চিরতরে খুশকি দূর করার বেশ কিছু উপায় জানুন

খুশকি আমাদের শরীরের একটি অন্যতম সমস্যা। সাধারণত মাথায় হালকা অংশের মতো মরা চামড়া উঠাকে খুশকি বলা হয়। এই সমস্যার কারণে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে অনেককে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। খুশকি রোধ করার জন্য আমরা অনেকেই অনেক ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকি।
চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়
শ্যাম্পু ব্যবহার না করে কিভাবে চিরতরে খুশকি দূর করা যায় সে উপায় আজকের এই আলোচনায় আপনারা জানতে পারবেন। চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় জানার পাশাপাশি আপনারা আরো জানতে পারবেন খুশকি কেন হয়? এবং খুশকি দূর করার কয়েকটি সম্পন্ন শ্যাম্পুর নাম।

চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়।

মানুষের মাথার ত্বকের এক ধরনের ফাঙ্গাস এর কারণে খুশকি হয়ে থাকে। প্রাত্যহিক জীবনের অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা ও ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে অনেক সময় আমাদের মাথার চুলে খুশির পরিমাণ বেড়ে যায়। বিভিন্ন কারণে মাথার স্কাল্পে খুশকি হতেই পারে। 
এটা নিয়ে অনেক সুন্দর্য পিপাসু ছেলে মেয়ের মধ্যে এক ধরনের দুশ্চিন্তার করতে দেখা যায়। তাদের দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য আলোচনার এই অংশে আমি জানাবো কিভাবে চিরতরে খুশকি দূর করা যায়।

নারিকেল তেলঃ

চুলের যত্নে নারিকেল তেলের ব্যবহার অতি পুরনো। গ্রাম থেকে শহর সব জায়গার মানুষ চুলের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহার করে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কেমিক্যাল ও সুগন্ধি যুক্ত নারিকেল তেল পাওয়া যায়। নারিকেল তেলের ব্যবহার যে খুশকি দূরীকরণের একটি অন্যতম ঘরোয়া উপায় এটি অনেকেই হয়তোবা জানেন না। 
নারিকেল তেল গরম করে নিন তবে খুব বেশি গরম করার দরকার নেই। তেল গরম করার পর কিছুক্ষণ রেখে দিন। হালকা গরম অবস্থায় এলে আঙ্গুলের সাহায্যে ভালোভাবে মাথার ত্বকে মাসাজ করুন। পুরো ত্বকে ব্যবহার করুন ২০ মিনিট ধরে। এরপর পুরো চুলে ও তেল লাগিয়ে নিন। এভাবে রেখে দিন প্রায় ১ ঘন্টার মত। এরপর শ্যাম্পু করে নিন এতে চুল ঝলমলে ও সুন্দর হবে খুশকি ও দূর হবে।

জোজবা ওয়েলঃ

নারিকেল তেল চুলের যত্নে খুবই উপকারী এ কথা সবারই জানা। জোজবা ওয়েল কিন্তু কম উপকারী নয়। খুশকি দূর করার জন্য এই ২ রকমের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে লাগিয়ে নিন। তারপর গরম তোয়ালা দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন আধা ঘন্টার মত রেখে শ্যাম্পু করে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশি খুব সহজেই দূর হবে।

পেঁয়াজের রসঃ

পেঁয়াজের রস খুশকি দূর করার একটি বড় ঘরোয়া উপাদান। ঘরে থাকা একটি পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে নিয়ে এর সঙ্গে প্রয়োজনমতো পানি মিশিয়ে আঙ্গুলের সাহায্যে মাথার ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এরপর আধা ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন সপ্তাহে ২ বার এই পিয়াজ রস ব্যবহার করলে আপনার খুশির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

টক দইঃ

আপনার চুলের খুশকি দূর করতে টক দই ব্যবহার করতে পারেন। টক দই মাথাই মেসেজ করে কমপক্ষে ২০ মিনিট রেখে দিন এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

লেবুর রসঃ

২ টেবিল চামচ লেবুর রস সামান্য প্রাণীর সঙ্গে মিশে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ব্যবহার করুন। ১০ মিনিট পর চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এভাবে ২ বার লেবু রস ব্যবহার করতে পারেন। তবে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা এটি ব্যবহারের সাবধানতা অবলম্বন করবেন ।
নারিকেল তেল ও লেবুর রস এর মিশ্রণ চুলের খুশকি দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল ও সমপরিমাণ লেবু রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করে এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন এভাবে সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করলে আপনার চুলের খুশকি দূর হয়ে যাবে।

