চুলের যত্নে তেলাকুচার পাতা ও পাতার রসের ব্যবহার

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও চুলের যত্ন নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাদের জন্য আজকের আলোচনাটি হতে চলেছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আজকের এই আর্টিকেলে আমি চুলের যত্নে তেলাকুচার পাতা ও পাতার রসের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
চুলের যত্নে তেলাকুচার পাতা ও পাতার রস এর ব্যবহার
আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনারা আরো জানতে পারবেন তেলাকুচার পাতা ও পাতার রসের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতা।

চুলের যত্নে তেলাকুচার পাতা ও তেলাকুচার পাতার রস খুবই উপকারী। তেলাকুচার পাতা ও পাতার রসে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পুষ্টি এবং সুরক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। চুলের যত্নে তেলাকুচার পাতা ও পাতার রসের ব্যবহার বিধি নিম্নরূপ-
  • চুলের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধির উন্নতম একটি মাধ্যম হল লম্বা চুল। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে লম্বা চুল চুলের সৌন্দর্যতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তেলাকুচার পাতার নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুলের বৃদ্ধি সহায়ক হয়।
  • ছেলে মেয়ে উভয়ের চুল পড়া রোধ করতে তেলাকুচার পাতা রয়েছে পুষ্টি উপাদান। নিয়মিত তেলাকুচার পাতা ও পাতার রস চুলে ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এতে করে চুল পড়া রোধ করে।
  • চুলের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি ও চুলের পুষ্টি গুণাগুণ এর অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে খুশকি। তেলাকুচার পাতার তে থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
  • তেলাকচার পাতা ও পাতার রস চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
  • চুলের যত্নে তেলাকুচার পাতার ব্যবহার।
চুলের যত্নে তেলাকুচার পাতার ব্যবহারের কিছু উপায় নিচে তুলে ধরা হলো-

তেলাকুচার পাতা

তেলাকুচার পাতা সংগ্রহ করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পেস্ট করে নিয়ে তা চুলের ব্যবহার করুন। ভালোভাবে চুলে মাখিয়ে নিয়ে কমপক্ষে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন।

তেলাকুচার পাতার রস

তেলাকুচার পাতার পেস্ট চুলে লাগানোর পাশাপাশি আপনি চাইলেই তেলাকুচার পাতার রস চুলে তেলের মত ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া হবে মজবুত।

তেলাকুচার পাতা, আমলকি, মেথি পাতা

আধা কাপ মেথি পাতা, আমলকি ও তেলাকুচার পাতা ব্লেন্ড করে নিয়ে চুলে মাখিয়ে নিন এরপর ৩০ মিনিট রেখে দিন শুকিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।

তেলাকুচার পাতা ও নারিকেল তেল

তেলাকুচার পাতা রস ও নারিকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এরপর সামান্য গরম করে এক ধরনের মিশ্রণ তৈরি করুন। সপ্তাহে অন্তত ১ দিন এটি ব্যবহার করুন। এতে করে চুলের পুষ্টি গুনাগুন বৃদ্ধি পাবে।

পেয়াজ ও তেলাকুচার পাতা

সামান্য পরিমাণের পেঁয়াজ ও তেলাকুচার পাতা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে এর রস একটি তুলার সাহায্যে বা হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন। এরপর ভেষজ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

তেলাকুচার পাতা ও টক দই

তেলাকুচার পাতার পেস্ট ও টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন।

তেলাকুচার পাতা ও জবা ফুল

তেলাকুচার পাতা ও জবা ফুল একসঙ্গে ব্লেন্ড করে এক ধরনের পেস্ট তৈরি করে নিন তারপরেটি চুলের ব্যবহার করুন।
তেলাকুচার পাতার সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে তুলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি কোন ধরনের এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এটির ব্যবহার বন্ধ করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করবেন না।

