মাথা ব্যথা কি? মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায়
প্রাত্যহিক জীবনে আমরা সবাই কম বেশি মাথার যন্ত্রনা অনুভব করি। মাথার ব্যথা বা মাথার যন্ত্রণা কোন রোগ নয় এটি অন্য কোন রোগের একটি উপসর্গ হতে পারে। মাথা ব্যথা কি? মাথার যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আজকে আপনাদের জানাবো।মাথা ব্যথা কি? মাথার যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় জানার পাশাপাশি আপনারা আরো জানতে পারবেন মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ। মাথা ব্যথা কমানোর জন্য কি কি ওষুধ খাওয়া যেতে পারে এই বিষয়গুলো নিয়ে।
মাথা ব্যথা কি?
মানুষের শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে মাথা ব্যথা একটি সাধারন সমস্যা। প্রায় প্রত্যেক মানুষেরই জীবনের কোন না কোন সময় মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। মাথাব্যথা আসলে কোন রোগ নয় বরং এটি একটি উপসর্গ মাত্র। মাথাব্যথা অনেক রকমের আছে।
যেমন- মাইগ্রেন, টেনশন জর্নিত মাথাব্যথা, ক্লাস্টার মাথাব্যথা ইত্যাদি। ঘন ঘন মাথাব্যথা প্রাত্যহিক পারিবারিক ও কর্মজীবনকে বিষাদময় করে তোলে। এছাড়া তীব্র মাথাব্যথা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ।
মাথা ব্যাথার একক কোনো কারণ নেই বিভিন্ন কারণে আপনার মাথা ব্যাথা হতে পারে। বিশেষ করে-
- শারীরিক ক্লান্তি,
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব,
- মানসিক চাপ,
- ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া,
- ঠান্ডা জড়িত সর্দি জ্বর,
- দাঁতের ব্যথা,
- পানি শূন্যতা,
- অতিরিক্ত মদ্যপান,
এর পাশাপাশি রয়েছে অন্যান্য রোড যেমন টিউমার মাথা ইনফেকশন মাথায় আঘাত জনিত কারণ ইত্যাদি।
মাথা ব্যথা কমানোর ঔষধের নাম।
মাথা ব্যথা ক্রমশই বৃদ্ধি পেলে আপনি ডাক্তারের পরামর্শক্রমে নিন্মাত্বক ঔষধ গুলো খেতে পারেন। আমি এখানে যে ওষুধগুলোর নাম উল্লেখ করেছি এগুলো ডাক্তারের কোন প্রেসক্রিপশন নয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওষুধগুলোর নাম তুলে ধরেছি।
- Acetaminophen(আসিটামিনফেন) সাধারণ মাথা ব্যথা,
- Aspirin(অ্যাসপিরিন) সাধারণ মাথা ব্যথা,
- Celecoxib(সেলিকক্সজিব) সাধারণ মাথা ব্যথা,
- Fenoprofen(ফেনোপ্রফেন) টেনশন এবং হরমোনাল জনিত মাথাব্যথা, মাইগ্রেন,
- Ibuprofen(ইবোপ্রফেন) টেনশনযর্নিত মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেন,
- Ketoprofen(কেটোপ্রফেন) টেনশন জনিত মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেন,
- Naproxen(ন্যাপ্রোসেন) টেনশন এবং হরমোনাল জনিত মাথাব্যথা, মাইগ্রেন,
- Ketorolac(কিটোরোলাক) টেনশন জনিত মাথাব্যথা,
- Diclofenac(ডাইক্লোফিনাক) টেনশন জনিত মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেন,
- Metaxalone(মেটাকজালোন) টেনশন জনিত মাথাব্যথা,
- Meclofenamate(মেকলোফেনামেট) টেনশন জনিত মাথাব্যথা,
- Methocarbamol(মেথোকারবামুল) টেনশন জনিত মাথাব্যথা,
মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায়।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের হর হামেশাই বিভিন্ন কারণেই মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে। মাথা ব্যাথা কোন রোগ নয়, তবে এটি কোন না কোন রোগের উপসর্গ হতে পারে। সাধারণত দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ধূমপান, শরীরে পানি শূন্যতা এবং ঘুমের সমস্যা হলে মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ টিউমার চেনার উপায় ও চিকিৎসা পদ্ধতি
মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আমরা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাই। তবে ওষুধ সেবনের আগে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে এগুলো যথাযথ পালন করার মাধ্যমে মাথা ব্যথা থেকে কিছুটা মুক্তি মিলতে পারে।
আদা দিয়ে চা খাওয়াঃ
মাথা ব্যথার একটি ঘরোয়া চিকিৎসা হতে পারে আদা দিয়ে চা খাওয়া। এছাড়া আদা ও লেবুর রস মিশিয়ে খেলে মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যায়। কাচা আদা চিবিয়ে খেলে মাথাব্যথা ভালো হয়ে যায়।
আদার মিশ্রণঃ
১ চা চামচ শুকনো আদার গুঁড়ো ২ টেবিল চামচ পানির মধ্যে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং কয়েক মিনিটের জন্য কপালে লাগিয়ে রাখুন এতে ব্যথা কমে যাবে। এছাড়া আদা গুঁড়ো বা কাঁচা আদা সেদ্ধ করতে পারেন এবার এই সেদ্ধ পানিতে ভাব নিন তাহলে মাথাব্যথা সেরে যাবে।
পুদিনা পাতার রসঃ
পুদিনা পাতার রসের চা খেলে মাথা ব্যথা ভালো হয়। ১ মুঠো পুদিনা পাতা থেকে রস বের করে কপালে মাখলে মাথাব্যথা সেরে যায়।
সুষম খাদ্য গ্রহণঃ
শরীর সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সুষম খাদ্যের। তাই সবসময় চেষ্টা করুন সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে। অনেক সময় পুষ্টির অভাব থেকেও কিন্তু মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকলে একটা মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত বিরতিতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। দেরিতে খাবার গ্রহণ করলে মস্তিষ্কে গ্লুকোজ সরবরাহ কম হয় এবং সেখান থেকে হাইপো গ্লাইসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
বরফ থেরাপিঃ
মাথা ব্যাথা সময় যদি বরফ মাথার কপালে শেক দিতে পারেন তাহলে মাথাব্যথা উপশম হয়। এছাড়া একটি তোয়ালে বা কাপড়ের টুকরো বরফ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে এটি পাঁচ মিনিট কপালে রাখুন দিনে কয়েকবার এটি দিতে পারেন। তবে যাদের ঠান্ডার সমস্যা রয়েছে তারা এটি করবেন না।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমঃ
সাধারণ মাথা ব্যাথার উন্নতম একটি কারণ হলো নিয়মিত ঘুম না হওয়া। পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম না হলে আপনার মাথা ব্যথা হতে পারে তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুমালে মাথাব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। একজন সাধারন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। আপনার যদি মাথাব্যথা শুরু হয় তাহলে নির্জন রুমে গিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর আপনার মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুনঃ
আমাদের শরীরের পানি শূন্যতা দেখা দিলে অনেক সময় মাথাব্যথা হয়ে থাকে তাই নিয়ম করে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।কোন কারনে আপনার মাথাব্যথা শুরু হলে সামান্য ঠান্ডা পানি পান করলে মাথা ব্যথা ভাল হয়ে যায়।
এলকোহল ধূমপান থেকে দূরে থাকুনঃ
অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ধূমপান করার কারণে নিয়মিত মাথা ব্যাথার কারন হতে পারে তাই ধূমপান থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন তাহলে আপনার মাথা ব্যাথার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিনঃ
