আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া ২০২৪
স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৩টি আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল করে। এই ৩টি ট্রেনের মধ্যে সবার পছন্দের একটি ট্রেন হল মৈত্রী এক্সপ্রেস। মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার মধ্যে চলাচল করে। আপনারা যারা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ভারত ভ্রমণে আগ্রহী তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল হতে চলেছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকার সম্পর্কিত আপডেট তথ্য। এছাড়া আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা আরো জানতে পারবেন মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটার স্থান, টিকিট কাটার নিয়ম, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মালামাল পরিবহনের নিয়ম এবং মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি স্টেশন সম্পর্কে।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া ২০২৪
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী একটি আন্তঃদেশীয় ট্রেন হচ্ছে মৈত্রী এক্সপ্রেস। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, ধর্মীয়, রাজনৈতিক সহ অন্যান্য প্রয়োজনে ভারত ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ থেকে ভারত ভ্রমণের জন্য দুইটি পথ রয়েছে আকাশ পথ এবং স্থলপথ। স্থলপথের মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন যোগে ভারত ভ্রমণ।
ট্রেন যোগে ভারত ভ্রমণের জন্য মৈত্রী এক্সপ্রেস হতে পারে আপনার জন্য খুবই সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক বাহন। আপনি যদি মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ভারত ভ্রমণ করতে চান তাহলে শুরুতেই আপনাকে জানতে হবে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী। মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী সম্পর্কে জানার জন্য নিচের অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন হইতে সপ্তাহের শুক্রবার, শনিবার, রবিবার, মঙ্গলবার, বুধবার এই ৫ দিন বাংলাদেশ সময় সকাল ৮. ১৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং কলকাতায় গিয়ে পৌঁছায় ভারতের সময় বিকাল ৪.০০ ঘটিকায়।
অপরদিকে কলকাতায় স্টেশন থেকে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহের শুক্রবার, শনিবার, সোমবার ও বুধবার এই ৪ দিন ভারতের সময় সকাল ০৭:১০ মিনিটে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায় বাংলাদেশ সময় ৪.০৫ ঘটিকায়।
একটি চার্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার সময়সূচী তুলে ধরা হলোঃ
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আপনি মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী সম্পর্কে জানলেন এবার আমি আপনাকে যে বিষয়টি জানাবো সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা যারা বাংলাদেশ থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণ করার চিন্তা করছেন অথবা ভারতে গিয়েছেন বাংলাদেশে ফিরে আসবেন বা ভারত থেকে বাংলাদেশ ভ্রমণের মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এই বিষয়টি খুবই সহায়ক।
কেননা আপনি যদি মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া সম্পর্কে না জানেন বা কোন ধারণা না থাকে তাহলে বিড়ম্বনায় পরতে পারেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য মতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া এসি সিট ৩০ ডলার এবং এসি চেয়ার ২০ ডলার।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সহজ নিয়ম
এর সাথে ১৫% ভ্যাট ও ট্রাভেল ট্যাক্স ১০০০ টাকা। সর্বমোট ভাড়া নির্ভর করবে ডলারের রেটের উপর ডলারের রেট কমে গেলে ভাড়ার পরিমাণ কমে যাবে আবার ডলারের রেট বেড়ে গেলেন ভাড়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে।
আপনারা যারা নিয়মিত ট্রেনে চলাচল করেন তাদের কাছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক টিকেট একটি প্রতি পরিচিত টিকেট। আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকেটের মূল্য মোট টিকেটের মূল্যের ৫০% নির্ধারণ করা হয়েছে অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির টিকিটের মূল্যের চেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির টিকিটের মূল্য প্রায় অর্ধেক।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে কত বছর বয়স পর্যন্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণকারী কোন ব্যক্তির বয়স যদি ৫ বছরের নিচে হয় তাহলে তাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিট ক্রয় করতে হবে।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন হইতে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট পরিবর্তন করা হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পূর্বে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যশোরের দর্শনা স্টেশন দিয়ে ভারতে প্রবেশ করত কিন্তু বর্তমানে এই ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে যশোরের দর্শনা স্টেশন দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল দর্শনা স্টেশনে ট্রেনের কর্তব্যরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারী ও রেক পরিবর্তন করে ভারতীয় রেকে ও ভারতীয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে ট্রেনটি ভারতের গেদে স্টেশন প্রবেশ করে। এখানে নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রয়োজনীয় চেকিং শেষে পুনরায় ট্রেনটি কলকাতা স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়।
আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফিরতি যাত্রায় কলকাতার চিৎপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে গেদে দর্শনা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায়।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটার স্থান।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর টিকেট অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করা যায় কিন্তু আন্তঃদেশীয় ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই স্টেশনে সরাসরি উপস্থিত হয়ে ক্রয় করতে হবে। এই ট্রেনের টিকিট অনলাইনে ক্রয় করা যায় না।
এ অবস্থায় আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কোথায় গিয়ে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ক্রয় করা যাবে। বাংলাদেশের দুটি স্টেশন থেকে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ক্রয় করা যায়। প্রতিদিন সকাল ৯.০০ টা থেকে রাত ৮ঃ০০ পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ক্রয় করা যায়।
এই দুটি স্টেশন এ সশরীরে উপস্থিত হয়ে আপনার ভিসা ও পাসপোর্ট দেখিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে কলকাতা থেকে ফিরে আসার জন্য ২০ শতাংশ টিকিট ক্রয় করা যায় । কলকাতা টার্মিনাল স্টেশন ও ফেয়ারলি প্লেস রেলওয়ে বিল্ডিং থেকে ভারতীয় সময় সকাল ৭.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০টা পর্যন্ত কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসার টিকিট কাটতে পারবেন।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মালামাল পরিবহনের নিয়ম।
নিজ দেশ থেকে অন্য দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভ্রমণকারীর সঙ্গে কিছু মালামাল বহন করতে হয়। আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে মালামাল পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ভারতের ভ্রমণ করতে চান অথবা ভারত থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে চান তাহলে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মালামাল পরিবহনের নিয়মগুলো জানতে হবে।
তাহলে চলুন মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের মালামাল পরিবহনের নির্দিষ্ট যেসব নিয়ম রয়েছে সেই সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক-
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যমতে প্রতি পূর্ণ বয়স্ক একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৩০ কেজি ওজনের মালামাল নিজের সাথে বহন করতে পারবেন আর অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ২০ কেজি ওজনের মালামাল নিজের সাথে বহন করতে পারবেন।
এ নির্দিষ্ট ওজনের বাহিরে গেলে অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করতে হবে যেমন-৩১ থেকে ৫০ কেজি ওজনের মালামাল বহনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজির জন্য ২ ডলার করে এক্সট্রা ফি প্রদান করতে হবে এবং ৫০ কেজির উপরে প্রতি কেজির জন্য ১০ ডলার করে ফ্রি প্রদান করতে হবে।
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি স্টেশন।
সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি স্টেশন সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি স্টেশন এর নাম সম্পর্কে।
প্রিয় পাঠক আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা পথে কোন স্টেশনে যাত্রা বিরতি নেই এই ট্রেনটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছেড়ে সরাসরি বাংলাদেশের দর্শনা স্টেশনে গিয়ে থামে সেখানে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পাদন করে পুনরায় ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এরপর ভারতের গেদে স্টেশনে প্রবেশ করে সেখানে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পাদনের পর সরাসরি কলকাতার চিৎপুর স্টেশনে গিয়ে থামে।
শেষ কথাঃ
ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্বের প্রতীক স্বরূপ ২০০৮ সালের আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হয়েছিল এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত এই ট্রেনটি যাত্রী আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে চালু রয়েছে। এই ট্রেনটি চালু হওয়ার পর একদম সাধারন মানুষ খুব সহজে ভারত ভ্রমণ করতে পারছে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা সর্বশেষ তথ্য। আজকের এই আর্টিকেলের যেসব তথ্য প্রদান করা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত, কোন তথ্যের পরিবর্তন হলে পরবর্তীতে তা সংশোধন করা হবে। সেই পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url