তেলাকুচা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।

তেলাকুচা বনজঙ্গলে বেড়ে ওঠা এক ধরনের লতানো ভেষজ উদ্ভিদ। গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে এটি অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। বহুবর্ষজীবী তেলাকুজা উদ্ভিদের পঞ্চভুজ আকৃতির পাতা সাদা রংয়ের ফুল এবং সবুজ ফল হয় পাকলে তা টকটকে লাল হয়ে যায়। এটি অন্য গাছের উপর ভর করে, বিভিন্ন ডালপালার উপর বা এমনিতেও ঘাসের উপরে বেড়ে উঠতে পারে। 
বাড়ির আশেপাশে বন জঙ্গলে ছায়াময় জায়গায় এই উদ্ভিদ প্রায় দেখা যায়। অবহেলিত এই ভেষজ উদ্ভিদটি অনেক উপকারী হলেও আমাদের দেশের লোকজন এটার ঔষধি গুন সম্পর্কে খুব একটা অবগত নয় এই কারণে এর উদ্ভিদের তেমন একটা কদর আমাদের দেশে দেখা যায় না। নিচে তেলা কুচা পাতার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

শহর থেকে গ্রাম কোন মানুষের কাছেই এখন ডায়াবেটিস রোগের নামটি অজানা নয়। ডায়াবেটিস রোগটি আমাদের দেশে এখন মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ডায়াবেটিস সম্পর্কে মানুষের সঠিক সচেতনতা না থাকায় তা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যার ফলে ধীরে ধীরে শরীর অকেজ হতে থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের অবশ্যই এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী। 

সর্দিতে

ঋতু পরিবর্তনের কারণে যে সর্দি হয় তেলাকুচা পাতার রস তা দূর করতে সক্ষম। তেলাকুচা পাতা ও মূলের রস একটু গরম করে ৪ থেকে ৫ চা চামচ সকালে ও বিকেলে খেলে সর্দি ভালো হয়ে যায়।

জন্ডিস

জন্ডিস সারাতে তেলাকুচা বেশ উপকার করে থাকে। তেলাকুচার মূল সেচে রস তৈরি করে প্রতিদিন সকালে আধা কাপ পরিমাণ পান করলে জন্ডিস ভালো হয়ে যায়।

শ্বাসকষ্ট

অনেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে থাকেন। বুকে সর্দি কাশি বসে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তেলাকুচার সিকিভাগ মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে ৩ থেকে ৪ চা চামচ পরিমাণ ৩ থেকে ৭ দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পান করলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

কাশি

কাশির উপশমে তেলাকুচা খুবই উপকারী। শ্লেষ্মার জন্য যে কাশি হয় তা সারাতে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস ৩-৪ চা চামচ একটু গরম করে ঠান্ডা হলে আধ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে শ্লেষ্মা তরল হয়ে কাশি বের হয়ে যেতে সাহায্য করে এতে কাশির উপশম হয়।

ফোড়া ও ব্রণ

ফোড়া ও ব্রণ সারাতে তেলাকুচা পাতা জাদুর মত কাজ করে। তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেচে ফোড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ব্যবহার করতে হবে এতে দ্রুত ফোড়া ভালো হয়ে যাবে এবং ব্রণের সমস্যার সমাধান হবে।

আমাশয়

আপনারা যারা প্রায়শই আমাশয় ভুগে থাকেন তারা তেলাকুচার পাতার রস ও মূল খেতে পারেন। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল তেলাকুচার মূল ও পাতার রস প্রতিদিন ২ বেলা ৩ চা চামচ খেতে হবে।

পা ফোলা রোগ

পা ফুলে যাওয়া রোগ অনেকেরই হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় হাঁটাচলা করলে বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে এই সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে তেলাকুচার মূল বা পাতা ৩ থেকে ৪ চামচ পরিমাণ সকালে বিকালে পান করুন। ৩ থেকে৭দিন নিয়ম করে এ পাতার রস পান করলে আমাশয়ের সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আপনারা তেলাকুচার পাতা ও পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলেন। এখন আপনাদের তেলাকুচার পাতা ও পাতার রস খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। তেলাকুচাপাতার তেমন একটা ক্ষতিকর দিক নেই বললেই চলে তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অনেক সময় পেটের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। 

