সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
বিভিন্ন ফল খাওয়ার উপকারিতার ধারাবাহিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আমি আপনাদের সামনে আলোচনা করব কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।আপনারা অনেকেই প্রতিনিয়ত দিনের কোন না কোন সময়ে কলা খেয়ে থাকেন। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা কলা খাওয়ার উপকারিতা জানার পাশাপাশি আরো জানতে পারবেন কলা খাওয়ার সঠিক সময়, খালি পেটে কলা খেলে কি হয়? কলার খোসার রূপচর্চা সম্পর্কে।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা।
সকালে নাস্তার সঙ্গে কলা খাওয়ার বেশ উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে নাস্তায় টেবিলে কলা রাখতে পারেন তাহলে কাজ করতে গেলে শরীরে যে ক্লান্তি ভাব আসে তা দূর হয়ে যাবে অর্থাৎ আপনার শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে। পুষ্টিকর ফল কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম।
আরো পড়ুনঃ আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
তবে সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া যাবেনা। এতে করে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা, শরীরে দ্রুত সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। নিচে সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কলা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ক্যান্সার প্রতিরোধে আমাদের বেশি পরিমাণের পাকা কলা খাওয়া উচিত। বেশি পাকা কলার উপর যে কালো দাগ পরে তা টিউমার নেকরোসিস ফ্যাক্টর নামের উপাদান তৈরি করে যা শরীরের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে।
কোষের ক্ষতি রোধ করে
মানবদেহ বিভিন্ন কোষের দ্বারা গঠিত। কলাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের কোষ নষ্ট হওয়া রোধ করে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কলা খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হল কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। কলা খুব দ্রুত খাবার হজম করে পাকস্থলীর স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
কলাতে বেশি পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন আমাদের রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে। এজন্য মহিলাদের গর্ভধারণের পর বেশি পরিবারের কাঁচা কলা খেতে পরামর্শ দেয়া হয়। কেননা গর্ভপাতের সময় দেহে থেকে প্রচুর পরিমানে রক্ত বের হয়ে যায়।
রক্তচাপ কমায়
পাকা কলাতে বেশি পরিমাণের পটাশিয়াম ও সোডিয়াম কম থাকার কারণে রক্তনালীতে থাকা ব্লক দূর করে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে। তাই নিয়মিত পাকা কলা খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি এর ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকরী। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হলে যে কোন রোগের বিরুদ্ধে শরীর খুব ভালোভাবে লড়াই করতে পারে। এতে করে কোন রোগ সহজে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না। নিয়মিত কলা খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয় তাই বলা হয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কলা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
হতাশা ভাব দূর করে
নিয়মিত কলা খাওয়ার একটি উপকারী দিক হচ্ছে আপনার দেহ মনকে সতেজ রাখে। নিয়মিত কলা খেতে পারলে আপনার দেহ মন সতেজ থাকবে এবং হতাশা ভাব দূর হবে। কলা অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল কলাতে থাকা ট্রিপটোফান যা খাওয়ার পরে সেরোটোনিনে পরিণত হয়। যা আপনার শরীরের নার্ভাস সিস্টেমকে দূর করে।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
অন্যান্য ফলের তুলনায় কলাতে বেশি পরিমাণে ক্যালরি থাকে। তবে কলাতে আশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ ও বেশি থাকে তাই এটি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
হাড় শক্ত ও মজবুত রাখে
মানব দেহের হাড়ের গঠন বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে সবচেয়ে বেশি যে পুষ্টি উপাদানটি কাজ করে সেটি হল ক্যালসিয়াম। কলায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণের ক্যালসিয়াম। তাই হারের গঠন বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে নিয়মিত কলা খাওয়া যেতে পারে।
হার্ট ভালো রাখে
আমাদের শরীরের হার্ট ভালো রাখতে নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে কেননা কলায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম যা আপনার হার্ট ভালো রাখে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
প্রতিদিন অন্তত ১ টি করে কলা খেলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। কেননা কলায় রয়েছে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাগানিজ।
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়?
খালি পেটে কলা খেলে কি হয় এটি বলতে বুঝানো হয়েছে সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্য কোন কিছু না খেয়ে শুধুমাত্র কলা খাওয়া যাবে কিনা এই বিষয়টি। এই কথার উত্তর যদি এক কথায় দিতে হয় তাহলে বলতে হবে ‘না’ সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া যাবেনা। তবে অন্য কোন খাবারের সঙ্গে আপনি কলা খেতে পারেন এতে করে কোন সমস্যা হবে না।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে গাজর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
কেন সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া যাবেনা এর পেছনে বেশ কিছু যুক্তি রয়েছে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ফাইবার ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। তাই খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয় কারণ কলায় উপস্থিত অধিক মাত্রায় সুগার শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আয়ুর্বেদী শাস্ত্রে খালি পেটে কলা কেন, কোন ফল খাওয়ায় উচিত নয় বলে মনে করা হয়।
কলা খাওয়ার নিয়ম।
