মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের মূল্য ও সময়সূচী জানুন
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত একটি ট্রেন হচ্ছে মিতালী এক্সপ্রেস। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের মধ্যে চলাচল করে। বাংলাদেশ এবং ভারতের উভয় দেশের যারা এই ট্রেন যোগে ভ্রমণে আগ্রহী তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই আর্টিকেলে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের আদ্যপ্রান্ত তুলে ধরব।তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচয়, টিকেট কাটার স্থান, টিকেটের মূল্য, ট্রেনের চলাচলের সময়সূচী, মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহ বিস্তারিত বিবরণ জানতে পারবেন।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের বিবরণ।
ভারত বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী তৃতীয় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন যাত্রীবাহী ট্রেনের নাম হচ্ছে মিতালী এক্সপ্রেস। ব্রিটিশভারতে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পরেও 1965 সালের আগ পর্যন্ত চিলাহাটি হলদিবাড়ি রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো কিন্তু 1965 সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সুদীর্ঘ 56 বছর পর দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ 2021 সালের 27 মার্চ পুনরায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট- চিলাহাটি- হলদিবাড়ি-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে বিলাসবহুল যাত্রীবাহী ট্রেন পরিবহন সেবা চালু হয়।। বর্তমানে ট্রেনটি নিয়মিত বাংলাদেশ থেকে ভারতে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশের মধ্যে চলাচল করছে।
আন্তর্জাতিক মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের ইঞ্জিন এবং শুধুমাত্র ভারতীয় কোচ নিয়ে চলাচল করে। যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি অত্যন্ত বিলাসবহুল ও আধুনিক ইঞ্জিন ও কোচ নিয়ে চলাচল করে। ট্রেনটিতে মোট 8 টি যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে। যার মধ্যে 4টি এসি কেবিন কোচ ও 4টি এসি চেয়ার কোচ। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে চিলাহাটি স্টেশনের জন্য জন্য 2টি আলাদা কোচ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
যাত্রাপথে ট্রেনটি প্রায় 595 কিলোমিটার অতিক্রম করে এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে 453 কিলোমিটার এবং ভারতীয় অংশে 71 কিলোমিটার। বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে প্রবেশ করতে এই ট্রেনটি গড়ে 10-11 ঘন্টা সময় নেয়।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন হতে ছাড়ার পর চিলাহাটি স্টেশনে গিয়ে ভারতে ভ্রমণকারী যাত্রীদের জন্য ট্রেনটিতে আরও অতিরিক্ত কোচযুক্ত করা হয় এরপর ট্রেনটি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের হলদিবাড়ি স্টেশনে পৌঁছায়। এখানে কিছুক্ষণ যাত্রা বিরতির পর ট্রেনটি পুনরায় নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনে উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটার স্থান।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তর্জাতিক মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট ক্রয় করা যায়।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন টিকিট কাউন্টার থেকে প্রতিদিন সকাল 8 টা থেকে বিকেল 5 টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট দেওয়া হয়। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভ্রমণকারী যাত্রীরা যাত্রা শুরু করার নির্ধারিত সময়ের 30 দিন পূর্বে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন টিকিট ক্রয় করার জন্য পাসপোর্ট এবং ভিসা দেখাতে হবে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সহজ নিয়ম
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের 20% ফিরতি টিকেট ক্রয় করা যায়। ভারত থেকে যে সকল যাত্রী বা ভ্রমণকারী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের বাংলাদেশ আসতে চান তাদেরকে কলকাতা স্টেশন, ফেয়ারলিপ্লেস রেলওয়ে বিল্ডিং এবং নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে টিকিট ক্রয় করতে হবে।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট মূল্য।
আপনি যদি মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণ করতে চান তাহলে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের মূল্য কত টাকা তা জানতে হবে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এর মূল্য আসনের শ্রেণীবিভাগের উপর নির্ভর করে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের 3 ধরনের আসন রয়েছে। যেমন-
এসি বার্থ
এসি সিট
এসি চেয়ার
ভারত ভ্রমণ কালে আন্তর্জাতিক মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রতিটি সিট বা টিকেটের বিপরীতে 1000 টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স প্রদান করতে হয় এটি বাধ্যতামূলক।
ট্রাভেল ট্যাক্স 1000, ভ্যাট15% সহ এসি বার্থ , এসি সিট এবং এসি চেয়ার এই 3 ধরনের আসনের ভাড়ার তালিকা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো-
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ক্রয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল এই ট্রেনে ভ্রমণকারীর কোন ব্যক্তির বয়স যদি 1 থেকে 5 বছরের মধ্যে হয় অর্থাৎ শিশু হয় তাহলে টিকেটের মূল্য 50% ছাড় রয়েছে। বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট এ জন্ম তারিখ বিবেচিত হয়।
