বিদেশ থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
নিরাপদে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বিকাশ। আজকের এই আলোচনায় বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন।
আজকের এই পোস্টটি পড়লে আপনারা আরো জানতে পারবেন বিদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নিয়ম ও বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা আসতে কত দিন সময় লাগে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে।
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম।
বিদেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশী ভাইয়েরা এখন থেকে বিকাশ অ্যাপস এর মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খুলে বিদেশে বসে নিজে নিজে খুব সহজে দেশে টাকা পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
বিদেশে বসে পূর্বে বিকাশের একাউন্ট খোলার কোন সুযোগ ছিল না কিন্তু বর্তমানে বিদেশের মাটিতে বসে খুব সহজেই এনআইডি ও অন্যান্য তথ্য প্রদান করে অ্যাপস এর মাধ্যমে সহজেই বিকাশের একাউন্ট খোলা যাচ্ছে।
বিকাশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সুযোগ অনেক আগে থেকেই ছিল কিন্তু সে ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা ছিল টাকা পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলো কিংবা ব্যাংকের শাখা যোগাযোগ করতে হতো।
আরো পড়ুনঃমোবাইলে ট্রেনের টিকিট কাটুন খুব সহজে
বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বিদেশ থেকে বিকাশ ব্যবহার করে কোন বাংলাদেশী তার জাতীয় পরিচয় পত্র ও বসবাস দেশের মুঠোফোন নাম্বার দিয়ে হিসাব খুলতে পারবেন।
এছাড়া বৈধ পথে বাংলাদেশ ছাড়ার প্রমাণপত্র সহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। হিসাব খোলার পর ১২ টি দেশের ৮৩ টি বেশি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান ও পেওনিয়ার থেকে বিকাশ হিসাবে টাকা লোড করে দেশের যেকোনো নাম্বারে সেন্ড মানি ও মোবাইল রিচার্জ করা যাবে।
যে ১২ টি দেশে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে হিসাব খোলা যাবে সেগুলো হল। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, বাহারাইন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশী কোন মোবাইল নাম্বার দিয়ে যদি মোবাইলে বিকাশ একাউন্ট খোলা থাকে তাহলে বিদেশি মোবাইল নাম্বার দিয়ে সেই অ্যাকাউন্টটি আপডেট করার সুযোগ রয়েছে।
বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর নিয়ম।
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর অন্যতম একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে বিকাশ। বিদেশে বসবাসরত কর্মরত প্রবাসী ভাইয়েরা তাদের কস্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিকাশের মাধ্যমে খুব সহজে দেশে থাকা প্রিয়জনের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারছে।
বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিদেশের অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত ব্যাংক, মানি ট্রান্সফার অর্গানাইজেশন ও এক্সচেঞ্জ হাউজ গুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিকাশ একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারছেন এবং দেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা খুব সহজে নিকটস্থ বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে টাকা উঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন। বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা পাঠানো জন্য বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়। যেমন-
- প্রথমে আপনাকে বিকাশের সাথে পার্টনারশিপ রয়েছে এমন ব্যাংকের শাখা, মানি এক্সচেঞ্জ ও এজেন্টের কাছে যেতে হবে।
- আপনি যে বিকাশ একাউন্ট নাম্বার টাকা পাঠাতে চাচ্ছেন সেই নাম্বার প্রদান করুন এবং যার কাছে পাঠাতে চাচ্ছেন তার নাম লিপিবদ্ধ করুন।
- যে পরিমাণ টাকা পাঠাতে চাচ্ছেন সেই পরিমাণের টাকা ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জ ও এজেন্টকে পরিশোধ করুন এবং টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করুন।
এভাবেই খুব সহজে বিদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের টাকা পাঠানো যায়। ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাইতে গেলে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগে যায়। সেখানে বিকাশের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে খুব বেশি সময় লাগে না অল্প সময়ের মধ্যে পাঠানো যায়।
বিকাশ একাউন্ট খোলার ন্যূনতম যোগ্যতা।
বিকাশ একাউন্ট খুলতে গেলে একজন বাংলাদেশী নাগরিকের ন্যূনতম যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে তার নিচে তুলে ধরা হলো।
- বাংলাদেশী নাগরিক।
- বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি।
- বৈধ জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট আছে এমন ব্যক্তি।
- বর্তমানে রবি, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, টেলিটক এবং এয়ারটেল এর গ্রাহকরা বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন।
বিদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সুবিধা।
বিদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানো সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে খুব সহজে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে টাকা পাঠানো যায় এবং সুবিধামতো সময়ে পাঠানো টাকা ক্যাশ আউট করা যায়।
অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে শতকরা ২.৫% সরকারি প্রণোদনা পাওয়া যায়।
বিদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠালে সেই টাকা দিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ করা যায়। যেমন- বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি।
বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা আসতে কতদিন সময় লাগে।