রিঠার ব্যবহারঃ

চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় ও খুশকি দূরীকরণে রিঠা এর ব্যবহার অত্যন্ত উপকারী। রিঠা পাউডার বা বা সিদ্ধ জল চুলের ত্বকে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক রেখে ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ২বার রিঠা মাথায় মাখলে খুশকি দ্রুত দূর হবে।

নিমঃ

নিম গাছের ডাল, পাতা ও ফুল সবই মানব দেহের জন্য উপকারী। নিম একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ। চুলের খুশকি দূরকরণে নিমের ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। নিমের পাতা বেটে আপনার চুলের ত্বকের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার চুল হবে উজ্জ্বল ও খুশকি মুক্ত।

মেথিঃ

চুলের যত্নে ও খুশকি দূরীকরণে মেথির ব্যবহার অতি প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সারারাত মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পানি থেকে মেথি আলাদা করে নিয়ে তা বেটে নিন এবার বেটে নেয়া মেথি চুলের গোড়ায় মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১ ঘন্টা রেখে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার পর মেথি ভিজিয়ে রাখা জল দিয়ে আরো একবার চুল ধুয়ে নিন। 

এভাবে সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্যবহার করতে পারলে আপনার চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে ও খুশকি দূর হয়ে যাবে। মেথির সঙ্গে অন্যান্য উপাদান যেমন লেবুর রস ও নারিকেল তেল দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে নিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন এটি একটি চুলের খুশকি দূর করনের দারুন ঘরোয়া উপায়।

অ্যালোভেরাঃ

এলোভেরা আরেকটি ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি ভেষজ উদ্ভিদ। চুলের খুশকির সমস্যা দূর করনের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার রয়েছে দারুন ক্ষমতা। অ্যালোভেরা চুলে মেখে আধা ঘন্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন এতে আপনার চুল হবে সিল্কি ও খুশকি মুক্ত। আপনি চাইলে অ্যালোভেরার সঙ্গে নিমপাতা ও আমলকি বেটে একটি মিশ্রণ তৈরি করে চুলে ব্যবহার করুন।

জবা ফুলঃ

চুলের পরিচর্যায় জবা ফুলের ব্যবহার অনেকেই করে থাকেন। নারিকেল তেলের সঙ্গে জবাব ফুল ফুটিয়ে নিন এবার ঐ তেল চুল ও চুলের ত্বকে মালিশ করুন এতে খুশকির সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাবে এর পাশাপাশি চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে।

আপেল সাইডার ভিনেগারঃ

আপেল সাইডার ভিনেগারও খুশকি নিরাময় করতে বেশ কাজ করে কিন্তু এটিও সরাসরি ব্যবহার করবেন না এতে স্কাল্প ও চুলের ক্ষতি হতে পারে। আধা কাপ আপেল সাইডার ভিনেগার নেন এর সঙ্গে আধ কাপ পানি নেন দুটি ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। 

এবার সেই মিশ্রণ স্কাল্পে ভালো করে লাগিয়ে নিন। এবার কিছুক্ষণ মেসেজ করুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করেন। এটা লাগিয়ে বেশিক্ষণ রাখবেন না চুলের ক্ষতি হতে পারে। এবার শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

চুল বেশি সময় ভিজে না রাখাঃ

মেয়েদের বিশেষ করে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। গোসলের পর যত দ্রুত সম্ভব চুল শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে ধীরে ধীরে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আছড়ে নিতে হবে। শীতকালে যেহেতু সূর্যের আলোতে চুল শুকানোর তেমন একটা ভালো পরিবেশ থাকে না তাই শীতকালে চুলে খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়।
এছাড়া দিনের বেলার বাহিরে বের হওয়ার সময় মেয়েরা মাথায় স্কার্ফ এবং ছেলেরা মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে বাহিরের ধুলাবালি মাথায় চুলের গোড়ায় প্রবেশ করতে পারবে নাঅ মাথা পরিষ্কার থাকবে এবং খুশকি তেমন একটা হবে না।

খুশকি কেন হয়?