একজন যাত্রী একই সাথে সর্বোচ্চ 3টি টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। টিকিট ক্রয় ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি যাত্রীর বাধ্যতামূলক পাসপোর্ট, ভিসা থাকতে হবে এবং ভিসাতে ট্রেন যোগে ভারত ভ্রমন করছেন এবং নিউ জলপাইগুড়ি পোর্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছেন তা উল্লেখ্য থাকতে হবে।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচলের সময়সূচী।
আন্তর্জাতিক মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এই ট্রেনটি পুনরায় সোমবার এবং বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। নিচে একটি চার্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচলের সময়সূচী তুলে ধরা হলো-
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট।
আন্তর্জাতিক মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছেড়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী স্টেশন চিলাহাটি এবং ভারতের সীমান্তবর্তী স্টেশন হলদিবাড়ি রুট ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের মধ্যে চলাচল করে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রা শুরু করে।
যাত্রাপথে ট্রেনটির জয়দেবপুর- টাঙ্গাইল- বঙ্গবন্ধু সেতু- ঈশ্বরদী বাইপাস- আব্দুলপুর জংশন- সান্তাহার জংশন- পার্বতীপুর জংশন- ঢিলাহাটি স্টেশনে প্রবেশ করে। যাত্রাপথে এই ট্রেনটি শুধুমাত্র চিলাহাটি স্টেশনে 30 মিনিট টেকনিক্যাল যাত্রা বিরতি করে।
আরো পড়ুনঃ বিদেশ থেকে জমি রেজিস্ট্রি কিভাবে করবেন
এই সময় ট্রেনে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং অন্যান্য কর্মচারী ট্রেন থেকে নেমে যায় এবং প্রয়োজনীয় চেকিং শেষে ট্রেনটি ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা করে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতের হলদিবাড়ি স্টেশনে প্রবেশের পর সেখানে বাংলাদেশের ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ভারতীয় ইঞ্জিন যুক্ত হয়।
এই সময় ট্রেনে থাকা লোকোমা মাস্টার ও গার্ড সহ অন্যান্য কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়ে ভারতীয় রেলওয়ের লোক মাস্টার গার্ড অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে ট্রেনটি পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে প্রবেশ করে।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে হলদিবাড়ি স্টেশনে এসে ট্রেনের ভারতীয় অংশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও অন্যান্য কর্মচারী ট্রেন থেকে নেমে যায়। ট্রেনটি বাংলাদেশে প্রবেশের পর চিলাহাটি স্টেশনে এসে ট্রেনের ভারতীয় ইঞ্জিন ও অন্যান্য কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়।
এই সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের ইঞ্জিন ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ট্রেনটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের মালামাল পরিবহনের নিয়ম।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণ কালে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণ কালে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যাক্তি সর্বোচ্চ 30 কেজি এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সর্বোচ্চ 20 কেজি ওজনের মালামাল নিজের সাথে বহন করতে পারবেন এর জন্য আলাদা কোন ফি বা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না।
এই নির্দিষ্ট ওজনের বাহিরে যদি অতিরিক্ত মালামাল বহন করতে চান তাহলে বাংলাদেশ রেলওয়ে তথ্যমতে কোন যাত্রী 31 কেজি থেকে 50 কেজি ওজনের মালামাল বহনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজির জন্য 2 ডলার করে এবং 50 কেজির উপরে প্রতি কেজির জন্য 10 ডলার করে আলাদা ফ্রি প্রদান করতে হবে।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া।
এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণের জন্য ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। বিমানযোগে ভ্রমণ করতে গেলে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় বিমানবন্দরে তেমনি রেল যোগে ভ্রমণের জন্য ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় রেলওয়ে স্টেশনে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে এবং ভারতীয় অংশে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন।
উভয় দেশের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগে তাই ভ্রমণের শুরুতেই হাতে বেশ কিছু সময় নিয়ে স্টেশনে পৌঁছাতে হবে যাতে ট্রেন যাত্রা শুরু নির্ধারিত সময়ের আগে ইমিগ্রেশন সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
শেষ কথাঃ
বাংলাদেশ থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি শিলিগুড়ি সিকিম এসব অঞ্চলে ভ্রমণ ব্যবস্থাকে সহজ আরামদায়ক ও নিরাপদ করে তুলেছে। যাত্রীরা ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিসা সংগ্রহ করে এই পথে সহজে ভারতের প্রবেশ করতে পারছেন।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের যাত্রীদের মিতালী এক্সপ্রেস এ বাংলাদেশ ভ্রমণের একটি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো নিউ জলপাইগুড়িতে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস বা হাইকমিশন না থাকা। এই অঞ্চলের যাত্রী মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনে বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে কলকাতায় গিয়ে ভিসা সংগ্রহ করে পুনরায় নিউ জলপাইগুড়িতে এসে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে বাংলাদেশ ভ্রমণ একটি অন্যতম অন্তরায়।
ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নিউ জলপাইগুড়িতে যদি বাংলাদেশের ভিসা সার্ভিস সেন্টার চালু করা যায় তাহলে আন্তর্জাতিক মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুই দেশের যাত্রীদের কাছে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url