বর্তমানে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়েছে বিকাশ। কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই খুব সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো যায়। বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা আসতে কত সময় লাগে এই বিষয়টি অনেকে জানতে চেয়েছেন। বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা আসতে বেশি সময় লাগে না।
বিদেশের যে ব্যাক্তি বিকাশের মাধ্যমে আপনাকে টাকা পাঠাবে তিনি বিকাশ এজেন্টের কাছে টাকা ও একাউন্ট নাম্বার দিয়ে সেন্ট বাটনে ক্লিক করলে সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের যে ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠানো হয়েছে তার বিকাশ একাউন্ট নাম্বারে টাকা চলে আসবে। বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে ২৫ টাকা রেমিটেন্স বোনাস প্রদান করা হয়।
তবে এখানে শর্ত থাকে যে, বিকাশের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০,০০০ টাকা বা এর উপরে যদি রেমিটেন্স পাঠায় তাহলে এই বোনাস তার প্রেরিত টাকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।
বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর খরচ।
বিদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশ আউট চার্জ প্রদান করতে হয়। এটি একটি বিকাশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর অন্যতম বড় অসুবিধা। যেখানে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে কোন ধরনের সার্ভিস চার্জ কর্তন করা হয় না।
বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো যায়।
রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে একজন ব্যক্তি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠাতে পারবেন একদিনে এই অর্থের উপরে 2.5% সরকারি প্রণোদনা যুক্ত হবে।
একজন বিকাশ গ্রাহক তার বিকাশ একাউন্ট থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং প্রতি মাসে সর্বোচ্চ এক লক্ষ 50 হাজার টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন
বিদেশ থেকে টাকা আসতে কতদিন সময় লাগে।
বিদেশ থেকে টাকা আসতে কত দিন সময় লাগে এই বিষয়টি জানার জন্য অনেক প্রবাসী আগ্রহী হয়ে থাকেন আলোচনার এই অংশে আমি আপনাদের জানাবো বিদেশ থেকে টাকা আসতে কত দিন সময় লাগে এই বিষয়টি। বিদেশ থেকে টাকা আসতে কত দিন সময় লাগবে এটি নির্ভর করবে আপনি কোন মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন তার উপরে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সহজ নিয়ম
যেমন- বিদেশ থেকে বাংলাদেশী কোন ব্যাংকের মাধ্যমে যদি আপনি টাকা পাঠাতে চান তাহলে আপনার দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে। গোপন পিন নাম্বারের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায়। বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ রকেট নগর এগুলোর মাধ্যমে টাকা পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে টাকা উত্তোলন করা যায়।
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর দ্রুততম মাধ্যম কোনটি?
বিদেশ থেকে বৈধ পথে টাকা পাঠানোর একটি প্রচলিত মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি যেকোনো ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা টাকা পাঠাতে পারেন। বিদেশে বাংলাদেশী কোন ব্যাংকের শাখা থেকে অথবা অন্য কোন মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশী কোন ব্যাংক রেমিটেন্স পাঠানোর কাজটি করে থাকে।
আরো পড়ুনঃঅনলাইনে ট্রেনের লোকেশন জানার সেরা উপায়
সম্পূর্ণ বৈধ পথে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠালে বাংলাদেশের গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা উঠাইতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক সেবার ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা বলা যেতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার ছোঁয়ায় বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার পরিবর্তে এই কাজটি করছে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠানো সহ অন্যান্য লেনদেনে অনলাইন ভিত্তিক এই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষকে মধ্যে সারা জাগিয়েছে।
খুব সহজে এবং দ্রুততম সময়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা পাঠানোর ও টাকা উত্তোলন করা যায়। এইজন্য সবার কাছে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। কোন বাংলাদেশী প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই চাইলেই খুব সহজে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে থাকা পরিবার পরিজনের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে সক্ষম এই মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম।
বর্তমানে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর দ্রুততম মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। দিনরাত ২৪ ঘন্টা যেকোনো সময় বিদেশ থেকে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের কাছে টাকা পাঠানো সম্ভব। বাংলাদেশের বর্তমানে জনপ্রিয় কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিকাশ, রকেট, নগদ ও ইউ ক্যাশ ইত্যাদি।
শেষ কথাঃ
বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম বিকাশ এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকিং মাধ্যমে লেনদেন করলে গ্রাহকদের কাছে টাকা পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে এক্ষেত্রে বিকাশ অনেকটাই এগিয়ে। বিদেশে টাকা জমা দেওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের গ্রাহক এর একাউন্টে টাকা ঢোকা মাত্রই টাকা তোলা সম্ভব হয়। তবে বিকাশের লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। কেননা বর্তমানে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রতারক চক্র গ্রাহকদের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে যা খুবই উদ্বেগের একটি বিষয়।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url