গ্লিসারিন ব্যবহারের নিয়ম ও গ্লিসারিন এর ক্ষতিকর দিক
শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে প্রকৃতির বুকে সেই সাথে আপনার কপালে চিন্তার ভাঁজ পরছে কিভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখবেন। যারা শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া চিন্তায় দুশ্চিন্তা গ্রস্ত তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে গ্লিসারিন এর ব্যবহার নিয়ম ও অতিরিক্ত গ্লিসারিন ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকর দিক সমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি।আশা করছি পোস্টটি আপনারা অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে করবেন তাহলে ত্বকের যত্নের গ্লিসারিনের ব্যবহারের নিয়ম ক্ষতিকর দিক সমূহ কি কি সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন।
গ্লিসারিন ব্যবহারের নিয়ম।
ত্বকের যত্নে আমরা যেসব প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করি সেগুলোর মধ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রসাধনী সামগ্রী হচ্ছে গ্লিসারিন। ত্বকের যত্নে অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রী চেয়ে গ্লিসারিন এর ব্যবহার অতি পুরনো। বর্তমানে নানাবিধ প্রসাধনী সামগ্রী চাহিদা বেড়ে গেলেও গ্লিসারিনের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। বিশেষ করে শীত ঋতুতে গ্লিসারিন বেশি পরিমাণের ব্যবহার করা হয়। ত্বকের যত্নে গ্লিসারিন ব্যবহারের বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। আজকের আলোচনায় গ্লিসারিন ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানাবো।
শীতকালে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। যেমন- হাত পা ফেটে যাওয়া, ঠোঁট ফাটা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। শীত আসার শুরুতেই ত্বকের যত্নে একটু যত্নবান হতে হয় শীতকালে ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনে ব্যবহার করতে হয়। শীতকালে ত্বকের যত্নে আমরা যেসব প্রসাধনই ব্যবহার করি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্লিসারিন।
আরো পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
ত্বকে নিয়মিত গ্লিসারিন ব্যবহারের ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করে। আপনার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখবে গ্লিসারিন এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও নরম করবে। ত্বক আর্দ্র থাকলে বলিরেখা পরবে না এতে দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন।
কৈশোর থেকে তারুণ্যের পদার্পণের পরে ত্বকে বিশেষ করে মুখমন্ডলে ব্রণের সমস্যা দেখা যায়। শীতকালে নিয়মিত ত্বকে গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যায় যারা ভোগেন তারা ব্রণ থেকে রেহাই পেতে পারেন।
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে গ্লিসারিন মেকআপ রিমুভার হিসাবে ভালো কাজ করে। মেকআপ পরিষ্কার করার জন্য রিমুভারের স্থানে এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে চোঁখ ও ঠোঁটে গ্লিসারিন যাতে না লেগে যায়।
শীতকালে চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনারের পরিবর্তে চুলে গ্লিসারিন লাগানো যায়। এটি লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন চুল শুকিয়ে গেলে তা কতটা নরম হয় তা দেখে নিন। তবে গ্লিসারিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা সচেতনতা দরকার। অতিরিক্ত গ্লিসারিন ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল ঝরে পড়তে পারে।
শীতকালে ত্বকের যে সকল সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে উন্নতম সমস্যা হল ঠোঁট ফাটা সমস্যা। শীতকালে আবহাওয়া অতিরিক্ত শুষ্ক থাকে তাই অনেকের ঠোঁট ফাটা সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগিয়ে নিন।
ত্বকে নিয়মিত গ্লিসারিন ব্যবহারের ফলে সূর্যের ক্ষতিকর রোশনি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। নিয়মিত গ্লিসারিন ব্যবহারে ত্বকের উপরে এক ধরনের রক্ষাকবচ তৈরি হয়, এটি অনেকটা কাচের দেয়ালের মতো কাজ করে।
ত্বকের অতিরিক্ত তেল ও চিড়চিরে ভাব দূর করে গ্লিসারিন। ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা পরিষ্কার করতেও কাজ করে এটি। সামান্য কাঁচা দুধের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন এবার তা ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট ভাবে রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের যত্নে টনিং এর গুরুত্ব সবারই জানা আছে। এ জন্য আপনাকে যা করতে হবে তাহলো দেড় কাপ গোলাপ জলের সঙ্গে এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি একটি বোতলে সংরক্ষণ করুন। প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর এই টোনার মুখে লাগিয়ে নিন এতে ত্বক মোলায়েম ও সুন্দর হবে।