সঠিক নিয়ম মেনে কলা না খেলে এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমরা অনেকেই হর হামেশাই হাটে বাজারে যেখান সেখান থেকে কলা কিনে খেয়ে থাকি যা মোটেও উচিত নয়। অনেকের সকালবেলা খালি পেটে কলা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, সকালে নাস্তার সঙ্গে বা নাস্তা খাওয়ার কিছুক্ষণ পর কলা খাওয়া যেতে পারে। সকালে খাবারে শুধু কলা খাওয়া ঠিক নয়। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রাকৃতিক চিনি, শুধু কলা খেলে শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে তাই সকালে নাস্তায় শুধুমাত্র কলা না খাওয়াই ভালো।
রাতে খাবারের পর একটি কলা খেয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনার ঘুম ভালো হবে এবং খাবারের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা।
কলা যেমন একটি উপকারী ফল এর খোসাও বিভিন্ন কাজে আসে। কলা খাওয়ার পর এর খোসা আমরা যেখানে সেখানে ফেলে দিই তা মোটেও ঠিক নয়। কলার খোসা যেখানে সেখানে ফেলবেন না এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। কলার খোসাকে আপনি নানান কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
বিশেষ করে কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা একটি কার্যকরী মাধ্যম। তবে তা হতে হবে কেমিক্যাল মুক্ত কলার খোসা। আলোচনার এই অংশে রূপচর্চায় কলার খোসার ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জেনে নিই।
দাঁতের যত্নে কলার খোসা
নামি দামি পেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহার করেও আপনি দাঁতের হলদে ভাব দূর করতে পারছেন না! তাহলে আপনি ব্যবহার করতে পারেন পাকা কলার খোসা। কলার খোসার ভিতরের দিকটা দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁত মাজুন এতে করে আপনার দাঁতের হলদে ভাব দূর হয়ে যাবে। দাঁতের ব্যথা কমাতেও কলার খোসা ভালো কাজ করে। এক সপ্তাহ এটি ব্যবহারের ফলে আপনার দাঁতের হলদে ভাব দূর হয়ে যাবে যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
ব্রণ দূর করতে কলার খোসা
বয়সন্ধির প্রভাবে অনেকের মুখেই ব্রণ হয়ে থাকে। এছাড়া বাইরে ধুলাবালি, রোদ, ঘুম না হওয়ার কারণেও মুখে ব্রণ হতে পারে। মুখে অতিরিক্ত ব্রণ হলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে অনেক সময় পড়তে হয়। মুখের ব্রণ দূর করতে আপনি কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। পাকা কলার খোসা ভালো করে পেস্ট করে মুখে মাখিয়ে সারারাত রেখে দিন এবং সকালবেলা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এতে করে আপনার মুখের ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
ঠোঁটের যত্নে কলার খোসা
ঠোটের শুষ্কতা দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। শীতকালে যাদের অতিরিক্ত ঠোঁট ফাটে তারা কলার খোসা ঠোঁটে মেখে ঠোঁটের আদ্রতা বাড়িয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনার ঠোট ফাটার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
বলিরেখা দূর করতে কলার খোসা
কলার খোসা ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট মুখে মেখে ৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এতে করে আপনার মুখের বলিরেখা দূর হয়ে যাবে।
মুখের আঁচিল দূর করতে কলার খোসা
মুখমণ্ডলের অতিরিক্ত আঁচিল আপনার সৌন্দর্যকে অনেকখানি অম্লান করে দেয়। আঁচিল দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। আঁচিলের উপর কলার খোসার সাদা অংশ দিয়ে বেশ কিছু সময় ঘুষতে থাকুন এরপর এক টুকরো কলার খোসা আঁচিলের উপর ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়ে দিন। এভাবে ব্যবহারের ফলে আপনার আঁচিল ঝরে পড়ে যাবে।
মুখের দাগ দূর করতে কলার খোসা
কলার খোসা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিয়ে এর ভিতরের সাদা অংশ ত্বকে লাগিয়ে ঘুষতে থাকুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঘষার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে আপনার মুখের কালো দাগ দূর হবে। আপনার ত্বককে করে তুলবে উজ্জ্বল ও সুন্দর।
চোখের যত্নে কলার খোসা
চোখের যত্নে এবং চোখের চারপাশের কালো দাগ দূর করতে কলার খোসা ও অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যেতে পারে। ১ টি কলার খোসা ভেতরের অংশ ও ১ চা চামচ অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে মিশিয়ে চোখের আশেপাশে ব্যবহার করুন। এই পদ্ধতিতে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার চোখের চারপাশের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
মসৃণ ত্বকের জন্য কলার খোসা
যাদের মুখমণ্ডল অত্যাধিক শুষ্ক ও খসখসে হয় তারা কলার খোসার ভেতরের অংশ মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন এরপর ধুয়ে ফেলুন দেখবেন আপনার ত্বক মসৃণ ও মোলায়েম হয়ে গেছে।
ঘা পাচরা দূর করতে কলার খোসা
ত্বকের কোথাও ঘা পাচরা জাতীয় কিছু হলে সেই জায়গায় কলার খোসা মেখে রাখুন অথবা কলার খোসা পানির মধ্যে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে সংক্রমিত জায়গা ধুয়ে ফেলুন এতে করে আপনার ঘা-পাঁচড়াতে থাকা জীবাণু দূর হয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে তা ভালো হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চার পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- পুরনো গহনা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে কলার খোসা অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া চামড়ার জুতো পরিষ্কার করতে, জমির উর্বরতা বাড়াতে, কলার খোসার ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। কলার খোসা ছাগলের অত্যন্ত প্রিয় খাবার।
কলা খাওয়ার সঠিক সময়।
প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করার পর নাস্তার সঙ্গে কলা খাওয়া সবচাইতে উত্তম সময়। আপনি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি করে কলা খেতে পারেন এতে করে আপনার ঘুম ভালো হবে।
দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত।
দিনে কয়টি করে কলা খাওয়া উচিত এটি নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে অন্তত ১ থেকে ২ টি কলা খেলে এটি ক্ষতির কোন কারণ হবে না। তবে এর চেয়ে বেশি খেলে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
শেষ কথাঃ
দেহের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে চাইলে আপনাকে প্রতিদিন নিয়মিত করে কলা খেতে হবে। এমনকি কলা খেলে এনার্জি বাড়বে সেইসঙ্গে ব্লাড প্রেসার এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা দূর হবে। তাই সুস্থ থাকতে যত দ্রুত কলা খাওয়ার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিন।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url