অধিক পরিমাণের মাথাব্যথা হলে আপনার উচিত হবে অপেক্ষাকৃত নির্জন ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নেওয়া। মনে রাখতে হবে ঘরের ভিতরে যেন কোন আলো না থাকে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখার পর আপনার মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যাবে এটি একটি মাথাব্যথা দূর করার অন্যতম ঘরোয়া উপায়।
উষ্ণ কমপ্রেস ব্যবহার করুনঃ
একটি পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে তা চিপে চোখের উপরে ধরে রাখুন। ভালো হয় হালকা গরম পানিতে গোসল করে নিলে বিশেষ করে টেনশনের কারণে মাথা ব্যাথা হলে হালকা গরম পানিতে গোসল করলে মাথা ব্যাথা ভালো হয়ে যায়।
অতিরিক্ত আলো ব্যবহার না করাঃ
অতিরিক্ত আলোর কারণে অনেক সময় মাথা ব্যথা হয়ে থাকে তাই মাথার যন্ত্রনা করলে ঘরের আলো কমিয়ে দিন। এছাড়া কম্পিউটার স্ক্রিন, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকুন তাহলে আপনার মাথা ব্যাথা অনেকটাই কমে যাবে।
মাসাজ করাঃ
পিপারমেন্টের মতো কোনো সুগন্ধি ফ্লেভারের তেল দিয়ে মাথা ও কপাল মাসাজ করলে মাথার যন্ত্রণা অনেকটাই কমে যায়।
প্রিয় পাঠক উপরের দেখানো নির্দেশনা গুলো যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে কোন ওষুধ ছাড়াই খুব সহজেই আপনার মাথাব্যথা কমাতে পারবেন। আপনার মাথা ব্যাথা হলেই আপনি ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ কিনে এনে খাবেন এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিকর করে একটি বিষয়।
মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ।
ঠিক কি কারনে আপনার মাথা ব্যথা হয় এটি বলা খুবই মুশকিল। মাথাব্যথা মাথার যেকোনো অংশে হতে পারে যেমন পিছনে সামনের অংশে ডান পাশে বাম পাশে মাথার তালুতে। বেশিরভাগ মানুষেরই কম বেশি মাথাব্যথা হয়ে থাকে তাই এটি কোন গুরুতর রোগ নয়। এটি অন্য কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে।
বিশ্ব হেডেক সোসাইটির মাথাব্যথা কে দুই ভাগে ভাগ করে।
প্রাইমারি হেডেকঃ
প্রায় 90% ক্ষেত্রে মাথা ব্যথাগুলো প্রাইমারি হেডেক। এগুলো সিরিয়াস কোন রোগের নির্দেশ করে না।
সেকেন্ডারি হেডেকঃ
এটি মাথা ঘাড় শরীরের অন্য কোন অংশের সিরিয়াস কোন রোগ নির্দেশ করে। মোট মাথা ব্যথার ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়। ১ শতাংশ মাথা ব্যথা ব্রেন টিউমারের কারণে হয়ে থাকে। রোগের মধ্যে কোন খারাপ লক্ষণ বা রেড সাইন আছে কিনা তা যেমন একজন চিকিৎসকের জন্য জানা জরুরি তেমনি মাথাব্যথার রোগীদেরও কিছু ধারনা রাখা দরকার।
৫০ বছরের পর তীব্র মাথাব্যথা এটি একটি খারাপ লক্ষণ। মাথা ব্যাথা শুরু হওয়ার পর এটি দিনের পর দিন যদি ব্যর্থ থাকে তাহলে এটি একটি খারাপ লক্ষণ এই ধরনের ব্যথা ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
শেষ কথাঃ
মাথা ব্যথা যেহেতু মানব দেহের একটি স্বাভাবিক শারীরিক সমস্যা। তাই আমরা অনেকেই মাথাব্যথা গুরুত্ব দিয়ে দেখি না। মাথাব্যথা অনেক সময় আমাদের শরীরের অন্যান্য কোন রোগের উপসর্গ হিসাবে হতে পারে। তাই প্রতি মাসে অন্তত যদি ৫ দিন আপনার মাথা ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কোন রোগকে অবহেলা করা ঠিক নয় সময় থাকতে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে আমরা রোগকে জয় করতে পারব।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url