বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়ার সর্বশেষ তথ্য
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী 3টি আন্তর্জাতিক ট্রেন রয়েছে এর 2টি রাজধানী ঢাকা শহর থেকে চলাচল করে। বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী একমাত্র আন্তর্জাতিক ট্রেন হচ্ছে বন্ধন এক্সপ্রেস। এই বন্ধন এক্সপ্রেস ব্যবহার করে ভারত এবং বাংলাদেশের বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এবং বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অপরের দেশ ভ্রমন করে। আজকের আর্টিকেলে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
আপনি যদি বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে হাতে সময় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ুন। আজকের এই আর্টিকেল পড়লে আপনি বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের খুলনা থেকে কলকাতা এবং কলকাতা থেকে খুলনা ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। পাশাপাশি আরো জানতে পারবেন বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটার স্থান, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি স্টেশন, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট ও মালামাল পরিবহনের নিয়ম।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় শহর খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা টার্মিনাল স্টেশনের মধ্যে চলাচল করে। দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক স্বরূপ ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর এই ট্রেনটি উদ্বোধন করা হয়। ভারত ও বাংলাদেশের রেলওয়ে এর কোচ ও ইঞ্জিন নিয়ে বন্ধন এক্সপ্রেস যাত্রী সেবা দিয়ে আসছে।
বিলাসবহুল শিতাতাপ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে মোট 8 টি কোর্স রয়েছে এর মধ্যে4টি এসি চেয়ার কোচ ও 4টি এক্সিকিউটিভ চেয়ার কোচ। এর সাথে রয়েছে খাবারের কোচ নামাজের জায়গা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা।
বন্ধন এক্সপ্রেস খুলনা টু কলকাতা ট্রেনের সময়সূচি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো মানুষ বন্ধন এক্সপ্রেস ব্যবহার করে কলকাতা শহর ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন কলকাতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সময় কয়টার দিকে যাত্রা শুরু করে এটি অনেকেই জানেন না।
যারা বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের খুলনা টু কলকাতা ট্রেনের সময়সূচী সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্য এবার বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের খুলনা টু কলকাতা ট্রেনের সময়সূচী তুলে ধরলাম।
সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও রবিবার খুলনা থেকে এই ট্রেনটি বাংলাদেশ সময় দুপুর 1.30 মিনিটে যাত্রা শুরু করে এবং কলকাতা গিয়ে পৌঁছায় ভারতীয় সময় সন্ধ্যা 6.10 মিনিটে। বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রাপথে 3টি স্টেশনে যথাক্রমে যশোর দুপুর 2.30 মিনিটে, বেনাপোল বিকাল 4.00 মিনিটে এবং পেট্রাপোল বিকাল 4.20 মিনিটে যাত্রা বিরতি করে। তবে শুধুমাত্র যশোর স্টেশনে যাত্রী উঠানো হয়।
বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা টু খুলনা ট্রেনের সময় সূচি।
সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও রবিবার কলকাতার চিৎপুর স্টেশন থেকে ভারতীয় সময় সকাল 7.10 মিনিটে বন্ধন এক্সপ্রেস যাত্রা শুরু করে এবং খুলনায় পৌঁছায় বাংলাদেশ সময় 12.00 মিনিটে। যাত্রা পথে ট্রেনটি পেট্রাপোল সকাল 8.55 মিনিটে, বেনাপোল সকাল 9.15 মিনিটে ও যশোর সকাল11.30 মিনিটে যাত্রা বিরতি করে।
বন্ধন এক্সপ্রেস খুলনা টু কলকাতা ট্রেনের ভাড়া।
আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের 2 ধরনের আসন শ্রেণী রয়েছে। এসি-সিট ও এসি- চেয়ার।
বন্ধন এক্সপ্রেস খুলনা টু কলকাতা ট্রেনের ভাড়া এসি সিট 15 ডলার এর বাংলাদেশি টাকার সমমূল্যের 15%ভ্যাট, ট্রাভেল ট্যাক্স 1000 সহ 5 গুণিতক হারে মোট ভাড়া 3055 টাকা।
এসি চেয়ার 10 ডলার এর বাংলাদেশি টাকার সমমূল্যের 15% ভ্যাট, ট্রাভেল ট্যাক্স 1000 সহ 5 গুণিতক হারে মোট ভাড়া 2370 টাকা। কোন যাত্রীর বয়স যদি 5 বছরের নিচে হয় তাহলে মোট ভাড়ার 50% টাকা টিকেট মূল্য নির্ধারিত হবে। যাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিট বলে।
বাংলাদেশ থেকে যে সকল যাত্রী কলকাতা যাওয়ার জন্য বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ক্রয় করবেন তাদেরকে ডলারের সমমূল্যের স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করতে হয়। কলকাতা থেকে ফিরে আসার বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের ফিরতি টিকেট বাংলাদেশে বসেই আপনি অনলাইনের মাধ্যমে কাটতে পারবেন।
বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা টু খুলনা ট্রেনের ভাড়া।
যে সকল যাত্রী কলকাতা থেকে বাংলাদেশে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের আসবেন তাদেরকে কলকাতা স্টেশন থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। কলকাতা স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় কলকাতা থেকে বাংলাদেশে চলাচলের প্রতিটি ট্রেনের টিকিট দেয়া হয়। বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের কলকাতা টু খুলনার ভাড়া কত তা নিচে দেয়া হল।
প্রিয় পাঠক আপনারা আগেই জেনেছেন বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে দুই ধরনের আসন শ্রেণী রয়েছে এসি সিট ও এসি চেয়ার এই দুই ধরনের আসন শ্রেণীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া নির্ধারিত হয়
বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা টু খুলনা ট্রেনের ভাড়া এসি সিট 15 ডলার এর ভারতীয় রুপি সমমূল্যের সাথে নির্ধারিত ভ্যাট, ট্রাভেল ট্যাক্স, বোর্ডিং পাস মিলে ভাড়া নির্ধারিত হয়। এসি চেয়ার 10 ডলার এর ভারতীয় রূপির সমমূল্যের সাথে নির্ধারিত ভ্যাট, ট্রাভেল ট্যাক্স, বোর্ডিং পাস নিলে ভাড়া নির্ধারিত হয়।
কোন যাত্রীর বয়স যদি 5 বছরের নিচে হয় তাহলে মোট ভাড়ার 50% টাকা টিকেট মূল্য নির্ধারিত হবে। যাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিট বলে।
বাংলাদেশে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটার স্থান।
খুলনা- কলকাতা- খুলনার মধ্যে চলাচলকারী আন্তর্জাতিক বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট অনলাইনে এবং কাউন্টারে গিয়ে কাটা যায় এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও যশোর স্টেশনে টিকিট কাউন্টার থেকে ভিসা পাসপোর্ট দেখিয়ে টিকিট ক্রয় করার সুযোগ রয়েছে।
প্রতিদিন সকাল 8.00 মিনিট থেকে বিকাল 4.00 মিনিট পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর স্টেশন এর টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট ক্রয় করা যায়। যাত্রা শুরুর নির্ধারিত 30 দিন পূর্বে এবং ট্রেন ছাড়ার দিন সকাল 8 টা থেকে 11 টা পর্যন্ত টিকেট দেয়া হয়।
কলকাতায় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটার স্থান।
কলকাতা স্টেশনের সর্বশেষ তথ্য মতে প্রতি সপ্তাহের সোমবার সকাল 10 টা থেকে বিকাল 3.30 মিনিট পর্যন্ত এবং মঙ্গলবার থেকে রবিবার সকাল 10 টা থেকে রাত 9 টা পর্যন্ত এবং যাত্রা শুরুর 1 দিন আগে বিকেল 3টা পর্যন্ত টিকিট কাটা যায়। কলকাতা থেকে বাংলাদেশের খুলনার মধ্যে চলাচল বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ভারতে অনলাইন এর মাধ্যমে টিকিট কাটা যায় কিনা এরকম কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট যিনি বা যার নামে টিকেট ক্রয় করবেন তাদের সবাইকে স্বশরীরে কাউন্টারে উপস্থিত হয়ে টিকিট ক্রয় করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। পরিবারের চারজন সদস্যের জন্য আপনি টিকিট কাটতে চাচ্ছেন যে কোন একজন প্রত্যেকের পাসপোর্ট এবং ভিসা নিয়ে উপস্থিত হয়ে সবার জন্য টিকিট কাটতে পারবে।
ভারত ও বাংলাদেশের উভয় দেশের টিকিট কাউন্টার থেকে আপ এবং ডাউন টিকেট ক্রয় করতে পারবেন।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের মালামাল পরিবহনের নিয়ম।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণ কালে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণ কালে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যাক্তি সর্বোচ্চ 35 কেজি এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সর্বোচ্চ 20 কেজি ওজনের মালামাল নিজের সাথে বহন করতে পারবেন এর জন্য আলাদা কোন ফি বা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না।
এই নির্দিষ্ট ওজনের বাহিরে যদি অতিরিক্ত মালামাল বহন করতে চান তাহলে বাংলাদেশ রেলওয়ে তথ্যমতে কোন যাত্রী 35 কেজি থেকে 50 কেজি ওজনের মালামাল বহনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজির জন্য 2 ডলার করে এবং 50 কেজির উপরে প্রতি কেজির জন্য 10 ডলার করে আলাদা ফ্রি প্রদান করতে হবে।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন।
প্রিয় পাঠক আমার আগের দুটি আর্টিকেলে আপনারা জানতে পেরেছেন মিতালী এক্সপ্রেস ও মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের বাংলাদেশ অংশে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় প্রারম্ভিক ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে। তাই যাত্রা শুরু কমপক্ষে দুই ঘন্টা পূর্বে স্টেশনে উপস্থিত হতে হয়। বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইমিগ্রেশন খুলনা স্টেশনে হয় না।
যাত্রাপথে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনটি যশোর জংশন স্টেশন যাত্রা বিরতি দেয় এবং থেকে যাত্রী উঠানো হয়। বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় বেনাপোলে এবং সেখানে ট্রেনের বাংলাদেশ ইঞ্জিন পরিবর্তন ইঞ্জিন যুক্ত করা হয় এবং এবং বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা ট্রেনের নিরাপত্তা কর্মীর সহ অন্যান্য কর্মকর্তার কর্মচারী পরিবর্তন হয়।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে চলাচলকারী ভারতীয় অংশের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় কলকাতা স্টেশন। ট্রেনটি কলকাতা স্টেশন থেকে ছেড়ে বেনাপোল স্টেশনে পৌঁছালে সেখানে ভারতীয় রেল ইঞ্জিন পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ইঞ্জিন যুক্ত হয় এবং বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কর্মকর্তা কর্মচারীর পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশের রেলের নিরাপত্তা বাহিনী কর্মকর্তা কর্মচারী যুক্ত হয়।
শেষ কথাঃ
আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে খুলনা কলকাতা খুলনা রুটে চলাচলকারী আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ভাড়া ট্রেনের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আপডেট তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার এই আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার আশপাশের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে শেয়ার করবেন।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষদের একটি আনন্দের সংবাদ দিয়ে আজকের এই আর্টিকেল শেষ করব আর তা হলো অতি শীঘ্রই বাংলাদেশের আমের রাজধানী বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে কলকাতার মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক ট্রেন চালু সম্ভাবনা রয়েছে। এটি নিয়ে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা কাজ করছেন।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url