ত্বকের যত্নে আমরা অন্যান্য যেসব প্রসাধনী ব্যবহার করি সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিন্তু গ্লিসারিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক অনেক কম, তাই নিশ্চিন্তে এটি ব্যবহার করতে পারেন। গ্লিসারিন যে ত্বকের জন্য সম্পূর্ণ উপকারী তা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রমাণিত।
গ্লিসারিন এর ক্ষতিকর দিক।
গ্লিসারিন একটি রূপচর্চার প্রসাধনী সামগ্রী। অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রীর যেমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে তেমনি গ্লিসারিনেরও অতিরিক্ত ব্যবহারের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেকের মাঝে দেখা যায়। আলোচনার এই অংশে গ্লিসারিন এর ক্ষতিকর দিক সমূহ কি কি রয়েছে তা নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করব।প্রিয় পাঠক অন্যান্য প্রসাধনের সামগ্রীর তুলনায় গ্লিসারিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক তুলনামূলক কম। গ্লিসারিন ত্বকের শুষ্ক ও রুক্ষতা দূর করতে ব্যাপকভাবে কাজ করে। গ্লিসারিন অতিরিক্ত আঠালো এবং চিটচিটে এক ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী দিনের বেলা এটি ব্যবহার করে বাহিরে বের হলে শরীরে বা বা ত্বকে ধুলাবালি আটকে অনেক সময় ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নের মেথির ব্যবহার
যেমন ত্বক জ্বালাপোড়া করে, ত্বকে চুলকানি হতে পারে। গ্লিসারিন ব্যবহারের সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যেন ৬০ ভাগ পানি এবং ৪০ ভাগ গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। গ্লিসারিনের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পাওয়ার জন্য এটি রাতে ব্যবহার করা সবচাইতে উত্তম।
গ্লিসারিন দিয়ে ফর্সা।
প্রিয় পাঠক আপনারা অনেকে জানতে চেয়েছেন গ্লিসারিন দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায়। গ্লিসারিন দিয়ে ফর্সা হওয়া যায় এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখনো দেখা যায়নি। তবে গ্লিসারিন এর ব্যবহার আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাজ করে। গ্লিসারিন দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা কিভাবে বাড়ানো যায় এ বিষয়টি নিচে তুলে ধরা হলো।
শীত মৌসুমে ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রসাধনী সামগ্রী গ্লিসারিন। এই গ্লিসারিন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক বানিয়ে আপনার ত্বকে ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই ফেসপ্যাকটি লাগিয়ে নিলে সবথেকে বেশি ভালো হয়।
প্রথমে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে এরপর ছোট্ট একটি বাটিতে এক চা চামচ গ্লিসারিন দুই চা চামচ দুধ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এর সাথে হাফ চা চামচ হলুদ ও হাফ চা চামচ চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। এরপর তা আপনার মুখে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর সামান্য গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়
নরম কাপড় দিয়ে আপনার মুখ মুছে নিয়ে সামান্য গ্লিসারিন ও নারিকেল তেল মিশিয়ে এক ধরনের ক্রিম বানিয়ে নিন। এই ক্রিম দিয়ে ১০ মিনিট মেসেজ করুন এতে মুখের কারচে ভাব দূর হয়ে যাবে। আবারো মুখ গরম পানিতে ধুয়ে নিন।
এরপর যেকোনো একটা নাইট ক্রিম নিয়ে ওর মধ্যে গ্লিসারিন আর ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভেঙে মিশিয়ে নিন। এবার তা দিয়ে মুখে ভালো করে মাসাজ করে নিতে হবে এতে মুখ অনেক বেশি নরম থাকবে শীতের দিনে এইভাবে ত্বকের যত্ন নিলে আপনার তো ভালো থাকবে।
শেষ কথাঃ
ত্বকের যত্নে গ্লিসারিনের পরিমিত ব্যবহার আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরাতে কাজ করে তবে মনে রাখবেন এ অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র সচেতনতা মূল আর্টিকেল। ত্বকে অতিরিক্ত গ্লিসারিন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন শরীর ও ত্বকের যেকোনো সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা শ্রেয়।
সাগর অনলাইন সিও নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url