ এর সমৃদ্ধ ধাতব পদার্থ। খুনির আকরিক থেকে নানান প্রক্রিয়া করে তৈরি করা হয় ইউরেনিয়ামের এই জ্বালানি। পারমাণবিক জ্বালানি শক্তির মূল উপাদান হলো এই ক্ষুদ্র আকৃতির ইউরেনিয়াম পেলেট। 

গ্যাস, কয়লা বা তেল যেভাবে পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় নিউক্লিয়ার ফুয়েল পুরানো হয় পারমাণবিক চুল্লিতে ফিশান বিক্রিয়ার মাধ্যমে যেখানে ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস বিভাজন ঘটে। এর ফলে প্রচুর তাপ শক্তি উৎপন্ন হয় এই তাপ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে। 

পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত জ্বালানি থেকে আবার ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি পাওয়া যায় এই কারণে অনেকে এই জ্বালানিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বলে। তেল, গ্যাস বা কয়লার মত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্লাস নির্গমনের সুযোগ নেই। এটিকে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং নির্মল বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তি বলা হয়। 

তবে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার ঘটলে এর থেকে যে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে সেটি প্রাণ প্রকৃতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ এর তেজস্ক্রিয়তা বছরের পর বছর ধরে ক্রিয়াশীল থাকে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাধারণ জ্ঞান।

প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীর বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তাদের জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে কিছু সাধারণ জ্ঞান নিচে দেয়া হলো। এছাড়া আজকের এই পোস্টটি যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান জানতে পারবেন।
  • রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে অবস্থিত।
  • রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত।
  • রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দুটি ইউনিট তৈরি করা হচ্ছে।
  • পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সকল দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বাংলাদেশ তার ৩৩ তম সদস্য রাষ্ট্র।
  • পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাশিয়া ও ভারত বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে।
  • পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে ২৪০০ মেগাওয়াট বা ২.৪ গিগা ওয়াড বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন।
  • রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণের প্রাথমিক বাজেট ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা।
  • রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি হচ্ছে ইউরেনিয়াম- ২৩৫।
  • রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহকারী একমাত্র দেশ রাশিয়া।
  • রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লি নির্মাণের মডেল হচ্ছে ভিভিআর ১২০০।
  • রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
  • পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম হচ্ছে আই এ ই এ।
  • রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
  • পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ১৯৬১ সালে।

শেষ কথাঃ

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে আর্টিকেল লিখতে গিয়ে আমি উইকিপিডিয়া, বিবিসি এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছি। তারপরও যদি আজকের এই আর্টিকেলে কোন তথ্যের ভুল বা গরমিল থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জানার এবং জ্ঞান অর্জনের অন্যতম উৎস হবে বলে আশা করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url