এর পাশাপাশি পেট ফেঁপে যেতে পারে। অনেকের এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই তেলাকুচার পাতা ও পাতার রস খাওয়া ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।

তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুন।

তেলাকুচা পাতার রস, ফল, মূল খাওয়ার অভ্যাস শুরু করার পূর্বে আপনাদের অবশ্যই জানতে হবে এর পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে। আলোচনার এই অংশে আমি আপনাদের জানাবো তেলাকুচা পুষ্টিগুণ। তেলাকুচা পাতার বা তেলাকুচা গাছ একটি ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবে সবার কাছে অতি পরিচিত। 

তেলাকুচার লতা,পাতা, ফল, মূল বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরিতে এবং সবজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তেলাকুচা ফলে আছে মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং, এন্টিহিস্টামিন, এনাফাইলেকটিক রোধী জাতীয় উপাদান। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম তেলাকুচায় রয়েছে প্রোটিন ১.২ গ্রাম, আইরন ১.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ (রিবোফ্লোবিন) ০.০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)০.০৭ গ্রাম, আশঁ ১.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম।

এছাড়া তেলা কুজায় রয়েছে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি।

তেলাকুচা পাতা খাওয়ার নিয়ম।

আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন তেলাকুচার পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন  জায়গায় তেলাকুচার গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তেলাকুচার পাতা বিভিন্ন রেসিপি- মাধ্যমে খাওয়া যায়। যেমন- ভর্তা, ভাজি ও অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে। আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত তেলাকুচার পাতা খেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। 

কিন্তু আপনারা হয়তো অনেকেই এই বিষয়ে জানেন না যে তেলাকুচার ফলও খাওয়া খাওয়া যায়। তেলাকুচার ফল খাওয়ার অন্যতম একটি রেসিপি হচ্ছে ভাজি করে খাওয়া। এটা অনেকটা পটলের মত ভেজে ও রান্না করে খাওয়া যায়। 
এছাড়া যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রয়েছে বা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তারা প্রতিদিন সকালে তেলাকুচার পাতার রস খেতে পারেন এতে অনেক উপকারে আসবে। একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলের আনাচে-কানাচে তেলাকুচার গাছ দেখতে পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে এই গাছটি সচরাচর পাওয়া যায় না।

তেলাকুচার পাতার রস খেলে কি হয়।

ইউনানী, আয়ুর্বেদী ও কবিরাজি চিকিৎসার ক্ষেত্রে তেলাকুচার পাতা ও পাতার রস ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। তেলাকুচার পাতার রস ও পাতার ছাড়াও এই গাছের ফল ও গাছের শিকড় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এক কথায় তেলাকুচার গাছের ঔষধি গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
তেলাকুচার পাতার রস রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ। 

প্রতিদিন সকালে তেলাকুচার পাতার রস খেলে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের দেহ রক্ষা পেতে পারে। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত বা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তেলাকুচার পাতার রস খাওয়া খুবই উপকারী। এটি রক্তের সুগারেরমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

এছাড়া শরীরের জ্বর, হাঁপানি, জন্ডিস এই রোগের ক্ষেত্রেও তেলাকুচার পাতার রস খাওয়া খুবই উপকারী। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে আপনারা নিয়মিত এই তেলাকুচার পাতার রস খাওয়ার চেষ্টা করবেন তাহলে সচরাচর ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে না।

শেষ কথা

আজকের আলোচনায় আপনারা তেলাকুচার পাতা ও পাতার রস খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন। আশা করি আপনারা এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। একটা সময় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঝোপে ঝাড়ে তেলাকুচা গাছ দেখতে পাওয়া যেত। বর্তমানে এই গাছটি প্রায় বিলুপ্তির পথে রয়েছে। আসুন আমরা সকলে মিলে ঔষধি গাছ ও লতাপাতার চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url