বিভিন্ন কারণে আমাদের মাথার ত্বকে অথবা চুলে খুশকি হতে পারে। নিচে খুশকি হওয়ার কিছু কমন কারণ তুলে ধরলাম যা পড়লে সহজেই বুঝতে পারবেন ঠিক কি কারনে আমাদের মাথায় খুশকি হয়ে থাকে। যেমন-
  • চুলে খুশকি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এক ধরনের ফাঙ্গাস। আমাদের সকলের মাথার স্কাল্পেই ম্যালেসেজিয়া ফাঙ্গাস নিয়মিত পরিমাণের থাকে। এই ফাঙ্গাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাথার ত্বকে খুশির সমস্যা বেড়ে যায়।
  • অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীত ঋতুতে মাথায় খুশকির প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। শীতের সময় আবহাওয়া আদ্রতা কমে যাওয়ার ফলে দেহের পাশাপাশি মাথার ত্বকও শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে খুশকি বেশি হয়।
  • প্রয়োজনের তুলনায় মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করলে চুলের গোড়ায় তেলের এক ধরনের স্তর পড়ে যায়। যাতে পরবর্তীতে ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব ঘটে এর ফলে মাথায় খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • মাথার চুল নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে চুলের খুশকি পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ভালো মানের শ্যাম্পু তুলে ব্যবহার করলে চুলে খুশকির পরিমাণ কমে আসবে। আবার অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে মাথার চর্ম রোগের সমস্যা হতে পারে সেখান থেকেও খুশকির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
  • সঠিক খাদ্যাভাসের অভাব খুশকি উন্নতম কারণ। যদি গৃহীত খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি ও জিংক না থাকে তাহলে খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া অধিক পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলেও খুশি হতে পারে।
  • গোসলের পানিতে যদি ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ত্বক তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায় এর ফলে খুশকি বেশি হতে পারে।
  • যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মাথায় খুশকির প্রবণতা ও বেশি দেখা যায়। ডায়াবেটিস, এইডস, হৃদরোগ ইত্যাদি রোগের কারণে মাথায় খুশকি বেশি হয়।
নিয়মিত চুলের যত্ন নেওয়া ও শ্যাম্পু ব্যবহারের পরেও যদি আপনার মাথার খুশকির প্রবণতা কমে না আসে সে ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরী। কেননা আপনি যেটাকে শুধুমাত্র খুশকি বলে নমনীয় ভাব দেখাচ্ছেন সেটা কোন না কোন রোগের উপসর্গ হতে পারে। তাই বিলম্ব না করে যথা সময়ে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

খুশকি দূর করার শ্যাম্পু।

চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও খুশকি দূর করার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার হয়ে আসছে। যারা সারা বছর খুশকির বিরম্বনা ভোগেন তাদের জন্য নিচে কয়েকটি ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুর নাম তুলে ধরলাম এতে করে আপনারা উপকৃত হবেন।
  • Select Plus ( সিলেক্ট প্লাস )
  • Head & Shoulders ( হেড এন্ড সোলডার )
  • Nizoral A-D ( নিজরাল এ-ডি ) anti-dandruff Shampoo 1%
  • Clear ক্লিয়ার
  • Odessy (ওডিসি ) anti-dandruff Shampoo With Conditioner
  • Ketozol ( কিটোজল ) anti-dandruff Shampoo
  • Clopirox ( ক্লপিরক্স )
  • Dxn Ganizhi Shampoo
  • Dancel ( ড্যানসেল )
  • Kesh Kanti ( কেশ কান্তি )

শেষ কথাঃ

আমাদের মাথার স্কাল্পের খুশকি বা চুলের খুশকি যতটা না আমাদের শারীরিক ক্ষতি সাধন করে এর চেয়ে বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলায়। সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সময় যদি মাথার খুশকি এসে আমাদের ঘাড়ের অথবা দেহের অন্যান্য অংশে পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে এটা খুবই অপমানজনক ও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়। এই ধরনের সামাজিক সমস্যা থেকে রেহাই পেতে গেলে অবশ্যই উপরে দেখানো পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে আপনার চুলের খুশকি সহজেই দূর করে নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url